1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্নীতি ও আন্দোলনের রবে কাটল ২০২৩

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রীর গ্রেপ্তারি। চাকরিপ্রার্থী থেকে সরকারি কর্মীদের আন্দোলন। চলতি বছরে ঘটনার ঘনঘটা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে।

'বঞ্চিতদের' দাবি, রাজ্য পয়লা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত আইনি জট খুলে ফেলবে
'বঞ্চিতদের' দাবি, রাজ্য পয়লা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত আইনি জট খুলে ফেলবেছবি: Subrata Goswami/DW

আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য রাজনীতি আগেও তোলপাড় হয়েছে। সেই পরম্পরায় জুড়েছে আরো দুর্নীতির অভিযোগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয়েছে একের পর এক আন্দোলন।

মন্ত্রী গ্রেপ্তার

দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল সরকারের সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে রয়েছেন। ২০২২-এর জুলাইয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৩ সালে দুর্নীতির ঘটনাক্রমে সবচেয়ে বড় ঘটনা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেপ্তারি

রেশন দুর্নীতি মামলায় ২৭ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করে ইডি। ২০২১ থেকে আজ পর্যন্ত তিনি বনমন্ত্রীর পদে রয়েছেন। তার আগে খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গণবণ্টনে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ।

এ ছাড়া স্কুল ও পুর নিয়োগ, কয়লা ও গরু পাচারের মতো একগুচ্ছ মামলায় এখন তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই, ইডি।

দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল সরকারের সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে রয়েছেনছবি: Satyajit Shaw/DW

জেলে হেভিওয়েট

পশ্চিমবঙ্গের স্কুলে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এর তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

এই সংক্রান্ত মামলায় প্রায় দেড় বছর কারাবন্দি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ। ২০২৩ সালেও তিনি জামিন পেলেন না। একই অবস্থা তার আমলের একাধিক শিক্ষা কর্তার।

তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দীর্ঘদিন জেলবন্দি। গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত এই দাপুটে নেতা দিল্লির তিহার জেলে রয়েছেন। সেখানেই বন্দি নেতার কন্যাও। চলতি বছরে দুজন বারবার জামিনের আবেদন জানালেও আদালত সাড়া দেয়নি।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলেন, "তৃণমূল কিছু ভালো কাজ করেছে যা চাপা পড়ে যাচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগে। কংগ্রেস বা বাম আমলে শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রায় ছিল না। এত দলবদল হত না। এখন পুলিশকেও দলবদলের কাজে লাগানো হচ্ছে।"

'বিজেপির প্রাপ্তির ঝুলি শূন্য'

This browser does not support the audio element.

'সেটিং' চর্চা

বছরভর পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল ও প্রধান বিরোধী বিজেপির মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ দেখা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা দুর্নীতির তদন্তে সক্রিয় হতে চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। তারা আন্দোলন করছে কেন্দ্রের থেকে বকেয়া আদায়ের দাবিতে।

কেন্দ্রীয় বিজেপি পাল্টা বলেছে, ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা প্রকল্পের হিসেব দিতে পারেনি রাজ্য সরকার।

দুর্নীতির তদন্তে মাথাদের ধরার দাবিতে রাজ্য বিজেপি-সহ অন্যান্য বিরোধীরা সরব হয়েছে। যদিও কংগ্রেস ও বামেদের মতে, তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের 'সেটিং' অর্থাৎ গোপন বোঝাপড়া রয়েছে।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই তত্ত্ব জোরালোভাবে সামনে রেখেছিল তারা। চলতি বছরে 'সেটিং' নিয়ে সুর চড়িয়েছে বাম কংগ্রেস জোট।

শাসক না বিরোধী, কার বেশি ভালো কাটল বছরটা? সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ আছে পশ্চিমবঙ্গে। তাই গত ডিসেম্বরে বিরোধী দলনেতা যে চমকের কথা বলেছিলেন, এই ডিসেম্বরেও তার কিছু দেখতে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ বিজেপির প্রাপ্তির ঝুলি শূন্য। গত ডিসেম্বরে যে চাকরিরপ্রার্থীরা আন্দোলন করছিলেন, তারা এখনো গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বসে আছেন। সুতরাং আমাদের প্রাপ্তির ঝুলিও শূন্য।

চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন২০২৩ সাল স্কুলের চাকরিপ্রার্থীদের সংগ্রাম তীব্র হয়েছে। একদিকে পথে নেমে আন্দোলন। হাজার দিন পেরিয়েছে ধরনা, অবস্থান। সেই ২০১৯-এ যার সূচনা। অন্যদিকে লড়াই চলছে আইনি পথে।

বছরের শেষে শিক্ষা দপ্তর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। 'বঞ্চিতদের' দাবি, রাজ্য পয়লা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত আইনি জট খুলে ফেলবে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এমন কোনো 'ডেডলাইন'-এর কথা মানতে চাননি।

কেন্দ্রের সমান হারে মহার্ঘভাতার দাবিতে আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়িয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরাছবি: Payel Samanta/DW

চাকরিরতদের আন্দোলন

কেন্দ্রের সমান হারে মহার্ঘভাতার দাবিতে আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়িয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। বছরের শেষে তাদের আন্দোলন পৌঁছে গিয়েছে রাজ্যের সচিবালয় নবান্ন-র দুয়ারে।

চলতি সপ্তাহে চার শতাংশ মহার্ঘভাতা বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। এখনো কেন্দ্রের সঙ্গে ৩৬ শতাংশের ফারাক। আন্দোলনকারীরা সেই বকেয়া ভাতার দাবিতে অনড়। রাজ্যের বক্তব্য, কেন্দ্র তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করছে। এই টাকা না পেলে বকেয়া মেটানো সম্ভব নয়।

নির্বাচন ও হিংসা

দুর্নীতি থেকে আন্দোলন, নানা ঘটনাপ্রবাহে সরকার চাপে থাকলেওএ বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রায় গিয়েছে শাসকের পক্ষে। তবে

ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ব্যাপক হিংসা হয়। প্রায় ৪০ জন মারা যান, শুধু ভোটের দিন প্রাণ যায় ১৪ জনের। এর মধ্যে আবার তৃণমূলের কর্মীর সংখ্যা বেশি।

সারা বছর বিভিন্ন এলাকায় শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলের ছবি ধরা পড়েছে। এসব গড়িয়েছে হিংসাত্মক ঘটনা পর্যন্ত। তৃণমূলের নেতা খুনে অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসক শিবিরের অন্য গোষ্ঠীর দিকে। জয়নগর, আমডাঙ্গা, গোসবা, একের পর এক ঘটনা ঘটেছে।

এ বছর মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট চমকপ্রদ জয় পায়। যদিও উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়িতে সেই জোটের মডেল মুখ থুবড়ে পড়ে। বিজেপির হাত থেকে আসন ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল।

লোকসভা নির্বাচনের মুখে বিজেপি বিরোধী জোট গড়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় স্তরে।

সেই 'ইন্ডিয়া' জোট পশ্চিমবঙ্গে কি বাস্তবায়িত হবে, এ নিয়ে তুমুল জল্পনায় শেষ হচ্ছে ২০২৩।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ