1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

‘দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল করতে তো সময় লাগবে'

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ নভেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে ব্যাংক খাত, ঋণ পরিস্থিতিসহ আরো কিছু বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন৷

ঢাকার কারওয়ান বাজারে কয়েকটি ব্যাংকের কার্যালয়
সুশাসন ফিরিয়ে আনলেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরাছবি: Samir Kumar Dey/DW

ড. হেলাল উদ্দিন মাইক্রো ক্রেডিট অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক।

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ তো ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এখন আবার নতুন ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন বৈদেশিক ঋণ কোনো সংকট তৈরি করতে পারে?

ডয়চে ভেলে: এখন তো আমরা অনেকটা সংকটের মধ্যে আছি। এই সংকট কাটাতে আমাদের ঋণ নিতে হবে। আবার ঋণ নিলে আবার একটা চাপ তৈরি হবে। এখন যদি আমরা ঋণ প্রোপারলি ব্যবহার করতে পারি এবং আগের যে ঋণ তার একটা অংশ ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আবার ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেছে। এখন যেহেতু ফাঁক ফোকরগুলো বন্ধ হয়ে গেছে সেই হিসাবে আমার ধারণা আমরা খারাপ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবো। আমাদের রেমিট্যান্স এবং ডলারের যে অন্যান্য সোর্স, সেটা ইতিবাচক ধারায় আছে।

রিজার্ভে হাত না দিয়েই এই সরকার আসার পর দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করেছে। এক বিলিয়ন ডলার সুদও শোধ করেছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

এটা তো বললাম যে ফাঁকফোকর দিয়ে ঋণের টাকা বের হতো সেটা বন্ধ করা গেছে। আমদানিও কিছুটা বাগে আনা গেছে, কমানো গেছে। ফলে বাইরে থকে যে ডলার আসছে, সেটা আমাদের রিজার্ভে ধরে রেখে কিছু ঋণ পরিশোধ করতে পারছি।  আর পাশপাশি হলো এরই মধ্যে বাইরে থেকে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার আমরা পেয়েছি। এইসব মিলিয়ে আপাতত আমরা ভালোই ম্যানেজ করছি। এখন পরবর্তীতে যে পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট আসবে তাদের ওপরই নির্ভর করবে যে তারা কীভাবে প্রেসার ম্যানেজ করবে।

এখন ঋণ পরিশোধের পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ছে। সুদ এবং আসল সব মিলিয়ে পরিমাণ বাড়ছে। এটা তো এক পর্যায়ে অনেক বড় অংক হবে। সেটা কি সামাল দেয়া যাবে?

আমরা তো ঋণ বেশি নিয়েছি। আগের সরকারের আমলেই তো প্রজেকশন ছিল যে, ২০২৫-২৬ সালে এটা বড় আকার ধারণ করবে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার এসে যেটা করেছে, তাতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। তারপরও চাপ তো বাড়বে। আর বাইরে থেকে ডলারের যে সরবরাহ, যেটা বাড়লে সমস্যা ছিল না। আর এখন যেটা আমরা দেখছি রেমিট্যান্সের ফ্লো বাড়ছে। এতে কনফিডেন্স বাড়ছে। এখন চাপ বাড়বে। আবার ডলারের ফ্লোও বাড়বে।

রপ্তানিও তো বাড়াতে হবে। সেটা তো ঠিক সেই জায়গায় যাচ্ছে না...

রপ্তানিতে একটা নিম্নমুখী প্রবণতা আছে। একটা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে চাপে আছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। পোশাক খাতে আনরেস্টও কমে আসছে।  ক্রেতারা যে লো-কস্ট পোশাকের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তা নয়। আমার মনে হয় পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হলে আমরা রপ্তানি রিগেইন করতে পারবো।

গত সরকারের আমলে বড় বড় প্রকল্পে ঋণ নেয়া হয়েছে। সেগুলোর কতটা প্রয়োজন ছিল? আর ঋণের কি সদব্যবহার হয়েছে?

সবগুলো প্রকল্প জাস্টিফইড ছিল না।  সেটা তো আমরা এখন দেখতেই পাচ্ছি। কর্ণফুলি টানেলে যে খরচ হয়েছে, তার তুলনায় যা আয় আসে তা অপ্রতুল। প্রতিদিনই লস হচ্ছে। আগের সরকার অনেক উন্নয়ন করেছে সেটা দেখাতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়েছে। এগুলোকে আমরা কসমেটিক প্রজেক্ট বলি। এখানে ওই প্রকল্পগুলো কতটা জনগণের কাজে আসবে তা বিবেচনা করা হয়নি। যে অর্থ খরচ হবে তা সুদে-আসলে ফেরত আসবে কিনা তা-ও বিবেচনায় নেয়া হয়নি। প্রজেক্টগুলো মূল্যায়ন করেও করা হয়নি।

এইসব বড় বড় প্রকল্পে সময় বেড়েছে, খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে লুটপাটের সুবিধা দেয়া হয়েছে কিনা...

এটা আগের সরকারের এন্টার প্রকিউরমেন্টের মধ্যেই এই ব্যবস্থা ছিল। তাড়াহুড়ো করে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো, একইভাবে ব্যয় করা, প্রকল্পের উৎকর্ষতা বা খরচ কমানোর প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ব্যয় করা হয়েছে। শুরুতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে বরাদ্দ কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। ফলে এটা শুধু পারসেপশন না, বাস্তবেই লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

এখনো যে চলমান প্রকল্পগুলো আছে সেগুলো রিভিউ করা, খরচ কমানো বা বন্ধ করা যায় ?

এখন আসলে কিছুটা সংস্কার দরকার। কিন্তু এখনো আমরা প্রকৃতপক্ষে তো কোনো সংস্কার করতে পারি নাই। সংস্কার সব সময়ই কস্টলি এবং পেইনফুল। তবে আমাদের সংস্কারটা করতে হবে। এখন হয়তো প্রকল্পগুলোর দিকে সবার চোখ আছে। হয়তো একটু বেটার হবে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিবর্তন হয়েছে আমি বলবো না। আরো অনেক কিছু করার আছে।

ঋণ চুক্তিতে যদি কোনো সমস্যা বা অস্বচ্ছতা থাকে ,তাহলে আন্তর্জাতিক আইনে এই চুক্তি বাতিল করা যায়?

রিভাইস করার সুযোগ আছে। তবে সরকারের সঙ্গে সরকারের বা প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হলে সেটা তো পরের সরকারকে অনার করতে হবে। প্রক্রিয়ার মধ্যে যদি অস্বচ্ছতা থাকে তাহলে আবার রিভাইস করার সুযোগ আন্তর্জাতিক আইনে আছে। তবে একেবারে বাতিল করা যাবে না। সেটা করতে গেলে, আবার ঋণ চুক্তি করতে গেলে তারা তো প্রশ্ন করবে। সেই কারণে সরকার সাধারণত এই পথে যেতে চায় না।

যারা এই বিদেশি ঋণের টাকা লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়?

এটা প্রচলিত আইনে করা যায়। তবে অনেক সময় আইন থাকে তার প্রয়োগ হয় না। যারা আইনের ফাঁক দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে গেছে তাদের তো আইনের আওতায় আনা দরকার। ওই অর্থ ফেরত আনা দরকার। আইনের কোনো ঘাটতি থাকলে আইন সংশোধন করতে হবে।

কোনো দেশ বা আন্তর্জাতি সংস্থা ঋণ দেবে তো আমাদের সক্ষমতা দেখে? ব্যক্তিকে দেখে তো দেবে না। সেই সক্ষমতার জায়গায় আমরা কোথায় আছি?

যে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া আছে, নানা ব্যাড প্র্যকটিস ও দুর্নীতি আছে, এগুলো না থাকলে বা বন্ধ হলে আমাদের অর্থনীতির সক্ষমতা তো আছে। আমরা যদি সুশাসন ফিরিয়ে আনতে পারি তাহলে আমাদের সমস্যা হবে না। আমাদের রিজার্ভ কিন্তু এখনো ভেঙে পড়েনি। আর বিভিন্ন কমিটমেন্টের কারণে আমরা এই ক্রাইসিটা কাটিয়ে উঠতে পারবো বলে আমি আশাবাদী। বাইরের বিশ্বের অনেক দেশই এগিয়ে এসেছে। আরো অনেক দেশ আসবে আমাদের সহায়তা করতে।

ব্যাংকিং খাতে তো সংস্কার হচ্ছে। কিন্তু এখনো সংকট। কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকদের  টাকা দিতে পারছে না। ১০ হাজার টাকা করে দেয়। এখানো কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা...

যেগুলো দুর্বল ব্যাংক তারা তো রাতারাতি সবল হয়ে যাবে না। ভালো ব্যাংকে আমানত ফিরছে। আর গভর্নর সাহেব যেটা করেছেন, তা হলো, যারা ভালো ব্যাংক আছে তাদের কাছে যদি উদ্বৃত্ত আমানত থাকে, তা যেন দুর্বল ব্যাংককে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে। আগে ধারণা করা হয়েছিল ব্যাংকে টাকা পাওয়া যাবে কিনা। এখন পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কনফিডেন্সটা ফিরে আসছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ