সমস্যা যে বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের সেই যৌথ সামরিক মহড়া এ বছরের মতো শেষ হতে আর বেশি বাকি নেই৷ তবে সেই সময় আসার আগেই উত্তর কোরিয়া দিয়েছে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর প্রস্তাব৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ কোরিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বার্ষিক সামরিক মহড়া চলতি এপ্রিল মাসের শেষেই শেষ হওয়ার কথা৷ হিসেবে মাত্র ১১ দিন বাকি৷ কোরীয় উপদ্বীপে এ মহড়া শুরু হওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয় দুই কোরিয়া আর যু্ক্তরাষ্ট্রের মধ্যে৷ উত্তর কোরিয়ার দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাদের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা চালানোর হুমকি, তারপর প্রতিপক্ষ দুই দেশের তরফ থেকে আবার পাল্টা হুমকি এসব চলছে গত কয়েক মাস ধরেই৷ কিন্তু মহড়া যখন শেষ হওয়ার পথে, তখনই উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে এসেছে আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট নিরসনের প্রস্তাব৷ সঙ্গে অবশ্য এমন কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে যেগুলো পূরণ হবে বা পূরণ করা সম্ভব ধরে নেয়া আপাত দৃষ্টিতে এ মুহূর্তে প্রায় অসম্ভব৷
উত্তর কোরিয়া: সামরিক শক্তি ও বিনাশের মাঝে
আবারো পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ এই নিয়ে তিনবার৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আগেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সে দেশের উপর৷ তবুও কেন তাদের এত পরীক্ষা?
ছবি: DW/Alexander Prokopenko
রহস্য ঘেরা দেশ
বিচ্ছিন্ন, দরিদ্র এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল - উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সবকটি শব্দই মানানসই৷ একইসঙ্গে দেশটি ব্যাপক অস্ত্রসজ্জিত এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে হতাশ করে মঙ্গলবার তারা আবারো পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে৷
ছবি: DW/Alexander Prokopenko
সবকিছু্র আগে সামরিক বাহিনী
পিয়ংইয়ং তাদের তথাকথিত ‘সনগান’ নীতির জন্য পরিচিত৷ এই নীতির অর্থ হচ্ছে সবকিছুর আগে ‘সামরিক বাহিনী’৷ দুই কোটি ত্রিশ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে সেনা সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি৷
ছবি: AP
গত আট বছরে তৃতীয় পরীক্ষা
গত মঙ্গলবার, ১২ই ফেব্রুয়ারি তৃতীয় পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ এর আগে ২০০৬ সালে প্রথম এবং ২০০৯ সালে দ্বিতীয় পরীক্ষা চালিয়েছিল সে দেশ৷ ধারণা করা হয়, সর্বশেষ যে ছোট আকৃতির বোমাটি পরীক্ষা করা হয়েছে, সেটির ধ্বংস ক্ষমতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমার উপরে ফেলা পারমাণবিক বোমার এক-তৃতীয়াংশ৷
ছবি: Reuters
‘বিস্ফোরণ সাদৃশ্য কম্পন’
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা রিশটার স্কেলে ৪.৯ থেকে ৫.২ মাত্রার ভূকম্পন শনাক্ত করেছেন৷ জাতিসংঘের পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি সংস্থার প্রধান টিবর টোট এই বিষয়ে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের কারণে এই ভূমিকম্প সৃষ্টি হওয়ার পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে৷
ছবি: Reuters
পারমাণবিক হুমকি
উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে ফেরাতে গত কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক সমাজ৷ এই লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, জাপান এবং চীন মিলে আলোচনা শুরু করেছিল, কিন্তু ২০০৯ সালে সেই আলোচনা থেকে সরে যায় উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: AP Graphics
কিমের বংশ
গত ৭০ বছর ধরে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় আছে কিম পরিবার৷ ১৯৯৪ সালে কিম জং ইল তাঁর বাবা কিম ইল সুং-এর কাছ থেকে সেদেশে শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ কিম ইল সুং-কে উত্তর কোরিয়ার ‘শাশ্বত রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: Getty Images
কিম জং উন
২০১১ সালের ডিসেম্বরে কিম জং ইল-এর মৃত্যুর পর থেকে উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতার শীর্ষ পদে রয়েছেন কিম জং উন৷ ত্রিশের কাছাকাছি বয়সের এই কিম সেদেশের ক্ষমতাসীন দল, সামরিক বাহিনী এবং একইসঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচির নিয়ন্ত্রক৷ ছবিতে, কিমকে মহাশূন্যে প্রথমবার উপগ্রহ পাঠানোর পর বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
‘তালগোল পাকানো’ অর্থনীতি
১৯৯০ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ার শিল্প উৎপাদন প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কমেছে৷ গত শতকের নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে সে দেশে দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারায় বেশ কয়েক হাজার মানুষ৷ অর্থনীতির দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কারণে এই দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছিল৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, সে দেশের কয়েক লাখ মানুষ এখনো অনাহারে রয়েছে৷
ছবি: AP
বন্ধুরা ধৈর্য হারাচ্ছে
উত্তর কোরিয়া এবং চীনকে আলাদা করে রেখেছে ইয়ালু নদী৷ চীন হচ্ছে সেদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র৷ সেই মিত্রও এখন ক্রমশ ধৈর্য হারাচ্ছে৷ ডিসেম্বরে উত্তর কোরিয়ার রকেট উৎক্ষেপণ এবং সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন৷
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
উত্তর কোরিয়ার প্রধান দাবি, তাদের ওপর থেকে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে৷ সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, দাবি অনুযায়ী কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত করা এ এলাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্র সরিয়ে নিলেই কেবল সম্ভব৷ যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই বলে আসছে, কোরীয় উপদ্বীপে তাদের কোনো পরমাণু অস্ত্র নেই৷
প্রধান দাবিটি পূরণের সম্ভাবনা এ মুহূর্তে নেই বললেই চলে, কেননা, জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল আগেই, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে রাজি না হয়ে আণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোয় সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা শুধু কঠোর করা হয়েছে৷ আর এপ্রিল শেষ হলে উপদ্বীপে যৌথ মহড়াও এক বছরের আগে আর হবেনা৷ উত্তর কোরিয়ারও এপ্রিলের পর এক বছর অন্তত হামলার আশঙ্কার কথা বলে আগেই দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা চালানোর হুমকি দেয়ার সুযোগ পাবে কিনা সন্দেহ৷