দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে: দিলীপ বড়ুয়া
১২ জুলাই ২০২৪
সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া মনে করেন দুর্নীতি এখন বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে৷ এক্ষেত্রে সরকারের ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতিতে মদদ’ দেয়াকে স্বাভাবিক বলে মনে করছেন আন্দালিব রহমান পার্থ৷
বিজ্ঞাপন
ইউটিউবে ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশো-তে এমন মন্তব্য করেছেন এই দুই রাজনীতিবিদ৷ বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক (এমএল) দিলীপ বড়ুয়ার অভিযোগ দুর্নীতিবাজেরা সরকার ও ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়াতেই রয়েছে৷ রাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া দুর্নীতি সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতি এখন টোটাল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে৷’’
তার মতে সম্পূর্ণ প্রশাসনই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে৷ এমনকি বর্তমান সংসদ সদস্যের ৮০ শতাংশ দুর্নীতিগ্রস্ত বলেও দাবি করেন এই রাজনীতিবিদ৷ আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘‘যারা কালো টাকা সৃষ্টি করে এবং কালো টাকার মালিক এরা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে ঘুরে৷ আমরা যারা প্রধানমন্ত্রীর দুঃসময়ে পাশে ছিলাম এদেরকে তখন দেখা যায়নি৷’’
সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসছে৷ তবে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ মনে করেন তার কোনোটিই সরকারের অজানা ছিল না৷ এক্ষেত্রে সরকার এখন ভারসাম্য বজায় রেখে ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বেনজীর মাঠে থাকা অবস্থায় যদি ৩০০ মার্ডার হয়ে থাকে বা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং হয়ে থাকে এর মধ্যে ২০০ হয়েছে সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য৷ যখন আপনি এ ধরনের অনৈতিক কাজ করবেন, রাখবেন বা সুযোগ নিবেন তখন তাদেরকে দুর্নীতি করার সুযোগ দিতে হবে৷ এই সরকারের রাষ্ট্রীয়ভাবে মদদ, দুর্নীতি করার সুযোগ দেয়াটা খুবই স্বাভাবিক৷’’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত ও চীন সফরের তাৎপর্য এবং বাংলাদেশের অবস্থান বিষয়ে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, চীন এখন অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশপাশি রাজনৈতিক অভিলাষও প্রকাশ করছে৷ তার অভিযোগ, ‘‘ভারত কিছু করেও না, দেয়ও না৷ তারা শুধু নিতে চায়৷’’
একই প্রসঙ্গে আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর থেকে ভারত আমাদের সবকিছুতেই ঠকানো আরম্ভ করে। সবসময়ই ভারত আমাদের ঠকিয়ে গেছে৷’’
এসএইচ/এফএস
বেতন বাড়লেও দুর্নীতি থাকছে দুর্নীতিতেই
দুর্নীতি কমবে এই আশায় ২০১৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছিল৷ কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি অভিযোগ করে সম্প্রতি সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের দুই সাংসদ৷
ছবি: bdnews24.com
বেতন দ্বিগুণ
২০১৫ সালে সব পর্যায়ের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত চাকরিজীবীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করা হয়৷ এছাড়া ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে তাদের বেতন প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে (ইনক্রিমেন্ট)৷ এর সঙ্গে ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে তারা মূল বেতনের ৫ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবেও পাচ্ছেন৷ মূল্যস্ফীতির কারণে এই প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার৷
ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/IMAGO
বেসরকারি চাকরিজীবীরা সমস্যায়
২০১৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন শতভাগ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে সরকার অনিচ্ছাকৃতভাবে বেসরকারি খাতের অনেক স্বল্পদক্ষ কর্মীদের সাময়িকভাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে বলে গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়৷ শ্রমবাজারে যে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষ কর্মীরা তা মানিয়ে নিতে না পারায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে গবেষণায় বলা হয়৷ তিনজন গবেষক গবেষণাটি করেছেন৷
ছবি: Janusz Pieńkowski/PantherMedia/IMAGO
বেতনের জন্য আড়াই পদ্মা সেতুর সমান বরাদ্দ
৬ জুন সংসদে পেশ করা বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এই বরাদ্দ প্রায় আড়াইটি পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচের সমপরিমাণ৷ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ বাবদ খরচ ধরা হয় ৭৭ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা৷ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বাবদ ব্যয় ছিল ৬৩ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা৷ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৮ জন৷
ছবি: MD Mehedi Hasan/ZUMA Press/picture alliance
দুর্নীতি না কমার অভিযোগ
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ালে দুর্নীতি কমবে এমন কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি বলে অভিযোগ৷ সম্প্রতি কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার খবর আলোচনায় এসেছে৷ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ সম্প্রতি সংসদে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের দফায় দফায় বেতন বাড়ানোর পরও দুর্নীতি কেন হবে?
ছবি: DW/S. K. Dey
সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা
সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে সেবা নিতে গিয়ে নাগরিকেরা দুর্নীতির মুখোমুখি হন৷ এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ২০২২ সালে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল৷ এতে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা৷ এরপর যথাক্রমে আছে পাসপোর্ট, বিআরটিএ, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্য সেবা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও ভূমি সেবা৷
ছবি: JIBON AHMED/AFP/Getty Images
গ্রেপ্তার করতে অনুমতি লাগে
গতবছর জুলাই মাসে পাস হওয়া ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল ২০২৩’-এ বলা হয়েছে, স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণের আগে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে৷