পুলিশের সাবেক ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ঘুস নেওয়ার মামলায় দুদকের সাবেক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের জামিন আবেদন আবারও খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়৷ এর আগে দুইবার এনামুলের জামিন আবেদন খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট৷
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘‘তার আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট৷ মামলাটি বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে৷ ১১ জনের সাক্ষ্য এরই মধ্যে হয়ে গেছে৷’’
পুলিশের সাবেক ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের সাবেক পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই ঘুস লেনদেনের অভিযোগে মামলা করে দুদক৷
মামলায় বলা হয়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায় দুদক কর্মকর্তা এনামুল বাছিরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ৪০ লাখ টাকা ঘুস দেন ডিআইজি মিজান৷
২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর এশিয়ার ১৭টি দেশের পর্যন্ত মোট ২০ হাজার মানুষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত হয়েছে এই প্রতিবেদন৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরকারের মধ্যে দুর্নীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত এশিয়ার মানুষ৷ মোট ৩৮ শতাংশ সমীক্ষার অংশগ্রহণকারী মনে করেন, গত এক বছরে তাদের দেশে দুর্নীতি বেড়েছে৷ ২৮ শতাংশের মত, যেমন ছিল তেমনই রয়েছে দুর্নীতির হার৷ ৩২ শতাংশ মনে করেন কমেছে দুর্নীতি৷
ছবি: DW/C.Vieira Teixeira
যে যে দেশের তথ্য রয়েছে
মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, নেপাল, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও তাইওয়ান থেকে মানুষ এই সমীক্ষায় অংশ নেন৷ এই সমীক্ষায় নেই পাকিস্তানসহ আরো কয়েকটি দেশের তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
সরকারের দুর্নীতি
ইন্দোনেশিয়া থেকে সমীক্ষায় যারা অংশ নেন, তার মোট ৯২ শতাংশ মনে করেন দেশের সরকারই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত৷ এই সংখ্যা ভারতের জন্য ৮৯ শতাংশ, বাংলাদেশের জন্য ৭২ শতাংশ৷ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশের মত, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত সংসদসদস্যরা নিজেই৷
ছবি: Colourbox
সরকারের পদক্ষেপে খুশি, অখুশি যারা
দুর্নীতি দমনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে খুশি বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ মানুষ৷ মাত্র ১১ শতাংশ মনে করেন, সরকার তার কাজে বিফল৷ ভারতীয়দের মধ্যে ৬৩ শতাংশ মনে করেন সরকার দুর্নীতি দমনে সফল৷ ৩৪ শতাংশ এর বিরোধী৷ মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে থেকে সমীক্ষায় অংশ নেন যারা, তাদের ৯৩ শতাংশই সরকারের কাজে খুশি৷ মাত্র সাত শতাংশের মত, দুর্নীতিদমনে যথেষ্ট সচেষ্ট নয় সরকার৷
ছবি: picture-alliance/U.Baumgarten
ঘুসের তালিকায় যারা
সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৮৪ কোটি মানুষ গত বছরে কোনো না কোনো সরকারি কাজের ক্ষেত্রে ঘুস দিয়েছেন৷ ঘুস দেবার হারে এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবার আগে ভারত৷ মোট ৩৯ শতাংশের মত, গত এক বছরে ঘুস দিয়েছেন তারা৷ বাংলাদেশি সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৪ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের ঘুস দেবার কথা৷
ছবি: Privat
ভারতের পরিস্থিতি
ভারতের অংশগ্রহণকারীদের ১১ শতাংশ মানুষ কখনো না কখনো কোনো কাজ করাতে যৌন সুবিধা দেওয়া বা নেওয়ার পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন৷ পাশাপাশি, চেনাশোনা বা পরিবারের লোকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার তালিকাতেও ভারত সবার ওপরে (৪৬ শতাংশের মত)৷ ১৮ শতাংশ মনে করেন, দেশে ভোটও কেনাবেচা হয়৷ ৫১ শতাংশের মধ্যে সরকারের প্রতি অনাস্থা রয়েছে৷
ছবি: AP
বাংলাদেশ নিয়ে যা বলছে প্রতিবেদন
সমীক্ষার বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারীদের ৮২ শতাংশের মত, সাধারণ নাগরিকের প্রতিবাদ দুর্নীতি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ আট শতাংশের মত, নির্বাচনে ভোট কেনাবেচা হয় বাংলাদেশে৷ সমীক্ষা বলছে, এশিয়ার সব দেশেই, নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে ঘুস দেবার হার আড়াই গুণ বেশি৷
ছবি: bdnews24.com
7 ছবি1 | 7
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ১৩ জুনের মধ্যে রমনা পার্কে এই লেনদেনের ঘটনা ঘটে বলে মামলার এজাহারে বলা হয়৷ এই মামলায় গত বছর ১৯ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন৷
গত ২৯ এপ্রিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এনামুল বাছিরের জামিন আবেদন খারিজ করে৷ এর আগে দুইবার এনামুলের জামিন আবেদন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট৷ পরে ১৬ জুন হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন এনামুল বাছির৷ আগামী ২৯ জুন ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে৷
এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মিজানকে৷
চার মাস পর তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক; এক হাত ঘুরে সেই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান কমিশনের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির৷
সেই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান ২০২০ সালের ৮ জুন দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির৷ তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি৷
বাছির অভিযোগটি অস্বীকার করে দাবি করেন, ডিআইজি মিজান তার কণ্ঠ নকল করে কিছু ‘বানোয়াট’ রেকর্ড টেলিভিশনকে চ্যানেলকে দিয়েছেন৷ তাদের দুজনকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়৷
দুদক ২০১৯ সালের ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে৷ ডিআইজি মিজানকে পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷