সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বেয়ারবক। আলোচনা হবে অপ্রচলিত শক্তির প্রকল্প নিয়ে।
বিজ্ঞাপন
ভারত জি-২০-র সভাপতির পদ পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত সফরে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। দুই দিনের সফরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা আছে তার। সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। মঙ্গলবার ভারতের নির্বাচন কমিশনের অফিসে যাবেন। পরে হরিয়ানায় একটি অপ্রচলিত বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প ঘুরে দেখবেন তিনি। দিল্লি থেকে ওই প্রকল্পটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
জার্মানির নতুন সরকার: ফ্যাশনে পরিচয়?
বুধবার জার্মানিতে নতুন সরকার শপথ নিচ্ছে৷ তিন দলের জোট সরকারের শীর্ষ নেতাদের পোশাক নতুন ধরনের শাসনব্যবস্থার আভাস দিচ্ছে বলে মনে করছেন ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
‘যেন রক ব্যান্ডের সদস্য’
জার্মানির ভবিষ্যৎ চার মন্ত্রী৷ (বাঁ থেকে) ভাইস চ্যান্সেলর এবং ইকোনমি ও জ্বালানিমন্ত্রী রোব্যার্ট হাবেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক, পরিবহন ও ডিজিটাল অবকাঠামো মন্ত্রী ফল্কার ভিসিং এবং অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার৷ কেউ টাই পরেননি৷ আরেকজনের পায়ে স্নিকার৷ জোট সরকার গঠনের আলোচনায় অংশ নিতে তারা এভাবেই গিয়েছিলেন৷ পরে ইতিহাসবিদ ক্লাওদিয়া গাৎস্কা বলেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে ইন্ডি রক ব্যান্ডের সদস্য৷’’
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর
জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে বুধবার শপথ নিতে যাচ্ছেন ওলাফ শলৎস৷ ম্যার্কেল সরকারে তিনি অর্থমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন৷ ছবিতে এ বছর ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে এভাবেই অংশ নিয়েছেন তিনি৷ টি-শার্টের সঙ্গে ছিল ট্রাউজার৷ নির্বাচনি প্রচারণার সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, চ্যান্সেলর হলে সবসময় টাই পরবেন কিনা৷ উত্তরে বলেছিলেন, বেশিরভাগ সময় পরবেন, সবসময় নয়৷
ছবি: Bernd von Jutrczenka/dpa/picture alliance
সাধারণত তারা যা পরেন
২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর জোট সরকার গড়তে আলোচনা শুরু করেছিল সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি, সবুজ দল ও মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দল৷ ২৪ নভেম্বর তারা জোট চুক্তিতে উপনীত হয়৷ ছবিটি সেই দিনের৷ খেয়াল করে দেখুন, ডানে থাকা ইকোনমি ও জ্বালানিমন্ত্রী রোব্যার্ট হাবেক টাই পরেননি৷ তাকে কখনো টাই পরতে দেখা যায়নি৷
ছবি: Markus Schreiber/AP/picture alliance
‘নতুন শুরুর পক্ষে’
ছবিঘরের প্রথম ছবি ‘রক ব্যান্ডের’ যে সদস্যদের দেখেছেন এই ছবিতেও তাদের দেখতে পাচ্ছেন৷ জার্মান নির্বাচনের দুদিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর তোলা এই ছবিতে সবুজ দল ও এফডিপির শীর্ষ চার নেতাকে দেখা যাচ্ছে৷ ইতিহাসবিদ ক্লাওদিয়া গাৎস্কা বলেন, ‘‘এ বছরের নির্বাচনে যারা জিতেছেন তারা দেখাতে চান যে তারা পরিবর্তনের পক্ষে, নতুন শুরুর পক্ষে৷ নিজস্ব স্টাইল দিয়ে তারা সেটা ফুটিয়ে তুলেছেন৷’’
ছবি: Instagram/@volkerwissing/via Reuters
সমালোচনা
ফ্যাশন ডিজাইনার ভল্ফগাং ইয়ুপ ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস (বামে) ও ভাইস চ্যান্সেলর রোব্যার্ট হাবেকের (ডানে) পোশাকের কড়া সমালোচনা করেছেন৷ স্পিগেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘তাদের পোশাক অসহায়ত্বের একটা মাত্রার প্রতীক৷’’ হাবেকের মাঝেমধ্যে টাই পরা উচিত বলেও তিনি মনে করেন৷ ‘‘কেউ যদি পোশাককে অবহেলা করে সেটা তার চিন্তাভাবনার ধরনকে প্রতিফলিত করে,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Christophe Gateau/dpa/picture alliance
‘স্বাভাবিক’
স্টাইলের উপর কয়েকটি বইয়ের লেখক ব্যার্নহার্ড রোয়েৎসেল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সময় পালটেছে৷ এখনকার ‘বিজনেস লুক’ অনেকটাই কম ফর্মাল৷ তাই তিন নতুন নেতার (হাবেক, শলৎস, লিন্ডনার) পোশাক-আশাক এখনকার যুগে একেবারেই ‘স্বাভাবিক’৷’’ সাইকোলজিস্ট ইয়েন্স ল্যোনেকার মনে করেন, ঐ তিন নেতা যে সাদা শার্ট পরেন সেটাকে ক্লাসিক বিজনেস লুক মনে করা যেতে পারে, যা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রতীক৷
ছবি: Frank Molter/Alexey Vitvitsky/Malte Krudewig/dpa/picture alliance
হাই হিলের বেয়ারবক
ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক প্রায় সবসময় উঁচু হিল পরেন৷ ফ্যাশন এক্সপার্ট রোয়েৎসেল মনে করেন, ‘‘এটা তাকে স্টাইলিশের চেয়ে সময়ের চেয়ে পেছনে পড়ে থাকা মানুষ বানিয়ে দেয়৷’’ এছাড়া বেয়ারবক যে সবসময় সর্বাধুনিক ফ্যাশন ট্রেন্ড মেনে চলেন তা মনে করেন না রোয়েৎসেল৷
ছবি: K. Schmitt/Fotostand/picture alliance
স্নিকার পরে মন্ত্রীর শপথ
বেয়ারবকের সবুজ দলের অন্যতম বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ছিলেন ইয়শকা ফিশার৷ ১৯৮৫ সালে হেসে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি স্নিকার পরে হাজির হয়েছিলেন (ডানে)৷ পরে ১৯৯৮ সালে তিনি জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন৷ তখন অবশ্য ‘আনুষ্ঠানিক পোশাক’ পরেছিলেন তিনি (বামে)৷
ছবি: Michael Jung/Heiz Wieseler/dpa/picture alliance
সেরা পোশাক পরা ব্যক্তি
পুরুষদের ম্যাগাজিন জিকিউ ২০১৬ সালে জার্মানির বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাসকে জার্মানির সবচেয়ে সেরা পোশাক পরা মানুষ নির্বাচিত করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
9 ছবি1 | 9
দিল্লির উদ্দেশে যাত্রা করার আগে বার্লিনে সাংবাদিকদের বেয়ারবক বলেছেন, ''বালির জি-২০ বৈঠকে ভারত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। জি-২০ দেশগুলি একত্রে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় দায়ী করেছে। ভারতও তাতে সায় দিয়েছে। ভারত শেষ পর্যন্ত তাদের স্পষ্ট জানিয়েছে।'' এখানেই শেষ নয়, বেয়ারবক বলেছেন, উন্নয়নশীল অর্থনীতি হিসেবে দ্রুত এগিয়ে চলেছে ভারত। বিশ্বের বহু দেশের সামনে ভারত একটি উদাহরণ। অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যবর্তী সেতুও বটে পৃথিবীর গণতন্ত্রের দেশ। একুশ শতকে ভারত বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে মনে করেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামী বছরের মধ্যে জনসংখ্যার নিরিখেচীনকেও ভারত ছাপিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। ভারতের এই শ্রমশক্তিই ভারতকে আগামীর পথে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন জার্মান গ্রিন পার্টির নেতা এবং দেশের পররাষ্টমন্ত্রী। তবে একই সঙ্গে বেয়ারবকের ইঙ্গিত, ভারতে অভ্যন্তরীণ কিছু সংকট আছে। তবে সংকট বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। উল্লেখ্য, এর আগে দুইবার কাশ্মীর নিয়ে সরব হয়েছিলেন বেয়ারবক। ভারত তার সেই বক্তব্যকে কখনোই মেনে নেয়নি।
ইউক্রেন যুদ্ধ বিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করে বেয়ারবকের বক্তব্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জি-২০ সম্মেলনে বাকি সব দেশের সঙ্গে ভারত রাশিয়া বিরোধী অবস্থান নিলেও বেশ কিছু বিষয়ে ভারত এখনো পশ্চিমা দেশগুলির রাস্তায় হাঁটছে না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভারত নয়। বরং রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। সম্প্রতি জয়শংকর মস্কোয় গিয়েছিলেন। জাতিসংঘেও ভারত রাশিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে ভোটাভুটি থেকে বিরত থেকেছে। ফলে বেয়ারবক-জয়শংকর বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বস্তুত, আগামী একবছরে জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস বারদুয়েক ভারতে আসতে পারেন বলেও জানা গেছে। তার আগে বেয়ারবকের সফর গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি ভারতকে বিপুল টাকা ঋণ দিয়েছে জার্মানি। অপ্রচলিত বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির জন্য এই ঋণ। দুই দিনের সফরে এবিষয়েও বেয়ারবক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে পারেন। মঙ্গলবার হরিয়ানায় তিনি একটি প্রকল্প দেখতেও যাবেন।