এসে গেল বাঙালির সবচেয়ে বড় আনন্দোৎসবের দিন পহেলা বৈশাখ৷ তবে এবার উৎসব হবে সামাজিক দূরত্ব মেনে, ‘ঘরোয়া' পরিসরে৷
বিজ্ঞাপন
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় নববর্ষ উদযাপনের সকল আয়োজন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল চীন৷ ধীরে ধীরে করোনা ছড়িয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশে৷ আনন্দ-বিনোদনের সব আয়োজন গুটিয়ে ঘরবন্দি হয়েছে সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতির মানুষ৷ করোনাকে এড়িয়ে জীবনরক্ষার এটাই যে সবচেয়ে কার্যকর উপায়!
বাংলাদেশেও বড় আতঙ্ক হয়ে উঠেছে করোনা ভাইরাস৷ আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন৷ জীবনকে সামাজিক দূরত্বের শৃঙ্খলে আরো কঠোরভাবে আবদ্ধ করা এখন আরো দরকার৷
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক বিনোদনের বিভিন্ন আয়োজন থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানও হয়েছে স্থগিত, তিন দফায় বেড়েছে ছুটি, মসজিদ-মন্দিরসহ সব উপাসনালয়ে না গিয়ে সরকারি নির্দেশ মেনে ঘরেই উপাসনা শুরু করেছে ধর্মানুরাগী মানুষ৷ ১৪২৭ সালকে সেই নিয়ম মেনেই বরণ করতে চলেছে বাঙালি৷
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের উদ্যোগে রমনার বটমূলে ‘‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো'' গেয়ে শুরু হবে না নববর্ষ উদযাপন৷ চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রাও বের হবে ন এবার৷ শহর-গ্রামের নানা প্রান্তে বসবে না বৈশাখী মেলা৷
বরং অতি উৎসাহী কেউ যাতে নববর্ষ উদযাপনে বেরিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷
এমন পহেলা বৈশাখ কখনোই দেখেনি বাংলাদেশ৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে, ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণও গেছে বহু মানুষের, তবু এতদিন প্রতি পহেলা বৈশাখে প্রাণের টানে নববর্ষ উদযাপনে বেরিয়ে পড়েছে মানুষ৷
করোনা--সংকটে সারা বিশ্ব এখন উৎসবহীন৷ বাংলাদেশেও থাকছে না আয়োজনের ঘনঘটা৷ তবে ঘরে বসে যেভাবে অফিসের কাজ চলছে, উপাসনা চলেছে, সেভাবে উৎসব উদযাপনে কোনো বাধা নেই৷ বাধা নেই দূর থেকে বাঙালির সংস্কৃতি আর মানুষকে ভালোবাসাতেও৷
দু’বছর আগের পয়লা বৈশাখের কিছু ছবি দেখুন:
শিকড়ের সন্ধানে বাংলাদেশে বর্ষবরণ
পুরনো বছরের জরাজীর্ণতা আর পঙ্কিলতাকে মুছে দিয়ে বঙ্গাব্দ ১৪২৫ কে বরণ করে নিল বাংলাদেশের মানুষ৷ রাজধানী ঢাকায় বর্ষ বরণের নানা আয়োজন নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও...
রমনা বটমূলে প্রতি বছরের মতোই ভোরের আলো ফুটতেই গানে গানে নতুন বছরকে স্বাগত জানান ছায়ানটের শিল্পীরা৷ এ অনুষ্ঠানে শিল্পীদের সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হন হাজারো শ্রোতা৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
ছায়ানটের বর্ষ বরণের ৫১ বছর
রমনার বটেমূলে ছায়ানটের বর্ষ বরণের এ অনুষ্ঠান অর্ধশত বছর পার করেছে গত বছর৷ এবছর এ অনুষ্ঠানের ৫১তম বছর৷ ১৯৬৭ সাল থেকে রমনা বটমূলে ছায়নাট এ প্রভাতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
মুখে মুখে আলপনা
বর্ষ বরণের উৎসবে যোগ দিতে আসা অনেকেই শিল্পীদের দিয়ে মুখে এঁকে নেন বাহারি আলপনা৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
খোঁপায় ফুল
বৈশাখ উদযাপনে অংশ নিতে আসা নারীদের মাথায় শোভা পাচ্ছিল ফুল৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’
বাংলাদেশে বর্ষ বরণ উৎসবের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা৷ এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য লালন সাঁইজির গান ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বর্ণিল শোভাযাত্রা
বৈশাখী সাজে রংবেরংএর নানান বাহারি মুখোশ, শোলার পাখি, টেপা পুতুল হাতে হাতে নিয়ে ঢাক-ঢোল-বাঁশি বাজিয়ে হাজরো মানুষ অংশ নেন মঙ্গল শোভাযাত্রায়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
মঙ্গল শোভাযাত্রা
বরাবরের মতই বৈশাখের প্রথম সকালে চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়৷ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) চত্বর ঘুরে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলার সামনে এসে এই বর্ণিল যাত্রার শেষ হয়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সার্বজনীন শোভাযাত্রা
ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে সব পেশার, সব শ্রেণির মানুষ শামিল হন মঙ্গল শোভাযাত্রায়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বিশ্ব ঐতিহ্য
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন শুরু হয়৷ গত বছর ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের’ এর স্বীকৃতি পায়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
নিরাপত্তা
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রাও হয়েছে নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যে৷ র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা অস্ত্র হাতে সবার সামনে গড়ে তোলেন নিরাপত্তা বলয়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসির সদস্যরাও ছিলেন৷ মাথার ওপর টহল দেয় র্যাবের হেলিকপ্টার৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শিল্পীগোষ্ঠীর ‘নব আনন্দে জাগো’
প্রতিবছরের মতো সকাল সাড়ে সাতটা থেকে শিশু পার্ক চত্বরে গানে গানে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিশেষ আয়োজন
বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। দলীয় ও একক সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নাচসহ নানা আয়োজন ছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানমালায়।