1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্গাপূজায় হামলা: রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কী?

১৭ অক্টোবর ২০২১

দুর্গাপূজায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলো কৌশলে পরস্পরকে দোষারোপ করলেও ঘটনা প্রতিরোধে মাঠে তাদের ভূমিকা নেই বললেই চলে৷

ছবি: bdnews24.com

বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি অনেকটাই এড়ানো যেতো৷ তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একতাবদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা মোকাবিলায় ভূমিকা রেখেছে তেমন নজির খুব একটা নেই৷ বরাবরের মতো এবারও পরস্পরকে দোষারোপের মাধ্যমেই তারা ঘটনার সমাধান খুঁজছেন৷

সর্বশেষ ১৯৯০ সালে একমাত্র এরশাদের জাতীয় পার্টি ছাড়া আর সব রাজনৈতিক দলকে একযোগে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে৷

এরশাদের পতনের আগে ২৯ অক্টোবর ‘ভারতের বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে’ শিরোনামে খবর ছাপে দৈনিক ইনকিলাব৷ এরপর ৩০ অক্টোবর থেকে পরবর্তী তিন দিন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে৷ সেসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সচেতন মানুষের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার ফলে সহিংসতা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে ছড়াতে পারেনি বলে মনে করেন অনেকেই৷

তবে এবারের কুমিল্লার ঘটনার পর রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো স্পষ্ট ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না৷ বক্তৃতা আর বিবৃতির মধ্যেই তারা নিজেদের কার্যক্রম সীমবাদ্ধ রেখেছে৷ আর তাদের দেওয়া বিবৃতির বেশিরভাগই পরস্পরকে দোষারোপ৷

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোর নিস্ক্রিয়তার কারণ তো বলতে পারবো না, তবে আমরাও অবাক হয়েছি, বিস্মিত হয়েছি যে, গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল এগিয়ে যায়নি৷  পাশে দাঁড়ায়নি৷ কোনো রাজনৈতিক দল না৷  সুশীল সমাজের ক্ষেত্রেও তাই৷ তারাও না৷ স্থানীয় পর্যায়েও নেতা-কর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী-নেতা তারাও পাশে দাঁড়াননি৷ এটা অবক্ষয় কী না সেটাই এখন প্রশ্ন৷ এটা দুর্ভাগ্যজনক৷ হয়তো করোনার কারণে তারা যেতে পারেননি৷ পাশে দাঁড়াতে পারেননি৷’’

‘স্থানীয় পর্যায়ে কেউ পাশে না দাঁড়ানোর ঘটনা হতাশ করেছে’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা তেমন সহায়তা পাইনি৷ রাত ১২টায় আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়েছি৷ আমরা পরমত সহিষ্ণুতা দেখিয়েছি৷ জুমার নামাজে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেটার জন্য প্রতিমা বিসর্জনের সময় পিছিয়ে দিয়েছি৷ তারপরও আমাদের ওপর হামলা হলো৷ আর জাতীয় পর্যায়ের চেয়ে স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের পাশে কেউ না দাঁড়ানোর ঘটনা আমাদের সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে৷’’

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়৷ তারা একে অপরকে দোষারোপ করেই দায়িত্ব সারছেন৷ তবে কেউ কেউ দলের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে এমন দাবিও করছেন৷ 

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘তাদের দলের নেতাকর্মীরা কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, পাবনা ও নেয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় টিম করে মন্দির পাহারা দিচ্ছেন৷’’ কোথাও কোথাও বড়িঘরও পাহারা দেয়া হচ্ছে, দাবি তার৷

এ রাজনৈতিক নেতার মতে, এভাবে নিরপাত্তা দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে না৷ সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি জানান, ‘অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকলে এই পরিস্থিতি চলতেই থাকবে৷

গণসংহতি আন্দোলনের এ নেতা আরো বলেন, ‘‘এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে৷ এখন সরকার ব্যস্ত আছে এটার ফায়দা তুলতে৷ আসলে লড়াইটা হবে, সরকার যেভাবে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ চালাচ্ছে সেটাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা৷ মানুষের, সব ধর্মের মানুষের, দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷ দেশের মানুষ প্রতিদিনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ অপমানিত হচ্ছে৷’’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘‘আমরা সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াবো কীভাবে? রানা দাশগুপ্ত তো তার বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি উসকে দিচ্ছেন৷ যেখানে সবাই আমরা চেষ্টা করছি যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সারাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা করছে৷ তারা তো শান্ত না করতে দিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে৷’’

‘সব রাজনৈতিক দলের সোচ্চার হওয়া উচিত’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে কথা বলছে৷ কিন্তু এক টেবিলে বসে একটা সমাধান বের করা, সেটা হচ্ছেনা৷ কারণ দেশে তো এখন কর্তৃত্ববাদী সরকার৷’’

এদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু মনে করেন, শুধু সরকার বা বিরোধী দল নয়, যেসব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাদের এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তীব্রভাবে সোচ্চার হওয়া উচিত৷

তবে তিনি বলেন, ‘‘আগে সামান্যতম রাজনীতিটা ছিলো৷ কিন্তু এখন রাজনীতির সামান্যতম স্পেসটাও নাই৷ বাকস্বাধীনতা নাই৷ একপক্ষীয় রাজনৈতিক ধারা চলছে৷ সরকারের বাইরে যারা আছে তারা মনে করে, আমার দলও মনে করে এটা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা নয়৷ এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে৷ রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য করা হচ্ছে৷ যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র চায় না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চায় না, তাদের খুশি করার জন্য করা হচ্ছে৷’’

এদিকে আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সরকার ও দলের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ তা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো বলে মনে করেন তারা৷

‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়েছে বলেই রক্ষা করা গেছে’

This browser does not support the audio element.

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকার তো পাশে দাঁড়িয়েছেই, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও পাশে দাঁড়িয়েছে৷ আর সে কারণেই এটা বাড়তে পারেনি৷ তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি৷ ঘটনার পরপরই কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুরে ছুটে গেছেন হুইপ আবু সাঈদ আল স্বপন, আওয়ামী লীগ নেতা ড. সেলিম মাহমুদ, সুজিত রায় নন্দীসহ আরো অনেকে৷ তারা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন৷ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়েছেন বলেই রক্ষা করা গেছে৷’’

তবে আওয়ামী লীগের এ নেতার দাবি, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি গোষ্ঠী এমন কাজ করছে৷ 

‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফলভাবে এবং ধারাবাহিকভাবে দেশ পরিচালনা করছেন৷ এতে ভীত হয়ে একটি গোষ্ঠী উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করছে৷ এর আগে আমরা দেখেছি, খালেদা জিয়া ২০১৫ সালে একটি বাড়িতে থেকে ধারাবাহিকভাবে ৯৩ দিন সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ আমরা এটাও দেখেছি, হেফাজতকে উসকে দিয়ে কীভাবে তাণ্ডব চালানো হয়েছে,’’ বলেন তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ