সাধারণত সামরিক বাহিনীতে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদক দেয়ার কথা শোনা যায়৷ কিন্তু পোল্যান্ডে বিষয়টা একেবারে অন্যরকম৷
বিজ্ঞাপন
সেখানে যেসব দম্পতির বিবাহিত জীবন ৫০ বছর পেরিয়েছে তাঁদেরকে প্রেসিডেন্ট পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয়৷ এভাবে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬৫ হাজার পদক বিতরণ করা হয়৷
রাজধানী ওয়ারশোতে সাম্প্রতিক এক পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে শহরের মেয়র বলেন, ‘‘এই পদক পাওয়ার জন্য আপনাকে একটানা ১৮ হাজার দিন কাজ করতে হয়৷ অন্য পদক পেতে এতটো প্রয়োজন হয় না৷ তাই অবশ্যই এটা পদক পাওয়ার মতো একটি অর্জন৷''
বিশ্বব্যাপী আয়ু বাড়ার পরিণতি
গোটা বিশ্বে ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ জাতিসংঘের সূত্র অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে তাঁদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে, যা জনসংখ্যার প্রায় ১৫.৬ শতাংশ৷ এর কারণ ও পরিণতি কী হতে চলেছে?
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/GettyImages
আরও বেশি বয়স্ক মানুষ
গোটা বিশ্বে মানুষের আয়ু বাড়ছে৷ ২০১০ সালে ৬৫ বছরের বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭.৭ শতাংশ৷ জাতিসংঘের পূর্বাভাষ অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়াবে (১৫.৬ শতাংশ)৷ একদিকে পড়তি জন্মহার, অন্যদিকে আয়ু বেড়ে চলায় এমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ভবিষ্যতে বয়স্কদের সংখ্যা বাড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অবসরের পর প্রেম
১০০ বছর আগে কোনো মানুষ ৭৫ বছর পূর্ণ করলে, সেটা হতো এক বিরল ঘটনা৷ তাঁদের অতি বৃদ্ধ মনে করা হতো৷ আর আজ অবসর নেয়ার পরেও অনেকে তরতাজা সুস্থ যুবকের মতো থাকেন, চুটিয়ে জীবন উপভোগ করেন৷ জার্মানিতে শতবর্ষ পূর্ণ করা মানুষের সংখ্যা গত ৩ দশকের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
তরতাজা শরীর
বয়স হলেও শারীরিকভাবে সচল থাকা আজ আর নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ চিকিৎসার উন্নতি ও সমৃদ্ধিই এর মূল কারণ৷ উন্নয়নশীল দেশেও এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ ভবিষ্যতে বয়স্ক মানুষদের একটা বড় অংশই এ সব দেশে থাকবেন৷
ছবি: Patrizia Tilly/Fotolia
নারীরা সন্তান চাইছেন না
আগামী বছরগুলিতেও এমন প্রবণতা বজায় থাকবে৷ তরুণ দম্পতিরা কম সন্তান চাইছেন৷ এর অন্যতম কারণ হলো, নারীরা তাঁদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ কাজের পাশাপাশি সন্তান সামলানো তাঁদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ে৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
মেয়েরা স্কুলে যেতে চায়
নারীরা যে আগের তুলনায় কম সংখ্যক সন্তান চাইছেন, তার আরও একটা কারণ রয়েছে৷ তাঁরা আসলে সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চান৷ বিশেষ করে গরিব দেশগুলিতে মায়েরা তাঁদের কন্যাসন্তানদের ভাই-বোনদের দেখাশোনার কাজে ব্যস্ত না রেখে স্কুলে পাঠাতে চান৷
ছবি: DW/H. Hashemi
অবসর ভাতা কাঠামোর দুর্বলতা
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অবসর ভাতা বা সামাজিক সুরক্ষা প্রায় নেই বললেই চলে৷ কিন্তু বেড়ে চলা জনসংখ্যার কারণে এ সব দেশে কিছুকাল পর বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়বে৷ অবসরপ্রাপ্তদের জীবন সহজ করে তুলতে তাই উপযুক্ত কাঠামো গড়ে তুলতে হবে৷
ছবি: Issouf Sanogo/AFP/GettyImages
শুধু দেখাশোনাই যথেষ্ট নয়
জার্মানির মতো সমৃদ্ধ দেশেও বয়স্কদের দেখাশোনার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই৷ ‘ওল্ড এজ হোম’ বা বৃদ্ধাবাস থাকলেও তার খরচ কম নয়৷ অবসর ভাতা কমে চলায় অনেক বৃদ্ধ মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়ছেন৷
ছবি: Fotolia/Kzenon
বৃদ্ধ বয়সে দারিদ্র্যের বিপদ
দরিদ্র অঞ্চলে বিশেষ করে বয়স্ক নারীরা অনেক সময়ে বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে বাধ্য হন৷ অনেক মানুষ সারা জীবন শুধু মাঠেই কাজ করেছেন, বেশি বয়সের জন্য সঞ্চয়ের সুযোগ পান নি৷ হাড়ভাঙা খাটুনি আর তাঁদের সহ্য হয় না৷ বয়স্কদের সংখ্যা বেড়ে চলায় এমন সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture-alliance/Lehtikuva/Hehkuva
বৃদ্ধদের বিপ্লব
সারা বিশ্বে বয়স্ক মানুষ ন্যায্য অবসর ভাতার দাবিতে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন৷ যেমন নিকারাগুয়ায় তাঁরা মাসে কমপক্ষে ৯০ মার্কিন ডলার পেনশনের দাবি জানাচ্ছেন৷
ছবি: REUTERS
বেশি বয়স পর্যন্ত কাজ
জাতিসংঘ তার সদস্য দেশগুলির উদ্দেশ্যে বয়স্ক মানুষের জন্য উপযুক্ত কাজ সৃষ্টি করার ডাক দিচ্ছে৷ চাকরি জীবন থেকে অবসর নেবার প্রচলিত ধারণায় পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে জাতিসংঘ৷ অনেক বয়স্ক মানুষ আজই ছোটখাটো ব্যবসা করছেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/GettyImages
10 ছবি1 | 10
দীর্ঘ বিবাহিত জীবনের জন্য স্বীকৃতি দেয়ার রীতি অন্যান্য দেশেও আছে৷ যেমন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দম্পতির দাম্পত্য জীবন ৫০ পেরোলে তাঁদের হোয়াইট হাউস থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়৷ আর ব্রিটেনে দাম্পত্য জীবন ৬০ পেরোলে রানির কাছ থেকে একটি বার্তা পাঠানো হয়৷
তবে প্রেসিডেন্ট পদক দেয়ার মতো ঘটনা সম্ভবত শুধু পোল্যান্ডেই ঘটে থাকে৷ ‘মেডেলস অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড' নামক একটি ওয়েবসাইট চালান মেগেন রবার্টসন৷ বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘‘এটা আসলেই অনন্য ঘটনা৷ বিয়ে টিকে থাকার জন্য এমন পদক দেয়ার কথা আমার আর জানা নেই৷''
প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সাল থেকে পোল্যান্ডে এই রীতি চালু রয়েছে৷
যেভাবে টিকে রয়েছে
সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট পদক পেয়েছেন এমন একজন হলেন ক্রিস্টিনা সেরেনাস্কা৷ তাঁর মতে, তাঁরা যখন ছোট থেকে বড় উঠেছিলেন তখন সহজেই বিয়ে ভেঙে দেয়ার মতো বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না৷ ‘‘ডিভোর্সের বিষয়টি সমাজে গ্রহণযোগ্য ছিল না৷ গির্জার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না৷ আর আমাদের পরিবারে কোনো তালাকের ঘটনা ছিল না৷''
সেরেনাস্কার স্বামী অবশ্য বিয়ে টিকে থাকার উপায় সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন একটু মজা করে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা দু'জন পেশায় চিকিৎসক ছিলাম৷ এত ব্যস্ত থাকতে হতো যে মাসে হয়ত ১২দিন একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখাই হতো না৷ এভাবে কবে যে ৫০ বছর কেটে গেছে টেরই পাইনি!''