বড় দুই দলের ব্যর্থতা এবং জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারার অক্ষমতার কারণে সামনের দিনগুলোতে জামায়াতে ইসলামীর জনগ্রহণযোগ্যতা বাড়বে৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে দলটি আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ধর্মভিত্তিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এক প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ দলটির শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই হয় যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন, না হয় কারাগারে রয়েছেন৷ দলটির নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে, অনেকেই পলাতক জীবনযাপন করছেন৷ গত জাতীয় নির্বাচনের আগেই দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে, কিন্তু এখনো জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি৷ অনেকেই মনে করছেন দলটির আর কোনো ভবিষ্যত নেই, ভবিষ্যতে জামায়াতের মাথা-চাড়া দিয়ে উঠার কোনো সম্ভাবনাও নেই৷ কিন্তু আমার ধারণা, সামনের দিনে ইসলামি দল, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর জনগ্রহণযোগ্যতা বাড়বে৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া নেতাদের আদর্শ মেনে চলা এই দলটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবে৷ সেটা জামায়াতে ইসলামী নামে না হয়ে অন্য নামেও হতে পারে৷
১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে উপমহাদেশে জামায়াতে ইসলামীর যাত্রা শুরু হয়৷ দলটির প্রতিষ্ঠাতা সায়েদ আবুল আলা মওদুদী৷ এরপর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর গঠিত হয় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান৷ বাংলাদেশ অংশের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী, যার প্রধান ছিলেন গোলাম আযম৷ ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়৷ তবে কয়েকমাস পরই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: Jamaat-e-islami.org
সুবিধাবাদী দল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক মামুন আল মোস্তফা সম্প্রতি এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘‘১৯৪১ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সুবিধা পেলেই বদলে ফেলেছে জামায়াত৷’’ তিনি বলেন, অন্য অনেক দলের মতোই যেখানে লাভ দেখেছে, বিনা দ্বিধায় সে পথে গেছে দলটি৷ ‘‘জামায়াত পাকিস্তানের বিরোধিতা করলেও ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব পাকিস্তানে চলে যায়৷’’ আরও জানতে ক্লিক ‘+’৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/Z.H. Chowdhury
মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে জাময়াতে ইসলামী৷ শুধু বিরোধিতা নয়, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আছে দলটির বিরুদ্ধে৷
ছবি: National Monument of Savar
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ, তারপর আবার...
স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়৷ তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়৷ ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান সুযোগ করে দিলে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামে জামায়াত কাজ শুরু করে৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই পালিয়ে যাওয়া গোলাম আযম ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে কাজ শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/epa/Ahmad Fayyaz
নির্বাচনি রাজনীতিতে জামায়াত
জামায়াত বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয় ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে৷ সেই বার তারা ১০টি আসন পায়৷ এরপর ১৯৯৬ সালে ৩টি, ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করে ১৭টি আর ২০০৮ সালে দু’টি আসন লাভ করে৷ এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জামায়াতের দু’জন নেতা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল গঠন
নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০১০ সালে ২৫শে মার্চ যুদ্ধাপরাধের বিচারে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার৷ ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াত নেতাদের দণ্ড ছাড়াও দলটিকেও যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: AP
মীর কাসেমের ফাঁসি বড় ধাক্কা
যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের জন্য জামায়াত সবসময়ই সক্রিয় ছিল৷ এ লক্ষ্যে প্রচুর অর্থ খরচ করে বিচার বন্ধ ও জামায়াত নেতাদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করা হয়৷ এই কাজের নেতৃত্বে ছিলেন মীর কাসেম আলী৷ তিনি মূলত জামায়াতের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান দেখভাল করতেন৷ মীর কাসেম আলির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় জামায়াতের অর্থনৈতিক ভিত্তিতে আঘাত লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, দল নয়
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে৷ ফলে দলটি এখন আর দলীয়ভাবে এবং দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না৷ তবে দল হিসেবে জামায়াত এখনও বৈধ একটি রাজনৈতিক সংগঠন৷
ছবি: DW
নতুন আমির কে হচ্ছেন?
যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ বর্তমানে মকবুল আহমেদই দলটির আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গীভূত হবার সুযোগ আসে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে৷ যদিও এর আগেই তারা বাংলাদেশের রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রথম আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো মূলধারার প্রধান দু'টি দলের সাথে কাজ করার সুবাদে জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়৷ নব্বই-এর দশকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ – দুই পক্ষই ক্ষমতায় যাবার জন্য জামায়াতের ভোট ব্যাংককে কাজে লাগিয়েছে৷ এ জন্য অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতকে একটি ‘কিংমেকার' (বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে পড়ুন কুইনমেকার) দল হিসেবে দেখেন৷ রাজনীতির মারপ্যাঁচে এখন জামায়াত আওয়ামী লীগের বড় শত্রু আর বিএনপির বড় মিত্রতে পরিণত হলেও, দুই দলই জামায়াতকে নিজেদের হালুয়া-রুটির ভাগ দিয়েছে৷ জামায়াতে ইসলামী একটি ক্যাডারভিত্তিক সুসংগঠিত দল৷ বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কীভাবে জামায়াত তাদের সংগঠন পরিচালনা করেছে, দলের আয়ের জন্য নিশ্চিত ব্যবস্থা করেছে৷
জামায়াতের সদস্য ও কর্মীরা তাদের মাসিক আয়ের শতকরা ৫ ভাগ দলের জন্য দান করেন৷ আরেকটি সূত্র অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তাদের কর্মীদের পাঠানো হয় এবং পরবর্তীতে তারা পার্টি ফান্ডে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমান অর্থ প্রদান করেন৷ কোচিং সেন্টার, ক্লিনিক, পরিবহন, ব্যাংক, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে৷ এ সব সংগঠন যেমন দলের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজে দেয়, তেমনি দলের সদস্যদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে৷ অধ্যাপক আবুল বারাকাতের একটি গবেষণা অনুযায়ী, জামায়াত সংশ্লিষ্ট এ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বাৎসরিক লাভের মোট পরিমাণ ২০ কোটি মার্কিন ডলার৷ অবশ্য এ গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে প্রায় দশ বছর আগে৷ বর্তমানের পরিবর্তীত বাস্তবতায় এ আয়ের পরিমাণ কমতে অথবা বাড়তে পারে৷
জামায়াতকে কীভাবে জনবিচ্ছিন্ন করা সম্ভব
কোচিং সেন্টার, ব্যাংক, বিমা, মিডিয়া ইত্যাদি প্রভাবশালী ও লাভজনক খাতে তাদের বিনিয়োগ দলটিকে শক্তিশালী করেছে৷ তাই রাজনৈতিকভাবে এ দলটিকে কোনঠাসা করা গেলেও এর অর্থনৈতিক ও সাংগঠনিক ভিত্তি জোরালো ও তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত৷ গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত শক্ত অবস্থান রয়েছে এ দলটির৷ এ দলটিকে জনমানস থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য নির্যাতন-জেল-জুলুম নয়, বরং মানসিক ও আদর্শিক লড়াইয়ের জায়গা তৈরি করতে হবে৷ নানা দেশেই দেখা গিয়েছে, নির্যাতন বা হয়রানি শেষপর্যন্ত একটি দলকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারে৷ শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের সঠিক বিচার যেমন ঐতিহাসিকভাবে জরুরি, তেমনি দলটির কর্মীদের নির্বিচার হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ হওয়াও উচিত৷ কারণ এ ধরনের হয়রানি শেষপর্যন্ত তৃণমূলে তাদের জন্য সহানুভূতি তৈরি করতে পারে৷ যা শেষ পর্যন্ত দলটির জন্য লাভজনক হবে৷
ধর্মের নামে মন্দির, মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় হামলা
প্রাচীন স্থাপনা ও অমুসলিমদের ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস করে চলেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ মসজিদের ওপরও হামলা হয়েছে৷ উপমহাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ইতিহাসও দীর্ঘ৷ ধর্মের নামে এমন ধ্বংসের ‘খেলা’ থামবে কবে?
ছবি: Reuters
মালিতে ধ্বংসলীলা
এক সময় মালির টিমবাকটু শহরের অন্য নাম ছিল ‘মরুদ্যানের মুক্তা’৷ সেই শহরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেই চলেছে সেখানকার ইসলামি জঙ্গি সংগঠন৷ ২০১২ সালে শহরটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলমানদের গড়া অনেক স্থাপত্য নিদর্শনও ধ্বংস করেছে তারা৷ সম্প্রতি শহরটিকে জঙ্গিদের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত করার দাবি করেছে মালির সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP
সন্ত্রাসপ্রীতি এবং জ্ঞানভীতি
শুধু স্থাপনা বা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনই নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপিও ধ্বংস করেছে জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/P. Breu
তথাকথিত আইএস-এর হামলা
সিরিয়ার পালমিরা শহরের প্রায় ২,০০০ বছরের পুরনো স্থাপনাগুলোও রেহাই পায়নি৷ সে দেশে চলছে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর ধ্বংসযজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পালমিরার মন্দির ধ্বংস
এক সময় সিরিয়ার হোমস নগরীর এই স্থাপনাটিকে নিয়ে গর্ব করত সিরিয়া৷ এটি এক সময় ছিল মন্দির৷ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন এই উপসনালয় দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হতেন৷ আইএস-এর হামলায় স্থাপনাটি এখন ক্ষতবিক্ষত৷
ছবি: Reuters/Stringer
ধ্বংস যখন প্রচারণার হাতিয়ার
ধর্মীয় সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক সহাবস্থানকে হুমকির মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টায় আইএস অক্লান্ত৷ নৃশংসতা, বর্বরতা ক্রমেই আইএস-এর প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠছে৷ এভাবে পেট্রল ঢেলে স্থাপনা পোড়ালে সংবাদমাধ্যম লুফে নেয় খবর, খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত জঙ্গিরাও পেয়ে যায় তাদের কাঙ্খিত প্রচার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
আয়ের উৎস
সিরিয়া ও ইরাকের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ শুধু ধ্বংসই করে না, অনেক সময় কদর বুঝে সেগুলো চোরাপথে চড়াদামে বিক্রিও করে আইএস৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ আছে আইএস-এর বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/IS/Internet
আফগানিস্তানে তালেবান বর্বরতা
আফগানিস্তানের এই বৌদ্ধ মন্দিরটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো৷ ২০০১ সালে হামলা চালিয়ে এটি প্রায় ধ্বংস করে দেয় তালেবান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Ahmed
আফ্রিকায় হামলার শিকার মসজিদ
মসজিদও অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত ধর্মীয় উন্মত্ততার শিকার৷ ২০১৫ সালে মুসলমানদের উপাসনালয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলার খবর আসে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান থেকে৷ খ্রিষ্টান-মুসলিম দাঙ্গায় সেখানে অন্তত ৪১৭টি মসজিদ আংশিক অথবা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করা হয়৷
ছবি: ISSOUF SANOGO/AFP/Getty Images
গির্জায় হামলা
ইসলামি জঙ্গিরা আফ্রিকা অঞ্চলে গির্জাতেও প্রায়সময়ে হামলা চালায়৷ হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ ওপরের ছবিটিতে কেনিয়ার এক গির্জায় হামলার পরের দৃশ্য৷
ছবি: dapd
ভারতের ইতিহাসের কালো অধ্যায়
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসের ‘কালো দিন’৷ ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার বাবরি মসজিদে সেদিনই হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে হিন্দু মৌলবাদীরা৷ মুঘল সম্রাট বাবরের নামে গড়া সুপ্রাচীন এই মসজিদের ওপর হামলার ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
বাংলাদেশে প্রতিবছরই মন্দিরে হামলা
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মূলত একাত্তরের মুক্তযুদ্ধের সময় থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুরা হামলা, নির্যাতনের শিকার৷ তবে মন্দিরে মুর্তি ভাঙা, মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অসংখ্য ঘটনা ঘটে প্রতিবছর৷ বৌদ্ধ মন্দিরেও হামলা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হামলার কারণ ধর্মীয় উগ্রতা৷ সারা বিশ্বে ধর্মের নামে ধর্মীয় উপাসনালয় বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর হামলা থামবে কবে?
ছবি: Reuters
11 ছবি1 | 11
জঙ্গিবাদের প্রতি সমর্থন
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি একটি অদ্ভুত সময় পার করছে৷ ২০১৪ এর প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর যে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে, তা কোনো ধরণের গণতন্ত্র তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের জন্য একটি চমৎকার গবেষণার বিষয় হতে পারে৷ বিরোধী দল হিসেবে যে জাতীয় পার্টি সংসদে বসেন, তারা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার চেয়েও বড় সরকার সমর্থক বলে তাদের কথা শুনে মনে হয়৷ সত্যিকারের বিরোধী দল বিহীন এই গণতন্ত্রে যাদের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেই বিএনপি কোনোভাবেই সরকারের নির্বিচার মামলা, গ্রেপ্তার, ও কারাদণ্ডের বেড়াজাল কেটে বেরিয়ে আসতে পারছে না৷ দলটির নেতাদের জোরালো, কঠিন আন্দোলনের ডাক অনেকের কাছেই হাস্যরস ও তামাশার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তার মানে বর্তমান বাংলাদেশে একটি প্রবল প্রতাপশালী, প্রায় একনায়কতান্ত্রিক একটি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ দেশের প্রায় সবক্ষেত্র নিজের নিয়ন্ত্রণে এনেছে, এবং এই প্রতাপের বিরোধিতা করার মতো কোনো শক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না৷
এমন পরিস্থিতিতে জনগণ তার অসন্তোষ, ক্ষোভ, ও ক্রোধ প্রকাশের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম খুঁজবে৷ জনগণের সামনে একটি বিকল্প হচ্ছে জঙ্গিবাদ৷ জঙ্গি সংগঠনগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বাংলাদেশে বাড়ছে, সাম্প্রতিক একটি জরিপেও সেই কথাই বলছে৷ ক্রিস্টিনা ফেয়ার এবং অন্যান্যরা পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১৪ সালে পরিচালিত জরিপের ওপর ভিত্তি করে দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে উগ্রবাদের প্রতি সমর্থন আশংকাজনকভাবে বাড়ছে৷ এমনকি পাকিস্তান, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বেশি হারে বাংলাদেশে জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলার পক্ষে জনসমর্থন পাওয়া গেছে৷ শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার পক্ষেও অনেক জনসমর্থন রয়েছে৷ মডারেট মুসলমান দেশ হিসেবে পরিচিত একটি দেশের এই পরিবর্তনের পেছনে কারণ কী?
আমার মতে, বাংলাদেশের মাটি জঙ্গিবাদের চাষ করার জন্য উপযুক্ত নয়৷ তাই জনগণ জঙ্গি সংগঠনগুলোর চাইতে ভবিষ্যতে ইসলামি দলগুলোর দিকে বেশি নির্ভর করবে৷ যে কোনো অস্থিতিশীল ও অসহয়নীয় সময়ে ধর্মভিত্তিক দল একটি ইউটোপিয়ান, শোষণহীন সমাজের স্বপ্ন দেখায়, যা জাগতিক যে কোনো সমাধানের চেয়ে জনগণের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়৷ ইসলামপন্থিদল হিসেবে জামায়াত সবসময় ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েমের কথা বলে এসেছে৷ তাদের কার্যক্রম, দলীয় নেতাদের বক্তব্য ও প্রকাশনায় তা স্পষ্ট৷ সরাসরি শাসনক্ষমতায় বেশিরভাগ সময় না থেকেও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে সেক্যুলার থেকে ইসলামিক চেহারা দিতে সফল হয়েছে৷ তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে ধর্মভিত্তিক দলকে নিষিদ্ধ করা কঠিন এবং সাম্প্রতিক সময়ের জরিপ অনুযায়ী অনুমান করা যায় যে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব বাড়বে, কমবে না৷
তাই সামনের দিনে আওয়ামী প্রতাপ, একনায়কসুলভ আচরণ ও বিএনপির বিরোধী দল হিসেবে ব্যর্থতা জনগণের সামনে একটি বিকল্পই খোলা রাখবে৷ আর সেই বিকল্প হচ্ছে জামায়াতে ইসলামকে সমর্থন ও দল হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো৷ এই বিপর্যয়ের সমাধান হতে পারে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক একটি সরকার ও কার্যকরী একটি বিরোধী দল৷ তাই সুষ্ঠু নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি ছাড়া এ ধরনের সংকট আরো ঘণীভূত হবে এবং নতুন সংকটের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷