1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্বল হচ্ছে বন্ধন, বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ

সমীর কুমার দে ঢাকা
৪ আগস্ট ২০১৭

‘‘পারিবারিক, সামাজিক বন্ধন দুর্বল হচ্ছে ক্রমশ৷ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে মানুষ৷ ভালোলাগা-ভালোবাসাও যাচ্ছে কমে৷ ফলে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ,’’ বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া হক৷

ছবি: picture-alliance/dpa

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার দু'টি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতিবছর ৫ হাজার ১৪৩টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে৷ দুই কর্পোরেশনের তালাক রেজিস্ট্রি দপ্তর জানাচ্ছে – দিন দিন ভয়াবহ আকারে বেড়েই চলেছে বিবাহবিচ্ছেদ৷ ঢাকায় এর প্রবণতা ইতিমধ্যেই ভয়ংকর রূপ নিয়েছে৷ এরমধ্যে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ও তারকা পরিবারও রয়েছে৷ বিচ্ছেদের দুই-তৃতীয়াংশ নোটিসই আসছে নারীর কাছ থেকে৷ আর ঢাকা শহরের তুলনায় সারাদেশে এই চিত্র আরও ভয়াবহ৷

বিবাহবিচ্ছেদের নেপথ্যে নানা কারণ দেখছেন মনোবিজ্ঞানীরা৷ তাঁদের মতে, নির্যাতন, মাদকাসক্ত, সন্দেহ প্রবণতা, একে-অপরের অবাধ্য হওয়া, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলা, পুরুষ নির্ভরশীলতা কমে যাওয়া, আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি, স্বাধীনচেতা ও শূন্যতা বিরাজ করা, তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার, পরকীয়া ও সামাজিক অবক্ষয়ের ফলে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটছে৷ এছাড়া রয়েছে আধুনিকতার বিষয়ও৷ তবে স্বাধীনচেতা নারীর জন্য বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখার অবকাশ রয়েছে৷

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোও ভূমিকা রাখছে: ডা. জিল্লুর রহমান

This browser does not support the audio element.

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জিল্লুর রহমান খান রতন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের বন্ধনটা দুর্বল হচ্ছে৷ পাশাপাশি নারীরা সাবলম্বী হচ্ছেন৷ অনেক নারী আগে অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও স্বামীর সংসারে থাকতেন৷ কিন্তু এখন তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন৷ পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোও এখানে ভূমিকা রাখছে৷ স্বামী স্ত্রীকে সময় না দেয়ার কারণে স্ত্রী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন৷ সেখানে কারো সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে৷ এক পর্যায়ে পরকীয়ার সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন তাঁরা৷ শেষ পর্যন্ত তালাক পর্যন্ত গড়াচ্ছে বিয়ে৷ এখানে একজনের অন্যজনকে বোঝার বিষয় আছে, সময় দেয়ার ব্যাপার আছে, সম্মান দেয়ার বিষয় আছে৷ এগুলো অবহেলা করলে শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদে রূপ নিচ্ছে৷’’

ঢাকা শহরের দুই সিটি কর্পোরেশনের ১০ অঞ্চলের হিসাব মতে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে রাজধানীতে ৩৬ হাজার ৩৭১টি বিবাহবিচ্ছেদের নোটিস দেওয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে নোটিস কার্যকর হয়েছে ৩০ হাজার ৮৫৫টি৷ দেখা যাচ্ছে, এ সময়ে স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে তালাকের নোটিস দেওয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৮০৩টি এবং স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তালাকের নোটিস দেওয়া হয়েছে ১২ হাজার ১৮টি৷ এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি, মাসে ৪২৯টি এবং বছরে ৫ হাজার ১৪৩টি সংসার বিচ্ছেদ ঘটছে৷

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে জমা পড়া তালাকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মূলত উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারে বিচ্ছেদ বেশি হচ্ছে৷ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ বছরে দুই সিটি এলাকায় বিচ্ছেদ কার্যকর হয়েছে ৩০ হাজার ৮৫৫টি, যাঁদের অধিকাংশের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে এবং যাঁরা উচ্চ ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য৷ এছাড়া বিয়ের এক বছর না যেতেই তাঁরা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘‘উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের কেউ কারও কথা শুনতে চান না৷ তাঁরা যে যাঁর কথা মতো চলেন৷ উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, অঢেল অর্থ সম্পদ রয়েছে, তাই বিচ্ছেদ হলে সমস্যা হবে না৷ আর নিম্নবিত্ত পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক থাকে বেশি৷ বেশিরভাগ পরিবারের নারীরা চাহিদা অনুযায়ী অনেক কিছুই পান না, অভাব অনটন সব সময় লেগেই থাকে৷ ফলে ঝগড়া, বিবাদ সৃষ্টি হয়৷ অন্যদিকে মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা লোকলজ্জার ভয়ে সাধারণ ঘর ভাঙতে রাজি হন না৷’’

আমরা যেভাবে বড় হয়েছি, এখনকার বাচ্চারা সেভাবে বড় হচ্ছে না: তানিয়া হক

This browser does not support the audio element.

উইম্যান অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, ‘‘আমরা যেভাবে বড় হয়েছি, এখনকার বাচ্চারা সেভাবে বড় হচ্ছে না৷ তাদের চাহিদা অনেক বেশি৷ তাদের উপর চাপও বেশি৷ তারা খেলার মাঠে যায় না৷ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা হয় না, ফলে তারা জানে না বন্ধনটা কী জিনিস৷ এই বাচ্চারা একা একা বড় হচ্ছে৷ তাই বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গেও সম্পর্কটা স্বাভাবিক হচ্ছে না৷’’

তবে তাঁর কথায়, ‘‘মূলত নারীর স্বাধীনতা, সচেতনা এবং উপার্জন ক্ষমতা বাড়ায় তাঁরা খুব সহজেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন৷ আসলে আমাদের সংসার টিকাতে হলে স্বামী-স্ত্রী দু'জনকেই পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে৷ সম্মান করতে হবে৷ ভালোবাসা থাকতে হবে৷ একজনের অন্যজনকে বুঝতে হবে৷ এভাবে চললে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনার কিছু বলার থাকলে জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ