যে সব মানুষ চোখে দেখতে পায়, বিভিন্ন দৃশ্য তাদের মস্তিষ্কে ছবি সৃষ্টি করে৷ অন্ধ মানুষদের ক্ষেত্রে শব্দই মস্তিষ্কে ছবি সৃষ্টি করতে পারে৷ শব্দকে রাডারের মতো কাজে লাগিয়ে এক থ্রিডি মডেল সৃষ্টি করতে পারেন তাঁরা৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
বিজ্ঞাপন
লোরে টালার অনেক বছর ধরে ‘একো লোকেশন' প্রযুক্তি নিয়ে চর্চা করছেন৷ তিনি অন্ধ মানুষজনের অভিজ্ঞতার রিপোর্ট সংগ্রহ করেন৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, যে শুধু বস্তুর সঙ্গে দূরত্ব নয়, শব্দের প্রতিফলন আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আরও তথ্য দিতে পারে৷ যেমন সামনের মাঠে অনেক ঘাস আছে কিনা, সামনের দেয়াল কংক্রিট নাকি প্লাস্টিক বা কাঠ দিয়ে তৈরি৷ মনস্তত্ববিদ ড. লোরে টালার বলেন, ‘‘মৌলিক কৌতূহল ও রোমাঞ্চ জাগানোই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল৷ দেখাতে চেয়েছিলাম, ‘একো লোকেশন' পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেকে দৃষ্টিবান মানুষের মতো দেখতে পায়৷ অনেক ক্ষেত্রে বোঝাই যায় না, যে তারা অন্ধ৷''
সাউন্ড ব্যবহার করে আশেপাশের জগত সম্পর্কে একটা ছবি সৃষ্টি করলে মস্তিষ্কের মধ্যে কী ঘটে? ড. টালার ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স টোমোগ্রাফি ব্যবহার করে দেখছেন, মস্তিষ্কের কোন অংশ সক্রিয় হয়ে উঠছে৷
তিনি বলেন, ‘‘স্ক্যানারের মধ্যে মানুষকে শুইয়ে আমরা আগে থেকে রেকর্ড করা সাউন্ড চালিয়ে তাদের শোনাই৷ তারা সেই শব্দ শুনে বলে, তারা ঠিক কী শুনতে পারছে৷ যেমন এটা একটা গাছ বা বাড়ি৷ একো বা শব্দের প্রতিফলন থাকলে তারা সেটা শুনে সত্যি গাছ, গাড়ি বা বাড়ি চিনতে পারে৷ অথচ ‘কনট্রোল-স্টিমুলাস' সেই তথ্য দেয় না৷''
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একদিন
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি ফেসবুক প্রকল্প ‘বাংলা ব্রেইল’ ইতোমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে৷ এই প্রকল্প যাদের কাজে আসতে পারে, তাদের দেখতে গিয়েছিলেন আলোকচিত্রি মুস্তাফিজ মামুন৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখি আমরাও৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল
ঢাকার মিরপুরে ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলে ব্রেইলে লিখছে এক শিক্ষার্থী৷ ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলে এখন শিক্ষা নিচ্ছে ৮০ জনেরও বেশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
শিক্ষকরাও কেউ কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণি৷ প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এ স্কুলের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠদান চলে৷ এ স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যেও কেউ কেউ আছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্রেইল পড়া
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের এক শিক্ষার্থী ব্রেইলে পড়ছেন৷ বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্রেইল বইয়ের অভাব
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের দুই শিক্ষার্থী মিলে একটি একটি ব্রেইল বই পড়ছেন৷ বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে বইয়ের অভাব অনেক বেশি৷ সহজলভ্য না হওয়ায় বেশিরভাগ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা তাই বইয়ের সংকটে থাকেন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সবাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমায়রা মিম (বাঁ থেকে চতুর্থ)৷ তার ক্লাসের সব বন্ধুরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী৷ এ স্কুলে সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম থাকায় স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন মিম পড়াশুনা করছে এখানে৷ ক্লাসের সব বন্ধরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও ওদের সঙ্গে পড়াশুনা করতে ভালোই লাগে তার৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া নমিতা
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের শিক্ষিকা নমিতা৷ স্বাভাবিক চোখ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি৷ স্কুলে পড়ার সময় বখাটেদের ছোঁড়া অ্যাসিডে ঝলসে যায় মুখ, হারান চোখও৷ এরপরেও থামেনি তার পথ চলা৷ লেখাপড়া শেষ করে এখন তিনি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
শেখানো হয় হাতের কাজও
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি শেখানো হয় হাতের কাজও৷ শিক্ষার্থীরা অনেক আগ্রহ নিয়ে এসব কাজ শেখেন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ফিজিওথেরাপি
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীকে ফিজিওথেরাপি দিচ্ছেন এক চিকিৎসক৷ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অনেকেরই শারীরিক কিছু সমস্যা থাকে, যেগুলো এই ফিজিওথেরাপির মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
হোস্টেলে ফিরছে শিক্ষার্থীরা
স্কুল শেষে হোস্টেলে ফিরছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা৷ ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই আবাসিক৷ স্কুলের অ্যাকাডেমিক ভবনের পাশেই লাগোয়া একটি ভবনে থাকার জায়গা এই সব শিক্ষার্থীদের৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ডয়চে ভেলের দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ড
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি অনলাইন প্রকল্প ‘বাংলা ব্রেইল’ চলতি বছর দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে৷ ফেসবুকভিত্তিক এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য অডিও বুক এবং ব্রেইল বইয়ের ইউনিকোড সংস্করণ তৈরির কাজ চলছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
ফলাফল সত্যি বিস্ময়কর৷ ‘একো লোকেশন' পদ্ধতি ব্যবহার করে অন্ধ মানুষের মস্তিষ্কের কাঠামো বদলে দেওয়া যায়৷ ড. লোরে টালার বলেন, ‘‘আমাদের ফলাফলের বিশেষত্ব হলো, এই শব্দ অন্ধ মানুষের মস্তিষ্ককে অত্যন্ত সক্রিয় করে তুলেছে৷ যারা দেখতে পায়, তাদের মস্তিষ্ক শুধু ছবি দেখেই সাড়া দেয়৷''
অর্থাৎ শব্দ মস্তিষ্কের ‘ভিশুয়াল সেন্টার'-এ বিশ্লেষণ করা হয়৷ তখন মস্তিষ্কে ছবি সৃষ্টি হয়৷ রোগী চোখে দেখতে না পেলেও তাতে কোনো সমস্যা হয় না৷ ড. টালার বলেন, ‘‘আমি বলবো না, যে এটা দৃষ্টিশক্তির বিকল্প হতে পারে৷ কিন্তু মস্তিষ্ক আবার যে অন্য স্পন্দন পাচ্ছে, সেটাও তো কম নয়৷ আমার মতে, সব মস্তিষ্কেরই সেই ক্ষমতা থাকে, কোনো বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হতে হয় না৷''
টমি নিজেই শব্দের প্রতিফলন ঘটিয়ে অনায়াসে কেক-রুটির দোকান পর্যন্ত চলে যান৷ বিভিন্ন রকম কেকের মধ্যে তফাত বুঝতে না পারলেও ক্ষতি নেই৷ প্রায় যে কোনো ১৮ বছরের যুবকের মতো তিনিও নিজেকে মুক্ত, স্বাবলম্বী ও শক্তিশালী মনে করেন৷
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় ৯ খাবার
প্রযুক্তির উন্নয়নে সময়ের সাথে তাল মেলাতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যবলেট, মোবাইল ইত্যাদি ব্যবহারের কারণে শরীরের মহা মূল্যবান অঙ্গ চোখ দুটোর ওপর পড়ছে বাড়তি চাপ ৷ তাই চোখকে সুস্থ রাখে এমন কিছু খাবারের কথা জেনে নিন ছবিঘর-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখের স্বাস্থ্যে গাজরের তুলনা নেই
গাজরে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, যা চোখের জন্য ভালো৷ অর্থাৎ চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং ছানি পড়া দীর্ঘায়িত করে৷ তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুদের গাজর খাওয়ার অভ্যাস করা প্রয়োজন৷ তাছাড়া বিভিন্ন আলু নানাভাবে খাওয়া হলেও, মিষ্টি আলু সেভাবে খাওয়া হয় না৷ অথচ এই মিষ্টি আলুতেও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন৷
ছবি: Colourbox/M. Velychko
সবুজ শাক-সবজি
আজকের যুগে স্বাস্থ্য সচেতন সকলেই কম-বেশি জানেন যে, নিজেকে সবুজ বা তরুণ রাখার মূলমন্ত্র হলো সবুজ শাক-পাতা খাওয়া৷ চোখের স্বাস্থ্যের জন্যও প্রয়োজন সবুজ শাক-সবজি, কারণ এ সবে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আর লুটিন, যা কোনো নীল আলো বা লাইটকে চোখের রেটিনার ওপর প্রভাব ফেলা থেকে বিরত করে৷
ছবি: picture alliance/C. Mohr
টমেটো
অতিরিক্ত আলোতে কাজ করার ফলে যে সমস্যা হয়, তা কমায় টমেটোয় থাকা লাইকোপিন৷ চোখের জন্য যা দরকার, যেমন আঁশ, খনিজ ক্যারোটিন – এ সবই রয়েছে রসালো টমেটোতে৷
ছবি: imago/JuNiArt
মুরগির মাংস
মুরগির মাংসে রয়েছে প্রচুর জিঙ্ক এবং ভিটামিন ‘বি’, যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ মুরগির মাংস নানাভাবে খাওয়া যেতে পারে৷ এমন কি ছোটরাও খেতে পারে এই মাংস৷
ছবি: Fotolia/Barbara Pheby
কমলালেবু
কমলালেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লুটিন এবং ভিটামিন ‘সি’, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী৷ ভিটামিন ‘সি’ চোখের দৃষ্টি নরমাল বা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে৷
ছবি: Fotolia/cut
ডিমের কুসুম
ডিমের কুসুমের গুণের কথা কম-বেশি সকলেই আমরা জানি৷ এতে রয়েছে লুটিন এবং যথেষ্ট পরিমাণে জিংক, যা চোখকে ‘মাসকুলার ডিজেনারেশন’ সমস্যা থেকে বাঁচায়৷ এ সমস্যা সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পরে দেখা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
যেসব মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, সেগুলো চোখের জন্য বেশ উপকারী৷ স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকরেল, কড, টুনা – এ সমস্ত মাছ চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে এবং চোখকে নানা সমস্যা থেকে দূরে রাখে৷ শরীরে প্রোটিনের অভাব হলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ তাই মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি খেতে হবে আর তা একেবারে ছোটবেলা থেকেই৷
ছবি: Fotolia/Printemps
রঙীন ফল ও সবজি
হলুদ, সবুজ, কমলা রঙের, অর্থাৎ গাজর, কমলা, পেঁপে, ক্যাপসিকাম, ভুট্টা ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের ফলমূল ও শাক-সবজি, যেগুলোয় ভিটামিন ‘এ’ আছে, এমন খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত৷ নিয়মিত এই কাজটি করলে চোখের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া হবে৷ এ কথা বলেন জার্মানির বন শহরের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক হলৎস৷
ছবি: BGNes
বাঁধাকপি
বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ যা চোখের জন্য ভালো৷ বাঁধাকপি দামে সস্তা এবং সব জায়গায় পাওয়া যায় তাছাড়া সহজে নষ্ট হয়না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন
সুন্দর এই পৃথিবীতে আমরা সুন্দর, স্লিম আর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য কত কী-ই না করি৷ অথচ অবহেলিত হয় আমাদের চোখ দুটো৷ চোখের বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য কসমেটিক্সের কথা যেভাবে ভাবা হয়, চোখের ভেতরের স্বাস্থ্যের কথা সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে চোখের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনযুক্ত খাবার যথেষ্ট পরিমাণে খেলে চোখ থাকবে সুস্থ৷ দৃষ্টিশক্তি হারালে কিন্তু এই সুন্দর ভুবনের প্রায় সবই মনে হবে বৃথা, জীবনকে মনে হবে মূল্যহীন!
ছবি: www.shalimoff.com
10 ছবি1 | 10
তিনি বলেন, ‘‘আমার মাথায় একটা থ্রিডি মডেল সৃষ্টি হয়৷ তখন বুঝতে পারি, ডানদিকে জানালা আর সামনে চেয়ার-টেবিল রয়েছে৷ আমি সেখানে বসতে পারি৷ জগতের অনেক দরজা আমার জন্য এভাবে খুলে যায়৷ জীবনে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ ও স্থিতিশীলতা আসে৷ চট করে মাথা গোলমাল হয়ে যায় না৷''