উত্তর কোরিয়া হুমকি দিলে বৈরী প্রতিবেশীর কাছ থেকে পাল্টা হুমকিই প্রত্যাশিত এবং অবধারিত৷ কিন্তু এ নিয়মে একটু ব্যতিক্রম৷ দুই কোরিয়ার মাঝে উত্তেজনা কমার আশাই জেগেছে তাতে৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়া একের পর আণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে কঠোর থেকে কঠোরতর নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ছে, পাশাপাশি দিয়ে চলেছে দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণের হুমকি৷ বিষয়টি এখন ‘পুরোনো খবর'৷ তাতে নতুন উপাত্ত যোগ হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসিত দেশটি দু দুটো মিসাইল কোরীয় উপদ্বীপে নিয়ে যাওয়ায়৷ তাতে যুদ্ধের দামামাই শুনতে পাচ্ছিলেন বিশ্লেষকরা৷ কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ই এক বিবৃতিতে সে আশঙ্কা আপাতত একটু হলেও উড়িয়ে দিয়েছে৷ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘ওরা আণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে এমন ইঙ্গিতবাহী কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখিনি৷'' দক্ষিণ কোরিয়াই যদি বৈরিতার দীর্ঘ অতীত নিয়েও উত্তরের প্রতি এ আশ্বাস রাখে তাহলে যু্দ্ধ শুরুর আশঙ্কা বাড়ে কি করে!
উত্তর কোরিয়া: সামরিক শক্তি ও বিনাশের মাঝে
আবারো পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ এই নিয়ে তিনবার৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আগেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সে দেশের উপর৷ তবুও কেন তাদের এত পরীক্ষা?
ছবি: DW/Alexander Prokopenko
রহস্য ঘেরা দেশ
বিচ্ছিন্ন, দরিদ্র এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল - উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সবকটি শব্দই মানানসই৷ একইসঙ্গে দেশটি ব্যাপক অস্ত্রসজ্জিত এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে হতাশ করে মঙ্গলবার তারা আবারো পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে৷
ছবি: DW/Alexander Prokopenko
সবকিছু্র আগে সামরিক বাহিনী
পিয়ংইয়ং তাদের তথাকথিত ‘সনগান’ নীতির জন্য পরিচিত৷ এই নীতির অর্থ হচ্ছে সবকিছুর আগে ‘সামরিক বাহিনী’৷ দুই কোটি ত্রিশ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে সেনা সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি৷
ছবি: AP
গত আট বছরে তৃতীয় পরীক্ষা
গত মঙ্গলবার, ১২ই ফেব্রুয়ারি তৃতীয় পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ এর আগে ২০০৬ সালে প্রথম এবং ২০০৯ সালে দ্বিতীয় পরীক্ষা চালিয়েছিল সে দেশ৷ ধারণা করা হয়, সর্বশেষ যে ছোট আকৃতির বোমাটি পরীক্ষা করা হয়েছে, সেটির ধ্বংস ক্ষমতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমার উপরে ফেলা পারমাণবিক বোমার এক-তৃতীয়াংশ৷
ছবি: Reuters
‘বিস্ফোরণ সাদৃশ্য কম্পন’
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা রিশটার স্কেলে ৪.৯ থেকে ৫.২ মাত্রার ভূকম্পন শনাক্ত করেছেন৷ জাতিসংঘের পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি সংস্থার প্রধান টিবর টোট এই বিষয়ে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের কারণে এই ভূমিকম্প সৃষ্টি হওয়ার পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে৷
ছবি: Reuters
পারমাণবিক হুমকি
উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে ফেরাতে গত কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক সমাজ৷ এই লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, জাপান এবং চীন মিলে আলোচনা শুরু করেছিল, কিন্তু ২০০৯ সালে সেই আলোচনা থেকে সরে যায় উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: AP Graphics
কিমের বংশ
গত ৭০ বছর ধরে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় আছে কিম পরিবার৷ ১৯৯৪ সালে কিম জং ইল তাঁর বাবা কিম ইল সুং-এর কাছ থেকে সেদেশে শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ কিম ইল সুং-কে উত্তর কোরিয়ার ‘শাশ্বত রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: Getty Images
কিম জং উন
২০১১ সালের ডিসেম্বরে কিম জং ইল-এর মৃত্যুর পর থেকে উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতার শীর্ষ পদে রয়েছেন কিম জং উন৷ ত্রিশের কাছাকাছি বয়সের এই কিম সেদেশের ক্ষমতাসীন দল, সামরিক বাহিনী এবং একইসঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচির নিয়ন্ত্রক৷ ছবিতে, কিমকে মহাশূন্যে প্রথমবার উপগ্রহ পাঠানোর পর বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
‘তালগোল পাকানো’ অর্থনীতি
১৯৯০ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ার শিল্প উৎপাদন প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কমেছে৷ গত শতকের নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে সে দেশে দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারায় বেশ কয়েক হাজার মানুষ৷ অর্থনীতির দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কারণে এই দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছিল৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, সে দেশের কয়েক লাখ মানুষ এখনো অনাহারে রয়েছে৷
ছবি: AP
বন্ধুরা ধৈর্য হারাচ্ছে
উত্তর কোরিয়া এবং চীনকে আলাদা করে রেখেছে ইয়ালু নদী৷ চীন হচ্ছে সেদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র৷ সেই মিত্রও এখন ক্রমশ ধৈর্য হারাচ্ছে৷ ডিসেম্বরে উত্তর কোরিয়ার রকেট উৎক্ষেপণ এবং সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন৷
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
অথচ উত্তর কোরিয়া আবার আণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে – এমন কথা দক্ষিণ কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণ মন্ত্রী রিয়ো কি-হি জাই-ই বলেছিলেন দু দিন আগে৷ খোদ সংসদীয় কমিটিকে বলেছিলেন এ কথা৷ বক্তব্যের পক্ষে বিস্তারিত ব্যাখ্যা অবশ্য তিনি দেননি৷ সব কিছুর ব্যাখ্যা সরাসরি আসলে পাওয়াও যায়না৷ হুমকি, পাল্টা হুমকি, মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্য- সব কিছুতেই উত্তেজনা বাড়ে৷ যুদ্ধ শুরু না হলেও স্নায়ু যুদ্ধটা জমে৷ এ পরিস্থিতির মাঝেই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম৷