জার্মানির ডাকাতরা বোধ হয় এবার একটু বুঝে-শুনে চলবেন৷ তাদের ডাকাতির মূল টার্গেট ছিলেন বৃদ্ধরা৷ কিন্তু শতবর্ষী এক নারী যা করেছেন, এবার বোধ হয় একটু অন্যভাবে ভাবতে হবে ডাকাত মহাশয়দের৷
বিজ্ঞাপন
মানুষকে ঠকাতে এসব চোর বা ডাকাতরা নানান ফন্দি আঁটে৷ এর একটি হলো ‘পেপার ট্রিক'৷ অনেক সময় জাল টাকা বা ভুয়া কাগজ দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে বা মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে চুরি বা ডাকাতি করে এসব সংঘবদ্ধ চোরেরা৷
১০৩ বছরের এই বৃদ্ধার ভাগ্যেও তেমনটিই ঘটতে যাচ্ছিলো৷ বৃহস্পতিবার পুলিশ জানায় যে, দুই অচেনা নারী এসে ঐ বৃদ্ধার কলিং বেল চাপেন৷ যে মুহূর্তে তিনি দরজা খোলেন তখনই একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন তারা৷ এরপর জোর করে ভেতরে ঢুকে যান৷
কিন্তু সেই বৃদ্ধা রুখে দাঁড়ান৷ তাঁর ভর দেয়ার লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে বের করে দেন তাদের৷ এ সময় ভবনের নীচে থাকা এক অচেনা যুবকও পালিয়ে যান৷ ধারণা করা হচ্ছে, সেই যুবকও এই নারীদের সঙ্গেই ছিলেন৷
ইউরোপে প্রতারকরা এভাবেই নানা কৌশলে ঠকাচ্ছে মানুষকে৷ তাদের মূল লক্ষ্য বয়স্করা৷ এতে তারা নানা রকমের ‘সাদা কাগজ বা ভুয়া নথি' ব্যবহার করছে৷ একে বলা হচ্ছে, ‘পেপার ট্রিক'৷
যেমন, প্রতারক চক্রের কেউ এসে একজনকে হয়তো দরজায় নক করে বলবে যে, বাড়ির বাসিন্দার প্রতিবেশীকে একটি বার্তা দিতে হবে৷ তাই কাগজ কলম দরকার৷ অথবা এসে বলবে যে, কোনো একটি বিষয়ে আবেদন সই করতে হবে৷
যাকে লক্ষ্য করা হবে, তাঁকে এই কাজে ব্যস্ত রেখে অথবা মনোযোগ অন্য দিকে নিয়ে গিয়ে এ সময়েই চুরি করে পালিয়ে যাবে চক্রের সদস্যরা৷
আবার কেউ কেউ হয়তো অসুস্থ হবার ভান করবে৷ অথবা এক গ্লাস পানি বা টয়লেট ব্যবহার করতে চাইতে পারে৷
জার্মানি এবং জার্মানদের কিছু খবর
জার্মানরা নিয়ম-নীতি মেনে চলতেই পছন্দ করেন৷ তা স্বাস্থ্য, অপরাধ কিংবা পরিবেশ – যা-ই হোক না কেন? তাই কোনো সমস্যা দেখা দিলে কিছু দিনের মধ্যেই তা সমাধানের চেষ্টা হয়৷ বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে আসা এমন কিছু নমুনা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/dpa/B. Roessler
জার্মানিতে অপরাধের ঘটনা কমেছে
জার্মানিতে ২০১৭ সালে মোট ৫,৭৬ মিলিয়ন অপরাধের ঘটনা নিবন্ধন করা হয়, যা কিনা ১৯৯২ সালের পর সবচেয়ে কম৷ এরমধ্যে বাড়িতে চুরির ঘটনা কমেছে শতকরা ২৩ ভাগ এবং পকেটমারের সংখ্যা কমেছে শতকরা প্রায় ২৩ ভাগ৷ ২০১৭ সালের এই তথ্যটি পাওয়া গেছে জার্মান অপরাধ পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Burgi
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি
২০১৬ সাল পর্যন্ত জার্মানির স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে৷ ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ৯২ পয়েন্ট পেয়ে আন্তর্জাতিক তালিকায় জার্মানি রয়েছে ১৮ নম্বরে রয়েছে৷ মোট ১৯৫টি দেশ নিয়ে ৩২টি রোগের ওপর পরিচালিত সমীক্ষা থেকে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷ সমীক্ষাটি করেন মার্কিন গবেষকরা৷ যে রোগগুলো নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে তার মধ্যে ক্যানসার, স্ট্রোক আর মৃগীরোগ অন্যতম৷
ছবি: Colourbox
কোমর ব্যথা
জার্মানিতে শতকরা ৭৫ ভাগ পেশাজীবী মানুষই কোমর ব্যথায় ভোগেন৷ ২০১৮ সালের এই রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে জার্মানির স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানি ডিএকে৷ এই বীমা কোম্পানির মোট ৫২০০ জন পেশাজীবীকে নিয়ে করা এক সমীক্ষায় থেকে তথ্যটি বেরিয়ে এসেছে৷ তবে ২০০৩ সালে কোমর ব্যথায় ভোগা রোগীর সংখ্যা ছিলো শতকরা ৫৫ ভাগ৷
সারাদিন কাজের শেষে বিয়ার পান এবং রাতের খাবারে এক গ্লাস রেড ওয়াইন খাওয়া বেশির ভাগ জার্মানের কাছেই একেবারে স্বাভাবিক৷ জার্মানরা বছরে গড়ে ১৩৪ লিটার অ্যালকোহল পান করে থাকেন৷ এক্ষেত্রে জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভাগের পরামর্শ, সপ্তাহে অন্তত দু’দিন এবং বছরে একবার এক নাগাড়ে কয়েক সপ্তাহ অ্যালকোহল বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকা৷
ছবি: Imago/argum
মদ্যপানে আসক্ত বোঝার উপায়
স্বাস্থ্য বিষয়ক এই বিভাগটি জানায়, এভাবে কয়েক সপ্তাহ মদ্যপান থেকে বিরতি থাকলে পরেই বোঝা যাবে জার্মানরা পদ্যপানে কতটা আসক্ত এবং মদ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে কতটা প্রভাব ফেলে৷ শুধু তাই নয়, এর মধ্য দিয়ে মদ্যপানে আসক্তির ঝুঁকিও কমানো সম্ভব বলে মনে করে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Krämer
প্লাস্টিক ব্যাগ আউট
জার্মানির প্রথম পরিবেশ সংরক্ষণ উদ্যোগের অভিযান ছিল – ‘প্লাস্টির ব্যাগ বাতিল’৷ বর্তামানে জার্মানিতে শতকরা ৫৭ ভাগ মানুষ প্লাস্টিক ব্যাগ কেনেন না৷ ২০১৫ সালের এই হিসেবে ছিল শতকরা ৩৩ ভাগ৷ বর্তমানে কেনাকাটার সময় শতকরা ৮০,৪ ভাগ জার্মানদের ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে যাওয়া দেখেই বোঝা যায় যে, তাঁরা পরিবেশ সম্পর্কে কতটা সচেতন৷