দুই বছরেরও বেশি সময় পর মঙ্গলবার দুই কোরিয়ার মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এই সময় উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শীতকালীন অলিম্পিকে প্রতিনিধি পাঠানোর কথা জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
অ্যাথলেট পাঠানোর পাশাপাশি একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল, সমর্থক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড় পাঠাতে চেয়েছে উত্তর কোরিয়া৷
দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাং-এ আগামী মাসে (৯-২৫ ফেব্রুয়ারি) শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে৷ এলাকাটি দুই কোরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত সেনামুক্ত এলাকা (ডিমিলিটারাইজড জোন বা ডিএমজেড) থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে৷
মঙ্গলবারের আলোচনাটি ডিএমজেড-এ অবস্থিত পানমুনজোম গ্রামের পিস হাউসে অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ স্থানীয় সময় সকাল দশটায় দুই দেশের পাঁচজন করে প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ নেন৷ দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির একত্রীকরণ মন্ত্রী চো মিয়ং-গিওন৷ আর উত্তরের পক্ষে ছিলেন রি সন-গিওন৷
অলিম্পিকের উদ্বোধনীতে দুই দেশের অ্যাথলিটদের একসঙ্গে অংশ নেয়ার প্রস্তাব করেছে দক্ষিণ কোরিয়া৷ এছাড়া অলিম্পিকের সময় কোরীয় যুদ্ধের কারণে পৃথক হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দেখা করার সুযোগ দেয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছে৷
যে দেশে জিন্স ‘হারাম’, গাঁজা ‘হালাল’
দেশটি এতটাই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী যে সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবেই ‘জিন্স’-এর পোশাক পরা নিষিদ্ধ৷ অথচ অন্যদিকে যে যত খুশি ‘গাঁজা’ সেবন করতে পারবেন! এমন দেশ উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে জানুন মজার কিছু তথ্য৷
ছবি: Getty Images/C. Chu
ইচ্ছে মতো চুল কাটা মানা
হ্যাঁ, উত্তর কোরিয়ায় যার যেমন খুশি চুল কাটবেন সে উপায় নেই৷ স্বৈরশাসক কিম জং উন ক্ষমতায় আসার পর পরই ঠিক করে দিয়েছেন, দেশের সব পুরুষকে বিশেষ ১০টি আর মেয়েদের ১৮টি হেয়ার স্টাইলের মধ্যেই যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে৷ আর কিম জং উন যেভাবে চুল কাটান সেভাবে দেশের আর কেউ কাটাতে পারবেন না৷
ছবি: picture alliance/AP Images
যে দেশে ‘স্বর্গ’ আছে...
উত্তর কোরিয়ার সব মানুষ মন থেকে নিজের দেশকে ‘স্বর্গ’ না বললেও, যাঁরা গাঁজা সেবন করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বলেন৷ এ দেশে যে যত খুশি গাঁজা খেতে পারেন৷ গাঁজা সেখানে কোনো নিষিদ্ধ মাদক নয়৷ সুতরাং যে যত খুশি গাঁজা খেলে কোনো সমস্যাই নেই৷
ছবি: picture alliance/Photopqr/l'Alsace
সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম
বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামটি কিন্তু উত্তর কোরিয়ায়৷ নাম রুনগ্রাদো মে ডে স্টেডিয়াম৷ ১৯৮৯ সালের পহেলা মে স্টেডিয়ামটির কাজ শেষ হয়েছিল বলে নামের সঙ্গেও জুড়ে দেয়া হয়েছে ‘মে দিবস’৷ ১ লক্ষ ৫০ হাজার দর্শকের আসন আছে স্টেডিয়ামটিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জন্মদিনেও বাধা...
উত্তর কোরিয়ায় বছরের বিশেষ দু’টি দিনে কেউ জন্ম নিলে সেই দিনে জন্মদিন উদযাপন করা যাবে না৷ উত্তর কোরিয়া সাবেক দুই শাসক কিম ই সুং এবং কিম জং ইল মৃত্যুবরণ করেছিলেন বলে সেই দিনগুলোতে দেশের কোনো সাধারণ মানুষের জন্মদিন উদযাপন রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ৷ এ নিয়ম মানতে গিয়ে প্রায় ১ লাখ মানুষকে ৮ জুলাই বা ১৭ ডিসেম্বরের জন্মদিন উদযাপন করতে হয় একদিন পর, অর্থাৎ ৯ জুলাই এবং ১৮ ডিসেম্বরে৷
ছবি: Fotolia/Jenny Sturm
যুক্তরাষ্ট্র ‘শত্রু’, তাই...
এক সময় উত্তর কোরিয়ায় সমাজতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা ছিল, কিন্তু এখন যে ধরনের শাসন চলছে তাকে সমাজতান্ত্রিক বলার উপায় নেই৷ দেশের নাম ‘ডেমোক্র্যাটিক পিপল’স রিপাবলিক অফ কোরিয়া’, অথচ ঘোষিতভাবেই চলছে একদলীয় শাসন৷ তবে সমাজতন্ত্র না থাকলেও উত্তর কোরিয়ার সেই ‘শীতল যুদ্ধের’ সময়কার যুক্তরাষ্ট্রবিরোধিতা ঠিকই আছে৷ যুক্তরাষ্টের মানুষ বেশি জিন্স পরে বলে এ দেশে জিন্স পরা নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
5 ছবি1 | 5
অবশ্য আলোচনার সময় উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার বার্ষিক মহড়া বন্ধ করার কথা বলেছে কিনা তা জানা যায়নি৷ উল্লেখ্য, এই মহড়া নিয়ে অনেকদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছে উত্তর কোরিয়া৷
এদিকে, আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে থাকা সামরিক হটলাইন আবার চালু করেছে উত্তর কোরিয়া৷
তবে আগের কয়েকটি আলোচনার চেয়ে মঙ্গলবারের আলোচনার পরিবেশ আন্তরিক ছিল বলে বার্তা সংস্থাগুলো জানাচ্ছে৷ দক্ষিণের প্রতিনিধি দলকে উত্তরের প্রতিনিধি দলের প্রধান রি বলেন, ‘‘চলুন নতুন বছরে আমরা মানুষকে একটি মূলব্যান উপহার দেই৷'' এরপর তিনি যোগ করেন, ‘‘একটা কথা আছে যে, দুজন মিলে যাত্রা করলে সেটা একজনের যাত্রার চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়৷''
দুই কোরিয়ার মধ্যে আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া৷
উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তবে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন তাঁর নববর্ষের ভাষণে দক্ষিণের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আগ্রহ দেখান৷ এই সময় তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার অলিম্পিকে উত্তরের প্রতিনিধি দল পাঠানোরও আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন৷
উনের এই ধরনের বক্তব্যের পর দক্ষিণ কোরিয়া মঙ্গলবারের বৈঠকের প্রস্তাব করেছিল৷ এছাড়া সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে বন্ধ থাকা টেলিফোন হটলাইন আবার চালু হয়েছে৷
যে দেশের গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই
না দেশটা বাংলাদেশ নয়৷ তবে বাংলাদেশের অবস্থা যে খুব একটা সুবিধাজনক তাও নয়৷ চলুন দেখে নেই, প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স অনুযায়ী কোন দেশের গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন৷
ছবি: DW/D. Olmos
ইরিত্রিয়া
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রকাশিত ২০১৬ প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স অনুযায়ী, যে দেশটিতে গণমাধ্যমের কোনোই স্বাধীনতা নেই, সেটি হচ্ছে ইরিত্রিয়া৷ গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে স্বৈরশাসকের কবলে থাকে দেশটির কমপক্ষে ১৫ সাংবাদিক এই মুহূর্তে জেলে আছেন৷ প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে সবার নীচে আছে ইরিত্রিয়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
উত্তর কোরিয়া
ইরিত্রিয়ার পরই নীচের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে উত্তর কোরিয়া৷ কিম জুন-উনের নেতৃত্বাধীন দেশটি গত ১৫ বছর ধরেই প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের একেবারে নীচের দিকে অবস্থান করছে৷ দেশটিতে বিদেশি সাংবাদিকদের ভিসা তেমন দেয়া হয় না, যদিও বা কেউ ভিসা পান, তাঁকে রাখা হয় কড়া নজরদারিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap/Kcna
তুর্কমেনিস্তান
এই দেশটিকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম তথ্য কৃষ্ণ গহ্বর৷ স্বাধীনভাবে কোনো সাংবাদিক কাজ করতে চাইলে তাঁর জন্য মোটামুটি কারাভোগ এবং নির্যাতন নিশ্চিত দেশটিতে৷ ইনডেক্সে তাদের অবস্থান নীচের দিক থেকে তৃতীয়৷
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
ফিনল্যান্ড
এবার যাওয়া যাক, তালিকার উপরের দিকের অবস্থা৷ গত পাঁচবছর ধরেই প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের শীর্ষে অবস্থান করছে ফিনল্যান্ড৷ দেশটির গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করে৷ তবে সেদেশের অধিকাংশ পত্রিকা দু’টি মিডিয়া গ্রুপের মালিকানায় রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/van Weel
নেদারল্যান্ডস
প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে গত একবছরে দু’ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে নেদারল্যান্ডস৷ দেশটির গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আইনিভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে৷
ছবি: Imago/SylviaxLederer
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে গতবছর চারজন ব্লগার এবং প্রকাশক খুন হওয়ার পরও প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে কিঞ্চিৎ উন্নতি ঘটেছে৷ আগের বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়ে দেশটির অবস্থান এখন ১৪৪তম, তবে গ্লোবাল স্কোর কমেছে মাইনাস ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ৷