বাংলাদেশের প্রাণী সংরক্ষণবাদীরা দু'টি দুর্লভ মিঠাপানির কুমিরের মধ্যে মিলন ঘটানোর চেষ্টা করছে৷ বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণী, যেগুলো ঘড়িয়াল নামে পরিচিত, রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এই উদ্যোগকে৷
বিজ্ঞাপন
একটি ৩৬ বছর বয়সি স্ত্রী ঘড়িয়ালকে রাজশাহীর চিড়িয়াখানা থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে, যাতে সে পুরুষ ঘড়িয়ালের সান্নিধ্য পায়৷ রাজশাহীর চিড়িয়াখানায় আরো একটি স্ত্রী ঘড়িয়াল থাকলেও কোনো পুরুষ ছিল না৷ অথচ একসময় বাংলাদেশের নদীতে নিয়মিতই দেখা যেতে অসংখ্য ঘড়িয়াল৷
একইসঙ্গে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে একটি ৪০ বছর বয়সি পুরুষ কুমির বা ঘড়িয়ালকে পাঠানো হয়েছে রাজশাহীতে৷ পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা আশা করছেন, এভাবে স্ত্রী ও পুরুষ ঘাড়িয়ালের মধ্যে মিলন ঘটানো সম্ভব হবে৷ ঘড়িয়ালরা সাধারণত ৫০ বছর বয়স অবধি প্রজননক্ষম থাকে৷ এই প্রাণীটি বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাওয়ায় সংরক্ষণবিদরা উদ্যোগী হয়েছেন সেটির প্রজনন বাড়ানোর৷ প্রাকৃতিকভাবে প্রাণিটির সংখ্যা বৃদ্ধির কোনো ইঙ্গিত এখন আর দেখা যাচ্ছে না৷
থাইল্যান্ডের কুমির খামার
থাইল্যান্ড রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুমিরের খামার, যা হয়ে উঠেছে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র৷ যেখানে উঁকি দিলেই দেখা যাবে কুমির আয়েশে শরীর এলিয়ে দিয়েছ রোদে, মুরগি চিবাচ্ছে, সবুজ পুলে সাঁতার কাটছে৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
দেশজুড়ে হাজারো খামার
মৎস্য বিভাগের দেয়া তথ্য অনুসারে থাইল্যান্ডে হাজারের বেশি কুমিরের খামার রয়েছে৷ অনেকগুলোর সঙ্গেই রয়েছে জবাইখানা এবং ট্যানারি৷ যেখান থেকে বিলাসবহুল পণ্য উৎপাদন করা হয়৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
৩৫ বছর ধরে কুমিরের ব্যবসা
শ্রী আয়ুথায়া কুমির খামার দেশটির সবচেয়ে বড় খামারগুলোর একটি৷ এটা ৩৫ বছরের পুরনো৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
এক খামারেই দেড় লাখ কুমির
এই খামারের কুমিরের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ৷ এর মালিক উইচিয়ান রুয়েঙ্গনেট বলেন, আমাদের খামারে সব কিছু রয়েছে৷ এটা মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে৷ যা দেশের জন্য আয়ের পথ তৈরি করে৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
আছে রপ্তানির অনুমতিও
শ্রী আয়ুথায়া খামারটি বন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিপদাপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক কনভেনশন সিআইটিইএসে নিবন্ধিত৷ ফলে আইনগতভাবেই খামারটি শ্যামদেশীয় স্বাদুপানির কুমির রপ্তানি করতে পারে৷ যার প্রধান ক্রেতা চীন৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
একের ভেতর সব
উইচিয়ান বলেন, একটা কুমিরের বাচ্চাকে লালন পালন করে বড় করা, পরিণত বয়সে বধ করা, ট্যানারিতে নিয়ে যাওয়া, পণ্য উৎপাদন করা এবং সেই পণ্য রপ্তানি করা-সবকিছুই আমরা করি৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
কুমিরের চামড়া বিলাস পণ্য
উইচিয়ান বলেন, কুমিরের চামড়ার পণ্য বেশ দামি৷ একটা বিরকিন স্টাইলের একটা হ্যান্ডব্যাগ ২৩৫৬ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে৷ সুট বিক্রি হয় ৫ হাজার ৮৮৫ডলার পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
ফেলনা নয় পিত্ত-রক্তও
প্রতি কেজি কুমিরের মাংস বিক্রি হয় প্রায় ৯ মার্কিন ডলারে৷ পিত্ত এবং রক্তও ফেলনা নয়৷ পিত্তের কেজি প্রায় ১,১৭৬ মার্কিন ডলার এবং রক্তের কেজি প্রায় ১৫ মার্কিন ডলার৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
রপ্তানিতে ধস
তবে কুমিরের চামড়ার পণ্য রপ্তানি কিছুটা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ ২০১৫ সালে যেটা ছিল এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ সেটা কমে ২০১৬ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৮ মার্কিন ডলার৷ দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
বাড়তি বিনোদন
চিড়িয়াখানায় কুমিরকে ঘিরে আরো নানাবিধ বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ এখানে কুমিরের সঙ্গে খেলতে গিয়ে মুখের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন এক ব্যক্তি৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
9 ছবি1 | 9
প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আইইউসিএন-এর বাংলাদেশ প্রধান সরওয়ার আলম এই বিষয়ে বলেন, ‘‘বিলুপ্তপ্রায় ঘড়িয়ালকে পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এটাই আমাদের শেষ আশা৷ আমরা আশা করছি, আমরা এর ফল পাবো৷ তবে বর্ষিয়ান ঘাড়িয়ালগুলো হয়ত আর মিলনে আগ্রহী নাও হতে পারে৷''
প্রসঙ্গত, নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীতে একসময় ঘড়িয়ালের বিচরণ ছিল৷ বড় দেহ এবং লম্বা সরু নাকের জন্য এই কুমির বিশেষ প্রসিদ্ধ৷ কিন্তু এখন এগুলো বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায়৷ কখনো কখনো যে দু-একটি দেখা যায়, সেগুলো ভারত থেকে পানির স্রোতে বাংলাদেশে পৌঁছায় বলে ধারণা করা হয়৷
পরিবেশবাদীরা বলছেন, পাকিস্তান এবং ভুটান থেকেঘড়িয়াল পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ মূলত ভারতে এবং নেপালে এখন দু'শোর মতো এই প্রাণী রয়েছে৷ আর বাংলাদেশি বন্দি অবস্থায় আছে ১১টি ঘড়িয়াল৷ ফলে দেশটিতে ঘড়িয়ালের সংখ্যা বাড়াতে এখন এগুলোই মূল ভরসা৷ বাংলাদেশের সরকারি বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা জাহিদুল কবির এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ঘড়িয়ালের বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রথম আমরা চিড়িয়াখানাগুলোর মধ্যে তাদের অদলবদল করছি, যাতে তারা বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ও মিলতে পারে৷''
চিড়িয়াখানায় ঘড়িয়ালদের নতুন বাচ্চা জন্ম নিলে সেগুলো বাংলাদেশের যেসব নদীতে তারা আগে ছিল, সেসব নদীতে ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন পরিবেশবাদীরা৷ প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের এই উদ্যোগ কি সাফল্যের মুখ দেখবে? নাকি অনেক দেরি হয়ে গেছে?