জার্মানির একটি নার্সিংহোমে করোনা ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ দেওয়ার পরেও ১৪ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন৷ এ পরিস্থিতিতে লকডাউন তুলে না নেওয়ার পরামর্শ বাভারিয়ার মুখ্যমন্ত্রীর৷
বিজ্ঞাপন
ওসনাব্রুক শহরের বেল্ম এলাকার একটি নার্সিংহোমে ব্রিটেনের নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে, যদিও নার্সিংহোমের সবাই বায়োএনটেক ফাইজারের প্রথম ভ্যাকসিন আগেই নিয়েছিলেন৷ এবং শেষ শটটি তারা নেন ২৫ জানুয়ারি৷ তারপরও গত সপ্তাহের শেষদিকে করোনা পরীক্ষায় ১৪ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে৷ পরীক্ষার আগে তাদের কারো মাঝে করোনার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি৷ তাদের সংক্রমিত হওয়ার কারণ এখনো স্পষ্ট নয়৷
এদিকে করোনার তৃতীয় ঢেউ-এর ঝুঁকি এড়াতে লকডাউন তাড়াতাড়ি তুলে না দেওয়ার জন্য সরকারকে সতর্ক করলেন বাভারিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোয়ডার৷ মহামারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে করোনা বিধিনিষেধ নিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম এআরডি-কে এ কথা জানান, তিনি৷
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া এ পর্যায়ের কড়া লকডাউন চলবে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷ তবে বর্তমান অবস্থায় লকডাউন আরো বাড়ানো হবে কিনা সে বিষয়ে আগামী বুধবার চ্যান্সেলর ম্যার্কেল ১৬টি রাজ্যের প্রধানদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করবেন৷
এ প্রসঙ্গে স্যোয়ডার বলেন, "আমি মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে লকডাউন বাড়ানো'' উচিত৷” লকডাউন এখনই তুলে দেওয়া বোকামি হবে বলে তিনি মনে করেন৷ তিনি বলেন, "এই পরিস্থিতি সবকিছু আবার খুলে দিলে আগামী দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি এখন যা আছে তার চেয়েও খারাপ হতে পারে৷ এখন যদি আমরা আবার ভুল করি, তাহলে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসবে ৷”
রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের (আরকেআই)-এর হিসেব মতে, জার্মানিতে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়ে এ পর্যন্ত ৬১ হাজার ৬৭৫জন মারা গেছেন৷
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
চলমান লকডাউনের মেয়াদ তিন সপ্তাহ বাড়িয়েছে জার্মানি। শুধু মেয়াদ বৃদ্ধি নয় নতুন করে আরোপ করা হয়েছে কিছু বিধিনিষেধ। কী সেগুলো, দেখে নিন ছবিঘরে।
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
নতুন নিয়ম অনুযায়ী করোনা ভাইরাসের হটস্পটের বাসিন্দারা তাদের শহর থেকে যৌক্তিক কারণ ছাড়া ১৫ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করতে পারবেন না। এর মধ্যে ডে ট্রিপ বা একদিনে কোথাও গিয়ে সেদিনই আবার ফেরার মতো দূরত্বেও যেতে পারবেন না। এক সপ্তাহের হিসাবে গড়ে প্রতি এক লাখ বাসিন্দার দুইশ’ জন করোনা আক্রান্ত, এমন জেলাকে হটস্পট হিসেবে ধরা হয়।
ছবি: Andreas Gora/imago images
সাক্ষাতে মানা
এতদিন জনসমাগমের ক্ষেত্রে দুই পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচজনের একসাথ হওয়ার অনুমতি ছিল৷ সেটি এখন কমিয়ে এক পরিবারের মাত্র একজনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ অর্থাৎ একই বাড়ির বাসিন্দা নন এমন ক্ষেত্রে মাত্র একজনের সঙ্গে দেখা বা মিলিত হওয়া যাবে। তবে সাথে নিজের পরিবারের বা বাসার একজন থাকতে পারবে৷
ছবি: Thomas Lohnes/Getty Images
দুইবার পরীক্ষা
হাই-রিস্ক বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে কোনো ব্যক্তি জার্মানিতে এলে তাকে দুইবার করোনার পরীক্ষা করাতে হবে। প্রথমটির ফলাফল নেগেটিভ হলেও অন্তত পাঁচদিন কোয়ারান্টিন বাধ্যতামূলক।
ছবি: Antonio Calanni/AP Photo/picture alliance
অভিভাবকদের ছুটি
বাড়িতে শিশুদের দেখাশোনার জন্য কর্মজীবী বাবা-মা ১০ দিনের অতিরিক্ত ছুটি পাবেন। বাবা বা মা যদি একা হন তাহলে ছুটি হবে ২০ দিন।
ছবি: Imago Images/photothek
আগের নিয়ম
এর সঙ্গে আগের নিয়মগুলোতো থাকছেই। অর্থাৎ, জরুরি নয় এমন দোকান ও সেবা প্রতিষ্ঠান, ডে কেয়ার সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। জনসমক্ষে অ্যালকোহল পান করা যাবে না। চার্চ, সিনাগগ, মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে। কর্মীদের বাড়ি থেকে অফিস করার পরামর্শটি অবশ্য করোনার শুরু থেকেই দেয়া হয়েছে।
ছবি: Foerster/Eibner-Pressefoto/picture alliance
কতদিন থাকবে?
কমপক্ষে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নিয়মগুলো বহাল থাকবে। ২৫ জানুয়ারি রাজ্য ও ফেডারেল সরকার বসে পরবর্তী করনীয় নির্ধারণ করবেন। সরকারের আশা, নতুন কড়াকড়িতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। সাত দিনে প্রতি এক লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে গড়ে ৫০ জন বা তার কম আক্রান্ত হলে সেটিকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হবে।
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
প্রকোপ বাড়ছে
মঙ্গলবার র্পযন্ত ২৪ ঘণ্টায় জার্মানিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯০০ জন। মারা গেছেন ৯৪৪ জন। বড়দিনের ছুটির শেষ হওয়ায় এই সংখ্যা এখন আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সাতদিনই গড়ে এক লাখ জনগোষ্ঠীর বিপরীতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন, যা প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
ছবি: Ina Fassbender/AFP/Getty Images
ম্যার্কেলর কথা
সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জনগণকে এবার বিশেষভাবে সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ভ্যাকসিন নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম তিন মাসে দেশটিতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্তরা টিকা পাবেন। এরপর থেকে বাকিদের টিকা দেয়া সম্ভব হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে জার্মানি একা টিকা নিশ্চিত করলে সেটি কাজে আসবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।