সমস্যায় পড়েছে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গে একশ দিনের কাজের টাকা বন্ধ থাকবে নাকি ছাড়া হবে তা নিয়ে।
বিজ্ঞাপন
গত মার্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গে একশ দিনের কাজের টাকা রাজ্য সরকারকে দেয়নি কোন্দ্রের মোদী সরকার। দিনকয়েক আগেই সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, দুর্নীতি ও বেনিয়ম নিয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে, তার ব্যাখ্যা যতক্ষণ পশ্চিমবঙ্গ সরকার না দিচ্ছে, ততক্ষণ তারা অর্থ বন্ধ রাখবেন। ফলে প্রায় দশ মাস হয়ে গেল, ১০০ দিনের কাজের টাকা পশ্চিমবঙ্গে পাচ্ছেন না গ্রামের মানুষ।
একশ দিনের কাজ মানে গ্রামের গরিব কর্মহীন মানুষকে একশ দিন সরকার কাজ দেয়। যে রাজ্যে যত গরিব, সেখানে এই কাজের চাহিদা তত বেশি।
পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। এই ধরনের অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখা হয়। সূত্র জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় দল পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে গিয়ে তা খতিয়ে দেখেছে। তদন্ত এই কথাটা সরকারিভাবে বলা না হলেও এই খতিয়ে দেখার কাজটা কার্যত তদন্তের মতোই। সরকারি কর্মকর্তারা বিভাগের কাছে কী রিপোর্ট দিয়েছেন, তা জানা না গেলেও নির্মলার কথা থেকে স্পষ্ট, তারা এখনো রাজ্য সরকারের ব্যাখ্যা পাননি বা পেলেও তারা সন্তুষ্ট হননি। ফলে অর্থ দেয়া শুরু হচ্ছে না।
সোনার মেডেল জীবন বদলে দিয়েছে অচিন্ত্যর
জীবনটাই বদলে গেছে অচিন্ত্য শিউলির। হাওড়ার পাঁচলার গ্রামের অত্যন্ত গরিব ঘরের সন্তান অচিন্ত্য এখন হিরো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সোনার মেডেল পাওয়ার পর
কমনওয়েলথ গেমসে সোনা পাওয়ার পর অচিন্ত্য শিউলির জীবনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন তিনি হাওড়ার পাঁচলায় নিজের গ্রামে। সেখানে রাতারাতি হিরোর মর্যাদা পাচ্ছেন অচিন্ত্য। কমনওয়েলথ গেমসে প্রথমবার নেমেই ৭৩ কিলোগ্রাম বিভাগে সোনা পেয়েছেন তিনি। সেই সোনা নিয়ে নিজের বাড়ির সামনে অচিন্ত্য শিউলি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেমন করে সোনা?
অচিন্ত্য জানিয়েছেন, সাফল্য পেতে হলে পরিশ্রম তো করতেই হবে। তার সঙ্গে ধৈর্যও চাই। প্রতিযোগিতা শুরুর এক মাস আগে তিনি ইংল্যান্ড পৌঁছেছিলেন। সেটাও তাকে সাহায্য করেছে। এই রসায়নেই সাফল্য পেয়েছেন তিনি। ছবিতে নিজের স্কুলের সামনে অচিন্ত্য।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হিরোর মর্যাদা
অচিন্ত্য এখন গ্রামে তো বটেই, গ্রামের বাইরে কলকাতাতেও হিরোর মর্যাদা পাচ্ছেন। তার এই রূপকথাসম উত্থানের জন্য। তার সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি করছেন বাচ্চা থেকে বয়স্ক সকলেই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
স্বাধীনতা দিবসে
এবার ছিল ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর। সেই উপলক্ষে কলকাতায় একাধিক জায়গায় ডাক পেয়েছিলেন অচিন্ত্য। শ্রীভূমিতে পতাকা উত্তোলনের সময় ছিলেন অচিন্ত্য।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মন্ত্রীর সঙ্গে
শ্রীভূমির অনুষ্ঠানে রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর সঙ্গে অচিন্ত্য। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে। সেখানে অচিন্ত্য ছিলেন আকর্ষণের কেন্দ্রে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মায়ের আবদার
কমনওয়েলথে সোনা চাড়াও প্রচুর পদক পেয়েছেন অচিন্ত্য। সেগুলি দেওয়ালে পেরেকে ঝুলিয়ে রাখতে হতো। অনেক পদক তো ভিতরে ঢুকিয়ে রাখতে হতো। এবার ছেলে আসার পর তার কাছে একটা আলমারি কিনে দেয়ার আবদার করেছেন মা। যাতে অচিন্ত্যর সব পদক সেখানে গুছিয়ে রাখা য়ায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অনুশীলন চলছে
অচিন্ত্যর অনুশীলন চলছে। এবার তার লক্ষ্য অলিম্পিকে পদক। এবারের লক্ষ্য আরো অনেক বড়। তার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন অচিন্ত্য।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
7 ছবি1 | 7
এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু গোল বেঁধেছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীদের কাছেপশ্চিমবঙ্গ বিজেপি নেতাদের অনুরোধ নিয়ে। সম্প্রতি দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের বলেন, আর মাসছয়েকের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এখনো একশ দিনের কাজের টাকা বন্ধ রাখলে তার প্রভাব পঞ্চায়েত নির্বাচনে পড়তে বাধ্য।
বিজেপি নেতাদের আশঙ্কা
রাজ্য বিজেপি-র নেতারা মনে করছেন, তৃণমূল একশ দিনের কাজে টাকা দেয়া বন্ধ করাটা ভোটের প্রধান ইস্যু করবে। তারা বঞ্চনার কথা বলবে। তখন দোষ গিয়ে পড়বে বিজেপি-র উপর। তাই অবিলম্বে পুরোটা না হলেও কিছুটা অর্থ ছাড়া হোক। নাহলে এই একটা প্রচারেই পঞ্চায়েতে বিজেপি-র অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে
এখানেই বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিপাকে পড়েছে। দুর্নীতির অভিযগে টাকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খোদ অর্থমন্ত্রী তা জানিয়ে দিয়েছেন। এখন আবার টাকা চালু করার মানে, সেখানে দুর্নীতি নেই তা মেনে নেয়া। আবার অর্থ না দিলে ভোটে খারাপ ফল হতে পারে। তাহলে কোনদিকে যাওয়া যায়, দুর্নীতি না ভোট পাওয়ার জন্য আপস কোন রাস্তাতে হাঁটবে বিজেপি?
ফুটবলই এই গরিব, প্রান্তিক মেয়েদের মুক্তির জায়গা
তাদের একটাই পরিচয়, তারা গরিব। তাদের একটাই আনন্দের জায়গা, ফুটবলের মাঠ। ফুটবলই পশ্চিমবঙ্গের এই মেয়েদের দুঃখ ভুলে যাওয়ার জায়গা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মুক্তির আনন্দ
তারা সকলেই খুব গরিব পরিবারের। পরিবারের মাসিক আয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অনেক বাধা উপেক্ষা করে তারা ফুটবল খেলেন। ফুটবলের মাঠ, বল নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া, প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়ার মধ্যেই তারা মুক্তির আনন্দ পান। ফুটবল মাঠ তাদের কাছে সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে নিজেদের প্রতিভার ঝলক দেখানোর জায়গা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কলকাতা-নেপলস ফ্রেন্ডশিপ কাপ
কলকাতায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো কলকাতা-নেপলস ফ্রেন্ডশিপ কাপ। সেখানেই খেললো এই গরিব, পিছিয়ে পড়া এলাকার মেয়েদের নিয়ে গঠিত আটটি টিম। নেপলস শহরের পক্ষ থেকে ক্লাবগুলিকে দেয়া হয় ম্যারাডোনার মূর্তি ও স্মারক। কয়েকজন মেয়েকে নেপলস নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিভিন্ন জেলা থেকে
পুরুলিয়া, মালদহ, সোনারপুর, বর্ধমানের দল এসেছিল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। খেলেছেন আদিবাসী মেয়েরা, খুবই গরিব পরিবারের মেয়েরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কলকাতার দল
কলকাতার চারটি দল ছিল। দুর্বার, পুলিশ অ্যাথলেটিক ক্লাব, রোশনি উইথ গ্রুপ এবং শান্তি মল্লিক অ্যাকাডেমি। প্রতিটি ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিল। প্রতিটি ম্যাচে আর্থিক দিক থেকে কোণঠাসা মেয়েদের লড়াই ছিল দেখার মতো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অনেক বাধা পেরিয়ে
বর্ধমানের মুসলিম পরিবারের মেয়ে সোনিয়া খাতুন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। ফুটবল খেলতে গিয়ে অনেক বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে। সানিয়া জানিয়েছেন, হাফপ্যান্ট পরতে হয়, বাড়ি ফিরতে দেরি হয়, বাইরে যেতে হয় খেলতে, এ সব নিয়ে পরিবারের আপত্তি ছিল। সানিয়ার বাবা ঘাস কেটে রোজগার করেন। মাসে রোজগার হাজার চারেক টাকা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সোনালি সোরেনের কাহিনি
বর্ধমানের টিমে খেলেন আদিবাসী পরিবারের মেয়ে সোনালি সরেন। বাবা ছোট কৃষক। মাসে রোজগার হাজার পাঁচেক টাকা। তবে তার ফুটবল খেলাকে বাবা-মা সমর্থন করেছেন। ইস্টবেঙ্গলে মেয়েদের দলেও খেলেছেন সোনালি। জাতীয় পর্বের প্রতিযোগিতাতেও খেলা হয়ে গেছে তার।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দীপিকা নস্করের কথা
দক্ষিণ ২৪ পরগনার দীপিকা নস্করকে প্রথমে বাবা-মা ফুটবল খেলতে নিষেধ করতেন। দীপিকা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বাবা-মা বলতেন, ফুটবল খেললে হাত-পা ভেঙে যেতে পারে। তখন বিয়ে দিতে সমস্যা হবে। কিন্তু সেই বাধা অতিক্রম করে ফুটবলকে আঁকড়ে ধরেছেন তিনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফুটবলকে সম্বল করে
মল্লিকা সাঁপুইয়ের পরিবারের অবস্থা ভালো নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই মেয়েকে তার প্রশিক্ষকরা যতটা সম্ভব সাহায্য করেন। ফুটবলকেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায় মল্লিকা। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ফুটবল খেলে অনেক দূর যেতে চাই। প্রচুর প্র্যাকটিস করি। লক্ষ্যপূরণ করবই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পাথরপ্রতিমার মেয়ে
সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমার মেয়ে নয়ন্তিকা মণ্ডল। ফুটবল তার ধ্যানজ্ঞান। বাড়ির বাধা ছিল না। দুর্বারের টিমে খেলেন তিনি। খুব ছোট থেকে ফুটবল খেলছেন। এই মাঠই তার লড়াইয়ের জায়গা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চাক দে ইন্ডিয়া
একসময় এই মেয়েরাই হয়তো ভারতীয় মেয়েদের ফুটবলে নক্ষত্র হয়ে উঠবে। তাদের ওই দারিদ্র্য, কষ্ট, বাধা সব অতিক্রম করে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। দেশকে গর্বিত করবে। আর প্রেরণা যোগাবে অন্য মেয়েদের। ফুটবলই এই মেয়েদের কাছে প্রাণের আরাম, স্বপ্নপূরণের এক টুকরো পৃথিবী।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
10 ছবি1 | 10
সমস্যাটা শুরু হয়েছে। এখন কোন পথে তার সমাধান হবে তার ইঙ্গিত এখনো নেই।
প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, বিজেপি-র রাজ্য নেতারা বুঝতে পেরেছেন, ''সাধারণ মানুষ তৃণমূলের প্রচারে প্রভাবিত হচ্ছে। এর মধ্যে দুর্নীতি নেই, বেনিয়ম হয়নি এমন কথা তো বলা য়াবে না। ভারত তো দুর্নীতি সূচকে উপরের দিকে উঠছে না। কিন্তু যারা দুর্নীতি করেনি, তারা কেন টাকা পাবে না?''
শুভাশিসের বক্তব্য, ''দুর্নীতি হলে, প্রকল্পকে ফুলপ্রুফ করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। তাদেরই প্রকল্প। দুর্নীতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে সাস্তিও দিক তারা। কিন্তু দরিব মানুষরা যাতে টাকাটা পায়, সেটাও নিশ্চিত করা হোক। টাকা বন্ধ করে দিলে ভোটে তার প্রভাব পড়বেই।'' তাই শুভাশিস মনে করছেন, ''ভোটের আগে কেন্দ্র একশ দিনের কাজে রাজ্যকে আবার টাকা দিলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। অর্থনীতি ও রাজনীতির মধ্যে বিরোধ হলে, ভারতে শেষেরটাই তো হামেশা প্রাধান্য পায়।''