লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির বিরুদ্ধে ফ্রান্সে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই ধনকুবের রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থপাচারসহ একাধিক আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
লেবাননের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন নাজিব মিকাতিছবি: Mohamed Azakir/REUTERS
বিজ্ঞাপন
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ এনেছে দুটি দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা৷ নাজিব মিকাতি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
চলতি সপ্তাহে ফ্রান্সে এই অভিযোগ দাখিল করেছে দুর্নীতি বিরোধী পর্যবেক্ষণ সংস্থা শেরপা৷
এ ছাড়া লেবাননেও প্রতারণা এবং অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সংস্থা কালেক্টিভ অব ভিক্টিমস অব ফ্রডুলেন্ট অ্যান্ড ক্রিমিনাল প্র্যাকটিসেসও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ দাখিল করেছে৷ শেরপার আইনজীবী উইলিয়াম বোর্ডন অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বোর্ডন বলেছেন, "এটা ধনকুবের রাজনীতিবিদ হওয়ার 'যান্ত্রিক' পরিণতি৷ বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানকে এক ধরনের আশ্রয় বা ঢাল বলে মনে করেন তিনি।"
রিয়াদ সালামেহের 'কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্তি'
দুর্নীতিবিরোধী অ্যাক্টিভিস্টদের আশা, "কোন পরিস্থিতিতে নাজিব মিকাতির মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি হস্তগত করেছেন তদন্তে তা উঠে আসা উচিত৷ এ ছাড়াও সহায়তাকারী আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকার কথাও এই তদন্তে উঠে আসবে।"
নাজিব মিকাতি এবং লেবাননের সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর রিয়াদ সালামেহ-র সংযোগের প্রতি তদন্তকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা৷ কয়েক দশক গভর্নরের পদে ছিলেন রিয়াদ সালামেহ৷ গত বছর একাধিক দুর্নীতি অভিযোগের পর তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা৷
লেবাননে ধর্মীয়, রাজনৈতিক বিভাজনের বিরুদ্ধে লড়ছে সুপারমার্কেট
লেবাননের প্রকট ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিভাজনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি অলাভজনক সুপারমার্কেট চালু করেছেন দুই নারী৷ মানুষকে সুলভ মূল্যে পণ্য দেয়ার পাশাপাশি এর মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনতে চানা তারা৷
ছবি: D. Hodali/DW
অর্থনৈতিক সংকট
দীর্ঘদিন ধরে চরম অর্থনৈতিক সংকটে লেবাননের মানুষ৷ ২০১৯ সালের পর দেশটির মুদ্রা লেবানিজ পাউন্ড ৯০ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে৷ বিশ্বব্যাংক সেখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে বিশ্বের অন্যতম খারাপ অবস্থা হিসেবে অভিহিত করেছে৷
ছবি: Dario Sabaghi/DW
একই রাজনীতি
লেবাননের এই পরিস্থিতির জন্য দেশটির দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক এলিট শ্রেণীকে দায়ী করেন মানুষ৷ এজন্য ২০১৯ সালে তারা প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন৷ কিন্তু চার বছর পর এসে প্রায় একই রাজনীতিবিদদের হাতে জিম্মি দেশটির মানুষ৷
ছবি: Mahmut Geldi/AA/picture-alliance
সামাজিক সুপারমার্কেট
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পৌঁছে দিতে সামাজিক সুপারমার্কেটের এই উদ্যোগ চালু করেছেন নওয়াল ট্রাবুলসি ও মারিয়াম ইউনেস৷ এই দুইজন তাদের অলাভজনক সংস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তহবিলও যোগাড় করেছেন৷
ছবি: D. Hodali/DW
সমবায় পদ্ধতি
তাদের সুপারমার্কেট ‘মান ওয়া সালওয়া’ মূলত সমবায় পদ্ধতিতে চলে৷ যেখানে সদস্যরা প্রত্যেকেই ক্রেতা ও বিক্রেতার ভূমিকা পালন করেন৷ তবে সদস্য না হলেও কেনাকাটা করা যায়৷ খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে, সতেজ ফল, সবজি, গৃহস্থালি নানা পণ্য বই, চকোলেট সবই পাওয়া যায় তাদের সুপারমার্কেটে৷ বৈরুতের বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শুধু সেসব পণ্যই তারা বিক্রি করেন যেগুলো হিমায়িত রাখার প্রয়োজন হয় না৷
ছবি: D. Hodali/DW
স্থানীয় পণ্য
উদ্যোক্তাদের একজন ট্রাবুলসি জানান, ‘‘আমরা আমাদের সমবায়ের মাধ্যমে শুধু ক্রেতাদের সহায়তা করি না, স্থানীয় উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরাও এতে উপকৃত হন৷’’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, চীন, সিরিয়া, তুরস্ক থেকে আমদানি করলে তার উপর কর দিতে হয় না, আর তাই স্থানীয় পণ্যের দাম অনেক সময় আমদানিকৃত পণ্যের চেয়ে বেশি হয়৷ এক্ষেত্রে স্থানীয় পণ্যের দাম কমাতে তারা একটি অংশ ভর্তুকি দেন৷
ছবি: Diana Hodali/DW
বিভাজনের বিরুদ্ধে
উদ্যোক্তারা এর মাধ্যমে দেশটির সামাজিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটাতে চান৷ দেশটিতে বেশিরভাগ সামাজিক সেবা পাওয়ার জন্য মানুষ রাজনৈতিক সংগঠন বা ধর্মীয় দাতব্য সংস্থাগুলোর কাছে যান৷ যার কারণে সেখানে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভক্তি প্রকট রূপ ধারণ করেছে৷ ট্রাবুলসি ও ইউনেসের উদ্যোগটি ধর্ম, রাজনৈতিক দল নির্বিশেষ সবার জন্য৷
ছবি: D. Hodali/DW
লক্ষ্য
দুই উদ্যোক্তা তাদের সুপারমার্কেটের মাধ্যমে পাঁচশ’ পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করতে চান৷ সেই সঙ্গে আরো মানুষ যাতে তাদের সমবায়ের সদস্য হন সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন৷ লক্ষ্য বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা৷
ছবি: D. Hodali/DW
7 ছবি1 | 7
লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল থেকে কয়েক কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সালামেহ এবং তার ভাই রাজার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ফ্রান্স এবং জার্মানি।
কী বললেন নাজিব মিকাতি?
নাজিব মিকাতির অফিস "মিডিয়া প্রচারণার অংশ" হিসাবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করে আনুষ্ঠানিক একটি বিবৃতি জারি করে৷ সেখানে বলা হয়েছে, "মিকাতি এবং তার পরিবারের সদস্যদের অপমান করার" জন্য এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, মিকাতি এবং তার পরিবারের সম্পদ স্বচ্ছপথে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত৷ মিকাতির অফিসের দাবি, রাজনীতিবিদকে অভিযোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
ফোর্বসের দেয়া তথ্য অনুসারে, নাজিব মিকাতির মোট সম্পদ ২০২৩ সালের হিসাবে ২৮০ কোটি ডলার৷ লেবাননের অন্যতম ধনী ব্যক্তি তিনি। ৬৮ বছর বয়সি নাজিব এবং তার ভাই আশির দশকে টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি ইনভেস্টকম প্রতিষ্ঠা করেন৷ ২০০৬ সালে ৫৫০ কোটি ডলারে তা বিক্রি করে দেন।
মিকাতি ২০২১ সাল থেকে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।