দুঃসময়ে গণজাগরণ মঞ্চ
৮ এপ্রিল ২০১৪গত বছরের ৫ই ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে এর প্রতিবাদে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ৷ ঐ দিন রাত থেকে শাহবাগে টানা অবস্থান আর হাজারো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ এই আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত সরকার ট্রাইব্যুনাল আইনে পরিবর্তন এনে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ দেয়৷ আর সেই আপিলে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হয়৷ তা কার্যকর হয় গত ডিসেম্বরে৷ গণজাগরণ মঞ্চের দাবিতেই আইনে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনেরও বিচারের বিধান করা হয়৷ সেই আইনের কারণে এখন জামায়াতে ইসলামীও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে৷
সেই গণজাগরণ মঞ্চ এখন দুঃসময়ের মুখোমুখি৷ ডিসেম্বরে ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও করতে গিয়ে পুলিশের হামলার শিকার হন মঞ্চের কর্মীরা৷ তখন ঠিক আঁচ করা যায়নি৷ তবে গত এক সপ্তাহে দুঃসময় স্পষ্ট হয়েছে৷ আর এখন চলছে পালটাপালটি বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন৷
গত ৩রা এপ্রিল রাতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়৷ এর জন্য দায়ী করা হয় ছাত্রলীগকে৷ এর পরদিন শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চকে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ৷ পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ এবং ৭ জনকে আটক করে৷ এরই মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চের একটি প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে – ‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড' এবং ‘গৌরব একাত্তর'৷ শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ কোনো কর্মসূচি দিলে তারাও একই স্থানে কর্মসূচি দেয়৷ তাদের সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের কয়েকবার হাতাহাতিও হয়েছে৷
মঙ্গলবার গণজাগরণ মঞ্চ এবং ৫টি ছাত্র সংগঠনের পালটাপালটি সংবাদ সম্মেলনে বিভেদ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ঐক্য ফোরাম ও বাংলাদেশ ছাত্র সমিতি-র এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘‘গণজাগরণ মঞ্চ একটি অরাজনৈতিক ও দলনিরপেক্ষ আন্দোলন৷ এটি কখনোই রাজনৈতিক দল হতে পারে না৷ যদি মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান, তবে মঞ্চের বাইরে গিয়ে তা করতে হবে৷ নইলে পুরো জাতির সঙ্গে বেইমানি করা হবে৷''
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের অগণতান্ত্রিক ও একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণকে মঞ্চের বিভক্তির কারণ হিসেবে তুলে ধরেন৷ মুখপাত্রের পদে পরিবর্তন আসবে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা সত্যি যে ইমরান এইচ সরকার গণজাগরণ মঞ্চের প্রতীক হয়ে উঠেছেন৷ আন্দোলনে ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেব না৷''
জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি সামছুল ইসলাম বলেন, ‘‘গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের সব রাজনৈতিক দল সম্পৃক্ত৷ মঞ্চের মুখপাত্র একে নিয়ে নতুন কোনো রাজনৈতিক দল করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে থাকলে, তা মঞ্চের বাইরে গিয়ে করতে পারেন৷''
অন্যদিকে রাজধানীর পরিবাগে সাহিত্য বিকাশ কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার দাবি করেন, ‘‘মঞ্চের ব্যাপারে সরকার অবস্থান পালটেছে৷ সরকারের নৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন ও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মঞ্চের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়েছে৷''
মঞ্চের ৬ দফা দাবি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘আমরা বলতে চাই মঞ্চের কর্মীদের ওপর আক্রমণ না করে কী ভাবে বিচার ত্বরান্বিত করা যায়, তা সরকারের ভাবা দরকার৷''
গণজাগরণ মঞ্চের ঐক্য নিয়ে কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি দাবি করে ইমরান আরও বলেন, ‘‘এখনো এমন কোনো পরিস্থিতির তৈরি হয়নি৷ যে সব বিষয় নিয়ে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করা যাবে৷''
মঞ্চের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘শুরু থেকেই মঞ্চের কর্মী সমর্থকরা কাজ করেছেন৷ যখন যা প্রয়োজন ছিল, তা কর্মীরাই ব্যবস্থা করেছে৷ এখানে কোনো আর্থিক লেনদেন ছিল না, ভবিষ্যতেও এটাকে ‘অ্যভয়েড' করবো৷''