1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুই মাসে দিল্লিকে পথকুকুর মুক্ত করার সুপ্রিম রায় নিয়ে বিতর্ক

১২ আগস্ট ২০২৫

দিল্লির রাস্তায় কোনো পথকুকুর থাকবে না। নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। আট সপ্তাহের মধ্যে এই কাজ করতে হবে। তীব্র বিতর্ক।

দিল্লির সুন্দর নার্সারি এলাকায় পথকুকুর ঘুরছে।
দিল্লির পথকুকুরদের ধরে আশ্রয়স্থলে রাখতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এতে বাধা দিলে শাস্তি পেতে হবে। ছবি: Nasir Kachroo/NurPhoto/picture alliance

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পাদরিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবন এই নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, দিল্লি ও রাষ্ট্রীয় রাজধানী ক্ষেত্রের রাস্তায় পথকুকুর থাকতে পারবে না। এটা নিয়ে কোনোভাবেই কোনো সমঝোতা করা যাবে না। কোনো পশুপ্রেমী যদি কুকুরদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। 

কী বলেছেন বিচারপতিরা?

বিচারপতিরা তাদের নির্দেশে বলেছেন, দিল্লির সবকটি পুরসভার সমস্ত এলাকা থেকে কুকুরদের সরিয়ে দিতে হবে। পুরসভা প্রথমে কাজ শুরু করবে, যেখানে পথকুকুরদের উপদ্রব বেশি, সেই এলাকা থেকে। কর্তৃপক্ষ কীভাবে এটা করবে, এর জন্য নতুন কোনো বাহিনী দরকার আছে কিনা, তা তারা ঠিক করবে। তবে সেই সব কাজ খুব দ্রুত করতে হবে।

আদালত নিজে থেকে এই মামলাটি শুরু করেছে। কারণ, সম্প্রতি কুকুর কামড়ানোর ঘটনা খুব বেড়ে গেছে এবং বেশ কয়েকজন জলাতঙ্কে মারা গেছেন।

এই নিয়ে শুনানি চলার সময় সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, তিনি এরকম কুকুরের কামড় খাওয়া বাচ্চার বাবা-মার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা আদালতকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

কিন্তু দিল্লিতে আগেও পথকুকুরদের রাখার জন্য একটা জায়গা ঠিক করা হয়েছিল। সেই সময় পশু অধিকার কর্মীরা সেই পরিকল্পনা বানচাল করে দেন বলে মেহতা জানান।

সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা পথকুকুরদের ধরার ক্ষেত্রে বাধা দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে এবং কঠের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিচারপতিরা বলেছেন, ''আমরা দেখতে পাচ্ছি, দিল্লির অবস্থা ভালো নয়। অবিলম্বে কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। তুষার মেহতাও বলেছেন, কিছু কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।''  তারা জানান, ''কুকুরদের রাখার জন্য আশ্রয়স্থল তৈরি করতে হবে। আট সপ্তাহের মধ্যে সব পথকুকুরকে সেখানে নিয়ে যেতে হবে। দিল্লির সব পুরসভা, নয়ডা, গুরুগ্রামের কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিন কত কুকুর ধরা হলো, তার হিসাব রাখতে হবে। সব কুকুরকে ধরে আশ্রয়স্থলে রাখতে না পারলে পুরো চেষ্টাটাই ব্যর্থ হবে। তাই একটা কুকুরকেও যেন ছাড়া না হয়। যদি ছাড়া হয় তো আদালত কঠোর ব্যবস্থা নেবে।''

বিচারপতিরা বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে একটা হেলপলাইন নম্বর চালু করতে হবে। কুকুরে কামড়ালে সেখানে রিপোর্ট করতে হবে। চার ঘণ্টার মধ্যে সেই কুকুরকে ধরতে হবে। সেই কুকুরকে ধরে তাকে নিয়ম মেনে স্টেরিলাইজ ও ইমিউনাইজ করতে হবে। জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন কোথায় পাওয়া যাবে তা  দিল্লি সরকারকে জানাতে হবে। তাদের এই ধরনের ভ্যাকসিন স্টকে রাখতে হবে এবং কতজনকে ভ্যাকসিন দেয়া হলো তার রেকর্ড রাখতে হবে।

ছয় সপ্তাহ পরে আবার মামলার শুনানি হবে।

রায়ের সমর্থনে

দিল্লির রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন(আরডাব্লিউএ) এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে। আরডাব্লিউএ-গুলির সর্বোচ্চ সংগঠন ইউনাইটেড রেসিডেন্টস জয়েন্ট অ্যাকশনের সভাপতি অতুল গোয়েল বার্তাসংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ''পথকুকুর ছাড়াও রাস্তায় প্রচুর গরু, মোষও মানুষকে আক্রমণ করছে। যানজটের কারণ হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।''

দিল্লি পুরসভা বা এমসিডি-র মেয়র ইকবাল সিং বার্তাসংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ''আমি এই নির্দেশকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই নির্দেশ পালনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবো। আমাদের কাছে কুকুরদের জন্য কোনো আশ্রয়স্থল নেই। আমাদের ১০টি চালু স্টেরিলাইজেশন কেন্দ্র আছে। আমরা অস্থায়ী ও স্থায়ী আশ্রয়স্থল তৈরি করতে পারি। আমরা আমাদের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।''

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত সোমবার বলেছেন, ''পথকুকুরদের নিয়ে সমস্যা বিশাল আকার নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সরকার একটি বিস্তারিত ও সর্বাত্মক পরিকল্পনা তৈরি করবে। পরিকল্পিত ও নিয়মবদ্ধভাবে সমস্যার সমাধান করা হবে।''

দিল্লির পরিস্থিতি

সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দিল্লির বিজেপি নেতা বিজয় গোয়েল জানিয়েছেন, দিল্লিতে রোজ দুই হাজার মানুষকে পথকুকুর কামড়ায়। তিনি এই বিষয়ে যাবতীয় তথ্য তিনি সুপ্রিম কোর্টে জমা দেবেন।

গত ৩০ জুন দিল্লির রোহিনীতে একটি ছয় বছর বয়সি মেয়ে তার মাসির বাড়িতে যাচ্ছিল। তখন তাকে পথকুকুর তাড়া করে গিয়ে কামড়ায়। কয়েকদিন পরে মেয়েটি মারা যায়। 

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তথ্য বলছে, দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালে ২০২১ সালে ৬৩ হাজার ৩৬১ জন কুকুর কামড়ানোর চিকিৎসা করিয়েছেন। ২০২৫ সালের জুলাইতে তা প্রায় ৪৪ শতাংশ বেড়ে ৯১ হাজার নয়জন হয়েছে। রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে এক বছরে কুকুরের কামড়ের ৪৫ হাজার ৪৩২ জন রোগীর চিকিৎসা হয়েছে।  পুরসভার হিন্দু রাও হাসপাতালে চলতি বছরে জুলাই পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার কুকুর কামড়ানো রোগীর চিকিৎসা হয়েছে।

দিল্লিতে স্টেরিলাইজ করার জন্য একটি কুকুরকে ধরা হচ্ছে। ছবি: Manish Swarup/AP/picture alliance

দিল্লির লাগোয়া নয়ডা শহরে এই বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৭৪ হাজার ৫৫০ জনের কুকুরের কামড়ের চিকিৎসা হয়েছে।

চিত্তরঞ্জন পার্কের বাসিন্দা সলিল নন্দী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''রাজধানীর এই বাঙালিপ্রধান এলাকায় পথকুকুরের সমস্যা খুবই বেড়ে গিয়েছে। রাতের দিকে সমস্যা বাড়ে। প্রতিটি ব্লকেই প্রচুর পথকুকুর ঘোরাফেরা করে। মাঝেমধ্যেই কুকুর কামড়ানোর ঘটনা ঘটে।''

পশুপ্রেমীদের প্রতিবাদ

সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মেনকা গান্ধী বলেছেন, ''দিল্লিতে তিন লাখ পথকুকুর আছে। তাদের জন্য তিন হাজার অশ্রয়স্থল লাগবে। সেখানে জল, নিকাশী, শেড, রান্নাঘর তৈরি করতে হবে, রক্ষী নিয়োগ করতে হবে। এসবরে জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে।''

তার মতে, ''এই নির্দেশ কার্যকর করা সম্ভব নয়। এই রায় খুবই বিচিত্র। যিনি এই রায় দিয়েছেন, তিনি খুবই রেগে গিয়ে দিয়েছেন। বার্তাসংস্থা এএনআইকে তিনি বলেছেন, ক্রুদ্ধ হয়ে লেখা রায় কখনোই বিচক্ষণ হয় না।''

মেনকার দাবি, ''এখন কুকুরের ভয়ে বাঁদর আসে না। কুকুর না থাকলে  দিল্লির সব গাছে বাঁদর চলে আসবে।''

কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াংকা গান্ধী টুইট করে বলেছেন, ''কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দিল্লির সব পথকুকুরকে আশ্রয়স্থলে নিয়ে যাওয়া মানে তাদের প্রতি অমানবিক ব্যবহার করা। কুকুরদের জন্য যথেষ্ট আশ্রয়স্থলও নেই। পরিস্থিতির মোকাবিলায় কোনো ভালো উপায় বের করা উচিত ছিল, আরো মানবিক কোনো উপায়, যাতে এই পশুদের ঠিকভাবে দেখভাল করা যায় এবং তারা নিরাপদে থাকে। কুকুর হলো সবচেয়ে সুন্দর, ভদ্র জীব। তাদের প্রতি এই ধরনের নিষ্ঠুরতা কাম্য নয়।''

ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান অ্যানিমাল প্রোটেকশন অর্গানাইজেশনের বক্তব্য, ''সুপ্রিম কোর্টের রায় উদ্বেগজনক। এটা বিশ্বের জনস্বাস্থ্য নীতি, ভারতের নিজস্ব আইন, চালু রীতির বিরোধী।''

তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলে এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন তিনি, এই রায় পর্যালোচনা করার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি লিখছেন এবং বিষয়টি বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে পাঠাতে বলেছেন। 

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর দিল্লিতে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন পশুপ্রেমীরা। তারা রাস্তায় নেমে বাস আটকাবার চেষ্টা করেছেন। উত্তেজিত পশুঅধিকার রক্ষা কর্মীরা বলেছেন, সরকার তো একটা হাসপাতাল ঠিকভাবে চালাতে পারে না, তারা আশ্রয়স্থল বানিয়ে কুকুরদের সেখানে নিয়ে যাবে, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য কথা?

সোমবার রাতে ইন্ডিয়া গেটের কাছে প্রচুর পশুপ্রেমী জড়ো হয়ে এই রায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

'দুই পক্ষেরই যুক্তি আছে'

গুরুগ্রামের বাসিন্দা পুস্কর মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''দুই পক্ষেরই নিজস্ব যুক্তি আছে। রাস্তায় কুকুরদের সমস্যা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচুর মানুষ টিভি চ্যানেলে তাদের সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। আবার সারা বিশ্বে পশুদের অধিকার নিয়ে এখন প্রচুর কাজ হচ্ছে। নানান দাবি উঠছে। সেই আবহে দিল্লি, এনসিআরের সব পথকুকুরের জন্য দুইমাসের মধ্যে আশ্রয়স্থল বানিয়ে, তাদের সেখানে ঠিকভাবে রাখার বিষয়টিও খুব বড় চ্যালেঞ্জ।''

জিএইচ/এসজি

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ