দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীদের ছাড় দেয়া হবে না: হাইকোর্ট
১৬ মে ২০২২
প্রশান্ত কুমার হালদার বা পি কে হালদারকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে হাইকোর্টের দেওয়া রুলের শুনানি হবে মঙ্গলবার৷ এ বিষয়ে আদালত বলেছে, ‘যতবড় রাঘব বোয়াল হোক না কেন, দুর্নীতির ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাৎ ও বিপুল টাকা পাচারের মামলার আসামি পি কে হালদারকে শনিবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেপ্তার করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সোমবার রাষ্ট্রপক্ষ রুল শুনানির আবেদন করে৷ এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামীকাল দিন ধার্য করেন৷ এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়েছে৷ পরে এ বিষয়ে আদালত বলেছে- অর্থপাচারকারী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না৷ আদালত আরও বলেন যে যতবড় রাঘব বোয়াল হোক না কেন, ছাড় দেওয়া হবে না৷ একইসঙ্গে এ ঘটনায় (গ্রেপ্তার) সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে আদালত৷’’
আদালতের বরাতে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘‘পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছে- আমাদের মেসেজ ক্লিয়ার, দুর্নীতি ও অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের নীতি জিরো টলারেন্স। কোনো ধরনের দুর্নীতি ও অর্থপাচারকারীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না৷ তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না৷ দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীদের ব্যাপারে আমরা খুবই সিরিয়াস৷’’
দুদকের পক্ষে ছিলেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান৷
পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদার ও সুকুমার মৃধার ‘অবৈধ’ সম্পত্তি
শনিবার পশ্চিমঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশের অর্থপাচার মামলার আসামি পি কে হালদার৷ এর আগে তার ও তার সহযোগীদের সম্পত্তির খোঁজে অভিযান শুরু করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Satyajit Shaw
সুকুমার মৃধার বাড়ির সন্ধানে
শুক্রবার ভোরে বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের বা পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধার সম্পত্তির সন্ধানে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি শুরু করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ শুরুতে উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরের এই বাড়িতে হানা দেয় তারা৷
ছবি: Satyajit Shaw
সিলগালা
তল্লাশির পর তিনতলা বাড়িটি সিলগালা করে দেয় ইডি৷ ফটকে লাগিয়ে দেয়া হয় নোটিশ৷ তাতে বলা হয়েছে, অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন ২০০২ এর আলোকে বাড়িটি জব্দ করা হয়েছে৷ তাই সেখান থেকে কোনো সম্পত্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বা অনুমতি ছাড়া সরাতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না কেউ৷
ছবি: Satyajit Shaw
দ্বিতীয় বাড়ির খোঁজ
অশোকনগরে সুকুমার মৃধার আরো একটি বাড়ির খোঁজ মেলে৷ সেখানেও তল্লাশি চালায় ইডি৷ তিনি বাংলাদেশের পলাতক আসামি পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন৷ পি কে হালদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের করা অর্থ পাচারের মামলায় গত বছর সুকুমার ও তার মেয়ে গ্রপ্তার হন৷ তখন থেকেই তারা বাংলাদেশের কারাগারে আছেন৷
ছবি: Satyajit Shaw
তল্লাশি স্বজনদের বাড়িতেও
সুকুমার মৃধার কয়েকটি বাড়ি পরই তার আত্মীয় প্রণব হালদারের বাড়ি৷ সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছে ইডি৷ তবে প্রণব হালদার ও তার পরিবার ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেছেন সুকুমার মৃধার ব্যবসার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা তাদের নেই৷ তল্লাশির মাধ্যমে তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন৷
বাংলাদেশের পেশায় আয়কর আইনজীবী হলেও পশ্চিমবঙ্গে তিনি মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত৷ বিভিন্ন স্থানের তার মাছের ভেড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ অশোকনগরে তার বাড়ির ভিতরেই রয়েছে একটি৷
ছবি: Satyajit Shaw
‘লোক ডেকে খাওয়াতো’
বাংলাদেশের নাগরিক সুকুমার মৃধা প্রায়ই পশ্চিমবঙ্গে থাকতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা৷ পিন্টু দাস নামের এই ব্যক্তি জানান, ‘‘সুকুমার মৃধা খুব ধনী লোক বাংলাদেশও ওর সম্পত্তি আছে শুনেছি, বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলে ক্লাব থেকে ১০০ লোক ডেকে খাওয়াতো৷ প্রত্যেক বছর পাড়ার পুজোর সভাপতি হতো এবং ভালো টাকা ডোনেশন দিত৷’’
ছবি: Satyajit Shaw
‘ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিনি’
স্থানীয় বাসিন্দা বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্তী জানান, ‘‘আমরা ওনাকে ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিনি৷ আমাদের কোনোরকম সন্দেহ হয়নি কারণ আমরা জানি বাংলাদেশে ওনার ঘর-বাড়ি আছে ও কাজ করে ওখান থেকে টাকা পয়সা নিয়ে আসে৷ তারপর শুনি এই ঘটনা ইডির লোকজন এসে বাড়ি সিল করে দিয়ে যায়৷’’
ছবি: Satyajit Shaw
ইডি যা বলছে
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের নাগরিক প্রশান্ত কুমার হালদার, প্রিতীশ কুমার হালদার, প্রনেশ কুমার হালদার ও তাদের সহযোগীদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গের ১০ টি জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছে৷ এই ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে বলেও উল্লেখ করেছে ইডি৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
পি কে হালদারের খোঁজ
এই অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বাংলাদেশে পলাতক আসামী পি কে হালদারেরও খোঁজ পায় ইডি৷ তিনি অবৈধভাবে কাগজপত্র সংগ্রহ করে সেখানে শিবশঙ্কর হালদার নামে বসবাস করছিলেন৷ ইডি বলছে, তিনি ও তার সহযোগীরা কলকাতার মেট্রোপোলিসসহ বিলাসবহুল সব এলকায় অবৈধভাবে বহু সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন করেছেন৷ তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয় ইডি৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাংলাদেশ যা বলছে
এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার বলেছেন, “পি কে হালদার ওয়ান্টেড ব্যক্তি, ইন্টারপোলের মাধ্যমে অনেক দিন ধরে তাকে চাচ্ছি৷ ...সে গ্রেপ্তার হয়েছে, তবে আমাদের কাছে এখনও (ভারত থেকে) অফিসিয়ালি কিছু আসেনি৷’’ এর আগে শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছিলেন, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে যত দ্রুত সম্ভব বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে৷
ছবি: bdnews24.com
11 ছবি1 | 11
২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কিংবা গ্রেপ্তারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট৷ দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল৷ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক চলতি বছর জানুয়ারিতে জানিয়েছিলেন, পি কে হালদার যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, সেজন্য ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেয় দুদক৷ ডাকযোগে পাঠানো সেই চিঠি এসবি পায় ২৩ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায়৷ পরে এসবি সে চিঠি দেশের সব স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরে দায়িত্বপালনকারী ইমিগ্রেশন ইউনিটকে পাঠায়৷
ইমিগ্রেশন ইউনিট ওইদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় সেই নির্দেশনা পায়৷ কিন্তু তার ঘণ্টা দুই আগেই বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পি কে হালদার দেশ ছেড়ে যান৷
গুঞ্জন ছিল, পি কে হালদার কানাডায় কানাডা গিয়ে ফেরারি জীবন যাপন করছেন৷ কিন্তু গত শুক্রবার হঠাৎ করেই খবর আসে, পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গে অভিযানে নেমেছে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ পরদিন তাকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় সংস্থাটি৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, "পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ভারত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে কিছু জানায়নি৷ ভারত এ ব্যাপারে জানালেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে৷ এসব অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক৷ এরইমধ্যে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা করা হয়েছে৷ বিভিন্ন কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য৷