1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুই নেতাকে বহিষ্কারে কী বার্তা তৃণমূলের?

১১ জানুয়ারি ২০২৫

সাবেক সাংসদ ও এক বিধায়ককে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ দলবিরোধী কাজের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে একসময়ের দুই সক্রিয় নেতার বিরুদ্ধে৷

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (মাঝে)৷ ফাইল ফটোছবি: Prabhakar Mani Tiwari

অনেকদিন ধরেই দুই নেতা শান্তনু সেন ও আরাবুল ইসলামকে নিয়ে জল্পনা চলছিল৷ শেষমেশ তাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করল তৃণমূল৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার৷  কত দিনের জন্য তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে, তা বলা হয়নি৷ 

চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেন শাসক দলের সাবেক সাংসদ৷ বেশ কিছুদিন ধরে দলীয় নেতৃত্বের টানাপোড়েন চলছিল৷ রাজ্যসভার সাংসদের মেয়াদ শেষের পরে শান্তনুকে আর টিকিট দেওয়া হয়নি৷ পরবর্তীতে লোকসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে তার নাম শোনা যাচ্ছিল৷ কিন্তু গত বছর শিকে ছেঁড়েনি৷ বরাহনগর বিধানসভা উপনির্বাচনেও টিকিট পেতে পারেন বলে হাওয়ায় ভাসছিল শান্তনুর নাম৷ উত্তর কলকাতার এই নেতার ভোটে লড়া হয়নি৷

তার উপর আরজি কর আন্দোলনের সময়ে সেখানে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন তিনি৷ পাশে দাঁড়ান শান্তনুর স্ত্রী, কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর কাকলি সেন৷ আরজি করের ঘটনাকে সামনে রেখে পথেও নামেন তারা৷ এতে অস্বস্তিতে পড়ে দল৷ আরো নড়বড়ে হয়ে যায় শান্তনুর অবস্থান৷

সম্প্রতি ডায়মন্ডহারবারে স্থানীয় সংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চিকিৎসক সম্মেলনে উদ্যোক্তা ছিলেন শান্তনু সেন৷ গত ডিসেম্বর মাসে টানা সপ্তম বারের জন্য ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন শান্তনু৷ কিন্তু দলে নিজের পুরনো জায়গা ফিরে পাননি তিনি৷ টেলিভিশন চ্যানেলে প্রায় রোজ তাকে দেখা যেত দলের মুখপাত্র হিসেবে৷ সেই তালিকা থেকেও বাদ পড়েছেন চিকিৎসক নেতা৷ এবার একেবারে সাসপেনশনের মুখে পডলেন৷

এদিকে বাম আমলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙর ও আরাবুল ইসলাম প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছিল৷ ভাঙরের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷ ধীরে ধীরে পায়ের তলার মাটি হারাতে থাকেন নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়া আরাবুল৷ এর পাশাপাশি একই এলাকায় উঠে আসতে থাকেন অন্যান্য নেতারা৷

সাম্প্রতিক অতীতে আরাবুলের অবস্থান দলে একেবারেই নড়বড়ে হয়ে উঠেছিল৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে বিরোধী দলের এক কর্মীর খুনের মামলায় আরাবুলের গ্রেপ্তারি দেখে বোঝা গিয়েছিল, তৃণমূলে তার দিন শেষ হয়ে আসছে৷ সূত্রের খবর, নির্বাচনে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা দূর করতে আরাবুলকে জেলে ভরা হয়েছিল৷ ভোট মিটতে আরাবুল জামিন পেয়ে যান৷ 

তৃণমূলে ব্যক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: সুমন ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

আরাবুলের বিপরীতে এক সময়ে শোনা যেত কাইজার আহমেদের নাম৷ পরে উঠে আসেন শওকত মোল্লা৷ এখন বিধায়ক শওকতের সঙ্গে আরাবুলের সর্ম্পক একেবারেই সাপে নেউলে৷ স্থানীয় রাজনীতির রাশ অনেকদিনই হল আরাবুলের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে৷ সাসপেনশনের সিদ্ধান্তে এতে সিলমোহর পড়ে গেল৷ এর আগেও আরাবুলকে ছয় বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়৷ পরে অবশ্য সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল৷ দলের কাজে আবার যোগ দিয়েছিলেন তিনি৷

দলের সিদ্ধান্ত জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শান্তনু৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেকে বলছেন, আরজি কর নিয়ে আমি দলবিরোধী কাজ করেছি৷ আমাকে কেউ প্রমাণ করে দিক, আমি কোন দলবিরোধী কাজ করেছি৷ তা হলে আমার ক্ষমা চাইতে কোনও সমস্যা নেই৷’’

তৃণমূলের অন্দরে টানাপোড়েনের জেরে শান্তনু বিপাকে পড়লেন বলে অনেকে মনে করছেন৷ যদিও চিকিৎসক নেতা মানতে চাননি যে, তিনি অভিষেক শিবিরের অনুগত৷ বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠন বড় করেছেন৷ দুজনের নির্দেশ মেনেই আমরা কাজ করি৷ বিরোধের প্রশ্ন নেই৷’’

তৃণমূল নিয়ে যে জল্পনাই থাকে না কেন, মমতার নেতৃত্ব প্রশ্নাতীত বলেই অনেকের মত৷ সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘তৃণমূলে ব্যক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷  দলটা তৈরি হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে৷ তিনিই সমস্ত ভোটব্যাংক৷ তিনি সমস্ত সিদ্ধান্ত নেন৷ লোকসভা নির্বাচনের পরে দলের পরিষদীয় বৈঠকে বা দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তিনি সেটা স্পষ্ট করেছেন৷ তিনি নিশ্চয়ই মনে করেছেন আরাবুল ইসলাম বা শান্তনু সেন দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন৷ আজকের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মমতা যদি মনে করেন, এ আমার দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করছে বা এই নেতা আরজিকর আন্দোলনের সময় বিরোধীদের মদত দিয়েছে, তা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ তৃণমূল দলটা এতটাই মমতা কেন্দ্রিক, তিনি যেহেতু সর্বময় নেত্রী, তিনি যা মনে করবেন সেটাই হবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি ২৫ বছরের তৃণমূলের ইতিহাস দেখেন, তাহলে লক্ষ্য করবেন, সভাপতি থাকাকালীন পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায় মমতার বিরুদ্ধে মুখ খুলে হারিয়ে গিয়েছিলেন৷ তার থেকে অনেক দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন মুকুল রায়, তাকে বলা হতো তৃণমূলের চাণক্য৷ তিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে৷’’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘একটা সময় আরাবুল বা শান্তনু সেন দলের সৎপাত্র হয়ে কাজ করেছে৷ এখন অনেক নতুন নেতার উৎপত্তি হয়েছে, ফলে অতীতের সৎপাত্র নেতার প্রয়োজন ফুরিয়েছে৷ এরা থাকলে সেই সমস্ত নেতাদের কাজকর্মের অসুবিধা হচ্ছে৷ আমরা ভাঙরে দেখেছি, শওকত মোল্লার দাম আরাবুল ইসলামের থেকে অনেক বেশি৷ এই কারণে আরাবুলকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ আরজি করের ঘটনায়শান্তনু সেনের তুলনায় সন্দীপ ঘোষ বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ এরা কোন কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে দলের কাছাকাছি এসে গেলেন, কতদিনের জন্য এবং কেন সাসপেন্ড করা হয়েছে, তা বলা হয়নি৷ এদের শুধু বার্তা দেয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে তোমরা দলের কাছে অতটা প্রয়োজনীয় নও৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ