মহিলা নিরাপত্তায় দিল্লি পুলিশের নিষ্ক্রীয়তার অভিযোগে কিছু অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবি ওঠে৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে যাবার পথে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ও ক'জন মন্ত্রীকে আটকে দেয় পুলিশ, কিন্তু কেন?
বিজ্ঞাপন
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে ধর্ণা দিতে যাবার পথে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তাঁর চারজন মন্ত্রীকে আটকে দেয় দিল্লি পুলিশ৷ পুলিশের বক্তব্য, ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে গোটা রাজপথ এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ৷ তাই সেখানে জমায়াত নিষিদ্ধ৷ ধর্ণার স্থল অন্যত্র, অর্থাৎ যন্তরমন্তরে সরিয়ে নিয়ে যেতো বলা হয়৷ লাউডস্পিকারের তার কেটে দেয় পুলিশ৷ এ নিয়ে আম আদমি পার্টির সমর্থক এবং পুলিশের মধ্যে বচসা হয়, শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি৷ মধ্যদিল্লির চারটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়৷ যার ফল, নিত্যযাত্রিদের হয়রানির একশেষ৷
কিসের জন্য ধর্ণা? দক্ষিণ দিল্লির একটি স্থানে যেখানে মূলত আফ্রিকান বসতি, সেখানে নাকি চলে ড্রাগ ও দেহ ব্যবসা৷ দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতী মধ্যরাতে সেখানে দাঁড়িয়ে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে ঐ সব বাড়িগুলিতে হানা দেবার নির্দেশ দেন৷ পুলিশ অফিসার সে কথায় কান না দিয়ে উল্টে মন্ত্রীকে তল্লাসি ওয়ারেন্ট দেখাতে বলেন৷ তথ্যপ্রমাণ ছাড়া স্রেফ মন্ত্রীর কথায় তল্লাসি চালানো সম্ভব নয় বলে পুলিশকর্তা৷ এরপর মন্ত্রী স্বয়ং তাঁর দলবল নিয়ে সেই সব বাড়িতে তল্লাসি চালান৷ মন্ত্রী ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ, আফ্রিকান মহিলাদের তাঁরা নাকি বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে কটুক্তি করেন৷ বর্ণবিদ্বেষী কথাবার্তা বলেন৷ দিল্লির উপ-রাজ্যপালের কাছে এই রকম রিপোর্টই নাকি পুলিশ দিয়েছে৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
দিল্লি সরকারের মন্ত্রীর নির্দেশ কি অমান্য করতে পারে পুলিশ? এক অর্থে পারে৷ কারণ জাতীয় রাজধানি কেন্দ্র-শাসিত৷ দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে, দিল্লি সরকারের অধীনে নয়৷ যদিও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আইন-শৃঙ্খলা রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারেই পড়ে৷ আম আদমি পার্টি সরকারের অভিযোগ দিল্লির রাস্তাঘাটে মহিলা হেনস্থা বা ধর্ষণের ঘটনা যেভাবে বাড়ছে, তা বন্ধ করতে দিল্লি পুলিশ সহযোগিতা করছে না৷ ড্রাগ, দেহ ব্যবসা, ধর্ষণ ইত্যাদির মতো ঘটানা ঘটে চলেছে দিল্লির বুকে আর পুলিশ জানে না, এটা মানা যায় না৷ নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও মন্ত্রীর আদেশ অগ্রাহ্য করতে পুলিশ সাহস পায় কী করে? জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল৷ তাঁর দাবি, অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারকে হয় সাসপেন্ড করা হোক, না হয় বদলি করা হোক৷ মহিলাদের নিরাপত্তা রক্ষায় পথে নেমেছে আম আদমি পার্টি৷ এর হেস্থনেস্থ করেই ছাড়বো৷ দরকার হলে দিনের পর দিন ধর্ণা চলবে৷ কেন্দ্রীয় স্বার্ষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্ডের বক্তব্য তদন্ত শেষ না হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়৷ আর দিল্লি পুলিশকে দিল্লি সরকারের অধীনে আনার প্রশ্নই নেই, বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
আম আদমি পার্টি সরকারের এই আচরণের সমালোচনা কোরেছে বিভিন্ন মহল৷ কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, কেজরিওয়ালের উচিত এইসব ‘‘নাটকবাজি'' বন্ধ করে প্রশাসনের দিকে নজর দেয়া৷ আন্না হাজারের সমর্থক দিল্লি পুলিশের প্রাক্তন শীর্ষ অফিসার কিরণ বেদি মনে করেন, এক উচ্ছৃঙ্খল রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে চলছে দিল্লি সরকার৷ এটাকে প্রশাসন বলে না৷ ওদিকে পর্যবেক্ষক মহল বলছে, আগামী সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত চলবে আম আদমি পার্টির এই কৌশল নীতি৷