আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তিনি নির্দোষ, তাই পদত্যাগ করবেন না৷ রাশিয়া মনে করে, ‘পানামা পেপার্স' আসলে পুটিনবিরোধী প্রচারণার অংশ৷সারা বিশ্বে তোলপাড় তোলা ‘পানামা পেপার্স' নিয়ে তদন্তের উদ্যোগও নিচ্ছে কয়েকটি দেশ৷
বিজ্ঞাপন
‘পানামা পেপার্স'-এর অনুলিপি চেয়েছে ক্যানাডা৷ অনুলিপি পেলে তদন্ত করে অভিযোগ যাচাই করবে বলেও জানিয়েছে দেশটি৷ ক্যানাডার সবচেয়ে বড় ব্যাংক আরবিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ধণাঢ্য ব্যক্তিদের অর্থ পাচারে সহায়তা করেছে৷ ব্যাংকটি অবশ্য সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
মূলত অভিযোগ অস্বীকারের হিড়িকই চলছে এখন৷ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পানামা পেপর্সে সে দেশের বড় বড় নেতার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সর্বৈব মিথ্যা৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হং লেই বলেন, ‘‘এমন ভিত্তিহীন অভিযোগের জবাবে আমার কিছু বলার নেই৷''
পানামার আইনি প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকা-র প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ দলিল-দস্তাবেজ এক বছর ধরে খুঁটিয়ে দেখার পর রবিবার বিশ্বখ্যাতদের অর্থ কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করে যুক্তরাষ্ট্রের কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (আইসিআইজে)৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, অভিনেতা, খেলোয়াড় ও ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার বিশিষ্ট জনদের কর ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ সংক্রান্ত বিপুল তথ্য প্রকাশ করে তারা৷
গত ৪০ বছরের কাগজপত্র ঘেঁটে অর্থ কেলেঙ্কারির এই তথ্য উদ্ধারে বিশ্বের ৭৬টি দেশের একশ'রও বেশি মিডিয়া গ্রুপের সাড়ে তিনশ'রও বেশি সাংবাদিক আইসিআইজে-র সঙ্গে কাজ করে৷
‘পানামা পেপার্স’ সম্পর্কে আপনার যা জানা প্রয়োজন
কে, কী, কোথায় এবং কখন: তথাকথিত ‘পানামা পেপার্স’ ফাঁসের পর এ সব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে৷ আর বিপদে আছেন অনেক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ক্রীড়াবিদ যাদের এতকাল সৎ ভাবা হতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warmuth
‘পানামা পেপার্স’ আসলে কী?
পানামা পেপার্স হচ্ছে এগারো দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডকুমেন্ট এবং দুই দশমিক ছয় টেরাবাইট তথ্য যা ই-মেল, আর্থিক বিবরণী, পাসপোর্ট এবং কর্পোরেট নথি আকারে আছে৷ আইন বিষয়ক সংস্থা মোসাক ফনসেকার কাছে এ সব তথ্য ছিল৷ রবিবার প্রকাশিত এই তথ্যে অনেক কাগুজে প্রতিষ্ঠানের খদ্দেরদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেছে, যারা ১৯৭৭ থেকে ২০১৬ অবধি নিজেদের আয়ের সঠিক তথ্য গোপন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/maxppp/J. Pelaez
মোসাক ফনসেকা কী?
দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকা ২০১২ সালে মোসাক ফনসেকাকে ‘অফসোর ফাইনান্সের’ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল, যারা নিজেদের সম্পর্কে কোনো তথ্যই প্রকাশ করতো না৷ শেল কোম্পানিদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান পানামাভিত্তিক এই আইন বিষয়ক সংস্থাটি৷ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের মতো ‘ট্যাক্স হেভেন’ বলে পরিচিত প্রায় সব জায়গাতেই তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজ আছে৷
ছবি: Reuters/B. Yip
আইসিআইজে কে?
ওয়াশিংটনভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম আইসিআইজে ফাঁস হওয়া দলিলদস্তাবেজ পরীক্ষা করে দেখেছে৷ বিশ্বের ৬৫টি দেশের ১৯০ জনের মতো সাংবাদিক এই কনসোর্টিয়ামের সদস্য, যা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৭৭ সালে৷
ছবি: ICIJ
জড়িত কারা?
ট্যাক্স ফাঁকি দিতে মোসাক ফনসেকার সহায়তা নেয়াদের মধ্যে বিশ্বের অনেক নামি-দামি রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, তারকা এবং ক্রীড়াবিদরা রয়েছেন৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের ঘনিষ্ঠদের অর্থের হদিশ পাওয়া গেছে ‘ফাঁস’ হওয়া তালিকায়৷ রয়েছে ভারতের অমিতাভ বচ্চন এবং আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসির নামও৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/India Today
‘শেল কোম্পানি’ কী?
‘শেল কোম্পানি’ আইনগতভাবে বৈধ এমন এক ধরনের প্রতিষ্ঠান যাদের নিজস্ব কোনো ব্যবসা নেই৷ তারা শুধু অন্যকে নানান নামে অর্থ খাটানোর সুযোগ করে দেয়৷ এসব প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে কার অর্থ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা যাতে কোনোভাবে বের করা না যায়৷
ছবি: Fotolia/Trueffelpix
‘অফশোর ট্যাক্স হেভেন’ ব্যবহার কি অবৈধ?
যেসব দেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ খুব কম এবং আয়ের উপর কর প্রদানের পরিমান দফারফার মাধ্যমে অনেক কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে, সেসব দেশকে ‘অফশোর ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ সেসব দেশে অর্থ লগ্নি অপরাধ নয়, কিন্তু লগ্নিকারী ব্যক্তিটি যে দেশের সেদেশের কর কর্তৃপক্ষের কাছে সেটা অবৈধ হতে পারে, যদি তিনি সেই বিনিয়োগের কথা না জানিয়ে থাকেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে এটা অবৈধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warmuth
6 ছবি1 | 6
আইসিআইজে-র দাবি, তাদের অনুসন্ধান থেকে অন্তত ১২ জন রাষ্ট্রনায়কের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দিতে বিদেশের বিভিন্ন ‘শেল কম্পানি'-তে টাকা রাখার তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷ রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, আর্জেন্টিনা, জর্জিয়া, আইসল্যান্ড, ইরাক, জর্ডান, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইউক্রেনসহ বেশ কিছু দেশের ১৪৩ জন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও তাঁদের আত্মীয়দের নাম এসেছে ঐ তালিকায়৷
‘শেল কম্পানি' আইনগতভাবে বৈধ এমন এক ধরণের প্রতিষ্ঠান যাদের নিজস্ব কোনো ব্যবসা নেই৷ তারা শুধু অন্যকে নানান নামে অর্থ খাটানোর খাটানোর সুযোগ করে দেয়৷
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ চীনের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধেও এমন কিছু কম্পানির সহায়তায় অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে৷ অভিযোগটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে উড়িয়ে দিয়েছে চীন৷
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলেছে তাঁর এক বাল্যবন্ধু এবং কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের শেল কম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগের অভিযোগ৷ ক্রেমলিন যথারীতি দাবি করেছে, পুরো বিষয়টি নিছক ওয়াশিংটনের হয়ে আইসিআইজে-র পুটিনবিরোধী অপপ্রচার৷
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পক্ষ থেকে তাঁর সরকারের মুখপাত্রও বলেছেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন৷
আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড গানলগসনেরও দাবি যে, তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দিতে বিদেশে টাকা রাখার অভিযোগে এক বিন্দুও সত্যি নেই৷
এদিকে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে রেকইয়াভিকে শুরু হয়েছে আন্দোলন৷ ডেভিড গানলগসন জানিয়েছেন, ভিত্তিহীন অভিযোগ মেনে নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন না৷
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পোরোশেঙ্কোও বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগটি একেবারেই ভিত্তিহীন৷
সব দেশের সরকার অবশ্য ‘ভিত্তিহীন' বলেই অভিযোগের পাহাড়কে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে না৷
ক্যানাডার মতো অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, সুইডেন এবং নেদারল্যান্ডসও জানিয়েছে, অভিযোগ সংক্রান্ত কাগজপত্রের অনুলিপি পেলে তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে৷
এসিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
সেরা দশ দুর্নীতির দেশ, সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ
এক সময়ের দুর্নীতির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ এবার হয়েছে ১৩তম৷ চলুন দেখা যাক ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)-র প্রতিবেদনে এবার কোন কোন দেশ আছে দুর্নীতির সেরা দশে আর কোন দশটি দেশে এখন দুর্নীতি সবচেয়ে কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Antonisse
৮ থেকে ১০ নম্বরে কঠিন লড়াই
টিআইবি-র এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমান ১৮ পয়েন্ট করে পাওয়ায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দশটি দেশের তালিকায় ৮ নাম্বার থেকে ১০ নাম্বার পর্যন্ত স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
দুর্নীতির সপ্তম স্বর্গে তুর্কমেনিস্তান
উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়ার চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট কম হওয়ায় দুর্নীতিতে সেরা দশটি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে তুর্কমেনিস্তান৷
ছবি: DW
ইরাকের দুরবস্থা
যুদ্ধ, হানাহানির মাঝে ইরাকে দুর্নীতিও চলছে পুরোদমে৷ তাই ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন দুর্নীতিতে সেরা দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: Reuters
পঞ্চম স্থানে দক্ষিণ সুদান
ইরাকের পরেই রয়েছে সদ্য স্বাধীন দেশ দক্ষিণ সুদান৷ তারা পেয়েছে ১৫ পয়েন্ট৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karumba
আফগানিস্তান দুর্নীতিরও স্থান
দুর্নীতিরও স্থান না হলে আফগানিস্তান কি আর ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের চতুর্থ সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হতো?
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
দক্ষিণ সুদানের চেয়ে দুর্নীতিতে এগিয়ে সুদান
সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান শুধু মানচিত্রেই নয়, দুর্নীতিতেও কিছুটা ব্যবধান দেখাতে পেরেছে৷ দক্ষিণ সুদান যখন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে, সুদান তখন ১১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়৷ দুর্নীতিতে এগিয়ে থাকা তো আর ভালো কথা নয়!
ছবি: getty / C. Bouroncle
উত্তর কোরিয়া আর সোমালিয়া
সমাজতন্ত্র কায়েমের পথে হোঁচট খেয়ে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়লেও দুর্নীতিতে খুব এগিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ আফ্রিকার দারিদ্র্য জর্জরিত দেশ সোমালিয়াও কম যায় না৷ ৮ পয়েন্ট করে নিয়ে এই দুই দেশই আছে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Sinmun
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক
নারীর জন্য সবচেয়ে ভালো দেশ হওয়ার পর, এবার সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশও হয়েছে ডেনমার্ক৷ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশ পেয়েছে ৯২ পয়েন্ট৷
ছবি: Reuters/N. Ahlmann Olesen
দ্বিতীয় নিউজিল্যান্ড, তৃতীয় ফিনল্যান্ড
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশগুলোর মাঝে নিউজিল্যান্ড ৯১ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে আর ৮৯ পয়েন্ট পেয়ে ফিনল্যান্ড দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance / Robert Harding
চতুর্থ স্থানে সুইডেন
আরেক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনও কম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর মাঝে খুব ভালো অবস্থানে৷ তাদের পয়েন্ট ৮৭, অবস্থান চতুর্থ৷
ছবি: DW/T. Mehretu
নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ডে সমতা
৮৬ পয়েন্ট করে পেয়েছে নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ড৷ ফলে দেশ দু’টি আছে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: EBU
একের হেরফেরে সাত থেকে দশ
সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দশ দেশের তালিকায় সপ্তম থেকে দশম স্থানে আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ এবং ক্যানাডা৷ সপ্তম থেকে দশম, অষ্টম, নবম ও দশমে মাত্র এক পয়েন্ট করে ব্যবধান৷ সিঙ্গাপুরের ৮৪, নেদারল্যান্ডসের ৮৩, লুক্সেমবুর্গের ৮২ এবং ক্যানাডার পয়েন্ট ৮১৷