দুর্নীতি বেড়েছে বাংলাদেশে
২৯ জানুয়ারি ২০১৯টিআই-এর এবারের সূচক অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ সোমালিয়া৷ আর সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক৷ দুর্নীতিতে বাংলাদেশের সমান অবস্থানে আছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও উগান্ডা৷
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-র পক্ষ থেকে ঢাকায় দুর্নীতির ধারণা সূচক সংক্রান্ত এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়৷ ২০১৮ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই সূচক প্রকাশ করা হয়৷
টিআই ১৮০টি দেশের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করে৷ জরিপে ০ থেকে ১০০ নাম্বরের স্কেলে দেশগুলোকে নাম্বার দেয়া হয়৷ সবচেয়ে কম নাম্বার যে দেশ পায় সেই দেশের স্কোর সবচেয়ে কম হয়৷ আর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তার অবস্থান থাকে শীর্ষে৷ যেমন সোমালিয়ার স্কোর সবচেয়ে কম (১০)৷ তাই দুর্নীতির ধারণা সূচকে সোমালিয়া এবার সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ৷ তেমনি সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ডেনমার্কের স্কোর ৮৮৷
এবার বাংলাদেশের স্কোর ২৬৷
টিআই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের দুর্নীতির সম্ভাব্য কারণগুলোও তুলে ধরেন৷ তার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অঙ্গীকারের সঙ্গে বাস্তবায়নের মিল না থাকা, হাইপ্রোফাইলদের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় না আনা, সরকার ও রাজনৈতিক দল এক হয়ে যাওয়া, আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে ঋণ খেলাপি ও জালিয়াতি বৃদ্ধি, ভূমি-নদী-খালবিল দখল, টেন্ডার ও নিয়োগে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ না কমা, অবৈধ অর্থের লেনদেন বন্ধ না হওয়া, দুর্বল জবাবদিহিতা, দুদকের কার্যকারিতা ও স্বাধীনতার অভাব, অস্বীকারের সংস্কৃতি, দায়মুক্তি ও দুর্বল আইনের শাসন, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের ক্ষেত্র সংকুচিত করা ইত্যাদি৷
টিআই'র দুর্নীতির ধারণা সূচকে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ তালিকার এক নম্বরে, মানে শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ছিল৷ ২০০৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়, ২০০৭ সালে সপ্তম, ২০০৮ সালে দশম, ২০০৯ সালে ১৩তম , ২০১০ সালে ১২তম , ২০১১ সালে ১৩তম , ২০১২ সালে ১৩তম , ২০১৩ সালে ১৬তম, ২০১৪ সালে ১৪তম , ২০১৫ সালে ১৩তম, ২০১৬ সালে ১৫তম, ২০১৭ সালে ১৭তম এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম৷
ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে দুর্নীতির অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণকে আমরা চিহ্নিত করেছি৷ মূল কারণ হলো, দুর্নীতি যে একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এই অপরাধে যে সবার জন্য আইন সমান, সেই ধারণা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি৷ যারা ক্ষমতাবান, তারা দুর্নীতি করে পার পেয়ে যায়৷ আরেকটি হলো দুর্নীতি দমন কমিশন৷ তারা সম্প্রতি কিছুটা সক্রিয় হলেও তাদের তৎপরতা নিম্ন এবং মাঝারি পর্যায়ে৷ তারা উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না৷ হয়তো আইনের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা আছে৷''
টিআই-এর দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করা পর দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘তাদেরকে আমরা আগেও বলেছি, প্রতিবেদন তৈরিতে আপনারা কোন গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করেন, আমাদের জানান৷ কারা দুর্নীতি করেছে, কোথায় কোন খাতে দুর্নীতি হয়েছে, টাকার অংকে তা কত, এসব যদি প্রতিবেদনে না থাকে তাহলে তা বিশ্বাসযোগ্য হবে না৷ তা না-হলে, এই মহাসমুদ্রে দুদক কাকে ধরবে?''
এর জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘ কে দুর্নীতি করল, কতটাকা দুর্নীতি করল, এটা প্রকাশ করা আমাদের কাজ নয়৷ এটা দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ৷ দুর্নীতির তদন্ত বা শাস্তি দেয়ার ম্যান্ডেট আমাদের নেই৷ আমরা আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১৬টি এবং বাংলাদেশের জন্য ৮টি প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করি৷ আমরা দুর্নীতির ধারণাপত্র তৈরি করি৷''
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ . নাজনীন আহমেদমনে করেন, ‘‘টিআইবি'র গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে৷ কিন্তু তারা তো সব দেশে একই পদ্ধতি প্রয়োগ করছে৷ আর সেটা ধারাবাহিকভাবে করছে৷ ফলে এটা দিয়ে যে ধারণাপত্র তৈরি করা হয় তা অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই৷ একই পদ্ধতির গবেষণায় এবার যদি সাধারণ মানুষ মনে করে, দেশে দুর্নীতি বেড়েছে তাহলে সেটা গ্রহণ না করার কোনো কারণ নেই৷ মানুষের এই ধারণাকে গ্রহণ করতে হবে৷ আর সে অনুযায়ী দুর্নীতি দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা দেখি, মাদকবিরোধী অভিযান, ক্রসফায়ার৷ কিন্তু কেন ক্রস ফায়ার হলো সেটা প্রকাশ করা হয় না৷ আমরা কারণ জানতে পারিনি৷ মানুষ যদি সত্য ঘটনা জানতে পারত তাহলে হয়তো তারা অনেক কিছু বুঝতে পারত৷ তাই মানুষের তথ্যের অধিকার, বলার অধিকার আগে নিশ্চিত করতে হবে৷ আমি মনে করি, এটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম শর্ত৷''
সত্যিই কি দুর্নীতি বেড়ে চলেছে বাংলাদেশে? লিখুন নীচের ঘরে৷