মূল্যবৃদ্ধি রুখতে ভারত সরকার জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পারে৷ কিন্তু ভোট ছাড়া তারা কিছুই বোঝে না৷
বিজ্ঞাপন
কলকাতা বিমানবন্দর থেকে লেকটাউন যশোর রোডের দূরত্ব ছয় কিলোমিটারের সামান্য কম৷ বিমানবন্দর থেকে অ্যাপ ক্যাব (ওলা, উবার) নিলে ভাড়া হয় তিনশ টাকার সামান্য বেশি৷ প্রিপেড ট্যাক্সি পাওয়া যায় আড়াইশ-তিনশ টাকায়৷ সম্প্রতি বিমানবন্দরে নেমে বাড়ি ফিরতে গিয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল৷ ছয় কিলোমিটার দূরত্ব যেতে অ্যাপ ক্যাব দর হাঁকছে সাড়ে নয়শ টাকা৷ আর প্রিপেড ট্যাক্সি দাম চাইছে পাঁচশ টাকারও বেশি৷
দামবৃদ্ধি অযৌক্তিক নয়৷ গত কয়েকমাসে গোটা ভারতে পেট্রল-ডিজেলের দাম বেড়েছে লাফিয়ে৷ বছরের শুরুতেও যে পেট্রল ৮০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন তার দাম কম-বেশি ১০৮ টাকা৷ ডিজেল ১০০ টাকা ছাড়ানোর পর সরকার ১০ টাকা দম কমিয়েছে৷ আপাতত ৯০টাকার আশপাশে৷ জ্বালানির দাম বাড়লে তার অনুষঙ্গে বাজার অগ্নিমূল্য হয়৷ ভোজ্য তেল কিছুদিন আগেও লিটার প্রতি ১১০, ১২০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন তা আড়াইশ টাকার কাছাকাছি৷ পেঁয়াজ, সবজি-সহ বাজারের প্রায় সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে৷ ফলে অ্যাপ ক্যাবের দর হাঁকানো অস্বাভাবিক নয়৷ সংসার টানতে সকলেরই তো কালঘাম ছুটছে৷
তেলের দাম আকাশছোঁয়া, কলকাতায় বিক্ষোভ
গত কয়েকমাসে গোটা ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম লিটারে একশ টাকা ছাড়িয়েছে। দিকে দিকে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পেট্রোল একশ
কলকাতায় এই মুহূর্তে এক লিটার পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকায়। ডিজেল ১০০ টাকা প্রতি লিটার। মাথায় হাত সাধারণ মানুষের।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আগে কী ছিল
কিছুদিন আগেও ৭০ থেকে ৮০ টাকায় পেট্রোল পাওয়া যেত ভারতে। করের তারতম্যের কারণে একেকটি রাজ্যে তেলের দাম একেকরকম হয়। কিন্তু তা কখনোই পাঁচ টাকার বেশি হয় না। গত কয়েকমাসে নাগাড়ে বেড়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। অবশেষে তা একশ ছাড়ালো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মনমোহন জমানা
মনমোহন সি যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন পেট্রোলের দাম ৬০ টাকা প্রতি লিটারে পৌঁছেছিল। বিরোধী বিজেপি তখন রাস্তায় নেমে তুমুল আন্দোলন করেছিল। অথচ তেলের দাম ১০০ টাকায় পৌঁছানোর পরেও বিজেপির সরকার নিশ্চুপ।
মূল্যবৃদ্ধি এবং প্রতিবাদ
তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গোটা ভারতেই প্রতিবাদ হচ্ছে। কলকাতায় রাস্তায় নেমেছেন অ্যাপ-ক্যাবের চালকরা। গাড়িতে এসি চালানো তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। যার ফলে সমস্যায় পড়েছেন যাত্রীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাড়ছে জিনিসের দাম
ডিজেলের দাম বাড়ায় বাজার আগুন। শাক-সবজি থেকে ভোজ্য তেলের সবকিছুর দাম বাড়ছে চড়চড় করে। কারণ, পরিবহণ খাতে ব্যয়বৃদ্ধি হয়েছে।
ছবি: DW/Prabhakar
গাড়ি কমেছে পেট্রোল পাম্পে
পেট্রোল পাম্পগুলিতে গাড়ি কম আসছে বলে জানিয়েছেন পাম্প-মালিকেরা। তাদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ গাড়ি চড়া কমিয়ে দিয়েছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিএনজি পাম্পে ভিড়
অনেকেই পেট্রোল গাড়ি সিএনজি বা গ্যাসে বদলে ফেলছেন। কিন্তু দিল্লি, হরিয়ানায় সিএনজি পাম্প যথেষ্ট থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যথেষ্ট সিএনজি পাম্প নেই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভবিষ্যত কী
আগে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে ভারতে তেলের দাম বৃদ্ধি পেত। কিন্তু এখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও ভারতে তেলের দাম বাড়ে। কারণ সরকার সমানে কর ও শুল্ক বাড়িয়ে চলেছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তেলের দাম আরো বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের যুক্তি, এর থেকে যে অর্থ আসে তা দিয়ে জনকল্যাণমূলক কাজ করা হয়। তাই তারা শুল্ক ও কর কমাবে না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
8 ছবি1 | 8
আসলে গত ২০ মাসে ভারতের অর্থনীতির মতোই দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির কোমর ভেঙে গেছে৷ করোনা এবং লকডাউনের কারণে লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন৷ নতুন জায়গায় বহু আপস করে চাকরি খুঁজে নিতে হচ্ছে৷ বেতন কমছে, কাজের প্রকৃতি বদলাচ্ছে৷ লকডাউনে কাজ হারিয়ে এখনো কোনো চাকরি পাননি, এমন মানুষের সংখ্যা বিশাল৷ এই পরিস্থিতিতেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে৷ শুধু তো পেট্রল, ডিজেল নয়, রান্নার গ্যাসের দামও একাধিকবার বেড়ে প্রায় হাজার টাকা প্রতি সিলিন্ডারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে৷ স্বাভাবিকভাবেই মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়তে শুরু করেছেন৷ অবস্থা সামাল দিতে না পেরে ধনিয়াখালিতে এক গৃহশিক্ষক তার বাবা, মা, বোনকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন৷
এমন হওয়ার কথা ছিল না
মনমোহন সিংয়ের সরকার যখন ক্ষমতায়৷ সে সময় পেট্রল-ডিজেলের দাম ৬০ টাকা পার করেছিল৷ বিজেপির বর্তমান নেতা-মন্ত্রীরা তখন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ দাবি করেছিলেন৷ ভারতে তেলের দাম তখনো সরকার নিয়ন্ত্রণ করতো৷ ওই সময়ের পর স্থির হয়, তেলের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে৷ অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে, দেশেও বাড়বে৷ কমলে, দেশেও কমবে৷ যে কারণে, ভারতের প্রতিটি রাজ্যে তেলের দাম প্রতি ২৪ ঘণ্টায় বদলায়৷ বাজারের নিয়মে ওঠা-নামা করে৷ সমস্যা হলো, ওই দামের উপর কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ কর বসায়৷ যা নেহাত কম নয়৷ লাভের আশায় সময় সময় দুই সরকার করের অঙ্ক বাড়িয়েছে৷ এখন যখন তেলের অগ্নিমূল্য, সরকার প্রাথমিকভাবে কর কমাতে রাজি হয়নি৷ একশ টাকা প্রতি লিটার হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ডিজেলে ১০টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনো তাদের কর কমাতে চায়নি৷ সরকার যদি সত্যিই জনকল্যাণকামী হতো, তাহলে করের বোঝা কমিয়ে মানুষকে সাময়িক স্বস্তিতে থাকার সুযোগ করে দিল৷ বাস্তবে তা হলো না৷ জমিদার আমলে ধ্বস্ত প্রজাকে রাজকর দেওয়ার জন্য যেমন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হতো, বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সে কাজই পরিকল্পিতভাবে করে চলেছে৷ মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত সত্যি সত্যিই বিধ্বস্ত৷ ঋণের বোঝায় জর্জরিত৷
সুযোগ নেয় মুনাফাখোরের দল
সংকটকালে কালোবাজারি বাড়ে৷ এ কোনো নতুন কথা নয়৷ সাম্প্রতিক করোনাকালে কালোবাজারির একাধিক ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছে ভারত৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না৷ যে ঘটনা দিয়ে শুরু করেছিলাম লেখা, সেখানেই ফিরে যাওয়া যাক৷ গত এক বছরে তেলের দাম সব মিলিয়ে ২০টাকার আশপাশে বেড়েছে৷ সেইমতো ট্যাক্সিভাড়া অবশ্যই বাড়া উচিত৷ কিন্তু বাস্তবে অ্যাপ ক্যাব দাম বাড়িয়েছে তিন গুণেরও বেশি৷ একেই কালোবাজারি বলে৷ অ্যাপ ক্যাব বুকিং নিয়ে বাতিল করে দিচ্ছে৷ গাড়িতে এয়ার কন্ডিশনার চলবে না, এমন ফতোয়া জারি করে দিচ্ছে৷ এদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই৷ না সরকার, না প্রশাসন, না মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি৷ সকলে সব কিছু মুখ বুজে মেনে নিচ্ছে৷
অ্যাপ ক্যাবের চালক যেমন নিম্নমধ্যবিত্ত, তেমনই সেই ক্যাব ব্যবহার যিনি করছেন, তিনি মধ্যবিত্ত৷ ক্যাবচালকের কালোবাজারিতে আরো বিপাকে পড়ছেন মধ্যবিত্ত যাত্রী৷ ট্যাক্সি নেওয়া ছাড়া তার উপায় নেই৷ রাস্তায় বাস কমেছে৷ ভিড় বাসে করোনার ভয়৷ ট্রেন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে শুরু করেছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ৷ কিন্তু অফিসে ঢুকতে হবে সময়ে৷ করোনাকালে অফিসের বেতন কমলেও ট্যাক্সি ধরা ছাড়া উপায় নেই তার৷ আর এই সুযোগটাই ব্যবহার করছে বেসরকারি গণপরিবহণ৷
এ শুধু কলকাতার খণ্ডদৃশ্য নয়, গোটা দেশ জুড়েই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে৷ প্রতিদিন আরো বেশি বেশি করে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে৷ এক এবং একমাত্র প্রশাসনই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে৷ কালোবাজারি রুখতে পারে, মূল্যবৃদ্ধি রুখতে জরুরিভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে৷ কিন্তু সে কাজ কেউ করবে না৷
ভোট বড় বালাই৷ উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার তেলের দাম অতি সামান্য কমিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গে ভোট নেই, তাই সরকারেরও দাম কমানোর মাথাব্যথা নেই৷ তাতে যদি মানুষ মরে, মরার মতো করে বেঁচে থাকে, তাতে কার কী এসে যায়!
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ছবিঘরটি দেখুন...
দ্রব্যমূল্যের তুলনা: ২০০৯ বনাম ২০২১
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিদিন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন জেলার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ঢাকার একটি বাজারে ২০০৯ ও ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম উল্লেখ করা হয়েছে৷
চাল
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিদিন ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রকাশ করে৷ এতে দেখা যাচ্ছে ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার এক বাজারে এক কেজি সরু বোরো চালের দাম ছিল ৩৪-৩৬ টাকা৷ ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর একই বাজারে ঐ চালের দাম ছিল ৫৭-৭০ টাকা৷ মোটা বোরো চালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ২১-২৩ টাকা৷ ২০২১ সালে ছিল ৪৪-৪৭ টাকা৷
ছবি: DW
ডাল
২০০৯ সালে এক কেজি দেশি মসুর ডালের দাম ছিল ১০৮-১১০ টাকা৷ ২০২১ সালে ১০০-১১০ টাকা৷ আমদানিকৃত মসুর ডালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ১১২-১১৫ টাকা৷২০২১ সালে সেটা কমে হয় ৮৫-৯০ টাকা৷ মুগ ডালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ৮৫-১০০ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ১২০-১২৫ টাকা৷
ছবি: bdnews24.com/T. Ahammed
পেঁয়াজ
এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ছিল ৪০-৪৪ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ৫৫-৬০ টাকা৷ আর আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ২০০৯ সালে ছিল ২৮-৩৪ টাকা৷ ২০২১ সালে ৪৫-৫০ টাকা৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
রসুন
২০০৯ সালে এক কেজি দেশি রসুনের দাম ছিল ৯০-১০৫ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা কম ছিল, ৫০-৭০ টাকা৷ আমদানিকৃত রসুনের এক কেজির দাম ২০০৯ সালে ছিল ৮০-৮৫ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ১১০-১২০ টাকা৷
ছবি: bdnews24.com/A. Mannan
কাঁচা মরিচ
২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার এক বাজারে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা৷ ঐ একই বাজারে ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১২০-১৩০ টাকা৷
ছবি: DW/H.U.R. Swapan
সয়াবিন তেল
২০০৯ সালে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৭০-৭৩ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ১৩৮-১৪২ টাকায়৷
ছবি: Gustavo Cuevas/dpa/picture-alliance
চিনি
২০০৯ সালে আমদানিকৃত এক কেজি চিনির দাম ছিল ৫২-৫৪ টাকা৷ ২০২১ সালে ৭৫-৭৭ টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Kalaene
ডিম
২০০৯ সালে দেশি মুরগির ডিম ছিল ৩২-৩৪ টাকা হালি৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকায়৷ ফার্মের মুরগির ডিমের (লাল) দাম ২০০৯ সালে ছিল ২৫-২৬ টাকা৷ ২০২১ সালে ৩৬-৪০ টাকা৷
ছবি: Reuters/W. Kurniawan
গরুর মাংস
গরুর মাংসের কেজিপ্রতি দাম ২০০৯ সালে ছিল ২২০-২৩০ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ৫৮০-৬০০ টাকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Bachmann
খামারের মুরগী
২০০৯ সালে কেজিপ্রতি দাম ছিল ১০০-১১০ টাকা৷ ২০২১ সালে ১৫০-১৬০ টাকা৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Dinh Nam
দেশি রুই
২০০৯ সালে ছিল ১৪০-১৬০ টাকা৷ ২০২১ সালে ২০০-৩০০ টাকা৷ বিস্তারিত জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Mortuza Rashed
পানির দাম
গত ১২ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা৷ ২০০৯ সালে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ছিল ৫ টাকা ৭৫ পয়সা৷ গত জুলাই থেকে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা দরে দাম দিতে হচ্ছে৷ অর্থাৎ গত ১২ বছরে ইউনিটপ্রতি পানির দাম প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে৷ সম্প্রতি চট্টগ্রাম ওয়াসাও আগামী মাস থেকে পানির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: AP
বিদ্যুৎ
এ বছরের ২১ জুন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) ও ভোক্তাকণ্ঠ আয়োজিত এক ওয়েবিনারের মূল নিবন্ধে বলা হয়, গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম ১০ বার বেড়েছে৷ পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে৷ আর খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ৷
ছবি: DW
জ্বালানির দাম বৃদ্ধি
৩ নভেম্বর বুধবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়৷ ডিজেলের মোট চাহিদার ৬৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে৷ আর সেচকাজে ব্যবহৃত হয় ১৬ শতাংশ৷ ৪ নভেম্বর ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারপ্রতি তিন টাকা বাড়িয়ে ৬২ টাকা করা হয়৷ আরও বেড়েছে বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম৷ ১২ কেজির সিলিন্ডারে বেড়েছে ৫৪ টাকা৷
ছবি: Getty Images/P. Walter
মুনাফা সত্ত্বেও বৃদ্ধি
জ্বালানি বিভাগের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, সবশেষ ২০১৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল৷ মাঝে ২০১৬ সালে দাম কিছুটা কমানোও হয়েছিল৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম যখন কম ছিল তখন তেলের দাম ততটা না কমানোয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সাত বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছিল৷ আর এবার টানা পাঁচ মাস ক্ষতি হওয়ার পর দাম বাড়ানো হলো৷
ছবি: Alastair Grant/AP/picture alliance
ঢাকায় বাসা ভাড়া দ্বিগুন হয়েছে
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বলছে ঢাকায় ২০১০ সালে দুই কক্ষের পাকা বাসার গড় ভাড়া ছিল ১১ হাজার ৩০০ টাকা৷ ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ২৪ হাজার ৫৯০ টাকা৷ আধাপাকা (টিন শেড) বাড়ির দুই কক্ষের ভাড়া ২০১০ সালে ছিল ৬ হাজার ৮০০ টাকা৷ ২০১৯ সেটা বেড়ে হয় ১৩ হাজার ২০০ টাকা৷ ২০১০ সালে দুই কক্ষের মেসের গড় ভাড়া ছিল ১১ হাজার ৫০০ টাকা৷ ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ২৩ হাজার ২০০ টাকা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে
এ বছরের জুনে ক্যাব জানায় ২০২০ সালে ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ এবং সেবা-সার্ভিসের দাম বেড়েছে ৬.৩১ শতাংশ৷ ২০১৯ সালে এটি ছিল যথাক্রমে ৬.৫০ শতাংশ ও ৬.০৮ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে তা ছিল ৬ শতাংশ ও ৫.১৯ শতাংশ৷ ঢাকার ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা-সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য ও ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা-সার্ভিসের সংগৃহীত মূল্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ক্যাব৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মাথাপিছু আয় বেড়েছে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে ২০০৯-২০১০ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৮৪৩ মার্কিন ডলার৷ আর সবশেষ হিসাব বলছে, মাথাপিছু আয় এখন ২,৫৫৪ ডলার৷ তবে এই আয়ের সুষম বণ্টন হচ্ছে বলে মনে করেন না অনেক অর্থনীতিবিদ৷ কারণ একদিকে যেমন একদল মানুষ দ্রুত ধনী হচ্ছেন, আবার গরিবের সংখ্যাও বাড়ছে৷ করোনার সময়ে প্রায় সোয়া তিন কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র্য হয়েছেন বলে সম্প্রতি এক জরিপে জানা গেছে৷