1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুই পড়শি, আপন কে?

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
১১ অক্টোবর ২০১৯

দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর৷ দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মিয়ানমার৷ তারপর চারদিকেই ভারত৷ ভূগোলে এই হচ্ছে বাংলাদেশের সীমানা৷ ভারত আর মিয়ানমার- এ দুই পড়শির কে আপন, কে পর?

সামুদ্রিক বন্দর, নদীর পানি ও গ্যাস-কয়লায় বাংলাদেশ-ভারতের অতীত-বর্তমানের লেনদেনের খানিক চিত্র ফেসবুক বার্তায় তুলে ধরেছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ৷ ধারণা করা হচ্ছে, ছাত্রলীগের বিপথগামীরা এই কারণে তাকে হত্যা করেছে৷ এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করতে গিয়ে অনেকে তাই ভারতকে আরেক দফা তুলোধুনো করতে ছাড়ছে না৷ 

অনেক দিন হলো তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না বাংলাদেশ৷ নতুন শঙ্কা আসামের নাগরিকপঞ্জি (ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনস-এনআরসি)৷ সবশেষে ভারতের আচমকা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের কারণে দেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা৷ সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের অনেক মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব চাঙা হয়েছে৷ এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে আপাতত নরেন্দ্র মোদীদের প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী৷ তারা ত্রিপুরার জন্য পাচ্ছে ফেনী নদীর পানি৷ একই রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হবে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস-এলপিজি)৷ প্রয়োজনে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে ভারত৷ দুই প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে বসলেন আর ভারত সব পেয়ে গেল, এমন মত অযৌক্তিক মনে করছেন পানি ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুই প্রধানমন্ত্রী মিট করলেন এক ঘন্টা কি দেড় ঘন্টা৷ তাতে তো সব জিনিস তৈরি হয়ে যায় না৷ তাতে সব সিদ্ধান্ত হয় না৷ দুই দেশকেই কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তাদের পূর্বাপর বিবেচনা করতে হয় ৷ তাদের নিজেদের কতটুকু ছাড় দিতে হবে, তাদের কতটুকু অর্জন করতে হবে- এসব বিষয়ে কৌশল ঠিক থাকে৷'' 

তিনি আরো বলছেন, ‘‘এলপিজি ত্রিপুরাকে বাংলাদেশ দেবে৷ বাংলাদেশতো গ্যাস প্রডিউস করে না৷ এটা কাতার থেকে কিনে আনবে৷ তারপর বাংলাদেশ এটা প্রক্রিয়াজাত করবে৷ তারপর এটা পাইপের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করার কথা৷ সেটা যদি উদ্বৃত্ত হয়ে থাকে তার কিছু অংশ যদি আমরা ত্রিপুরার কাছে বিক্রি করি তাহলে সেটাতো ভালো কথা৷ এই প্রক্রিয়া থেকে আমরা কিছু ব্যবসা করলাম৷ বেনিফিট পেলাম৷''

এদিকে উজানের দেশ ভারতের কারণে ভাটির দেশ বাংলাদেশ কখনো পানি-বঞ্চিত হচ্ছে৷ আবার কখনো বানে ভাসছে৷ এক্ষেত্রে অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ থাকলেও তাতে অগ্রগতি কম৷ তিস্তা চুক্তি ঝুলে ভারতের অনিচ্ছায়৷ বিপরীতে এই দফা ভারতে দেয়া হলো ত্রিপুরা নদীর পানি৷ এ প্রসঙ্গে পানি বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলছেন, ‘‘শুকনো মৌসুমে ফেনী নদীতে ৫০ কিউসেক পানি থাকে৷ তারা যদি সেখান থেকে দুই কিউসেক নেয় সেখানে বাংলাদেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ার কথা না৷ ফেনীর পানি থেকে তারা যে অল্প খাবার পানি নিচ্ছে, বাংলাদেশের সম্মতি নিয়ে তারা করছে৷ আমি মনে করি এটা অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়৷'' 

‘‘এলপিজি ত্রিপুরাকে বাংলাদেশ দেবে’’

This browser does not support the audio element.

সামান্য হলেও ফেনী নদীর পানি নিচ্ছে ভারত৷ দিচ্ছে না তিস্তার পানি৷ ভারতের এই পানি-কূটনীতি ভালো চোখে দেখছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলছেন, ‘‘ফেনী নদীর পানি তারা নিচ্ছে মাত্র আট হাজার লোকের একটা জনবসতির জন্য, তাদের পানীয় জলের জন্য৷ এর তুলনায় বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের সেচের জন্য, জীববৈচিত্র্য রক্ষা জন্য ও নৌপথে যাতায়াতের জন্য যে পানির প্রয়োজন আছে, তার জন্য ৫৪টা নদীর পানির প্রয়োজন৷ এটা নিয়ে অনেক বছর ধরে আলোচনা চলছে৷ আজ পর্যন্ত সেটা পাওয়া যায় নাই৷ তিস্তা নদীর পানি ২০১১ সালে চুক্তি পর্যায়ে গিয়ে কিন্ত চুড়ান্ত হয় নাই৷ ভারতের এই অবস্থান বাংলাদেশের মানুষকে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ করে৷''

একদিকে রোহিঙ্গা, অন্যদিকে এনআরসি

লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিপীড়ন, তাদের বাংলাদেশে বিতাড়নের কারণে আরেক প্রতিবেশি মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে৷ এ নিয়ে যৌথ কূটনীতি থাকলেও রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসনে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই৷ এ বিষয়ে বাংলাদেশের কিছুটা দূরতম প্রতিবেশি চীন বরাবরই মিয়ানমারের পক্ষে কথা বলছে৷ আর যাদের দিকে কিছুটা ভরসার চোখে তাকিয়ে ছিলো বাংলাদেশ, সেই ভারত দুই পক্ষের সঙ্গেই সমতা রেখে চলছে৷ উল্টো আসামের এনআরসি নিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে দিল্লির মসনদে থাকা দল বিজেপির শীর্ষনেতারা৷ তারা এনআরসিতে বাদ পড়া ১৯ লাখ মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে৷ তবে আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে মৌখিক আশ্বাস দিয়ে দিল্লি ঢাকাকে বলছে,  এনআরসি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এটা নিয়ে বাংলাদেশের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷

এবার হাসিনা-মোদী বৈঠকে এনআরসি এই রকম পর্যায়েই ছিলো৷ 

‘‘ভারতের এই অবস্থান বাংলাদেশের মানুষকে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ করে’’

This browser does not support the audio element.

এটা আরও গুরুত্ব পাওয়া প্রয়োজন ছিলো বলে মনে করছেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল৷ তিনি বলছেন, ‘‘বাংলাদেশের অনেক বড় একটা কনসার্ন ছিলো এনআরসি৷ তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, বাদপড়াদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷ এতো বড় একটা ব্যাপার৷ বাংলাদেশে যদি এমন একটা তালিকা করা হতো৷ ১৯৪৭ সাল থেকে কারা ভারত থেকে এখানে এসেছে৷ তাদের তালিকা করে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি বলতেন, তাদের ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷ কি অবস্থা করতো ভারত বাংলাদেশকে৷ এতো বড় একটা ইস্যু শুধু মৌখিক আশ্বাসে হয় না৷ রাষ্ট্রের বিষয় মৌখিক আশ্বাসে হয় না৷''

এদিকে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে চলছে বিতণ্ডা৷ বিজেপি এখানে তা করতে চাইছে৷ তার প্রবল বিরোধিতা করছে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট৷ ওই অঞ্চলে এনআরসির আওয়াজ বাংলাদেশের জন্য আরও বড় বিপদ-সংকেত৷ তবে তা যদি শুধু তাদের রাজ্য-রাজনীতিতেই সীমিত থাকে তবে ভয় নেই৷ কিন্তু তৃণমূলের রাজনীতির ফায়দার কারণেই ঝুলে আছে তিস্তা চুক্তি৷ আর নিজের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে প্রবল কূটনীতি করতে পারছে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ভাষ্যকার অধ্যাপক আসিফ নজরুল৷ তিনি বলছেন, ‘‘যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসলেন সেসময় তিস্তার পানি দেওয়া হয়নি বলে ট্রানজিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ এখন যেহেতু সরকারের জনভিত্তি নেই৷ এ কারণে সরকারে দর কষাকষির শক্তি কমে গেছে৷ এই সরকার টিকে আছে বিভিন্ন বাহিনীকে ভর করে এবং ভারতের সমর্থনে৷ এ কারণে ভারত বহুকিছু আদায় করে নিতে পারছে৷ বর্তমান সরকার শুধুমাত্র ভারতের মন রক্ষা করে টিকে আছে৷''

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

তায়েব মিল্লাত হোসেন সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ