বায়োনটেক-ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাকসিন দেয়া চালু হয়েছে। সেই ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্নোত্তর রইলো এই প্রতিবেদনে।
বিজ্ঞাপন
এখনো পর্যন্ত ইইউ ও অ্যামেরিকা বায়োনটেক-ফাইজার ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছে। অ্যামেরিকা মডার্নার টিকাও অনুমোদন করেছে। ইইউ হয়তো জানুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ মডার্না প্রতিষেধক চালুর অনুমতি দিতে পারে।
করোনার আরো প্রতিষেধকও অনুমোদন পাওয়ার পথে। এখানে ভ্যাকসিন নিয়ে যে সব প্রশ্ন হামেশা করা হয়, তার জবাব দেয়া হলো।
দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন আলাদা হয় কীভাবে?
যে দুইটি ভ্যাকসিন চালু হয়েছে, তারা তথাকথিত এমআরএনএ ভ্যাকসিন। তারা মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রোটিন রেপ্লিকেট করে। শরীরে তখন ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু দুইটি ভ্যাকসিনের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। মডার্নার ভ্যাকসিন সাধারণ ঘরোয়া ফ্রিজে ৩০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়।
মডার্নার ভ্যাকসিন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমান লাগে না। কিন্তু বায়োনটেক-ফাইজারের ভ্যাকসিনের জন্য লাগে। তবে ব্যবহার করার আগে এই ভ্যাকসিন পাঁচদিন ফ্রিজে রাখা যায়।
কেন এই প্রতিষেধক ভ্যাকসিন সেন্টারে দেয়া হয় বা কেয়ার হোমে মোবাইল টিম দেয়?
আসলে এই ভাবে ফ্রোজেন বায়োনটেক-ফাইজার ভ্যাকসিন পেশাদারভাবে তৈরি করা এবং তা দেয়ার জন্যেও পেশাদার মানুষ প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞেরা পাঁচটি ভ্যাকসিন ডোজ একবারে উষ্ণ করতে পারেন।
এই জটিল প্রক্রিয়ার জন্যই যে সব বয়স্করা একা থাকেন, তাঁদের বাড়ি গিয়ে ভ্যাকসিন দেয়া হয় না। অন্তত এখন তা দেয়া হচ্ছে না।
তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। বায়োনটেক-ফাইজার ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ ১৭ থেকে ২১ দিনের মধ্যে নিতে হয়। এর পরেও দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যায়। তবে সময়ের মধ্যেই তা নেয়া ভালো।
দ্বিতীয় ডোজে কি অন্য ভ্যাকসিন নেয়া যায়?
না। প্রথম ও দ্বিতীয়বার একই ভ্যাকসিন নিতে হবে। এই মুহূর্তে রেগুলেটরদের কাছে বিভিন্ন ভ্যাকসিন সম্পর্কে খুব বেশি অভিজ্ঞতা বা পরীক্ষার ফল হাতে নেই। তাই মানুষ যেন এই ঝুঁকি না নেন।
করোনা ভ্যাকসিন: কোন দেশের কী কৌশল
এক বছরেরও কম সময়ে করোনার কার্যকরী একাধিক ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছে বিভিন্ন কোম্পানি৷ সেগুলো অনুমোদনও পেতে শুরু করেছে৷ আগেভাগে সংগ্রহে দেশগুলোর মধ্যে তোড়জোড় যেমন চলছে; তেমনি নাগরিকদের টিকা প্রদানে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কৌশল৷
ছবি: Allan Carvalho/NurPhoto/picture-alliance
পথ দেখালো যুক্তরাজ্য
আট ডিসেম্বর বায়োনটেক ও ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ নেন ৯০ বছরের মার্গারেট৷ যুক্তরাজ্যে প্রথম আট লাখ টিকা পাবেন তার মতো প্রবীণ, সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মীসহ বাকি বয়স্ক নাগরিকরা৷ ফাইজারের কাছে মোট চার কোটি ডোজ টিকার অর্ডার দিয়েছে দেশটি; যার মাধ্যমে দুই ডোজ করে দুই কোটি মানুষের ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা মিলছে৷ পাঁচ কোটি ত্রিশ লাখ নাগরিকের সবাইকে টিকা দিতে যুক্তরাজ্যকে নির্ভর করতে হবে অন্য কোম্পানিগুলোর উপরে৷
ছবি: Jacob King/AP Photo/picture alliance
প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র
বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রও৷ দেশব্যাপী ছড়ানো বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ২৯ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান পৌঁছেছে৷ ফাইজার থেকে আরো ২০ লাখ আর মডার্নার ৫৯ লাখ ডোজের চালান ছাড় হতে পারে আসছে সপ্তাহে৷ এই দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের৷ প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সিং হোমে বসবাসরত, জরুরি সেবায় নিয়োজিত এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যধিতে আক্রান্তরা টিকা পাবেন৷
ছবি: Bran Woolston/REUTERS
ক্যানাডার তোড়জোড়
মডার্নার কাছ থেকে এক লাখ ৬৮ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পেতে সম্প্রতি চুক্তি করেছে ক্যানাডা৷ শর্ত অনুযায়ী অনুমোদন পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই চালান ছাড় শুরু করবে কোম্পানিটি৷ তবে তার আগেই ফাইজারের টিকা পৌঁছে গেছে দেশটিতে৷ ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে প্রয়োগও৷
ছবি: Adrian Wyld/REUTERS
দেরি করেনি সৌদি
আরব নিউজের সংবাদ অনুযায়ী, ১৬ ডিসেম্বর সৌদি আরবে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার প্রথম চালান পৌঁছায়৷ পরের দিন থেকেই শুরু হয়েছে প্রয়োগ৷ টিকা পেতে একদিনে মোট দেড় লাখ মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন৷ সবাইকে বিনামূল্যে দেয়ার কথা থাকলেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে পাবেন ৬৫ বছরের বেশি বয়সি, বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী আর স্বাস্থ্যকর্মীরা৷
ছবি: Ahmed Yosri/REUTERS
শুরু হচ্ছে ইসরায়েলে
ইসরায়েলের গণমাধ্যম হারিৎস-এর তথ্য অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রথম টিকা নেবেন দেশটিতে৷ এরপর প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে পাবেন বাকি জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ সাধারণ নাগরিকদের টিকা প্রদান শুরু হবে আসছে সপ্তাহে৷ শুরুতে অগ্রাধিকার পাবেন বয়স্করা৷ প্রাথমিক পর্যায়ে ফাইজারের কাছ থেকে কয়েক লাখ ভ্যাকসিন নিচ্ছে দেশটি৷ দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালে রয়েছে নিজেদের উদ্ভাবিত একটি ভ্যাকসিনও৷
ছবি: Abir Sultan/REUTERS
অপেক্ষায় জার্মানি
নভেম্বরের শুরুতেই টিকা কর্মসূচির কৌশল নির্ধারণ করেছে জার্মানির সরকার৷ ইইউর মাধ্যমে ৩০ কোটি টিকার অর্ডার দিয়েছে দেশটি৷ টিকা পাওয়া মাত্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৬০ টি বিতরণ কেন্দ্রে সেগুলো পৌঁছে দেবে সরকার৷ তবে সাধারণ মানুষকে এর আওতায় আসতে বেশ কয়েক মাস অপেক্ষায় থাকতে হবে৷ কেননা, শুরুতে প্রাধান্য পাবেন বয়স্ক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকরা৷ এই তালিকায় আছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিতরাও৷
ছবি: Ralph Orlowski/REUTERS
জাপানে মহাযজ্ঞ
নিজেদের ১২ কোটি জনগোষ্ঠীর সবার জন্য আগামী জুনের মধ্যে করোনার টিকা নিশ্চিত করতে চায় জাপান সরকার৷ এজন্য ফাইজার, আস্ট্রাজেনেকা, মডার্নার কাছ থেকে ২৯ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি হয়েছে৷ জনগণকে বিনা খরচেই এই টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার গত অক্টোবরেই৷ ভ্যাকসিন সংরক্ষণে এরই মধ্যে সাড়ে দশ হাজার ডিপ ফ্রিজার কেনাসহ মহাযজ্ঞ হাতে নেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
শেষ ধাপে চীন
পরীক্ষার শেষ ধাপে রয়েছে চীনের বিভিন্ন কোম্পানির বেশ কয়েকটি টিকা৷ সেগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন না পেলেও জরুরি ভিত্তিতে এরই মধ্যে ১০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী ও ঝুঁকিতে থাকা নাগরিককে পরীক্ষামূলক টিকা দেয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন প্রদেশের সরকার আগেভাগেই কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে জনসংখ্যার হিসাবে টিকার অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রেখেছে৷ কারা আগে ভ্যাকসিন পাবেন তার অগ্রাধিকার তালিকাও তৈরি করছে প্রশাসন৷
ছবি: Wang Zhao/AFP/Getty Images
একাধিক টিকার অপেক্ষায় ভারত
আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ৩০ কোটি নাগরিককে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা মোদী সরকারের৷ প্রথম ধাপের এই টিকা কর্মসূচীর আওতায় আসবেন স্বাস্থ্যকর্মী ও পঞ্চাশোর্ধ্বরা৷ এতে খরচ হবে ১৪০ থেকে ১৮০ কোটি ডলার৷ পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকবে ২৩টি মন্ত্রণালয়৷ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও আস্ট্রাজেনেকা, রাশিয়ার স্পুটনিক এবং ভারতীয় জাইডাস কেডিলা ও ভারতী বায়োটেকের টিকা আছে সম্ভাব্য প্রাপ্তির তালিকায়৷
ছবি: Dado Ruvic/REUTERS
চীনে চোখ পাকিস্তানের
চীনের একটি টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে পাকিস্তানে৷ ভ্যাকসিন কেনার জন্য ইমরান খান সরকারের এখন পর্যন্ত ঘোষিত বাজেট ২৫ কোটি ডলার৷ এই অর্থ দিয়ে একাধিক টিকা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনা তাদের৷ প্রথম পর্যায়ে অগ্রাধিকার পাবেন কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থকর্মী এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা৷ পরবর্তী ধাপে গুরুত্ব দেয়া হবে বাকি স্বাস্থ্যকর্মী এবং ষাটোর্ধ্বদের৷
ছবি: Aamir Qureshi/AFP/Getty Images
অক্সফোর্ডের ভরসায় বাংলাদেশ
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পেতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশের বেক্সিমকো৷ যার মাধ্যমে পাওয়া যাবে তিন কোটি টিকা৷ এতে দেড় কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে৷ টিকা প্রদানে অগ্রাধিকারের জন্য ১০ ধরনের জনগোষ্ঠীর তালিকা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Cairns
11 ছবি1 | 11
করোনা হওয়া সত্ত্বেও কি ভ্যাকসিন নেয়া জরুরি?
যাঁদের করোনা হয়েছে, তাঁদেরও ভ্যাকসিন নেয়া জরুরি এবং তাঁদের প্রতিষেধক দেয়া হচ্ছে। কারণ, একবার করোনা হলে যে তা আবার হবে না বা নির্দিষ্ট সময়ের পরে হবে না, এরকম কোনো পরীক্ষিত তথ্য হাতে নেই।
তবে যাঁদের করোনা হয়েছে, জ্বর আছে বা সর্দি হয়েছে, তাঁদের তখনই ভ্যাকসিন দেয়া উচিত নয়। সেরে যাওয়ার পর দেয়া উচিত।
কোয়ারান্টিনে থাকা মানুষদেরও ভ্যাকসিন দেয়া উচিত নয়। কারণ, তাঁরা করোনায় আক্রান্ত এক বা একাধিক মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। কোয়ারান্টিনের সময় শেষ হলে তাঁদের ভ্যাকসিন দেয়া উচিত।
যাঁরা প্রতিষেধক নিতে চান, তাঁদের ভ্যাকসিন দিতে কত সময় লাগবে?
সব মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে কয়েক বছর সময় লাগবে। উন্নত দেশগুলিতেও সময় লাগবে। ২০২২ এর আগে অন্তত সব মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব নয়।
জার্মানির উদাহরণ নেয়া যাক। স্বাস্থ্য কর্তাদের আশা, ২০২১ সালের মার্চের মধ্যে বায়োনটেক-ফাইজারের এক কোটি ৩০ লাখ ভ্যাকসিন তাঁরা পাবেন। প্রত্যেককে দুইটি করে ডোজ দিতে হবে। তা হলে ওই সময়ের মধ্যে মোট জনসংখ্যার দশভাগের একভাগকে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে।
বায়োনটেকের সিইও ডিডাব্লিউকে বলেছেন, তাঁর কোম্পানি ও ফাইজার আগামী বছর ১৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করবে।
যদি আরো ভ্যাকসিন বাজারে আসে, তা হলেও বিশ্বের ৭৮০ কোটি লোককে দিতে অনেক সময় লাগবে। তবে বয়স্ক মানুষ বা যাঁদের অন্য রোগ আছে, তাঁদের আগামী বছর গরমের আগে ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব হবে।
কাদের ভ্যাকসিন দেয়া ঠিক নয়?
সাধারণত এই সিদ্ধান্ত চিকিৎসকরা নেবেন। কারো যদি কিছু বিশেষ লক্ষণ থাকে, তা হলে তাঁদের ভ্যাকসিন দেয়া উচিত কি না, সেটা তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন। অর্থাৎ, কারো বিশেষ ধরনের অ্যালার্জি থাকলে বা অ্যানাফিল্যাকটিক শক পেলে তাঁকে ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়টি চিকিৎসকরা ভেবে দেখবেন।
কিন্তু যাঁদের সাধারণ অ্যালার্জি আছে, তাঁরা এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। ডায়াবেটিস, ওবেসিটি বা যাঁদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেছে, তাঁরাও ভ্যাকসিন নেবেন। কারণ, তাঁদের করোনা হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
যুক্তরাজ্যে যেভাবে শুরু হল করোনা ভ্যাকসিনের বিশাল কার্যক্রম
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বায়োনটেক-ফাইজার ভ্যাকসিন দিতে শুরু করেছে যুক্তরাজ্য৷ ডিসেম্বরের ৮ তারিখে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের প্রথম ধাপে দেয়া হবে আট লাখ ডোজ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
এক সেকেন্ডের ব্যাপার
মার্গারেট কিনান, ম্যাগি হিসেবে পরিচিত৷ যুক্তরাজ্যে ফাইজার-বায়োনটেকের প্রথম ভ্যাকসিন দেয়া হয় ৯০ বছরের এই ব্রিটিশ নারীকে৷ ভোর ছয়টা ৩১ মিনিটে তাকে প্রথম ডোজটা দেয়ার পর থেকে খুব খুশি তিনি৷ জুয়েলারি দোকানের এক সময়ের সহকারী ম্যাগি ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি হসপিটাল কভেন্ট্রিতে টিকা নেন৷ টিকা দিতে মাত্র এক সেকেন্ড সময় লাগে৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
ম্যাগির প্রতিক্রিয়া
প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পেয়ে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান আর সুবিধাভোগী মনে করছেন তিনি৷
ছবি: NHS England and NHS Improvement/REUTERS
ম্যাগির পরামর্শ
‘‘সবার জন্য আমার পরামর্শ, আমি যদি ৯০ বছরে এটা নিতে তোমরা অবশ্যই পারবে৷’’ টিকা নেয়ার পর হাসপাতালের হলওয়েতে হুইলচেয়ারে করে যখন তাঁকে নেয়া হয় হাসপাতালের কর্মীরা হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানান তাঁকে৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার
ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ইমিউনাইজেশন কর্মসূচিতে টিকা নেয়ার প্রথম সারিতে ছিলেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বিল৷ ৮১ বছর বয়সি বিল ভ্যাকসিন নেন কভেনট্রির ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
পশ্চিমা বিশ্বে প্রথম ভ্যাকসিন
বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বর্তমানে ৬ কোটি ৭০ লাখ৷ মারা গেছে ১৫ লাখ ৪০ হাজার মানুষ৷ সেক্ষেত্রে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রথম কার্যক্রম শুরু করলেন৷ মার্কিন ফার্মা জায়ান্ট ফাইজার এবং জার্মান দম্পতির ছোট্ট কোম্পানি বায়োনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে তারা৷
ছবি: Ben Birchall/REUTERS
কর্মযজ্ঞ
গণহারে এই ভ্যাকসিন কার্যক্রমে নার্স, ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান, সেচ্ছ্বাসেবী, ব্রিটিশ সেনাসহ অনেক মানুষ কাজ করছেন৷
ছবি: Owen Humphreys/REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ভ্যাকসিন
যুক্তরাষ্ট্র এই সপ্তাহেই ফাইজার-বায়েনটেকের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে পারে৷ আর ইউরোপে ২৯ ডিসেম্বর অনুমোদন হতে পারে এটি৷
ছবি: Liam McBurney/REUTERS
উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী
যাদের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে এমন কয়েকজনকে সাহস দিতে লন্ডন হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ তিনি এই কার্যক্রমকে ‘পুরো জাতির জন্য টিকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন৷ যারা টিকা নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘টিকা দেয়ার সময় শান্ত থাকুন, মনে হবে টিকার সূঁচ আপনাকে কবিতা শোনাচ্ছে৷’’
ছবি: Frank Augstein/REUTERS
চার কোটি ডোজ
প্রথম কয়েক সপ্তাহে আট লাখ ডোজ টিকা দেয়া হবে৷ যুক্তরাজ্য চার কোটি ডোজ অর্ডার দিয়েছে৷ ফলে সেখানে দুই কোটি মানুষ টিকা পাচ্ছেন বলে আশা করা যাচ্ছে৷ তবে সব ডোজ কখন কর্মকর্তারা হাতে পাবেন, তা নির্ভর করছে বেলজিয়ামে ভ্যাকসিন উৎপাদন কোম্পানির ক্ষমতার উপর৷ ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে ৪০ লাখ ডোজ খুব শিগগিরই তাদের হাতে পৌঁছাবে৷
ছবি: Ben Birchall/REUTERS
দুই ডোজ
একজন ব্যক্তির দুই ডোজ লাগে৷ তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দেয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ৷
ছবি: Andrew Milligan/REUTERS
সংরক্ষণ
এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করতে হয় মাইনাস ৯৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে৷ বেশি নড়াচড়া করলে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ তাই তিনবারের বেশি যাতে হাত বদল না হয় সে চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Victoria Jones/AFP/Getty Images
স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা
স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় ওয়েস্টার্ন জেনারেল হাসপাতালের ক্লিনিকাল নার্স ম্যানেজার ভিভিয়ান টিকা নেয়ার পর দুই হাত আকাশে তুলে যেনো ঈশ্বরকে কিছু বলছেন৷
ছবি: Andrew Milligan/REUTERS
ভ্যাকসিন দেয়ার প্রস্তুতি
কার্ডিফে স্বাস্থ্যকর্মীরা ভ্যাকসিন দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন্৷ ভ্যাকসিন দেয়ার আগে সে বিষয়ে সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Liam McBurney/REUTERS
রেকর্ড কার্ড
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন রেকর্ড কার্ডটি দেখতে এমন হবে৷ এখানেই ব্যক্তির নাম পরিচয় এবং কয়টা ডোজ নিলেন লেখা থাকবে৷
বায়োনটেক বা মডার্নার ভ্যাকসিন কেবলমাত্র ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের দেয়ার অনুমতি এখনো পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
গর্ভবতী নারীদের সম্পর্কে কোনো বিশেষ সতর্কতা?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমআরএনএ ভ্যাকসিন গর্ভবতী নারীদের কোনো ক্ষতি করবে না। তাঁদের বাচ্চাদেরও নয়। তবে জন্তুদের উপর এই নিয়ে পরীক্ষা চলছে। এই মুহূর্তে তাই চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করেই এবং করোনা সহ সব ধরনের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে। মায়েরা কতটা মেশেন, তাঁদের করোনা হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, সে সবই বিবেচনা করতে হবে।
ভ্যাকসিনের কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে?
ভ্যাকসিন নেয়ার পর এখনো পর্যন্ত খুব হালকা বা মাঝারি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। সাময়িকভাবে জায়গাটা ফুলে যাচ্ছে। মাথা ধরছে। ক্লান্ত লাগছে। জ্বরও হচ্ছে। প্রথম তিন দিন এই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। তার পরের দুই দিনের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
এর চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া হয় যে সেন্টার থেকে তিনি ভ্যাকসিন নিয়েছেন, সেখানে বা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাঁরা তখন রেগুলেটরি অথরিটিকে জানাবেন।
নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসকেও কি ভ্যাকসিন আটকাবে?
সম্ভবত আটকাবে। বায়োনটেকের সিইও বলেছেন, তাঁরা ২০টি বিভিন্ন ধরনের করোনা ভাইরাসের উপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করেছেন। শেষতম যে ভ্যাকসিন যুক্তরাজ্যে দ্রুত ছড়াচ্ছে, তার উপরেও পরীক্ষা করা হয়েছে। ভ্যাকসিন কাজ করেছে।
করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার পর অন্য রোগের প্রতিষেধক নেয়ার জন্য কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?
ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাম্পস, মিসলস, রুবেলা, টিটেনাসের ভ্যাকসিন ১৪ দিন পরে নেয়া যাবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে এই সময় রাখা হয়েছে।
যদিও চিকিৎসকরা মনে করেন, দুই ধরনের ভ্যাকসিন একসঙ্গে নিলেও কোনো সমস্যা হবে না। তবে এটা প্রমাণ করার মতো কোনো তথ্য হাতে নেই। তাই সাবধান হওয়াই ভালো।
ভ্যাকসিন কি হালাল?
এর জবাব ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা দিতে পারবেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনে শুওরের কোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয়নি।
ভাাকসিন নেয়ার পরেও কি হাত ধুয়ে যেতে হবে, মুখে মাস্ক পরতে হবে?
দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার পর করোনার হাত থেকে ৯৫ শতাংশ বাঁচা যাবে বলে প্রস্তুতকারকরা দাবি করছেন। তা সত্ত্বেও ভ্যাকসিন নেয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি পালন করা উচিত এবং মাস্ক পরা উচিত হবে।
ভ্যাকসিনের প্রভাব কতদিন স্থায়ী হবে, সে পরীক্ষা এখনো হয়নি।