দিল্লি: দুর্গার পায়ের কাছে মোদীর ছবি রাখছে না অধিকাংশ কমিটি
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ ছিল, মা দুর্গার পায়ের কাছে মোদীর ছবি রাখতে হবে। মানতে পারছে না অধিকাংশ পুজো কমিটি।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার অনুরোধ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেবী দুর্গার পায়ের কাছে রাখা হয়। ছবি: IANS
বিজ্ঞাপন
দিল্লির বাঙালিপ্রধান এলাকা চিত্তরঞ্জন পার্কসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় পুজো কমিটিগুলো জানিয়েছে, তারা প্রধানমন্ত্রীর ছবি এভাবে রাখতে পারবেন না।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা দিন কয়েক আগে দিল্লির দুর্গাপুজো কমিটিগুলোকে নিয়ে একটা বৈঠকে বলেছিলেন, ''১৭ সেপ্টেম্বর আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির জন্মদিন। আমি চাই যে এবার দিল্লিতে তার জন্মদিন সেবা প্রখণ্ড রূপে মানানো হোক। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো নো কোনো সেবামূলক কর্মসূচি নেওয়া হোক। দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলেও আপনারা দিনের বেলা কোনো কর্মসূচি পালন করুন। আদরনীয় প্রধানমন্ত্রীজির লম্বা আয়ু এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করে অবশ্যই তার ছবি মা দুর্গার পায়ের কাছে রেখে দেবেন। তিনি যাতে দেবীর আশীর্বাদ পান তা নিশ্চিত করবেন।''
দিল্লিতে এর আগে কোনো মুখ্যমন্ত্রী কোনো পুজো কমিটিকে এই ধরনের অনুরোধ করেননি। দিল্লিজুড়ে সাড়ে তিনশর বেশি দুর্গাপুজো হয়। দিল্লির লাগোয়া গুরুগ্রাম, নয়ডা, গাজিয়াবাদ, ফরিদাবাদেও অনেকগুলি পুজো হয়। তবে সবচেয়ে ধুমধাম করে পুজো হয় চিত্তরঞ্জন পার্কে। এই বাঙালিপ্রধান বসতিতে সবমিলিয়ে নয়টা পুজো হয়। তার মধ্যে এবছর আবার তিনটি পুজো কমিটির ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। তার মধ্যে একটি পুজো কমিটির থিম হলো সোনার কেল্লা। এমনিতেই পুজোর দিনগুলিতে স্রোতের মতো দর্শক আসেন। এবার তো আরো বেশি আসবেন। কিন্তু এই চিত্তরঞ্জন পার্কের পুজোর উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রী বা কোনো রাজনৈতিক নেতার ছবি মণ্ডপের ভিতরে না রাখার কথা জানিয়েছেন।
কী করবে পুজো কমিটিগুলি?
দিল্লির অন্যতম বড় পুজো মেলার মাঠের পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা অনুপ ঠাকুর ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আমাদের মণ্ডপের ভিতরে মা দুর্গার পায়ের কাছে প্রধানমন্ত্রীর ছবি রাখা হচ্ছে না। আমরা কখনো এরকম কিছু করিনি। পুজোর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।''
অনুপের মতে, ''দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেন যে এরকম অনুরোধ করলেন তা বুঝে উঠতে পারছি না। আমি অন্যদের সঙ্গে যেটুকু কথা বলেছি তাতে চিত্তরঞ্জন পার্কের কোনো পুজো এই অনুরোধ মানবে না বলে আমার মনে হয় না।''
একদিকে 'দ্রোহ', অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর নাচ
হাজার হাজার জনতার দ্রোহের কার্নিভাল দেখলো শহর কলকাতা। শাসকের কার্নিভালে নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শেষ লগ্নে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ
হাই কোর্টে তখন বিচারপতি রবি কিসান কপূরের এজলাস চলছে। ধর্মতলায় জমায়েত জমাট বাঁধছে ধীরে ধীরে। কোর্টে শুরু হয় শুনানি। যুক্তি পাল্টাযুক্তি চলতে থাকে, উত্তেজনা বাড়তে থাকে অনশনমঞ্চে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পাশাপাশি দুই কার্নিভাল
দুপুর ২টো ৫৩ মিনিট। বিচারপতি নির্দেশ দিলেন, দ্রোহের কার্নিভাল করা যাবে। রেড রোডের পুজো কার্নিভালের সঙ্গে তার কোনও সংঘাত নেই। ঘোষণা মাত্র উদ্বেলিত জনতা পুলিশের দাঁড় করানো ব্যারিকেডের ফাঁক দিয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ঢুকে পড়েন। কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশও কার্যত ‘বাধ্য’ হয় ব্যারিকেডের শিকল খুলে দিয়ে তা সরিয়ে দিতে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাজার হাজার প্রতিবাদী জনতা
জলস্রোতের মতো জনস্রোত ধেয়ে আসতে থাকে রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের দিকে। খানিকক্ষণের মধ্যেই উপচে পড়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শাঁখ, ঢাক আর স্লোগান
ঢাকের বাদ্যি, শাঁখের আওয়াজ, স্লোগানে স্লোগানে তখন মুখরিত হয়ে উঠতে থাকে কলকাতার চেনা 'মিটিং সরণি'।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সব লেন ভরে যায় মানুষে
ভরে যায় দুটো লেনই। জনস্রোত এগোতে থাকে সামনের দিকে। যে অংশে ব্যারিকেড এবং পুলিশ প্রহরা মোতায়েন রাখা হয়েছিল, সেখানেও ঢুকে পড়ে জনস্রোত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
জমায়েতের বিভিন্ন অংশ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়তে থাকে। ব্যারিকেডের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মীদের সামনে গিয়ে সাধারণ মহিলারা নানা ধরনের কটাক্ষ করতে শুরু করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডাক্তারদের পাশে আরো কিছু মঞ্চ
দ্রোহের কার্নিভাল ডেকেছিল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স। তবে তাতে জুড়ে গিয়েছিল আরও কিছু মঞ্চ। যে মঞ্চগুলিতে বামেদের নিয়ন্ত্রণ আছে। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের জমায়েতে সংগঠিত ভিড়ের ছবি দেখা গেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ছিলেন না নেতারা
তবে সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা কেউ জমায়েতে যাননি। জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা সমাবেশে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানিয়েছিল বামফ্রন্ট। যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অনশন মঞ্চ থেকেই বলেছিলেন, কেউ যেন আন্দোলন 'হাইজ্যাক' করার চেষ্টা না করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী
একদিকে যখন দ্রোহের কার্নিভাল চলছে রাসমণি রোডে, তখন ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রেড রোডে শুরু হয়েছে সরকারি কার্নিভাল। ঢাকের তালে তালে অভিনেত্রীদের হাত ধরে নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফুটবল নিয়ে খেললেন
মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাতে একটি ফুটবল নিয়ে কিছুক্ষণ খেললেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর তা ছুঁড়ে দিলেন সামনের রাস্তায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সেরা পুজোর গান
মুখ্যমন্ত্রীর লেখা পুজোর গান চললো কার্নিভালে। জানানো হলো, এবছরের সেরা পুজোর গান নির্বাচিত হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই গান। কারা তা নির্বাচন করেছেন, তা অবশ্য জানায়নি সরকার।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কালো বেলুন দিয়ে দ্রোহ
অন্যদিকে, গুচ্ছ গুচ্ছ কালো বেলুনের বন্দোবস্ত করেছিলেন দ্রোহের উদ্যোক্তারা। আশা করা হয়েছিল আকাশে ওড়ানোর পর বেলুনগুলো পাশেই সরকার আয়োজিত পুজো কার্নিভালের ওপর দিয়ে উড়ে যাবে। প্রতিবাদ আর শোকের বার্তা বয়ে নিয়ে যাবে আকাশপথে। তবে হাওয়ার গতি অন্যদিকে থাকায় বেলুনগুলি বিপরীত দিকে চলে যায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শহর-গ্রাম একাকার
শহর ও শহরতলির বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো হয়েছিলেন মানুষ। কেউ প্রতিবাদের গান গাইতে গাইতে কেউ কেউ বা দলবদ্ধভাবে নাচের মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঢাকিদের প্রতিবাদ
দেখা গেল একদল ঢাকি এসেছেন তাদের প্রতিবাদ জানাতে। প্রতিবাদে আসা সাধারণ মানুষ তাদের হাত থেকে কাঠি নিয়ে বাজাতে শুরু করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাহারি পোস্টার
বিভিন্ন সংগঠন থেকে মানুষ এসেছিলেন এই কার্নিভালে। দ্রোহের এই কার্নিভালে পোস্টারেও ছিল অভিনবত্ব। ‘ভাবছ ভয় পেয়ে ঘরে ঢুকে যাবে? চাপ আছে বস’ । সরল ভাষায় লেখা এই পোস্টার মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জনতার দখলে ধর্মতলা
সন্ধে নামার পরে ভিড় আরও বাড়ে। গোটা ধর্মতলা চত্বর তখন উৎসাহী জনতার দখলে। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে তখন মুখরিত কলকাতার প্রাণকেন্দ্র।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মানববন্ধন
রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে কার্নিভাল চলাকালীনই ধর্মতলায় শুরু হয়ে যায় জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা মানববন্ধন। সন্ধ্যার পর আরও ভিড় বাড়তে থাকে। অবরুদ্ধ হয়ে যায় ডোরিনা ক্রসিং থেকে ধর্মতলা। সেই জমায়েতেও দেখা যায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মানববন্ধনের মাঝে প্রতিমা
পুজো কার্নিভালে প্রতিমা প্রদর্শন শেষে উত্তর কলকাতামুখী কয়েকটি ক্লাবের লরি এই পথেই ফিরছিল। পথের দু-পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানবশিকলের মাঝ খান দিয়ে যাওয়া পুজো কার্নিভালের দুর্গা প্রতিমাকেও শুনতে হয়েছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। রাজ্যের মন্ত্রী তথা শ্রীভূমির ক্লাবকর্তা সুজিত বসুর গাড়ির উদ্দেশ্যেও ক্ষোভ উগরে দেয় মানববন্ধনে দাঁড়ানো জনতা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
18 ছবি1 | 18
নবপল্লী পুজো সমিতির সভাপতি সমরেশ ভদ্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আমরা কখনো কোনো জীবিত ব্যক্তির ছবি মণ্ডপের ভিতর রাখি না। এটা একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান। সেভাবেই আমরা তা পালন করব।''
দক্ষিণ দিল্লি কালীবাড়ির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দাস ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আমাদের মন্দিরের পুজোয় আমরা কারো ছবি রাখতে পারি না। তাই প্রধানমন্ত্রীর ছবিও রাখতে পারছি না।''
চিত্তরঞ্জন পার্ক কালীমন্দিরের এক কর্মকর্তাও ডিডাব্লিউকে একই কথা জানিয়েছেন।
দিল্লির পুজোর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত উৎপল ঘোষও ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''দুর্গাপুজোর মতো ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই ধরনের অনুরোধ করা ঠিক নয়। রাজনীতি তার জায়গায় থাকবে, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীরা তাদের জায়গায় থাকবেন, পুজো পুজোর জায়গায় থাকবে।''
কলকাতার পুজোর বিতর্ক দিল্লিতেও
কলকাতায় পুজো কমিটিগুলিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অর্থসাহায্য করে। তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। এবার তো সেই অর্থসাহায্যের পরিমাণ এক লাখ ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কম মাসুলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার বিষয়টিও আছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হয় না, অর্থাভাবে উন্নয়নের কাজ আটকা পড়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানে পুজোতে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হবে কেন সেই প্রশ্ন বারবার ওঠে।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-ও এই সমালোচনা করে। কিন্তু দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তিনি দুর্গাপুজো ও রামলীলা কমিটিকে এক হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ বিনা পয়সায় দেবেন।
দিল্লির আপ প্রধান সৌরভ ভরদ্বাজ বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুজোর মণ্ডপে মোদিজির ছবি রাখতে বলে হিন্দুদের অপমান করেছেন, বাঙালিরা ক্ষুব্ধ।''
দিল্লি বিজেপি জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী শুধু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করতে। তার বেশি কিছু নয়। আপ তো পুজোতে কেজরিওয়ালের ছবিসহ ব্যানার লাগাত।
কিন্তু ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেছিলেন, দুর্গামূর্তির পায়ের কাছে প্রধানমন্ত্রীর ছবি রাখতে। ফলে বিতর্ক চলছেই।