যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো অবকাশ পর্যটন কোম্পানি টমাস কুককে দেউলিয়া ঘোষণা করে এর সব বুকিং বাতিল করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যের বেসামরিক বিমান পরিহন কর্তৃপক্ষ (সিএএ) বলছে, বিশ্বজুড়ে পর্যটন পরিচালনাকারী ১৭৮ বছরের পুরনো এই কোম্পানি তাৎক্ষণিক সকল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে৷ তাদের এই ঘোষণার ফলে এ মুহূর্তে বিদেশে থাকা হাজার হাজার পর্যটককে দেশে ফেরানোর জন্য নতুন করে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে হবে৷
টমাস কুকের প্রধান নির্বাহী পিটার ফ্যাংকহসার কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে দেওলিয়া ঘোষণা করার কথা জানিয়ে বলেন, এরকম পতন গভীর আক্ষেপের বিষয়৷ লাখ লাখ গ্রাহক ও কয়েক হাজার কর্মীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি৷
টমাস কুকের পতনের ফলে বিশ্বজুড়ে ২০ হাজার মানুষের চাকরি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে৷ ব্রিটিশ পরিবহনমন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস বলেন, কোম্পানিটির পতন কর্মীদের জন্য এবং অবকাশ যাপনকারীদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের৷
শ্যাপস জানান, গ্রাহকদের বিনা খরচে দেশে ফেরাতে সরকার ও বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ এর মধ্যেই কয়েক ডজন উড়োজাহাজ ভাড়া করেছে৷ টমাস কুকের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়া নাগরিক ফেরাতে জরুরি এ কার্যক্রমের সাংকেতিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ম্যাটারহর্ন’৷
এক নজরে বিশ্বের সেরা কয়েকটি ভ্রমণ গন্তব্য
বিখ্যাত ভ্রমণ বিষয়ক পত্রিকা, ‘লোনলি প্ল্যানেট’-এর নতুন তালিকায় স্থান পেয়েছে দশটি দেশ৷ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটন গন্তব্যগুলির এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জার্মানি৷ বিস্তারিত এই ছবিঘরে৷
ছবি: Colourbox/Anshar
শ্রীলঙ্কা
লোনলি প্ল্যানেটের তালিকায় প্রতিবারের মতো এবারও এশিয়ার দেশগুলির রমরমা৷ তালিকার শীর্ষে রয়েছে শ্রীলঙ্কা৷ গ্রীষ্মপ্রধান এই দেশটিতে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে রয়েছে বৌদ্ধ বা হিন্দুদের বিভিন্ন মন্দির৷ এছাড়া বছরভর চলতে থাকে নানা রকমের উৎসব বা মেলা, যা দেখতে ভিড় করেন পৃথিবীর সব প্রান্তের পর্যটকেরা৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/R. Francis
জার্মানি
ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটি পর্যটনের জন্য এমনিতেই বিশ্বখ্যাত৷ লোনলি প্ল্যানেটের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান কেড়ে নেওয়া জার্মানিতে আছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান ও নানা ধরনের জাদুঘর৷ শুধু তাই নয়, এই দেশের ‘অক্টোবরফেস্ট’-এর মতো উৎসবও টেনে আনে বিশ্বের সব প্রান্তের ভ্রমণবিলাসীদের৷
ছবি: picture-alliance/Dumont/S. Lubenow
জিম্বাবোয়ে
এই তালিকায় আফ্রিকার একমাত্র দেশ জিম্বাবোয়ে৷ তৃতীয় স্থানাধিকারী এই দেশটি আফ্রিকার সবচেয়ে নিরাপদ গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি৷ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য উদ্যান, প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ ও ভিক্টোরিয়া ঝর্না– সব মিলিয়ে জিম্বাবোয়ে বেড়াতে যাবার জন্য খুবই আকর্ষণীয়৷
ছবি: imago/Xinhua
পানামা
জীববৈচিত্রে ভরা মধ্য অ্যামেরিকার এই ছোট্ট দেশে রয়েছে অসাধারণ গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি, সাদা বালির অপূর্ব সৈকত ও তার সাথে মানানসই আদিবাসী সংস্কৃতি৷ সে কারণেই এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে পানামা৷
ছবি: picture alliance/Sergi Reboredo
কিরঘিজস্তান
‘আদিবাসী অলিম্পিক’ হিসাবে খ্যাত ওয়ার্ল্ড নোম্যাড গেমস অনুষ্ঠিত হবার পর থেকেই বিশ্ব পর্যটনের কেন্দ্রে আসতে শুরু করে মধ্য এশিয়ার এই দেশটি৷ এছাড়া, কিরঘিজস্তানের ভিসা সংক্রান্ত প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ ও দ্রুত হবার কারণে পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যেই৷
ছবি: picture-alliance/AP/V. Voronin
জর্ডান
কখনো শুষ্ক খাদের মধ্য দিয়ে যাত্রা, কখনো ঘন সবুজ বন-জঙ্গল, আবার পরমুহূর্তেই মৃত সাগরের জলে গা ভাসানো– অসাধারণ এই দেশটি লোনলি প্ল্যানেটের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
ইন্দোনেশিয়া
সতেরো হাজারেরও বেশি দ্বীপ মিলিয়ে গঠিত এশিয়ার এই দেশ৷ কিছুদিন আগে ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গেলেও দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অতুলনীয়৷ সাথে ১৬৯টি দেশের নাগরিকদের ভিসাবিহীন যাত্রার সুবিধা থাকায় পর্যটকেদের জন্য খুবই জনপ্রিয়৷
ছবি: DW/S. Hucal
বেলারুশ
শিল্পকলা চর্চার ক্ষেত্রে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ইউরোপের এই দেশে ৩০ দিন পর্যন্ত বিনা ভিসায় ঘুরে বেড়াতে পারেন৷ ২০১৯ সালের ইউরোপিয়ান গেমসও অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই দেশেই৷
ছবি: DW/A. Burakov
সাও টোমে ও প্রিন্সিপে
লোনলি প্ল্যানেটের তালিকায় বিখ্যাত দেশগুলি ছাড়াও তুলে ধরা হয়েছে এমন সব জায়গার কথা, যেসব দেশ বা স্থান সম্পর্কে এতদিন অনেকেরই তেমন কিছু জানা ছিল না৷ আফ্রিকার গিনি উপসাগরে দুটি মাত্র দ্বীপের এই দেশটিতে সমুদ্রের আশ্চর্য দৃশ্যের সাথে রয়েছে চিনি, কোকো ও কফির ক্ষেত, যা ব্যতিক্রমী পর্যটকদের বেশ পছন্দের৷
ছবি: DW/C. Vieira Teixeira
বেলিজ
মানচিত্রে খুঁজে বের করতে হিমশিম খেতে হলেও এই তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে ছোট্ট দেশ বেলিজ৷ বিশ্বের দ্বিতীয় প্রবালপ্রাচীরের সাথে সাথে বেলিজে রয়েছে অসামান্য গুহা৷তুলনামূলকভাবে উপেক্ষিত হলেও মধ্য অ্যামেরিকার এই দেশটি পর্যটনের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ৷
ছবি: imago/Zumapress
10 ছবি1 | 10
লিসেস্টারশায়ারের কেবিনেট নির্মাতা টমাস কুকের হাত ধরে ১৮৪১ সালে যাত্রা শুরু করেছিল কোম্পানিটি৷ তার নামে চালু হওয়া এই কোম্পানি বিশ্বের বিখ্যাত হলিডে ব্র্যান্ডগুলোর অন্যতম৷
ব্যবসায়িক মন্দার মধ্যে চলতি বছরের আগস্টে বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার চীনা সংস্থা ফোসুনের নেতৃত্বে ৯০ কোটি পাউন্ডের একটি পুনরুদ্ধার তহবিল জোগাড়ে সমর্থ হয়েছিল টমাস কুক৷ কিন্তু কোম্পানিটির ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর তরফ থেকে জরুরি তহবিল হিসেবে আরো ২০ কোটি ডলার বাড়ানোর দাবি তোলায় ওই বিনিয়োগ চুক্তি সংশয়ের মধ্যে পড়ে৷
টমাস কুকের দেউলিয়া হওয়ার খবরে হতাশা প্রকাশ করে ফোসুন এক বিবৃতিতে বলেছে, চুক্তির পুরো প্রক্রিয়ায় তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকলেও দুর্ভাগ্যক্রমে অন্যান্য বিষয়গুলোও পরিবর্তিত রয়েছে৷ এই পরিণতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি অত্যন্ত গভীর সমবেদনা জানাই৷
টমাস কুক রোববার বাড়তি তহবিল জোগাড়ের মাধ্যমে চুক্তি টিকিয়ে রাখতে ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেলেও কোনো লাভ হয়নি৷ কোম্পানিটি সরকারের কাছেও আর্থিক সহায়তা চেয়েছিল, যার জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলিও সুপারিশ করেছিল৷
টমাস কুকের কার্যক্রম বন্ধ হলেও বিদেশে গ্রাহকদের হোটেল খরচসহ প্যাকেজভুক্ত যাবতীয় ব্যয় মেটানো হবে বলে সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করেছে সরকার৷ পর্যটন শিল্পের দেওয়া করের টাকায় গঠিত একটি বিশেষ তহবিল (এয়ার ট্র্যাভেল ট্রাস্ট ফান্ড ও এয়ার ট্র্যাভেল অর্গানাইজার্স লাইসেন্স স্কিম- অ্যাটল) থেকে এ ব্যয় বহন করা হবে৷