বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে৷ বুধবার দুপরে তিনি আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগ গঠনের জন্য সময় চাইলে, আদালত তা গ্রহণ করেনি৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার বেলা ১টার দিকে খালেদা জিয়া এই দুটি মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে যান৷ তবে তার আগেই তাঁর আইনজীবীরা শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করার জন্য আবেদন করেন৷ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় এই আবেদন খারিজ করে দিলে আদালতকক্ষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হইচই করেন৷ দু'দফা হইচই-এর মুখে বুধবারই অভিযোগ গঠনের আদেশ দেওয়া হবে বলে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন৷
এরপর বেলা ২টার দিকে বিএনপিপন্থি চারজন আইনজীবী মামলা থেকে খালেদা জিয়ার অব্যাহতি চেয়ে করা আবেদন নিয়ে বিচারকের খাস কামড়ায় যান৷ সেখান থেকে বের হয়ে এসে তাঁরা সোয়া দু'টোর দিকে আবারও বিচারকের কাছ যান৷ এ সময় আরো সময় চেয়ে করা আবেদনটি খারিজ করে আদালত যে আদেশ দিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার জন্য আবারো সময় চেয়ে আবেদন জানান তাঁরা৷ কিন্তু কোনো আবেদনই আদালত গ্রহণ করেনি৷ দুপুরের পর বিচারক দু'টি মামলায় অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দেন৷
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশানের বাসভবনে কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷ রবিবার তিনি পুলিশের বাধার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় অংশ নিতে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটার দিকে গুলশানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ কিন্তু তাঁর পথরোধ করতে বাড়ির গেটে মানব দেয়াল তৈরি করে পুলিশ এবং ব়্যাবের সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
আটকে ছিলেন গেটে
পুলিশ এবং ব়্যাব সদস্যদের বাধার মুখে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে ছিলেন খালেদা জিয়া৷ এরপর এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
গাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ এসময় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘‘দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? এরা সবাই গোপালগঞ্জের৷ গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে৷’’ দৈনিক প্রথম আলো খালেদার এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সোমবারও চলবে কর্মসূচি
নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া৷ তবে তিনি বাড়ির মধ্যে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘‘এই সরকার জালেম এবং অগণতান্ত্রিক৷ এই সরকারের পতন হবেই৷’’ এসময় তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও চলবে বলে ঘোষণা দেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
বালুভর্তি ট্রাকের ব্যারিকেড
খালেদা জিয়ার বাড়ির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল৷ শনিবার তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় সাধারণ ব্যারিকেডের পাশাপাশি বালুভর্তি ট্রাকও যোগ করা হয়৷ কয়েকটি ট্রাক এমনভাবে রাখা হয়, যাতে খালেদার গাড়ি বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বের হতে না পারে৷ আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশিদ স্বপন জানান, খালেদা জিয়াকে কার্যত গুলশানের বাড়িতে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশের বক্তব্য
খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নয়াপল্টনে কোনো জমায়েত বা সমাবেশের অনুমতি নেই৷ তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না৷ আর তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখার আছে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাণহানি
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে ঘিরে সংঘর্ষ এবং বিস্ফোরণে ঢাকায় কমপক্ষে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ রবিবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাকার মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মনসুর আলী৷ অন্যদিকে, কমলাপুরে তল্লাশির সময় বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সুপ্রিমকোর্টে তাণ্ডব
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় যোগ দিতে সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কোর্টের মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভিতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
বিরল সংঘর্ষ
বলাবাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বাইরে থেকে কোন দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়নি৷ সেক্ষেত্রে রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াটা বিরল ঘটনা বলে অবিহিত করেন আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷
ছবি: Reuters
চুপচাপ নয়াপল্টন
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির আওতায় গোটা দেশ থেকে সক্ষম নেতাকর্মীদের ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া৷ কিন্তু রবিবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে পারেনি৷ কিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ফলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দৃশ্যত পুলিশ এবং সাংবাদিক ছাড়া কেউ ছিল না৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন
উল্লেখ্য, আগামী পাঁচ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় এবার ১৫৪টি আসনে ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না৷ এসব আসনে একজন করে প্রার্থী রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
অভিযোগ গঠনের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের একজন সানাউল্লাহ মিয়া জানান, ‘‘এই আদালতের প্রতি তাঁদের কোনো আস্থা নেই৷ এই আদালতের কাছে তাঁরা ন্যায় বিচার পাবেন না৷'' তিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা দু'টি মামলাকেই মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেন৷
ওদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেনে, ‘‘এই মামলা দু'টি নিয়ে অনেক সময় নষ্ট করা হয়েছে৷ এর আগেও অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন পিছানো হয়েছে৷ আসামিপক্ষ আসলে মামলা দু'টির বিচার বাধাগ্রস্থ করতেই এই কৌশল নিয়েছিল৷''
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে ২০১১ সালের ৮ই আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক-এর সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷ এর আগে ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা করা হয়৷ দু'টি মামলায় যথাক্রমে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার এবং ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ মামলা দু'টিতে খালেদা জিয়া এবং তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানসহ মোট আসামি ১০ জন৷