বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বৃক্ষকে বুকে জড়িয়ে পৃথিবীর কাছে গাছ বাঁচানোর, অরণ্য বাঁচানোর আর্জি জানিয়েছে দুই হাজারেরও বেশি নেপালি শিশু, যার মধ্য দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ার আশা করছেন আয়োজকরা৷
বিজ্ঞাপন
কেবল স্কুল শিশুরা নয়, আইনপ্রণেতা, পেশাজীবী, এমনকি বুদ্ধ ভিক্ষুরাও গত বৃহস্পতিবার কাঠমাণ্ডুর বাইরে শান্তি উদ্যানে জড়ো হয়েছিলেন এই উদ্যোগে শামিল হতে৷
এ উদ্যোগের সমন্বয়ক থানেশ্বর গুরাগাই বলেন, ‘‘আমরা নতুন গিনেস রেকর্ড গড়তে চেয়েছি৷ পাশাপাশি সবাইকে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছি যে মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থেই গাছ বাঁচানো জরুরি৷''
‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস'-এ বৃক্ষ আলিঙ্গনের আগের রেকর্ডটি হয়েছিল গত বছর জুলাইয়ে৷ যুক্তরাষ্ট্রের অরিগনে ৯৩৬ জন অংশগ্রহণকারী একসঙ্গে বৃক্ষকে আলিঙ্গন করে ওই রেকর্ড গড়েন৷ আর নতুন রেকর্ড গড়ার চেষ্টায় নেপালের স্বেচ্ছাসেবীরা বৃহস্পতিবার পাহাড়ের ঢালে শান্তি উদ্যানের গাছে গাছে বুক মিলিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পুরো দুই মিনিট৷ নেপালের ২০ জন সংসদ সদস্যও শিশুদের সঙ্গে মিলে বৃক্ষ আলিঙ্গনে অংশ নেন৷
জার্মানির বাগানে বাংলাদেশের গাছ
১৯৮০ সালে ‘ফ্রিডেন্সভাল্ড’ বা শান্তির বাগানটি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বিশ্বের ১৪২টি দেশের গাছ লাগানো হয়েছে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে৷ এখানে এতগুলো দেশের গাছ পাশাপাশি থাকবে, বেড়ে উঠবে, সহাবস্থান করবে৷
ছবি: imago/Photoshot/Balance
লাল সবুজ পতাকা
জার্মানির কোলন শহরের অভিজাত এলাকা রোডেনকির্শেন৷ সেই এলাকারই এক কোণে তৈরি করা হয়েছে ২৬ হেক্টর জমি জুড়ে সুন্দর একটি বাগান৷ এই বাগানে আছে বাংলাদেশের একটি গাছ৷
ছবি: Mohammad Zahidul Haque
শান্তির বাগানে সহাবস্থান
১৯৮০ সালে ‘ফ্রিডেন্সভাল্ড’ বা শান্তির বাগানটি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বিশ্বের ১৪২টি দেশের গাছ লাগানো হয়েছে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে৷ এখানে এতগুলো দেশের গাছ পাশাপাশি থাকবে, বেড়ে উঠবে, সহাবস্থান করবে৷ গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে জার্মানির সাথে এই দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক গাঢ় হবে – এমন ভাবনা থেকেই কিন্তু এই উদ্যোগ৷
ছবি: DW/N. Sattar
সারা বছরই মানুষের ভিড়
যে কোনো ঋতুতেই এখানে প্রচুর লোকজন আসেন বেড়াতে, হাঁটতে বা জগিং করতে৷ গাছগুলো এমনভাবে সাড়ি বেঁধে লাগানো যেন ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায়৷ বাংলাদেশ, ভারত, অ্যামেরিকা, আফ্রিকা যে কোনো দেশের গাছেই সে দেশের পতাকা লাগানো আছে৷ কোনো কোনো দেশের আবার একটি নয়, অনেকগুলো গাছ রয়েছে শান্তির প্রতীক হিসেবে৷
ছবি: DW/N. Sattar
বসন্ত
বসন্ত যে এসে গেছে, সেটা বাগানের গাছটিই বলে দিচ্ছে৷ ভাবতে এখন হয়ত অবাকই লাগবে যে গাছটি শীতকালে একেবারেই ন্যাড়া ছিল৷ আসলে জার্মানিতে কখন কোন ঋতু চলে তা গাছের দিকে তাকালেই বোঝা যায়৷ যদিও এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তা অনেকটাই বদলে গেছে৷
ছবি: DW/N. Sattar
মুক্ত হাওয়া
গ্রীষ্মের মিষ্টি সকালে এমনি করেই শান্তির বাগানে এসে মুক্ত হাওয়া সেবন করে নেয় মেয়েটি৷ এতে তার মনে হয়, সে যেন সারাদিন শান্তিতে থাকতে পারে৷ আজকের এই যান্ত্রিক জীবনে এটা খুবই প্রয়োজন, তাই নয় কী?
ছবি: Fotolia/Fotowerk
ভালোবাসার ফুল
শান্তির বাগানে এসে সুন্দর একটি জায়গা খুঁজে নিয়ে প্রেমিকাকে ফুল উপহার দিচ্ছেন, যেন তাকে সারা জীবন শান্তিতে রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: Fotolia/TeresaYehPhotography
সাদা বালির লেক
শান্তির বাগানে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে সবই পরিবর্তন হয়৷ তবে এই সাদা বালির অংশটুকুর কোনো পরিবর্তন হয় না, সব সময় সাদাই থাকে৷ এখানে বাচ্চারা খেলতে খুবই ভালোবাসে৷ বছরের যে কোনো সময়ই তাই দেখা যায় তাদের৷
ছবি: DW/N. Sattar
মিনি পাহাড়
বালির লেকের একটু ওপরেই খানিকটা জায়গা পাহাড়ের মতো উঁচু-নীচু৷ যেখানে শীতকালে বাচ্চারা বরফ দিয়ে খেলতে ভালোবাসে৷ মাঝে মধ্যে বড়রাও কিন্তু সঙ্গ দেন এই অপার আনন্দে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একটুখানি বিশ্রাম
বাগানের শুরুতেই ১৪২টি দেশের গাছ লাগানো হয়েছে আর ভেতরে দিকে করা হয়েছে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন৷ পুরো গার্ডেন হেঁটে ক্লান্ত? তাহলে তো চাই একটুখানি বিশ্রাম! তবে হঠাৎ যদি বৃষ্টি আসে তাহলে ছাতাটি কিন্তু বড় কাজে দেয়৷
ছবি: DW/N. Sattar
রডোডেনড্রন
শান্তির বাগানের একটা বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে নানা রং-এর রডোডেনড্রন ফুলের গাছ৷ এ বছর অবশ্য এখনো সব গাছে ফুল ফোটেনি৷
ছবি: DW/N. Sattar
বেড়ানোর মধ্যেই কাজ
অনেকক্ষণ খোঁজার পর ছাত্রীরা পেয়ে গেছে শিক্ষকের নাম বলে দেওয়া গাছটি, যে গাছ সম্পর্কে গত সপ্তাহেই ক্লাসে আলোচনা করা হয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই, এখন তারা মহা খুশি৷
ছবি: DW / Gaby Reucher
অসুস্থ গাছ
গাছটা কি সত্যি অসুস্থ? পরীক্ষা করে দেখছে৷ এভাবেই কিন্তু নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হয় বিশাল বাগানের প্রতিটি গাছ৷
ছবি: picture alliance/empics
পুরো পরিবার
সপ্তাহান্তেই কেবল পুরো পরিবারের একসাথে হওয়ার সুযোগ৷ তাই সবাই মিলে শান্তির বাগানে এসেছে৷ উদ্দেশ্য ছোটবেলা থেকেই যেন বাচ্চাদের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক গড়ে উঠে৷ এই বাগানে এই একই লক্ষ্য নিয়ে ছোট্ট একটি কিন্ডারগার্টেনও করা হয়েছে৷
ছবি: Bilderbox
গাছ কাটা
গাছের যত্নের কোনো ত্রুটি নেই৷ অসুস্থ গাছকে সময় মতো কেটে ফেলা হয়৷ তবে একটা গাছ কাটা মানেই কিন্তু আর একটা গাছ লাগানো৷ বলা যায় একেবারে সঙ্গে সঙ্গেই!
ছবি: imago/Photoshot/Balance
14 ছবি1 | 14
রাজন কে সি তাঁদেরই একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বজুড়ে বৃক্ষ আর বন রক্ষার দাবি নিয়ে আমরা আজ এখানে এসেছি৷ মানব সভ্যতার জন্য গাছ কতোটা গুরুত্বপূর্ণ- সে বিষয়েও আমরা মানুষে সচেতন করতে চাই৷''
নবম শ্রেণির ছাত্রী গঙ্গা পণ্ডিত জানায়, সে এর আগে বিভিন্ন বৃক্ষরোপণ অভিযানে অংশ নিয়েছে৷ কিন্তু রেকর্ড গড়ার এই উদ্যোগে সে অংশ নিতে এসেছে, কেননা পুরনো গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখাটাও জরুরি৷
উদ্যোক্তারা এখন বৃক্ষ আলিঙ্গনের ছবি, ভিডিও এবং নেপালি সাংসদদের সইসহ বিবৃতি পাঠাবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে৷ সব বিচার বিশ্লেষণ করে গিনেস কর্তৃপক্ষ জানাবে, নেপালীদের চেষ্টা সফল হয়েছে কিনা৷