আলোর উৎসব দীপাবলী ক্রমশই বাজি পোড়ানোর মোচ্ছবে পরিণত হয়েছে সারা ভারতজুড়ে৷ তার জেরে রাজধানী দিল্লির শ্বাসরুদ্ধ করেছে এক অভূতপূর্ব ধোঁয়াশা৷ দেশের বাকি অঞ্চলও কিন্তু নিরাপদ নয়৷
বিজ্ঞাপন
দীপাবলি, বা দিওয়ালি উৎসবের আতসবাজি পোড়ানোই শুধু কারণ নয়৷ শোনা যাচ্ছে প্রতিবেশী রাজ্য পাঞ্জাবে ফসল কাটার পর অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলার যে রীতি আছে, তার ধোঁয়াও নাকি দিল্লির এই বেনজির ধোঁয়াশার কারণ৷ এর সঙ্গে আছে অসংখ্য গাড়ির ধোঁয়া, কল-কারখানার ধোঁয়া এবং ঘনবসতি অঞ্চলে উনুনের ধোঁয়াও৷ সব মিলিয়ে, শীত আসার আগে এমন এক দম বন্ধ করা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দিল্লিতে, যা আগে কখনও হয়নি৷ স্কুল-কলেজ বন্ধ, লোকে নেহাত জরুরি কাজ না থাকলে বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছে না, সরকারি নির্দেশে হাসপাতাল বা ওই জাতীয় জরুরি পরিষেবা ছাড়া ডিজেল জেনারেটর চালানো পরবর্তী ১০ দিনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে, গাছের পাতা পোড়ানো বন্ধ, ১০ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে স্থানীয় একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র৷ দূষণ কমাতে এর আগে দিল্লির রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে জোড়-বিজোড় নিয়ম চালু করা হয়েছিল, তা আবার ফিরিয়ে আনার কথাও ভাবা হচ্ছে৷ এ সবের পাশাপাশি দিল্লির বাসিন্দাদের আপাতত কয়েকদিন ঘরবন্দি থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ কারণ বাতাসে ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতির সহনসীমা যেখানে প্রতি বর্গমিটারে ৬০ মাইক্রোগ্রাম, সেখানে এই মুহূর্তে দিল্লির বিভিন্ন অংশে এই হার ৪০০ থেকে ৭০০ মাইক্রোগ্রাম৷ সোজা কথায়, ভারতের রাজধানীর বাতাস এখন বিষাক্ত৷
প্লাস্টিকে ভরে যাওয়া পৃথিবী
লক্ষ লক্ষ টন প্লাস্টিক আবর্জনায় সাগরের পানি ভরে যাচ্ছে, ক্ষতি হচ্ছে মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর৷ গতকাল ছিল বিশ্ব সমুদ্র দিবস৷ এ উপলক্ষ্যে আমরা নজর দেব সাগরে প্লাস্টিক দূষণের দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Nelson
টন টন আবর্জনা
প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক আবর্জনা সাগরে গিয়ে পড়ে বলে এলেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশনের একটি রিপোর্টে প্রকাশ৷ রিপোর্টে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে যে, জরুরিভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণই বেশি হবে৷ প্রশান্ত মহাসাগরের এক প্রান্তে অবস্থিত মিডওয়ে আইল্যান্ডের সৈকতও আজ আবর্জনামুক্ত নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Olenick
প্লাস্টিকের খদ্দের
সবাই যে প্লাস্টিক অপছন্দ করে, এমন নয়৷ প্লাস্টিক ভেঙে ছোট ছোট টুকরো হয়ে গেলে সাগরের প্রাণীরা তাকে খাদ্য বলে ভুল করে৷ উপশালা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, প্লাস্টিক খাওয়ার ফলে মাছের বৃদ্ধি কমে যায়, মৃত্যুহার বাড়ে৷ মজার কথা, কিছু কিছু মাছ যেন প্লাস্টিক খেতেই ভালোবাসে! কিন্তু এভাবে মাছ থেকে মানুষের খাদ্যচক্রেও এসে পড়ে প্লাস্টিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Olenick
যে প্লাস্টিক খাওয়া যায়
ওসেন কনজারভেন্সি সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬৯০টি প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী প্লাস্টিক দূষণের কবলে পড়েছে৷ কাজেই কোম্পানিগুলি প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের নানা বিকল্প বের করার চেষ্টা করছে৷ ফ্লোরিডার একটি বিয়ার তৈরির কোম্পানি, ডেলরায় বিচ ক্রাফ্ট ব্রুয়ারি, তাদের ছয় ক্যানের সিক্সপ্যাক বাঁধার রিং, বিয়ার তৈরি থেকে উদ্বৃত্ত গম আর বার্লি দিয়ে বানানোর পরিকল্পনা করছে৷ আগামী অক্টোবরে প্রোডাকশন শুরু হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. McDonald
বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিং
ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক প্যাকেজিং সাগরে প্লাস্টিক আবর্জনার একটা বড় অংশ৷ কোম্পানিরা যার বায়োডিগ্রেডেবল, অর্থাৎ সহজে পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়, এমন বিকল্প বার করার চেষ্টা করছে৷ পোল্যান্ডের একটি কারখানায় সে কাজে গমের ফ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ইয়ের্জি ভিসোচকি যে বিওট্রেম প্যাকেজিং আবিষ্কার করেছেন, তা ওভেন কিংবা ডিপ ফ্রিজে ব্যবহার করা চলে; ত্রিশ দিনের মধ্যে ক্ষয় পেয়ে যায়; আবার খাওয়াও চলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Reszko
প্লাস্টিকের বিকল্প বাঁশ
বাঁশগাছ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে, তাই বাঁশ প্লাস্টিকের বিকল্প হতে পারে৷ বাঁশ থেকে টুথব্রাশ, বাথরুমে পর্দা ঝোলানোর ডান্ডা, রান্নার বাসনকোসন, এমনকি কম্পিউটারের পার্টস পর্যন্ত তৈরি করা যায়৷ টংগু জিয়াংকিয়াও ব্যাম্বু অ্যান্ড উড ইনডাস্ট্রি কোম্পানি বাঁশের কি-বোর্ড, মাউস আর মনিটরের কেস তৈরি করা শুরু করে ২০০৮ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z.Haibin
ওসেন স্কিমার
প্লাস্টিকের বিকল্প দিয়ে প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণ কমানো যেতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ টন প্লাস্টিক বহ শতাব্দি ধরে সাগরের পানিতে ভেসে বেড়াবে ও ধীরে ধীরে ক্ষয় পাবে৷ ওলন্দাজ ওসেন ক্লিনআপ সংস্থা একটি ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘের ভাসমান বাঁধ দিয়ে সেই প্লাস্টিক আবর্জনাকে ধরে রাখবে৷ প্রশান্ত মহাসাগরে ২০২০ সালের মধ্যে এরকম একটি ভাসন্ত বাঁধ নিয়োগ করার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E.Zwart
আবর্জনা থেকে ফ্যাশন
প্লাস্টিকের একাংশ রিসাইকেল করায় কোনো বাধা নেই: তা দিয়ে ফুলের টব, বাড়িঘরের ইনসুলেশন, এমনকি জামাকাপড় পর্যন্ত তৈরি করা যায় - যেমন স্পেনের ইকোঅ্যাল্ফ কোম্পানির তৈরি জ্যাকেট৷ ২০০টি মাছধরার নৌকো প্রতিদিন ভূমধ্যসাগর থেকে যে পরিমাণ প্লাস্টিক আবর্জনা সংগ্রহ করে, তা গুঁড়ো করে তা থেকে পলিয়েস্টার ফাইবার বানিয়ে, সেই ফাইবার দিয়ে এই সব জ্যাকেট ও অন্যান্য ফ্যাশনেবল জামাকাপড় তৈরি করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/P. Armestre
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাও, রিসাইকল করো
প্লাস্টিকের আবর্জনা অপরিবর্তিত রেখেই তা পুনর্ব্যবহার করা চলে৷ ২০১২ সালে রিও ডি জানিরো-য় জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সম্মেলনে রিও-র ওয়াটারফ্রন্টে যে সুবিশাল মাছের ভাষ্কর্য প্রদর্শন করা হয়েছিল, তা ছিল প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Lacerda
8 ছবি1 | 8
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, দেশের অন্যান্য বড় শহর যদি সাবধান না হয়, তা হলে এই বিষ ছড়িয়ে পড়তে দেরি হবে না৷ পূর্ব ভারতে বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গে যেমন এখন চলছে বিহারীদের ছট পরব৷ আগে যে পরব শুধুমাত্র বাজনা বাজিয়ে শোভাযাত্রা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে গেছে আতসবাজি পোড়ানো৷ এবং সেটাও আলোর বাজি নয়, শব্দবাজি৷ ছটের শোভাযাত্রা শুরু হয় ভোররাত থেকে, চলে দিনভর৷ কাজেই পাড়া কাঁপিয়ে, প্রতিবেশীদের ত্রস্ত করে শব্দবাজি ফাটাতে ফাটাতে রাস্তা দিয়ে চলেছে একের পর এক ছটের শোভাযাত্রা৷ এইসব বাজির শব্দের মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে আইন করে, কিন্তু উৎসবে মত্ত লোকজন সেই আইন থোড়াই কেয়ার করে বিকট থেকে বিকটতর শব্দের বাজি ফাটিয়েই চলেছে৷ ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে কিছুদিন আগে দীপাবলির সময়েও৷ মূলত যাদের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ বেশি, তারাই লাখ লাখ টাকার বাজি পুড়িয়েছে তিন রাত ধরে, শব্দদূষণ অথবা বায়ুদূষণের তোয়াক্কা না করে৷ এক্ষেত্রে আশঙ্কার বিষয় একটাই৷ দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখায় নাগরিক সমাজের ভূমিকা যে সবথেকে বড়, সম্পর্কিত আইন বা আইনরক্ষকদের নয়, এই মৌলিক সচেতনতাই মানুষের মধ্যে নেই৷ ঠিক যেভাবে নিজেরা যথেচ্ছ রাস্তাঘাট নোংরা করার পর লোকে ভাবে পুর-প্রশাসনেরই দায় শহর সাফ করা, সাফ রাখা, ঠিক সেই একই দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবনা থেকে লোকে বাজি পোড়াচ্ছে ইচ্ছেমতো৷
বুড়িগঙ্গায় দূষণ: শত্রু কারা কারা?
২২শে মার্চ ছিল বিশ্ব পানি দিবস৷ সবার কাছে সুপেয় পানি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই দিনটি উদযাপিত হয়৷ অথচ বিশ্বে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি কমছে পানির সরবরাহ৷ তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবেশ দূষণ৷ ঠিক যেমনটা ঘটছে বুড়িগঙ্গা নদীতে...
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী
একসময় মহানগরীর প্রাণ হিসেবে গণ্য হতো বুড়িগঙ্গা নদী৷ কিন্তু এই শহরের শিল্প আর মানব বর্জ্য সরাসরি এ নদীতে নির্গমনের ফলে নদীটি পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে৷ এই ছবিটি শহরের বাবুবাজার সেতু থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
নোংরা গন্ধযুক্ত পানি
ব্যবহারের অনুপোযোগী হলেও মানুষের হাত-পা বাঁধা৷ তাই বুড়িগঙ্গা নদীর নোংরা, গন্ধযুক্ত পানির ওপর দিয়েই খেয়াপার হচ্ছেন কর্মজীবী মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
গরিব মানুষের বাস
ঢাকার এই এলাকায় বাড়ি ভাড়া কম হওয়ায় নদীর ওপারের কেরানীগঞ্জ এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি৷ ছবিটি সদরঘাট এলাকা থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
পানিতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ
বুড়িগঙ্গা আজ যেন সত্যিই বুড়ি হয়ে গেছে৷ নদীতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে বুড়িগঙ্গার পানির রং এখন কুচকুচে কালো, আর দুর্গন্ধযুক্ত৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূষণের কারণে বেড়েছে ঘনত্ব
বুড়িগঙ্গার দূষিত পানির উপর দিয়ে জাহাজ চলার পরের দৃশ্য এটি৷ কি ভয়াবহ! আসলে দূষণের কারণে পানির ঘনত্ব বেড়ে গেছে বুড়িগঙ্গার৷
ছবি: DW/M. Mamun
নদীতে লঞ্চ চলাচল
দূষণের এই ভয়াবহ মাত্রার পরও বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে চলছে লঞ্চ৷ জিনিস-পত্র পারাপার তো বটেই, নদী পথে যে এখনও পার হচ্ছে মানুষ৷ ছবিটি কামরাঙ্গীরচর থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
রাসায়নিকের বস্তা পরিষ্কার
বুড়িগঙ্গার পানিতে রাসায়নিকের বস্তা পরিষ্কার করছেন শ্রমিকরা৷ তাঁদের কি আর কোনো উপায় নেই? তাঁরা কি আদৌ জানেন এর পরিবেশগত প্রভাব? সরকারই বা নিরব কেন?
ছবি: DW/M. Mamun
ধোপাদেরও প্রয়োজন নদী
বুড়িগঙ্গার দূষিত জলেই কাপড় ধোয়ায় ব্যস্ত ধোপারা৷ এ সব কাপড়ের বেশিরভাগই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত বিছানার চাদর, ডাক্তারদের অ্যাপ্রন, অপারেশন থিয়েটার বা ওটি-তে পড়ার ড্রেস ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ধোয়া কাপড়
বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত জলে ধোয়া কাপড় এবার মেলে দেওয়া হয়েছে৷ নদীর পাড়েই শুকানো হচ্ছে এগুলি৷ ছবিটি কামরাঙ্গীরচর থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্জ্য মিশছে সরাসরি
ঢাকা শহরের সুয়ারেজের লাইন থেকে সরাসরি বর্জ্য মিশছে বুড়িগঙ্গা নদীর জলে৷ এমন দশা চলতে থাকলে অচিরেই যে অন্ধকার নেমে আসবে – তা বলাই বাহুল্য৷ শহরের বাবুবাজার সেতুর নীচ থেকে তোলা এ ছবিটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূষণের অন্যতম কারণ ট্যানারি
বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের অন্যতম কারণ ট্যানারি শিল্পর বর্জ্য৷ ঢাকার হাজারীবাগে বেশ কিছু ট্যানারি শিল্প থাকলেও কারুরই নেই বর্জ্য শোধনাগার৷ তাই এ সব ট্যানারির রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্য সরাসরি গিয়ে মিলে বুড়িগঙ্গায়৷ গত এক যুগ ধরে ঢাকার বাইরে ট্যানারি শিল্পের জন্য আলাদা জায়গা দেওয়া হলেও, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ট্যানারি মালিরা কারখানাগুলো স্থানান্তর করছেন না৷
ছবি: DW/M. Mamun
শুধু দূষণই নয়...
শুধু দূষণেই থেমে নেই বুড়িগঙ্গা৷ আছে দখলও৷ দূষণ আর দখলে থেমে যেতে বসেছে বুড়িগঙ্গার গতিপথ৷ কামরাঙ্গীরচরে বুড়িগঙ্গা যেন এখন মরা খাল!
ছবি: DW/M. Mamun
আর এক শত্রু প্লাস্টিক
শিল্প আর মানব বর্জ্য ছাড়াও বুড়িগঙ্গা দূষণের আরেক অংশীদার প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য৷ প্রতিদিন প্রচুর প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য মিশছে বুড়িঙ্গার জলে৷ এ ছবিটি বাদামতলী থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
13 ছবি1 | 13
সাধারণভাবে দূষণ সম্পর্কে লোকে কত অসচেতন, তার আরও একটা উদাহরণ এবারের ছটপুজোতেই দেখা গেল৷ ছটের পুজো হয় জলের ধারে৷ কলকাতায় হুগলি নদী এবং যেসব বড় জলাশয় আছে, প্রতিবার ছটের পর সেগুলো আবর্জনায় ভরে ওঠে৷ পশ্চিমবঙ্গের পরিচিত পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত যে কারণে এবার কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন, শহরের জলাশয়গুলি, বিশেষত ঢাকুরিয়ার রবীন্দ্র সরোবর লেকে যেন ছটপুজো নিষিদ্ধ করা হয়৷ তাঁর আবেদনের যৌক্তিকতায় সায় দিয়ে আদালত সেই নিষেধাজ্ঞা জারিও করে৷ কিন্তু সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের মাথারা জানিয়ে দেন, তাঁদের ধর্মাচরণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যাবে না৷ আদালত যাই বলুক, তাঁরা তাঁদের মতোই চলবেন৷ এবং বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-মন্ত্রীরা যেখানে সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে ছট পুজোর উপকরণ বিলি করেছেন, সেখানে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ যে হবে না, সে বলাই বাহুল্য৷ ফলে আদালতের মানরক্ষার খাতিরে পুজোর জায়গা জলাশয়ের একটা নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যবস্থা করে দায় সারা হয়েছে৷ এবং এই অপরিণামদর্শিতা আজ ভারতের সর্বত্র নজরে পড়ছে৷ সব অঞ্চলেরই নিজস্ব লোকাচার এবং উৎসব আছে, যার শেষ হয়ে ভয়াবহ দূষণ ছড়িয়ে৷ কোথাওই সেই দূষণ কমানোর প্রশাসনিক উদ্যোগ বা নাগরিক সচেতনতা দেখা যায় না৷ এমনকি খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বহু ঢাক-ঢোল পিটিয়ে গঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত করার যে কর্মসূচি চালু করেছিলেন, তাও মুখ খুবড়ে পড়েছে৷ কারণ প্রকৃত দূষণ আছে মানুষের ভাবনায়৷ শত প্রচারেও তা তাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না!
ইউরোপের সবুজ শহর
পরিবেশ বাঁচানো ও জ্বালানি খরচ কমানো সহ অন্যান্য কারণে ইউরোপের শহরগুলোতে দিন দিন ‘সবুজ জ্বালানি’-র ব্যবহার বাড়ছে৷
ছবি: CC/Negu
বিশুদ্ধ বাতাসের শহর স্টকহোম
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে চলাচলরত যানবাহনের প্রায় ৭৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে৷ এছাড়া ‘যানজট কর’ এড়াতে অনেক মালিক নিজের গাড়ি ছেড়ে গণপরিবহণ ব্যবহার করছেন৷ ফলে ইউরোপের অন্যতম বিশুদ্ধ বাতাসের শহর এখন স্টকহোম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Paul Eckenrot
কার্বন নিরপেক্ষ শহর
নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই ইউরোপের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শহর হয়ে গেছে ইটালির ‘সিয়েনা’৷ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বায়োমাস ও জিওথার্মাল উৎস থেকে উৎপাদিত জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে এবং বন রক্ষা করে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে সিয়েনা৷
ছবি: cc-by-sa/Massimo Catarinella
হাইড্রোজেন বাস
অবস্থানের কারণে আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকইয়াভিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব৷ এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে পুরো শহরকে জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ এখনই সেখানকার গণপরিবহণে হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হচ্ছে৷ আর শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ ভবনে জিওথার্মাল উৎস থেকে উৎপাদিত জ্বালানির ব্যবহার হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নঁতে ট্রাম
ফ্রান্সের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর নঁতে বায়ু দূষণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমাতে স্ট্রিটকার (ট্রাম) চলাচল চালু করা হয়েছে৷
ছবি: imago/McPHOTO
সবুজের সমাহার
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়ুসে দিন দিন পরিবহণের সংখ্যা বাড়ছে৷ কিন্তু তারপরও সেই শহরের বাতাস ইউরোপের অন্য অনেক শহরের চেয়ে ভাল৷ এর কারণ শহরকে ঘিরে রয়েছে বড় বন, বাগান আর পার্ক৷ রাজনীতিবিদরা সেগুলো টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর৷
ছবি: Fotolia/Aleksandr Volkov
আবর্জনা দিয়ে ঘর গরম
ইংল্যান্ডের ডিডকট শহরের বাসিন্দারা নিজেদের আবর্জনা দিয়ে গ্যাস উৎপাদন করে, সেটা দিয়ে ঘর গরম রাখে৷
ছবি: Getty Images
বৃষ্টির পানি ধরে রাখা
বার্লিনের কেন্দ্রে একটি অংশে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে পরে সেগুলো কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এই পানি আশেপাশের ভবনগুলোর টয়লেটে ও অগ্নিনির্বাপক সংস্থায় ব্যবহার করা হয়৷