দুর্গাপুজোয় সুন্দরবন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ
১৫ অক্টোবর ২০১০খাস শহর কলকাতায় সুন্দরবনের গহন ম্যানগ্রোভ অরণ্য৷ নদীর ধারে পলিমাটি ফুঁড়ে উঠে থাকা শ্বাসমূল, গরান, হেঁতালের ঠাসবুনোট জঙ্গলের ভয় ধরানো নিস্তব্ধতা, সব অবিকল উঠে এসেছে দক্ষিণ কলকাতার এক দুর্গাপুজোর মণ্ডপের অঙ্গসজ্জায়৷ যারাই দেখছেন, তারিফ করছেন৷ উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, সুন্দরবনের বিচিত্র প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং তার সংরক্ষণ সম্পর্কে লোকজনকে সচেতন করতেই তাঁদের এই শিল্পভাবনা৷
কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশংকা নেই তো? কারণ সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান সমস্যা এখন পর্যটকরা৷ সমস্যা তথাকথিত ইকো-ট্যুরিজম, যা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে৷ বললেন দীর্ঘ চার দশক সুন্দরবনের উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকা সমাজসেবী, পরিবেশবিদ তুষার কাঞ্জিলাল৷ তিনি জানালেন, সজনেখালি এবং তার উল্টোদিকে পাখিরালা এবং দয়াপুর গ্রামে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন রিজর্ট তৈরি হচ্ছে৷ নদীর বাঁধ থেকে যথেষ্ট দূরে পাকা ইমারত তৈরির যে নিয়মকানুন, তার কিছুই তারা মানছে না৷ অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এই সব রিজর্টগুলিতে না আছে বিদ্যুৎ, না পর্যাপ্ত পানীয় জলের সরবরাহ৷
পর্যটকদের অবকাশযাপন আরামদায়ক করার উপযুক্ত আধুনিক কোনও পরিকাঠামো আজ পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি সুন্দরবনে৷ অন্যদিকে পর্যটকরাও জঙ্গলের পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে আদৌ সচেতন নন৷ বললেন তুষার কাঞ্জিলাল৷ কিছুটা মজা করেই তিনি বললেন, লোকে সুন্দরবনে বাঘ দেখতে যায় কিন্তু তিনি নিজে ৪০ বছরের উপর সুন্দরবনে বাস করেও বাঘ দেখেছেন কেবল চিড়িয়াখানায়৷ সুন্দরবনের মূল আকর্ষণ তার অপরিসীম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য৷ যারা সেটা দেখার মন নিয়ে যান, সুন্দরবন তাদের কাছে পর্যটন স্থান৷ কিন্তু লোকে তো যায় উপভোগ করতে৷ তারা জোরে জোরে মাইক বাজায়, নাচানাচি করে৷ তাদের কোলাহলে বন্যপ্রাণীরা বিরক্ত হয়৷
তাহলে কি উৎসবের আঙিনায় পরিবেশ সচেতনতা প্রসারের উদ্যোগ বিফল হবে? না, তা হয়তো নয়৷ সুন্দরবনের আদলে গড়া ওই পুজোমণ্ডপ দেখে বেরোনোর সময় প্রশ্ন করেছিলাম এক দর্শক, রাহুল সেনগুপ্তকে৷ তিনি প্রথমেই ধন্যবাদ দিলেন ওই পুজোর উদ্যোক্তাদের, যারা থিমের মাধ্যমে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়কে তুলে ধরেছেন৷ রাহুলের আশা, যে লক্ষ লক্ষ মানুষ উৎসবে সামিল হয়েছেন, তারা এবার সুন্দরবন বেড়াতে যাবেন একটা সচেতন মন নিয়ে৷
পরিবেশ সুরক্ষার ভাবনা যদি সত্যিই এভাবে ছড়িয়ে যায়, তাহলে উৎসব সত্যিই হয়তো বহুজনহিতায় হয়ে উঠতে পারবে৷ বাঁচবে সুন্দরবন, বাঁচবে পরিবেশ৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন