স্মার্টফোন মানে কী, তা বুঝে ওঠার বহু আগেই দুনিয়ায় আসে ‘নোকিয়া ৯০০০'৷ ২৫ বছর আগে, এই ফোন বদলে দিয়েছিল মোবাইলের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিরহানোফারের কম্পিউটার মেলায় ১৯৯৬ সালে নোকিয়া উন্মোচন করে তাদের নতুন পণ্য ‘৯০০০ কমিউনিকেটর' ফোন৷ সেই বছরের ১৫ আগস্ট বাজারে আসে সেটি৷ ‘হাতের মুঠোয় অফিস' এনে দেওয়া সেই ফোন স্মার্টফোন শব্দটি আবিষ্কারের বহু আগেই স্মার্টফোনের ভূমিকা পালন করা শুরু করে৷
কমিউনিকেটর বাজারে আসার পর, দৈনন্দিন কাজে মানুষকে সাহায্য করার দায়ভার তুলে নেয় ‘ব্র্যাকবেরি'৷ এর আরো বেশ কিছু বছর পর, ২০০৭ সালে অ্যাপল আইফোন নিয়ে আসে বিশ্বের প্রথম মাল্টি টাচ স্ক্রিনযুক্ত স্মার্টফোন৷
খুদে ল্যাপটপের মতো গড়ন, কিবোর্ড ও সাদাকালো পর্দাযুক্ত কমিউনিকেটর যখন বাজারে আসে, তখন তার দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে এগারো সেন্টিমিটার৷ বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনো ফোনের মধ্যেই একসাথে পাওয়া যায় ইমেল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ওয়ার্ড প্রসেসিংসহ লেখালেখির নানা ধরনের সুবিধা৷
এশিয়া-প্যাসিফিকে মোবাইল প্রযুক্তিতে কে কত এগিয়ে?
গ্রাহক বিবেচনায় বিশ্বে মোবাইল প্রযুক্তির অন্যতম বাজার এশিয়া প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চল৷ ২৮০ কোটি ইউনিক বা একক মোবাইল সংযোগ রয়েছে এখানকার মানুষের৷ এই দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারে কার অবস্থান কেমন দেখে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Robert Kneschke - Fotolia.com
দ্য মোবাইল ইকোনমি
টেলিকম অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ৷ সম্প্রতি তারা দ্য মোবাইল ইকোনমি, এশিয়া প্যাসিফিক ২০২০ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ জিএসএমএ-এর হিসাবে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর ৬৬ ভাগ বা ২৮০ কোটি মানুষের মোবাইল সংযোগ রয়েছে, যার মধ্যে ২০০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন৷ ২০২৫ সাল নাগাদ মোবাইল সংযোগ ৩০০ কোটি আর ইন্টারনেট ব্যবহার ২৭০ কোটিতে পৌঁছাবে৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ
২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের ৫৪ ভাগের মোবাইল সংযোগ আছে৷ তাদের ৫১ ভাগই টুজি ব্যবহারকারী৷ থ্রিজি বা তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আছেন ৪০ ভাগ৷ ২০১৮ সালে চালু হলেও ফোরজি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র ১০ ভাগ৷ জিএসএমএ অবশ্য বলছে ২০২৫ সালে এটি ৪৬ শতাংশে পৌঁছাবে৷ তখন অত্যাধুনিক ফাইভজি প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন ছয়ভাগ ব্যবহারকারী৷ তারপরও ৩০ ভাগ থ্রিজিতে আর ১৮ ভাগ থেকে যাবেন টুজিতেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
ভারত
ভারতে মোবাইল সংযোগ আছে ৫২ শতাংশ মানুষের৷ তাদের ৫৬ ভাগই ফোরজি ব্যবহারকারী৷ থ্রিজিতে আছেন ১১ ভাগ আর টুজিতে ৩৩ ভাগ৷ ২০২৫ সালে দেশটির ৮২ শতাংশই চলে আসবেন ফোরজির আওতায়৷ সাত শতাংশ ব্যবহার করবেন ফাইভজি৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Adhikary
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়াতে গ্রাহকদের বেশিরভাগ বা ৫৫ শতাংশই ফোরজির আওতায় চলে এসেছেন৷ বাকি ৪৫ ভাগের ৩৩ শতাংশই থ্রিজি ব্যবহারকারী৷ ২০২৫ সালে দেশটির ৮১ ভাগ মানুষ ফোরজি ব্যবহার করবে৷ জনসংখ্যার হিসাবে মোট মোবাইল গ্রাহক ৬৫ ভাগ থেকে বেড়ে হবে ৬৮ ভাগ৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
পাকিস্তান
দেশটির ৫৪ ভাগই দ্বিতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্কে আটকে আছেন৷ মাত্র ২০ শতাংশ থ্রিজি ব্যবহার করলেও ২৬ ভাগ অবশ্য ফোরজির আওতায় চলে এসেছেন৷ ২০২৫ সালে সেখানে ফোরজি ব্যবহার করবেন ৫৯ ভাগ গ্রাহক৷ ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশটির মোট জনসংখ্যার ৪১ ভাগ মোবাইল সংযোগের মালিক যা ২০২৫ সালে বেড়ে ৪৮ ভাগ হবে৷
ছবি: privat
অস্ট্রেলিয়া
দেশটির ৮৩ ভাগই ফোরজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন৷ ১৬ ভাগ থ্রিজি আর একভাগ এমনকি ফাইভজির আওতায়ও চলে এসেছেন৷ যা ২০২৫ সালে ৫৪ ভাগে পৌঁছাবে৷ বাকিটা থাকবে ফোরজির দখলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Moir
জাপান
এশিয়ার উন্নত এই দেশটিতে ৮৮ ভাগই মোবাইল ব্যবহারকারীই ফোরজি নেটওয়ার্কের সুবিধা পাচ্ছেন৷ ২০১৯ সাল পর্যন্ত কেউ ফাইভজির আওতায় না আসলেও ২০২৫ সালে তা ৪৭ শতাংশে হবে৷ ৫২ ভাগ থাকবেন ফোরজিতে৷ দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮৭ ভাগেরই নিজস্ব মোবাইল সংযোগ আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Tsuno
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়াতে বেশিরভাগ মানুষই ফোরজি ব্যবহার করছেন৷ ২০১৯ সালের ৬৯ শতাংশ থেকে তা ৭৯ শতাংশ হবে ২০২৫ সালে৷ আর ২০ ভাগ ব্যবহার করবেন ফাইভজি৷ এশিয়ার উদীয়মান এই অর্থনীতির মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগই মোবাইল সংযোগের মালিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Favre
সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যার ৮৮ ভাগই মোবাইল গ্রাহক৷ তাদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ ফোরজি, ২৩ শতাংশ থ্রিজি ব্যবহারকারী৷ ২০২৫ সালে ফাইভজির আওতাতেই চলে আসবেন ৩৪ ভাগ গ্রাহক৷ আর বাকিরা থাকবেন ফোরজি নেটওয়ার্কে৷
ছবি: Imago/Travel-Stock-Image
দক্ষিণ কোরিয়া
বিশ্বে মোবাইল প্রযুক্তিতে নেতৃত্বদানকারী দেশগুলোর একটি দক্ষিণ কোরিয়া৷ এরিমধ্যে তাদের মোবাইল গ্রাহকদের আটভাগ ফাইভজির আওতায় চলে এসেছেন, যা আগামী পাঁচ বছরে ৬৭ শতাংশে উন্নীত হবে৷ এখন ৮২ ভাগ ফোরজিতে থাকলেও তা কমে ৩২ ভাগ হবে সেসময়ে৷
ছবি: AFP/E. Jones
স্মার্টফোনেও পিছিয়ে বাংলাদেশ
মোবাইলের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য চাই স্মার্টফোন৷ জিএসএমএ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ার ৮৫ ভাগ, সিঙ্গাপুরের ৮৭ ভাগ, মালয়শিয়ার ৮৩ ভাগ, অস্ট্রেলিয়ার ৮২ ভাগ, ইন্দোনেশিয়ার ৭৪ ভাগ, জাপানের ৬৮ ভাগ গ্রাহকের স্মার্টফোন রয়েছে৷ অন্যদিকে ভারতের ৬৭ ভাগ, পাকিস্তানের ৪৯ ভাগ আর বাংলাদেশের মাত্র ৪০ ভাগ গ্রাহক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী৷
ছবি: Robert Kneschke - Fotolia.com
11 ছবি1 | 11
বেখাপ্পা, অথচ যুগান্তকারী
বর্তমান বিশ্বে অবিশ্বাস্যমনে হলেও মাত্র ৩৩ মেগাহার্টজের প্রসেসোরযুক্ত কমিউনিকেটরের মেমোরি ছিল মাত্র ৮ মেগাবাইট৷ কোনো ইমেল খুলে পড়তে হলেও ইন্টারনেটের সাথে ফোনকে যুক্ত করতে অপেক্ষা করতে হতো ৩০ সেকেণ্ড৷ এরপর, প্রতি সেকেণ্ডে ৯.৬ কিলোবাইট গতিতে আস্তে আস্তে রিড হতো ইমেলের বার্তা৷ এই গতি আজকের যুগে অকল্পনীয় ও হাস্যকর মনে হবে অনেকের কাছে৷
শুধু তাই নয়, কমিউনিকেটরের ওজন ছিল ৩৯৭গ্রাম৷ এই কমিউনিকেটর কিনতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খরচ হতো ৮০০ ডলার, যা আজকের ৬৮ হাজার বাংলাদেশি টাকার সমান৷
কিন্তু ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে এই কমিউনিকেটরের বেশ কয়েক বছর লেগে যায়৷ ২০০০ সালে বাজারে আসে নোকিয়া ৯২১০ কমিউনিকেটর, যা প্রথম মডেলের তুলনায় হালকা, ছোট, সস্তা ও সহজবোধ্য ছিল৷ কিন্তু ২০১০ সালে যখন অন্যান্য মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থারা স্মার্টফোন তৈরি করতে শুরু করেন, খেই হারিয়ে ফেলে নোকিয়া৷ সেভাবে সাফল্য পায়না তাদের কমিউনিকেটর, যা কি না এই দৌড়ের প্রথম খেলোয়াড় ছিল৷
তবুও আজকের বাজারে নেহাত ফেলনা হয়ে যায়নি কমিউনিকেটর৷ ইবে-র মতো অনলাইন বাজারে ৬০০ মার্কিন ডলার দামে বা তারো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিশ্বের প্রথম স্মার্টফোন নোকিয়া কমিউনিকেটর ৯০০০৷