দিল্লি পুরসভায় জিতলো কেজরিওয়ালের আপ। এই প্রথমবার রাজধানীর পুরসভা দখল করলো তারা। নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি হেরে গেল।
বিজ্ঞাপন
দিল্লি পুরসভায় ক্ষমতায় এলো আপ। ১৫ বছর পর দিল্লি পুরসভা বিজেপি-র হাতের বাইরে চলে গেল।
দিল্লি পুরসভার ২৫০টি আসনের মধ্যে আপ ১৩৪টি আসনে এবং বিজেপি ১০৪টি আসনে জিততে চলেছে। রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস এগিয়ে নয়টি আসনে।
১২৬টি আসন জিতলে পুরসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যাবে। আপ ইতিমধ্যে ১৩৪টি আসনে এগিয়ে আছে। তবে সকাল থেকে এই এগিয়ে-পিছিয়ে থাকার হিসাব সমানে ওঠানামা করেছে। একবার বিজেপি এগিয়েছে, একবার আপ। তবে বেলা এগারোটার পর থেকে আপ এগোতে থাকে। তারপর তারা পুরসভা দখলে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় আসন পেয়ে যায়। ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যায়, পুরসভায় ১৫ বছরের বিজেপি শাসন শেষ হচ্ছে এবং শুরু হচ্ছে আপের শাসন। ভালো লড়েও দিল্লি পুরভোটে বিজেপি ধাক্কা খেয়েছে। শেষ হাসি আপ-ই হেসেছে।
দিল্লিতে পুরসভায় জিততে পারবেন কেজরিওয়াল?
রোববার দিল্লি পুরসভার নির্বাচন। গত ১৫ বছর ধরে পুরসভায় ক্ষমতা ধরে রেখেছে বিজেপি। এবার কি কেজরিওয়াল জিততে পারবেন?
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
১৫ বছর ধরে
গত ১৫ বছর ধরে বিজেপি দিল্লি পুরসভা দখল করে রেখেছে। আগে তিনটি আলাদা পুরসভা ছিল। এবার সবকটিকে মিলিয়ে দিয়ে একটা করা হয়েছে। ফলে দিল্লি পুরভোটে জয় পাওয়াটা এবার মোদী-শাহের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
কেজরিওয়ালের কাছে
দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি-কে একাধিকবার পর্যুদস্ত করেছেন কেজরিওয়াল। কিন্তু পুরসভায় জিততে পারেননি। মধ্যদিল্লির ভিভিআইপি এলাকা ছাড়া এবার পুরো দিল্লিকে পরিষেবা দেবে একটাই পুরসভা। সেখানে জিতলে রাজধানীতে আরো কিছুটা ক্ষমতা কেজরিওয়ালের হাতে আসবে। তাই তিনি এবার পুরসভায় ক্ষমতা দখলের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।
ছবি: Narinder Nanu/AFP/Getty Images
কেজরিওয়ালের নামে
দিল্লিতে আম আদমির প্রার্থীরা লড়ছেন কেজরিওয়ালের নামে। এই ছবিতেও দেখা যাচ্ছে, আম আদমি পার্টির জনসভায় পিছনে লাগানো ব্যানারে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দিয়ে লেখা রয়েছে, কেজরিওয়ালের পার্ষদ। অর্থাৎ, প্রার্থীরা গৌন, লড়ছেন আসলে কেজরিওয়াল। তার নামে ভোট জোগাড়ের চেষ্টা। পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভায় মমতাও বলেছিলেন, ২৯৪ আসনে আসলে তিনিই লড়ছেন।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
পারবেন কেজরিওয়াল?
এটাই এই সময়ে দিল্লিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। বিধানসভা নির্বাচনে তিনি বারবার বিজেপি-র জয়রথ থামিয়ে দিয়েছেন। পুরসভায় পারবেন কি? কেজরিওয়াল এবার গুজরাটে ভোটের প্রচারে বেশি সময় দিয়েছেন। দিল্লিতে মাত্র কয়েকদিন প্রচার করেছেন। কিছু জায়গায় বাড়ি বাড়ি গেছেন, রোড শো করেছেন, জনসভাও। কিন্তু আপ বিধায়ক ও নেতারা প্রচারে ঢিলে দেননি। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে তারা প্রচার করেছেন।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা
বিধানসভা জিতেছিলেন কেজরিওয়াল। লোকসভায় সব আসন জিতেছিল বিজেপি। এবার পুরসভায় বিজেপি জিতলে বুঝতে হবে, দিল্লির মানুষ এখনো তাদের সঙ্গে আছে। পুর-সমস্যা সমাধানে তাদের উপর ভরসা রেখেছে। বিজেপি-র প্রচারও চলছে নানাভাবে। এখানে যেমন গাড়ির ছাদের একাংশ সরিয়ে দিয়ে বিজেপি প্রার্থী দাঁড়িয়ে সবাইকে অভিবাদন করছেন।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
নারীবাহিনী
পুরসভায় এক-তৃতীয়াংশ আসন মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত। তাই প্রতিটি দলই প্রচুর নারীকে প্রার্থী করে। তাদের সঙ্গে থাকেন নারীরা। এখানে যেমন বাঙালিপ্রধান এলাকা চিত্তরঞ্জন পার্কে বিজেপি-র নারী প্রার্থী ও তার সঙ্গীদের দেখা যাচ্ছে।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
প্রচারে অধীর
দিল্লি পুরসভায় কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করছেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। চিত্তরঞ্জন পার্কের দুই নম্বর মার্কেটে কংগ্রেসের জনসভায় দেখা যাচ্ছে তাকে। চিত্তরঞ্জন পার্ক বাঙালিপ্রধান এলাকা বলে অধীরকে দিয়ে জনসভা করিয়েছে কংগ্রেস।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
লড়ছে হাত
একটা সময় ছিল, যখন দিল্লির পুরসভা থেকে বিধানসভা পর্যন্ত সর্বত্র কংগ্রেসের শাসন ছিল। কিন্তু এখন যমুনা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। সারা দেশের মতো দিল্লিতেও কংগ্রেসে ভাটার টান। তবে পুরসভায় কংগ্রেস লড়ছে। ফলাফল কী হবে তা ৭ ডিসেম্বর জানা যাবে। তবে তাদের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে দেখা যাচ্ছে।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
কী বলছেন মাছ-বিক্রেতা
দুই নম্বর মার্কেটে মাছ বিক্রি করেন টাবু। দিনাজপুরের ছেলে টাবু দীর্ঘদিন হলো দিল্লিতে ব্যবসা করছেন। তার মতে, আম আদমি পার্টিই জিতবে। কেজরিওয়াল অনেক সুবিধা দিচ্ছেন। তাই তিনি কেজরিওয়ালের দলকে ভোট দেবেন।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
সুরিন্দর সিংয়ের দাবি
সুরিন্দর সিং ব্যবসা করেন। তার দাবি, কেজরিওয়াল যে কাজ করছেন, তা দেখা যায়। মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন। এজন্যই পাঞ্জাবের মানুষ তার দলকে ক্ষমতায় এনেছে। তিনিও আপের ঝাঁটাতেই ভোট দিতে চান।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
বিজেপি-র সমর্থনে
বিজেপি-র সমর্থনেও কিছু মানুষ কথা বলছেন। তারা বলছেন, মোদীর জন্য তারা বিজেপি-কে ভোট দিতে চান। কিছু মানুষ কংগ্রেসের পক্ষেও বলছেন। উচ্চমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মধ্যে বিজেপি-র প্রতি সমর্থন বেশি। কিন্তু সাধারণ গরিব মানুষ আপকে সমর্থন করার কথা বলছেন। কারণ, আপ তাদের বিদ্যুতের বিল কম করেছে তাই নয়, মেয়েদের সরকারি বাসে পয়সা লাগে না। তবে ৭ ডিসেম্বর জানা যাবে, কার দখলে যাবে দিল্লি পুরসভা।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
11 ছবি1 | 11
বিজেপি-র আসনসংখ্যা ৬৫টির মতো বেশি কমেছে। কমছে কংগ্রেসের আসনসংখ্যাও। গতবারের তুলনায় ১৭-১৮টি আসন হারাতে চলেছে কংগ্রেস। আর আপের আসন প্রায় ৯০টির মতো বেড়েছে।
এই ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, দিল্লি এখনো কেজরিওয়ালকে চায়। বিজেপি রাজধানীতে অন্তত তার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছে না। কেজরিওয়াল এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌশল নিয়ে বলেছিলেন, পুরসভার সব ওয়ার্ডে তিনিই লড়ছেন। প্রতিটি জনসভায় লেখা থাকতো, কেজরিওয়ালের প্রতিনিধিকে ভোট দিন। কেজরিওয়ালের জনসমর্থনের জোরেই আপ পুরসভাতেও জিততে পেরেছে।
বিজেপি-র কৃতিত্ব হলো, তারা পুর নির্বাচনে রীতিমতো ভালো লড়েছে। বহু আসনে খুব কম ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তি হয়েছে। বাঙালিপ্রধান চিত্তরঞ্জন পার্কে যেমন মাত্র ৪৮ ভোটে জিতেছেন আপের প্রার্থী। কিন্তু শেষপর্যন্ত নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তাও দিল্লিতে বিজেপি-কে জেতাতে পারেনি।
কেজরিওয়ালের বক্তব্য
পুরসভায় আপের জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরই দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে আপ-এর সদর দপ্তরে কেজরিওয়াল বলেন, দিল্লির মানুষ এবার তাদের আবর্জনা সরানোর দায়িত্ব দিয়েছেন, পুরসভার স্কুলের মান বাড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছেন, পুর প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করার ভার দিয়েছেন, তারা সেটা করে দেখাবেন। আর এই কাজে সাহায্য করার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বলেছেন, বৃহস্পতিবার গুজরাটে খুবই ভালো ফল করে অনেক হিসাব উল্টে দেবে আপ।