দুর্নীতি করে পাওয়া চাকরি বাতিল, ফেরত দিতে হবে বেতন
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
এসএসসি-তে দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়া এক হাজার ৯১১ জন গ্রুপ ডি কর্মী তাদের চাকরি হারালেন।
বিজ্ঞাপন
প্রথমে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় নির্দেশ দিলেন এসএসসি-তে দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়া এক হাজার ৯১১ জনের চাকরি বাতিল করতে হবে। তার কিছুক্ষণ পরেই এসএসসি ওয়েবসাইটে দ্রুত জানিয়ে দেয়া হয়, এক হাজার ৯১১ জনের চাকরি বাতিল করা হলো।
এর পরের ধাপে বোর্ড তাদের চাকরি বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। এরপর ওই খালি পদে তালিকা অনুসারে নিয়োগ করবে বোর্ড। তবে তার আগে দেখে নেয়া হবে, তারা খাতায় ঠিকভাবে প্রশ্ন লিখেছেন কি না। ওএমআর শিট খতিয়ে দেখে নতুন করে নাম সুপারিশ করবে এসএসসি বোর্ড।
আগামী ৬ মার্চের মধ্যে প্রক্রিয়ার কাজ পুরো করতে হবে এবং আদালতের কাছে তা জানাতে হবে। ১৩ মার্চ আদালতে পরবর্তী শুনানি। তখন এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন বিচারপতি।
এসএসসি আন্দোলনের ৬০০ দিন, রাস্তায় চাকরিপ্রার্থীরা
৬০০ দিন ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুলের চাকরিপ্রার্থীরা। ৬০০ দিনের মাথায় কী বলছেন আন্দোলনকারীরা?
ছবি: Subrata Goswami/DW
টানা ৬০০ দিন
কলকাতায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ৬০০ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এসএসসি চাকরিপ্রার্থীরা। আদালতের রায় মেনে এখন তারা সকালে এসে বসেন, বিকেলে উঠে যান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আন্দোলনের শুরু
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ ছিল, স্কুলে চাকরির নিয়োগ পদ্ধতিতে দুর্নীতি হয়েছে। আদালতের হস্তক্ষেপে সে বিষয়ে একাধিক মামলা শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ একাধিক কর্মকর্তা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আদালতের নির্দেশ
আদালতের নির্দেশে বেশ কিছু ব্যক্তিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিছু আন্দোলনকারীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বর্তমান দাবি
চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, এসএসসি পাশ করা সকলকেই চাকরি দিতে হবে সরকারকে। চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সঙ্গে অনেকে
শুধু এসএসসি নয়, ময়দানের অন্য প্রান্তে আন্দোলন চালাচ্ছেন টেট, শারীরশিক্ষা, কর্মশিক্ষার চাকরিপ্রার্থীরাও। সকলেরই দাবি, দ্রুত চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সরকারের মনোভাব
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, আন্দোলন করলেই চাকরি পাওয়া যাবে না। আদালতের নির্দেশ মেনেই চাকরি দেওয়া হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আন্দোলনকারীদের পাল্টা
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তারা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। সরকার তাদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। এবার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
৬০০ দিনের কনভেনশন
শুক্রবার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে একটি কনভেশনের আয়োজন করেন চাকরিপ্রার্থীরা। কলকাতার বেশ কিছু বিশিষ্ট মানুষও সেই কনভেনশনে যোগ দিয়েছিলেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আর কতদিন
আন্দোলনকারীরা শিশুদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে এসে যোগ দিচ্ছেন। বিক্ষোভস্থলে বসেই তারা ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অসুস্থ আন্দোলনকারী
কঠিন অসুখ নিয়েও দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। আন্দোলন চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েছে বহু বিক্ষোভকারী। কিন্তু আন্দোলন গুটিয়ে নেওয়ার প্রশ্নই নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
তবে ইতিমধ্যেই বিচারপতি জানিয়েছেন, ওই এক হাজার ৯১১ জনকে স্কুলে ঢুকতে দেয়া যাবে না। তারা আর বেতন পাবেন না। তারা এতদিন যে বেতন পেয়েছেন, তা প্রতিমাসে ফেরত দিতে হবে। তদন্তের প্রয়োজনে সিবিআই যদি চায় তাহলে তাদের জেরা করতে পারবে এবং প্রয়োজনে হেফাজতে নিতেও পারবে। সেই সঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নতুন যারা চাকরি পাবেন, তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
এর আগে এই এক হাজার ৯১১ জনকে বলা হয়েছিল, তারা যেন স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন। একজনও চাকরি ছাড়েননি। তারপর আদালত এই কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।
বিক্ষোভে রাস্তায় চাকরিপ্রার্থীরা, তাদের জীবনে উৎসব নেই
করোনার পর এবার শারদোৎসবে মেতেছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ। তবে চাকরিপ্রার্থীরা উৎসবের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসবের দিনেও প্রতিবাদ
এক বছর পরেও ছবিটা বদলালো না। ২০২১ সালের দুর্গোৎসবেও ঘরবাড়ি ছেড়ে এভাবেই আন্দোলনের মধ্যে কাটিয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। এই বছরও কাটাচ্ছেন। তারা উৎসবে নেই, প্রতিবাদে আছেন। এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের কাছে উৎসবের আলাদা তাৎপর্য নেই। তাদের দাবি, পরীক্ষা দিয়ে পাস করার পরেও দুর্নীতির জন্য চাকরি পাননি। তাই সকলে যতদিন চাকরি না পাচ্ছেন, ততদিন প্রতিবাদ চলবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তিন দফার প্রতিবাদ
এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৯-এ। তিন দফায় এই আন্দোলনের বয়স আজ সাড়ে পাঁচশ দিন পেরিয়ে গেছে। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগে দুর্নীতি ছিল। কতজন এইভাবে চাকরি পেয়েছেন তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঝড়-জল উপেক্ষা করে
এই কয়েকবছরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশের এই ধর্নামঞ্চ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এই মানুষগুলোর কাছে অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা, নেই শৌচাগারও। ঝড়-বৃষ্টি-রোদ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন অবস্থান করে চলেছেন এরা। কেউ অসুস্থ বাবা-মাকে বাড়িতে রেখে কেউ বা কোলের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে। আন্দোলন এখন এদের জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসবের দিনেও
গত দুইবছর ধরে ধর্না মঞ্চেই কেটেছে উৎসবের দিনগুলি। দুইটি ঈদ, দুইটি দুর্গাপুজার মত বড় উৎসব এভাবে কেটেছে চাকরিপ্রার্থীদের। বস্তুত তাদের জীবনে উৎসব নেই, আনন্দ নেই, আছে কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চাকরি পাওয়ার লড়াই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্পিতার কাহিনি
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার অর্পিতা হাজরা। ধর্নামঞ্চে উপস্থিত থাকার জন্য যাতায়াত মিলিয়ে সাতঘণ্টা লাগে অর্পিতার। ভোর পাঁচটায় উঠে রান্না করে তারপর আসেন, আবার বাড়ি ফিরে ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে পড়াতে বসেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আনন্দ নয়, লড়াই
অর্পিতা জানালেন, ''ছোট্টো মেয়েটাকে নিয়ে যখন জামাকাপড়ের দোকানে গিয়ে শপিং করার কথা, পুজোর চারদিন কীভাবে কাটাব সেই পরিকল্পনা করার কথা, সেই সময় বসে রয়েছি রাস্তার ধারে। পুজোটা আমাদের কাছে প্রবল যন্ত্রণার। সকলকে আনন্দ করতে দেখে আরও যন্ত্রণা পাই ভেতরে ভেতরে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঈদও কেটেছে এখানেই
সরকারিভাবে বসতে নিষেধ ছিল, তাও এইবছর দুপুরের পরে এখানে বসেই ঈদ পালন করেছে কামরুজ্জামান, বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দেখা করাও হয়ে ওঠেনি। অন্যান্যবার দুর্গাপুজোতেও মুর্শিদাবাদের বাড়ির সামনের পুজোতেই হাজির থাকে কামরুজ্জামান। এইবছর ধর্নামঞ্চেই কাটবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিরানন্দ পিঙ্কি
হুগলির পিঙ্কি সাধুখাঁ জানালেন, ''আমাদের এবারের পুজোর দিনগুলো এভাবে কাটার কথা ছিল না। চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে বাচ্চার হাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে অনন্দ করে বেড়ানোর কথা ছিল। যেদিন থেকে জানতে পেরেছি আমরা দুর্নীতির শিকার, সেদিন থেকে আমাদের জীবনের আনন্দ চলে গিয়েছে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
সীমার প্রশ্ন
পুজোমণ্ডপে না গিয়ে কোলের বাচ্চা নিয়ে ধর্নামঞ্চে অবস্থান করছেন সীমা। তিনি বললেন, ''নিজের মনেই যদি আনন্দ না থাকে বাচ্চাকে কীভাবে আনন্দ দেব বলতে পারেন?''
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসব আর নেই
আশিকুল ইসলাম জানালেন, ''যোগ্য হয়েও চাকরি পাইনি। এই আনন্দে এখন আর কোনও উৎসাহ পাই না। দিনলিপি থেকে মুছে গেছে উৎসব।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
দুর্গারা পথে
মুর্শিদাবাদের রহুল বিশ্বাস বললেন, ''একদিকে দেবী দুর্গা পুজিত হচ্ছেন আর এখানে দুর্গারা বঞ্চিত হয়ে পথের ধারে পড়ে আছে। সরকার চাইলে যেকোনও সময় আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিরুপায় তপতী
বাড়িতে সন্তানকে রেখে চুঁচুড়া থেকে প্রতিদিন এই ধর্নামঞ্চে আসেন তপতী দাস। পুজোমণ্ডপে গেলেও মন পড়ে থাকবে এই ধর্নামঞ্চে। তিনি জানালেন, ''আমরা নিরুপায়। বাধ্য হয়ে একটা আশা নিয়েই দিনের পর দিন বসে রয়েছি এখানে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
চোখে জল জয়ন্তের
সাড়ে তিন বছরের বাচ্চা ফোনে তাকে বার বার বাড়িতে আসতে বলছে। বাবার কোলে চড়ে ঠাকুর দেখার বায়না ছোট্ট ছেলেটার। কথাগুলো বলতে বলতে চোখ মুছতে থাকে বীরভূমের জয়ন্ত। ''যখন সারা কলকাতা আলোর রোশনাইতে মেতে উঠেছে, আমরা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে, অন্ধকারেই পড়ে আছি। দুইটি পুজো এভাবেই কেটেছে, চাকরির নিয়োগপত্র হাতে না পেলে জীবনের সব পুজো এখানেই কাটাতে পারি।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিয়োগপত্র চাই
বনগাঁর সোমা মালাকার বললেন, ''দুর্নীতি করে যারা চাকরি পেয়েছে, তারা আজ পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দে পুজো কাটাচ্ছে। অথচ আমরা যোগ্য হয়েও পথে পড়ে রয়েছি। চাকরির নিয়োগপত্রই আমাদের কাছে পূজার প্রসাদ। যেদিন হাতে পাব সেদিনই আমাদের সত্যিকারের পুজো।'' বললেন, বনগাঁর সোমা মালাকার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
সুবীরেশ প্রসঙ্গে
বিচারপতি জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবীরেশ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে যতদিন মামলা চলবে, ততদিন তিনি নিজের ডক্টরেট ও এমএ ডিগ্রি ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি তিনি মনে করেন, তার পরিবারের বিপদের কারণ আছে, তাহলে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।