দুই বিচারপতি একমত হতে পারেননি, তাই শিক্ষা-দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন না পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বিজ্ঞাপন
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ সব অভিযুক্তকে জামিন দেয়ার পক্ষে রায় দেন। কিন্তু অন্য বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায় জানিয়ে দেন, চারজনকে জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে তার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ পাঁচজনকে জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে তার আপত্তি আছে।
দুই বিচারপতি একমত হতে না পারায় মামলা এবার যাবে তিন বিচারপতির বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবার বেঞ্চ গঠন করবেন।
যে চারজনের জামিন নিয়ে দুই বিচারপতি একমত হয়েছেন, তারা অবশ্য জামিন পাবেন। এই চারজন হলেন কৌশিক ঘোষ, শেখ আলি ইমাম, সুব্রত সামন্ত রায় এবং চন্দন ওরফে রঞ্জন মণ্ডল। আর যারা জামিন পাবেন না এবং যাদের আবেদনের বিচার এবার তিন বিচারপতির বেঞ্চ করবে, তারা হলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অশোক সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিনহা। .
দুই বিচারপতির যুক্তি
বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে জামিন দেয়ার পক্ষে ছিলেন। কারণ, তিনি সংবিধানের ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ তোলেন এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এতদিন ধরে জেলে বন্দি করে রাখা, তার বয়স, শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে তিনি সাবেক মন্ত্রীকে জামিন দেয়ার পক্ষে ছিলেন।
পার্থের বান্ধবী অর্পিতার বাড়ি থেকে আরো টাকা উদ্ধার
বুধবার দিনভর অর্পিতার আরেকটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। উদ্ধার আরো টাকা এবং সোনা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এসএসসি দুর্নীতি এবং অর্পিতা
গত শনিবার স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) দুর্নীতির অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শিল্পমন্ত্রী এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গ্রেপ্তার হয়েছেন তার বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। অর্পিতার দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি থেকে ২০ কোটিরও বেশি টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছিল ইডি। বুধবার তার আরেকটি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বেলঘরিয়ার বাড়ি
উত্তর কলকাতা শহরতলির বেলঘরিয়ায় এই আবাসনে অর্পিতার আরো দুইটি ফ্ল্যাট আছে। বুধবার তারই একটিতে তল্লাশি চালায় ইডি। উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা এবং গয়না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী কী উদ্ধার
দিনভর তল্লাশি চালিয়ে ইডি শুধুমাত্র এই ফ্ল্যাটটি থেকে ২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে। তার সঙ্গে ছিল চার কোটি ৩১ লাখ টাকা বাজার মূল্যের সোনার গয়না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
১৯ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি
বাড়িটিতে বুধবার ১৯ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালায় ইডি। পরে ফ্ল্যাটটিতে নোটিস লাগিয়ে সিল করে দেওয়া হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
টাকা গোনার যন্ত্র
টাকা গোনার জন্য ব্যাংক থেকে চারটি বিশেষ যন্ত্র নিয়ে আসা হয় রাতের দিকে। সেই যন্ত্রের সাহায্যেই সারা রাত ধরে টাকা গোনা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
টাকা নেওয়ার ট্রাঙ্ক
টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ ট্রাকে ২০টি ট্রাঙ্ক নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে সেই ট্রাঙ্কে টাকা বোঝাই করে ট্রাকে তোলা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান
বুধবার দুপুরে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান চেয়ে পাঠায় ইডি। তারা এসে ফ্ল্যাটটি ঘিরে ফেলে। সকাল পর্যন্ত তারা এলাকায় পাহারায় ছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইডির অফিসাররা
বিকেলের পর ইডির উচ্চপদস্থ অফিসাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। তাদের উপস্থিতিতেই টাকা গোনার কাজ হয়েছে। আবাসনের এক আবাসিককেও সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অন্য ফ্ল্যাটটি
ওই একই আবাসনে আরো একটি ফ্ল্যাট আছে অর্পিতার। সেখানে এখনো তল্লাশি চালানো হয়নি। ফ্ল্যাটটি সিল করে দিয়ে গেছে ইডি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অর্পিতার মা
গোটা ঘটনায় হতভম্ব অর্পিতার মা। বলেছেন, মেয়ে কী করছে, তার কোনো খবর তার কাছে ছিল না। তিনি ভাবতেও পারচেন না এমন সব ঘটনা ঘটেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মানিককে জেরা
বুধবার সিজিও কমপ্লেক্সে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে ১৪ ঘণ্টা টানা জেরা করছে ইডি। শুক্রবার তাকে ফের যেতে বলা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কুণাল ঘোষের বক্তব্য
বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল এবং মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, যদি তার কথা দলের পছন্দ না হয়, তাহলে তাকে দল থেকে বিতাড়িত করা হোক। কিন্তু তিনি এই দুর্নীতি মেনে নেবেন না।
তার মতে, চারজনের ক্ষেত্রে এই যুক্তি খাটে না। কারণ, ওই চারজন হলেন এজেন্ট। তারা টাকার বিনিময়ে কাজ করেছিলেন বলে তাদের জামিন মঞ্জুর হয়েছে।
প্রায় ছয় মাস ধরে জামিন নিয়ে শুনানি চলার পর বুধবার হাইকোর্ট এই রায় দিয়েছে।
কতদিন জেলে পার্থ
২০২২ সালের ২৩ জুলাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর থেকে তিনি বন্দি অবস্থায় আছেন। জামিন চেয়ে বারবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন পার্থ। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে গেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তিনি জামিন পাননি। কলকাতা হাইকোর্টে দীর্ঘ শুননির পরেও এবারো তার জামিন আটকে গেল।