দুদকের নোটিসে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা না দেওয়া মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷
বিজ্ঞাপন
ঢাকার ৮ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শামীম আহাম্মাদ মঙ্গলবার রফিকুলকে এ সাজা দেন বলে জানায় ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷ তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি রফিকুলকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে৷ জরিমানার টাকা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দিতে হবে৷
তবে কারাদণ্ড হলেও রফিকুলকে সাজা খাটতে হবে না৷ কারণ, ২০১২ সাল থেকে তিনি কারাগারে আছেন এবং নিয়মানুযায়ী কারাদণ্ড থেকে হাজতবাসকালীন সময় বাদ যাবে৷ কিন্তু মুদ্রা পাচারের আরও দুটি মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় আপাতত তার মুক্তিও মিলছে না৷
রফিকুলের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘সাজা খাটতে না হলেও এই রায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করব৷''
প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন এবং ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় আলাদা দুটি মামলা করে দুদক৷
ওই দুই মামলার তদন্ত চলার মধ্যেই প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে রফিকুল আমিনের ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত' ১৮ কোটি ২ লাখ ২৯ হাজার ৩২৩ টাকার সম্পদের হিসাব চেয়ে ২০১৬ সালের ১৬ জুন নোটিস দেয় দুদক৷ সাত দিনের মধ্যে তাকে তথ্য বিবরণী জমা দিতে বলা হয়৷
কারাবন্দি রফিকুল সময়ের আবেদন করলে তাকে আরও সাত দিন সময় দেওয়া হয়৷ এরপরও সম্পদের তথ্য বিবরণী না দেওয়ায় ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রমনা থানায় এই মামলা করে দুদক৷
২০১৭ সালের ৬ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র জমা পড়ে৷ পরের বছরের ১২ মার্চ অভিযোগ গঠন করে এ মামলায় রফিকুলের বিচার শুরু হয়৷
ব্যাংক খাতের নানা কেলেঙ্কারি
রাজনীতি, অর্থ, পেশি শক্তি, অপকৌশল, দুর্নীতি – এ সব নানা কারণে বারবারই বিপদের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত৷ ব্যাংক খাতে নানা সময়ে সংঘটিত কেলেঙ্কারির খবর দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance / Klaus Ohlenschläger
রিজার্ভের অর্থ উধাও
২০১৬ সালে ঘটে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা৷ অজ্ঞাতনামা হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কায় পাচার করে দেয়৷ ফিলিপিন্সে পাচার করা ৮.১ কোটি ডলারের এখনো কোনো সুরাহা হয়নি৷ এ ঘটনার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
ছবি: Reuters/A. Rahman
জালিয়াতের খপ্পরে এটিএম কার্ড
‘স্কিমিং ডিভাইস’ নামের বিশেষ এক যন্ত্র বসিয়ে গ্রাহকদের কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালে৷ চুরি করে তারা এর সঙ্গে এক জার্মান নাগরিক জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়৷ প্রতারকদের আটক করা হলেও তারা বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ থেকে দুই দিনেই অন্তত ২০ লাখ টাকা তুলে নেয়৷
ছবি: bdnews24.com
হলমার্ক কেলেঙ্কারি
২০১২ সালে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফাঁস হয়৷ সে সময় কেবল সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখা থেকে ২০১০-২০১২ সময়ে মোট তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়৷ এর মধ্যে অখ্যাত হলমার্ক গ্রুপ একাই আত্মসাৎ করে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা৷ তখন তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়নি৷
ছবি: DW
বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতি
রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া আব্দুল হাই বাচ্চু পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিয়োগ পাওয়ার পর ব্যাংকটি অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়৷ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ব্যাংকটিতে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণে বড় ধরনের অনিয়ম পায় বাংলাদেশ ব্যাংক৷ ব্যাংকের টাকা মেরে দিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হয়৷ এসব ঋণের বেশিরভাগই আর ব্যাংকে ফেরত আসেনি৷
ছবি: bdnews24.com
ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে লুটপাট
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে ঘটে এই ঘটনা৷ ব্যাংকটির তৎকালীন উদ্যোক্তারা অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন প্রায় ৬০০ কোটি টাকা৷ লুটপাটের কারণে ২০০৬ সালে ব্যাংকটি অতিরুগ্ন হয়ে পড়ে৷ মালিকপক্ষের হাতে থাকা ব্যাংকের ৮৬ শতাংশ শেয়ারও বাজেয়াপ্ত করা হয়৷ তা কিনে নেয় আইসিবি গ্রুপ৷ তারপর ব্যাংকটির নাম পরিবর্তিত হয়ে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক হয়, তবে এখনো পুরো টাকা ফেরত পাননি গ্রাহকেরা৷
ছবি: imago/Milestone Media
ফারমার্স ব্যাংকে অনিয়ম
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুমোদন দেয়া একটি ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংক৷ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম খা আলমগীর, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দীকী নাজমুলের মালিকানাধীন বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকের ছয়টি শাখায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম পাওয়া যায়৷ এতে জনগণের সংরক্ষিত আমানত ফেরত দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে ব্যাংকটি৷
ছবি: bdnews24.com
লুটপাটের অন্ত নেই
নতুন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৭৪১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম দেখা যায়৷ ২০১০-২০১৫ সালে আইন লঙ্ঘন করে অ্যাননটেক্স নামে একটি গ্রুপকে ৫ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার ফান্ডেড, নন-ফান্ডেড ঋণ প্রদান করে জনতা ব্যাংক৷ বিসমিল্লাহ গ্রুপ ২০১১ ও ২০১২ সালে দেশের পাঁচটি ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়৷
ছবি: DW
আরো আছে অনেক
এখানেই শেষ নয়৷ সময়ে সময়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে নানান অভিনব কৌশলে ভূয়া চুক্তিপত্র দেখিয়ে, কিংবা এক কাজে ঋণ নিয়ে অন্য কাজে ব্যবহার করার অসংখ্য নজির আছে দেশে৷ তাই নানা সময়ে বিপাকে পড়েছে ব্যাংক খাত৷ শুধু তাই নয়, শেয়ার বাজারকে নানা সময়ে অতিমূল্যায়িত করে ব্যাংক খাতের ওপর ভয়াবহ চাপ তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance / Photoshot
8 ছবি1 | 8
এ মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন নিয়ে হাই কোর্টেও গিয়েছিলেন রফিকুলের আইনজীবীরা৷ ২০১৮ সালে ১৮ অগাস্ট হাই কোর্ট তাদের আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন৷
দুদকের অন্যতম কৌঁসুলি মাহমুদ হাসান জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫ জনের সাক্ষ্য শুনে এ মামলার রায় দিয়েছে আদালত৷