২০১১ সালে জাপানে সুনামির আঘাতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিহত করা সম্ভব না হলেও বিজ্ঞানীরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছেন৷
ছবি: ESA
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বিমান ও সেন্টার, ডিএলআর-এ এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন দু'শ'র বেশি গবেষক৷ তাঁরা সবসময় পৃথিবীর উপর নজর রাখছেন, যেন দুর্যোগের সামান্য কোনো লক্ষণ সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা যায়৷ ভূ-বিজ্ঞানী ড. টোবিয়াস স্নাইডারহান বলেন, ‘‘আমাদের কাজ হচ্ছে স্যাটেলাইটের সাহায্যে যত দ্রুত সম্ভব দুর্গত এলাকার মানচিত্র তৈরি করা৷''
কৃত্রিম উপগ্রহগুলোতে শক্তিশালী ক্যামেরা আছে, যা উপদ্রুত এলাকার সরাসরি ছবি পাঠিয়ে থাকে৷
স্যাটেলাইটের পাঠানো ছবি ডিএলআর-এর ‘আর্থ অবজারভেশন সেন্টার'-এ বিশ্লেষণ করা হয়৷ এরপর সেগুলো দুর্গত এলাকায় থাকা উদ্ধারকারী দল, জরুরি কর্মী ও বিজ্ঞানীদের কাছে পাঠানো হয়৷ এই ছবি ও মানচিত্র তাঁদের কাজে সমন্বয় করতে সহায়তা করে৷
এসব ছবি ও মানচিত্র উদ্ধারকারী দলকে পরিস্থিতি ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করেছে৷
যে সাতটি এলাকায় ভূমিকম্প অস্বাভাবিক নয়
নেপালে সপ্তাহান্তে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর নিহতের সংখ্যা এখনো বেড়ে চলেছে৷ তবে ভূমিকম্প নতুন নয়, পৃথিবীর আরো কয়েকটি অঞ্চল বড় ভূমিকম্পের কবলে পড়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
পৃথিবী যেখানে কাঁপে
সাতটি টেকটনিক বা গঠনমূলক প্লেট দিয়ে তৈরি হয়েছে আমাদের ভূপৃষ্ঠ৷ যেসব স্থানে এসব প্লেটের মিলন ঘটেছে, সেসব স্থান সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত৷ নেপালে ভূমিকম্পের কারণ হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্লেটের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষ৷ পৃথিবীর সাতটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার একটি নেপাল৷
ভক্তপুর, নেপাল (আগে)
কাঠমান্ডু উপত্যকায় অবস্থিত সাতটি বিশ্ব এতিহ্য অসংখ্য নেপালী এবং বিদেশি পর্যটককে আকর্ষণ করেছে৷ ২০১৪ সালের আগস্টে তোলা হয়েছে ছবিটি৷
ছবি: picture alliance/landov
ভক্তপুর, নেপাল (পরে)
ভূমিকম্পের পরের ছবি এটি৷ উদ্ধারকর্মীরা ভেঙ্গে পড়া বিভিন্ন মন্দিরের নিচে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন৷ নেপালে ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে চার হাজারের বেশি মানুষ৷ উদ্ধার তৎপরতা এখনো চলছে৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
জাপানের উপকূল (এখন)
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত জাপান৷ সেখানকার বহুতল ভবনগুলোও এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে সেগুলো ভূমিকম্পের সময়ও টিকে থাকতে পারে৷ দেশটিতে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রও রয়েছে৷ ছবিটি সেরকম একটি বিদ্যুতকেন্দ্রের৷
ছবি: AFP/Getty Images/JIJI Press
জাপানের উপকূল (আগে)
জাপানের দূরত্ব নেপাল থেকে পাঁচহাজার কিলোমিটার৷ ২০১১ সালের মার্চে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কবলে পড়ে জাপান৷ সেসময় আঠারো হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের রিঅ্যাক্টরগুলোও গলতে শুরু করে এবং রেডিওঅ্যাক্টিভ পদার্থ গিয়ে সমুদ্রে পানিতে মেশে৷ তা সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে জাপান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্দামান সাগর, ভারত মহাসাগর (এখন)
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, যেটা কিনা ভারতের অংশ, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান কন্টিনেন্টাল প্লেটের সংযোগ স্থলের কাছাকাছি অবস্থিত৷ সেখানে ভূমিকম্প যে কোনো সময় হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্দামান সাগর, ভারত মহাসাগর (তখন)
সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প ঘটেছে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর৷ এখন পর্যন্ত হিসেবে রাখা তৃতীয় শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল সেটি৷ ভূমিকম্প এবং পরবর্তীতে সুনামির কারণে সে সময় ২৩০,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Choo Youn Kong
ইয়ুনান, চীন (আগে)
চীনের ইয়ুনান প্রদেশ এরকম অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপের জন্য পরিচিত৷ তবে এই অঞ্চলটিও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
ইয়ুনান, চীন (পরে)
২০১৪ সালের আগস্টে ভূমিকম্পের পর তোলা ছবি এটি৷ ভূমিকম্পে ৪০০-র বেশি মানুষ মারা যায় এবং একলাখের মতো গৃহহীন হয়ে পড়ে৷ চীনে বড় ভূমিকম্প দুর্লভ নয়৷ ২০০৮ সালে অপর এক ভূমিকম্পে সেদেশে প্রাণ হারায় সত্তর হাজার মানুষ৷
ছবি: Reuters
লাকিলা, ইটালি (আগে)
যদিও ইউরোপ ঠিক ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত নয়, তবে ভূমিকম্প এখানে অস্বাভাবিক নয়৷ ইটালিতে আফ্রিকার প্লেট ইউরোপীয় মহাদেশের প্লেটের বিপরীতে চাপ সৃষ্টি করছে৷ ফলে দেশটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Barone
লাকিলা, ইটালি (পরে)
২০০৯ সালে ইটালির লাকিলা শহরে ভূমিকম্পে তিনশো মানুষ প্রাণ হারায়, গৃহহীন হয় দশ হাজারের মতো মানুষ৷ সেসময় ভূমিকম্প সম্পর্কে পূর্বাভাষ দিতে ব্যর্থতার দায়ে সাত বিজ্ঞানীকে অভিযুক্ত করা হয়৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটির সমালোচনা হয়েছে কেননা বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গেলেও এখনো ভূমিকম্পের আগাম সতর্ক বার্তা দিতে সক্ষম নয়৷
ছবি: picture alliance/INFOPHOTO
সান ফ্রান্সিসকো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
১৯০৬ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে ভূমিকম্প থেকে শহরে আগুন ধরে যায়৷ ফলে তিন হাজার থেকে ছয় হাজার মানুষ প্রাণ হারায়৷ মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি এটি৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ভালডিভিয়া, চিলি
ভূকম্পণের মাত্রা মাপা শুরু পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ভূকম্পণের ঘটনা ঘটেছে চিলিতে৷ ১৯৬০ সালে সেদেশে নয় দশমিক পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হয়৷ এতে চিলির দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ স্থাপনা ধ্বংস হয়, প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১,৭০০ মানুষ৷
গবেষকরা ইদানিং নতুন একটি ক্যামেরা দিয়ে কাজ করছেন৷ এই ক্যামেরার শক্তিশালী সেন্সর ৫২০ কিলোমিটার উঁচু থেকে থার্মাল রেডিয়েশন শনাক্ত করতে সক্ষম৷ দিনের যে-কোনো সময় যে-কোনো আবহাওয়ায় এটি কাজ করতে পারে৷
ক্যামেরার মাধ্যমে দুর্গত এলাকায় ফোকাস করে পাওয়া তথ্য ও ছবি দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেয়া যেতে পারে৷
গবেষকরা এখনই ভবিষ্যতের কথাও ভাবা শুরু করেছেন৷ তারা প্রতিবেশী মঙ্গলগ্রহের কথা ভাবছেন৷ মানুষ যদি কখনও সেখানে যেতে চায় তাহলে এ ধরণের মানচিত্র ঐ অভিযান সফল করতে সহায়তা করবে৷
ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ড. আংকো ব্যোর্নার বলেন, ‘‘আমাদের ক্যামেরা দিয়ে বিভিন্ন গ্রহের পৃষ্ঠভাগের ছবিও তোলা সম্ভব৷ এরপর পৃথিবীতে সেই ছবিগুলোকে ত্রিমাত্রিক ছবিতে পরিণত করা যায়৷ বিজ্ঞানীরা এই ছবি দিয়ে তাঁদের গবেষণা চালাতে পারেন৷''
হাই-রেজ্যুলেশনের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র হচ্ছে ভবিষ্যৎ৷ এর মাধ্যমে কোনো এলাকার উপর দিয়ে ভার্চুয়ালি ঘুরে আসতে পারেন গবেষকরা – এমনকি সবচেয়ে দূরের গ্রহ থেকেও৷
জেডএইচ/
একুশ শতকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী কয়েকটি ভূমিকম্প
গত ১৫ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে৷ ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের হিসেবে অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের তালিকা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Shah
পোর্ট অফ প্রিন্স, হাইতি
২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর হাইতিতে ৭.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ এতে কমপক্ষে তিন লক্ষ ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়৷ আহত হয় প্রায় তিন লক্ষ মানুষ৷ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল হাইতির রাজধানী পোর্ট অফ প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে৷
ছবি: AP
আচে, ইন্দোনেশিয়া
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের উপকূলে সমুদ্রগর্ভে সংঘটিত ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্প যে সুনামির অবতারণা ঘটায়, তা-তে ১৪ দেশের প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Choo Youn Kong
সিচুয়ান, চীন
২০০৮ সালের ১২ মে চীনের সিচুয়ানে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ মারা যায়৷ এতে ৫০ লক্ষেরও বেশি ভবন ধসে পড়ে৷ নিহতদের বেশিরভাগই ধসে যাওয়া ভবনের নীচে পড়ে প্রাণ হারায়৷
ছবি: AFP/Getty Images
কাশ্মীর, পাকিস্তান
২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর পাকিস্তানের কাশ্মীর অঞ্চলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৮৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়৷ এছাড়া ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রায় ১,৩০০ জন এবং আফগানিস্তানেও বেশ কয়েকজন নিহত হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/E. Feferberg
বাম, ইরান
২০০৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইরানের বাম প্রদেশে ৬.৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়৷ এতে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়৷ আহতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ হাজার৷
ছবি: AP
ফুকুশিমা, জাপান
২০১১ সালের ১১ মার্চ ৯ মাত্রার ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট সুনামি ও তাপরর পারমাণবিক কেন্দ্রে বিপর্যয়ের ঘটনায় প্রায় ২১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa
গুজরাট, ভারত
২০০১ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের গুজরাটে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ৷
ছবি: SEBASTIAN D'SOUZA/AFP/Getty Images
কাটমান্ডু, নেপাল
চলতি বছর নেপালে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ ২৫ এপ্রিলের ঐ ভূমিকম্প প্রায় নয় হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কাটমান্ডু থেকে ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
ইয়োগিয়াকার্টা, ইন্দোনেশিয়া
২০০৬ সালের ২৬ মে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পের শিকার হয়ে প্রায় ৫,৮০০ মানুষের প্রাণ যায়৷ আহত হয় প্রায় ৩৬ হাজার৷
ছবি: AP
পাকিস্তান-আফগানিস্তান
সোমবার (২৬ অক্টোবর, ২০১৫) ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে পাকিস্তানে এখনও পর্যন্ত ২৩০ জন ও আফগানিস্তানে কমপক্ষে ৭৬ জনের প্রাণ হারানোর খবর পাওয়া গেছে৷ আফগানিস্তানে নিহতদের মধ্যে ১২ জন ছাত্রী রয়েছে যারা ভয়ে স্কুল থেকে বের হতে গিয়ে পায়ের নীচে পড়ে মারা যায়৷