চোখে না দেখে বাদুড় যেভাবে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে উড়তে পারে, তা সত্যি বিস্ময়ের কারণ৷ অন্ধ মানুষও শব্দ সৃষ্টি করে একই পদ্ধতিতে এগিয়ে যেতে পারেন৷ জার্মানির এক তরুণ সেই অসাধ্য সাধন করে দেখিয়ে দিয়েছেন৷
ছবি: Imago/UIG
বিজ্ঞাপন
টমির বয়স ১৮৷ আজ তিনি অন্ধ৷ অথচ চিরকাল এমনটা ছিল না৷ তিনি বললেন, ‘‘২০০২ সালে পাঁচ বছর বয়সে আমার একটা অপারেশন হয়৷ মাথায় টিউমার ছিল, ঠিক পিটিউটারি গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থির উপর৷ অপারেশনের ফলে আমি রাতারাতি অন্ধ হয়ে যাই৷ মনে চরম আতঙ্ক, ভ্রম দেখা দিয়েছিল৷ শিশু ও কিশোরদের মানসিক রোগ বিভাগে আমার চিকিৎসা হয়৷''
তারপর যা ঘটল, তাকে অলৌকিক বলা চলে৷ টমি আবিষ্কার করলেন, যে শুধু জিবে বিশেষ শব্দ করেই আশেপাশের জগত সম্পর্কে ধারণা করা যায়৷ না দেখেই টমি তাঁর সামনে রাখা একাধিক বস্তুর বর্ণনা দিতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার সামনে, প্রায় এক মিটার দূরে, একটা গোল চাকতি রয়েছে৷ তার পাশে চৌকো আকৃতি৷ সেটা আধা মিটার থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার দূরে৷ দুই মিটার দূরে রয়েছে ত্রিকোণ আকৃতি৷ বাইরে গিয়েও চারিদিকে এমন শব্দ করে দেখেছি৷ সঙ্গে লাঠিও ছিল না৷ কোনো সমস্যা হয়নি৷ এমন সব কাজ করতে পেরেছি, প্রথমে যা করতে সাহসই হয়নি৷ তারপর অবশ্য এগিয়ে গেছি৷ করতে পেরে খুব ভালো লেগেছে৷''
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একদিন
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি ফেসবুক প্রকল্প ‘বাংলা ব্রেইল’ ইতোমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে৷ এই প্রকল্প যাদের কাজে আসতে পারে, তাদের দেখতে গিয়েছিলেন আলোকচিত্রি মুস্তাফিজ মামুন৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখি আমরাও৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল
ঢাকার মিরপুরে ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলে ব্রেইলে লিখছে এক শিক্ষার্থী৷ ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলে এখন শিক্ষা নিচ্ছে ৮০ জনেরও বেশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
শিক্ষকরাও কেউ কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণি৷ প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এ স্কুলের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠদান চলে৷ এ স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যেও কেউ কেউ আছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্রেইল পড়া
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের এক শিক্ষার্থী ব্রেইলে পড়ছেন৷ বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্রেইল বইয়ের অভাব
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের দুই শিক্ষার্থী মিলে একটি একটি ব্রেইল বই পড়ছেন৷ বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে বইয়ের অভাব অনেক বেশি৷ সহজলভ্য না হওয়ায় বেশিরভাগ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা তাই বইয়ের সংকটে থাকেন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সবাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমায়রা মিম (বাঁ থেকে চতুর্থ)৷ তার ক্লাসের সব বন্ধুরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী৷ এ স্কুলে সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম থাকায় স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন মিম পড়াশুনা করছে এখানে৷ ক্লাসের সব বন্ধরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও ওদের সঙ্গে পড়াশুনা করতে ভালোই লাগে তার৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া নমিতা
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের শিক্ষিকা নমিতা৷ স্বাভাবিক চোখ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি৷ স্কুলে পড়ার সময় বখাটেদের ছোঁড়া অ্যাসিডে ঝলসে যায় মুখ, হারান চোখও৷ এরপরেও থামেনি তার পথ চলা৷ লেখাপড়া শেষ করে এখন তিনি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
শেখানো হয় হাতের কাজও
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি শেখানো হয় হাতের কাজও৷ শিক্ষার্থীরা অনেক আগ্রহ নিয়ে এসব কাজ শেখেন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ফিজিওথেরাপি
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীকে ফিজিওথেরাপি দিচ্ছেন এক চিকিৎসক৷ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অনেকেরই শারীরিক কিছু সমস্যা থাকে, যেগুলো এই ফিজিওথেরাপির মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
হোস্টেলে ফিরছে শিক্ষার্থীরা
স্কুল শেষে হোস্টেলে ফিরছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা৷ ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই আবাসিক৷ স্কুলের অ্যাকাডেমিক ভবনের পাশেই লাগোয়া একটি ভবনে থাকার জায়গা এই সব শিক্ষার্থীদের৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ডয়চে ভেলের দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ড
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি অনলাইন প্রকল্প ‘বাংলা ব্রেইল’ চলতি বছর দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে৷ ফেসবুকভিত্তিক এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য অডিও বুক এবং ব্রেইল বইয়ের ইউনিকোড সংস্করণ তৈরির কাজ চলছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
প্রাণিজগতে ‘সোনার' তরঙ্গের ব্যবহার অত্যন্ত স্বাভাবিক৷ বাদুড় এভাবে দুর্ঘটনার ভয় ছাড়াই অন্ধকারেও সহজে উড়ে বেড়াতে পারে৷ টমি বাদুড়ের এই ক্ষমতা অত্যন্ত সফলভাবে নকল করছেন৷ মুখে শব্দ করেই বুঝতে পারছেন, সামনে পথ খালি আছে কিনা৷ শুধু তাই নয়, বাধা থাকলে সেটি উঁচু না নিচু, কোণ আছে কি না, সেটা সিঁড়ি কিনা, এ সবও বুঝতে পারেন তিনি৷ টমি বলেন, ‘‘মুখে শব্দ করে ‘সোনার' তরঙ্গ ব্যবহার করা আমার কাছে এক মৌলিক পরিবর্তন৷ একা চলাফেরা করতে শিখলাম, অনেক স্বাবলম্বী হয়ে পড়লাম৷ এখন কুকুরকে হাঁটাতে নিয়ে যেতে পারি৷ প্রাচীর থাকলে খুব কাছে চলে যাই না৷ সেটা করলে জামাকাপড়ও খারাপ হয়ে যেতে পারে৷''
প্রত্যেকটি শব্দ কোনো বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে প্রতিফলন ঘটায়৷ বস্তুটি খুব কাছে থাকলে প্রতিফলন দ্রুত ফিরে আসে৷