ইতিহাদ এয়ারওয়েজ তাদের ফান্ডিং তুলে নেবার পর জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম এয়ারলাইন এয়ার বার্লিনকে পাওনাদারদের হাত থেকে বাঁচার জন্য দেউলিয়া সুরক্ষার পথ ধরতে হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সহজ কথায়, এয়ার বার্লিনের কাছে আর প্রতিদিনের কাজ চালানোর মতো নগদ অর্থ নেই৷ সম্প্রতি সরকারি সাহায্য পাওয়া সত্ত্বেও ইতিহাদের ফান্ডিং এয়ার বার্লিনের কাছে অপরিহার্য ছিল৷ তবুও তারা কাজ চালিয়ে যেতে চায়, বলে এয়ার বার্লিন জানিয়েছে৷
শেয়ারবাজারে দেউলিয়া সুরক্ষার আবেদন দাখিল করার সময় এয়ার বার্লিন বলে যে, তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ‘‘এয়ারলাইনটি চালু রাখার সপক্ষে কোনো ইতিবাচক লক্ষণ'' নেই৷ দাখিলপত্রে আরো বলা হয়, এয়ার বার্লিনের পরিচালকমণ্ডলীর যে দু'জন সদস্য ইতিহাদের দ্বারা মনোনীত হবার পর বোর্ডে যোগ দিয়েছিলেন, তারা পদত্যাগ করেছেন৷
ইতিহাদ মঙ্গলবার একটি বিবৃতিতে বলে যে, এয়ার বার্লিনের ঋণ পরিশোধে অযোগ্যতার আবেদন দাখিল উভয় পক্ষের জন্যই ‘‘হতাশাজনক''৷ ইতিহাদ গত ছয় বছরে এয়ার বার্লিনকে পর্যাপ্ত আর্থিক সাহায্য দিয়েছে, বলে ইতিহাদ দাবি করে৷ গত এপ্রিল মাসে এয়ার বার্লিন কাজ চালানোর জন্য ইতিহাদের কাছ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ইউরো পেয়েছে, বলে ইতিহাদ জানায়৷
গোটাবিশ্বে যাত্রীবাহী বিমান বাড়ছে
বিশ্বব্যাপী যাত্রীবাহী বিমানের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ শুধু ২০১৬ সালে এই বৃদ্ধি আগের তুলনায় ৬ দশমিক তিন শতাংশ বেশি৷ তবে এই বৃদ্ধির সুফল সবাই পাচ্ছে না, অন্তত সমানভাবে তো নয়ই৷ আর বড় আয় হচ্ছে অন্য কোথাও৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
জনাকীর্ণ আকাশ
আরো যাত্রী মানে আরো বিমান৷ ২০৩৫ সাল নাগাদ এশিয়ায় যাত্রীবাহী বিমানের সংখ্যা দ্বিগুন বেড়ে ১৭,০০০ হবে৷ উত্তর আমেরিকায় এই সংখ্যা হবে ৯,৮০০ এবং ইউরোপে ৭,৯০০৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
বৈমানিকদের চাহিদা বাড়ছে
আরো বিমান মানে আরো বৈমানিক দরকার৷ বোয়িংয়ের হিসেব অনুযায়ী, ২০৩৫ সাল নাগাদ অন্তত ৬১৭,০০০ নতুন বৈমানিক দরকার হবে, বিশেষ করে এশিয়ায়৷ মোটের উপর, ৬৭৯,০০০ নতুন রক্ষণাবেক্ষণকর্মী এবং ৮১৪,০০০ জন বাড়তি ফ্লাইট অ্যাসিস্ট্যান্টের দরকার হবে৷
ছবি: AFP/Getty Images/G. Bouys
সবচেয়ে বড় হাব
বিমানযাত্রীর সংখ্যা বিচারে ইউরোপের সবচেয়ে বড় হাবগুলো হচ্ছে লন্ডনের হিথ্রো, প্যারিসের শার্ল দ্য গল এবং জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর৷ ২০১৪ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর থেকে দুই মিলিয়ন টন কার্গো পরিবহণ করা হয়েছে৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিমানবন্দরের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায়, সেখানে ২০১৫ সালে ১০০ মিলিয়ন বিমানযাত্রী ছিল৷
ছবি: picture alliance/dpa/F. Rumpenhorst
বাজেট এয়ারলাইন্সগুলো রক্ষা করছে
জার্মানির বিমান শিল্পে বৃদ্ধি অবশ্য জার্মান বিমানসংস্থাগুলোর কারণে খুব একটা হয়নি৷ বরং বিদেশি বিভিন্ন বিমানসংস্থার অবদান এতে বেশি৷ জার্মানির বিমানসংস্থাগুলোর দূরপাল্লার উড়ালের সংখ্যা গত ছয় বছর ধরে ধারবাহিকভাবে কমছে৷ অন্যদিকে, অতিরিক্ত সুবিধাহীন বাজেট এয়ারলাইন্সগুলোর, যেমন রাইনএয়ার এবং ইজিজেট, উড়ালের সংখ্যা ১৪ শতাংশ বেড়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধর্মঘট কর্মসূচি
জার্মান পতাকাবাহী বিমানসংস্থা লুফৎহানসা গত বছর এক দশমিক আট বিলিয়ন ইউরো মুনাফা করতে সক্ষম হয়, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি, যদিও বিমান সংস্থাটিকে একের পর এক ধর্মঘটের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ পাইলটদের ইউনিয়নের ধর্মঘটের কারণে লুফৎহানসার ২০১৪ সাল থেকে প্রায় আধা বিলিয়ন ইউরোর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে৷ ইতোমধ্যে, অবশ্য ম্যানেজমেন্ট এবং পাইলটদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
সবচেয়ে বেশি আয় যাদের
এভিয়েশন সামগ্রিকভাবে একটি লাভজনক ব্যবসা৷ তবে কিছু সংস্থা অন্যদের চেয়ে বেশ এগিয়ে৷ যদিও বিমান সংস্থাগুলো সাধারণত বিনিয়োগকৃত মূলধনের চার শতাংশ মুনাফা করতে পারে৷ জার্মানির বিমান বন্দর অপারেটর এবং বিমান উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে লাভের পরিমান ৬ থেকে ৭ শতাংশ৷ এছাড়া এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং বুকিং সেবাদাতাদের লাভের পরিমাণ বিশ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
আমাদের জন্য কী আছে?
ক্লান্ত যাত্রীদের জন্য বিছানা, মাসাজ, পায়ের কাছে বেশি জায়গা, চাইল্ডকেয়ার সেবা এবং বারসহ গোসলের ব্যবস্থা৷ হ্যাঁ, বিমানে এসব কিছুই অদূর ভবিষ্যতে পাবেন সাধারণ যাত্রীরা৷
ছবি: Jörg Hackemann/Fotolia
7 ছবি1 | 7
এয়ার বার্লিন তাদের নিজেদের ম্যানেজমেন্টের তত্ত্বাবধানে ইনসলভেন্সি প্রক্রিয়া সম্পাদন করার আবেদন করেছে, বলে এয়ার বার্লিন জানায়৷ এর ফলে ‘‘লুফৎহানসা ও অপরাপর আগ্রহী পক্ষদের সঙ্গে এয়ার বার্লিনের অপারেশনস বিক্রির ব্যাপারে কথাবার্তা বলা'' আরো সহজ হবে, বলে এয়ার বার্লিনের ধারণা৷
জার্মান সরকারের সূত্রে প্রকাশ যে, এয়ার বার্লিনের উড়ালগুলি যাতে সময়সূচি মতো উড়তে পারে, সেজন্য জার্মান সরকার সাময়িকভাবে ১৫ কোটি ইউরো মূল্যের একটি ঋণ দিতে প্রস্তুত৷
‘‘বর্তমানে হাজার হাজার যাত্রী ও পর্যটক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ছুটি কাটানোর জায়গায় রয়েছেন'', বলে জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রণালয় ও জার্মান পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়৷ ঐ ঋণ ব্যতিরেকে ‘‘এই সব যাত্রীর এয়ার বার্লিনের মাধ্যমে জার্মানিতে ফেরা সম্ভব হত না৷''
এছাড়া সরকারি অর্থায়নের ফলে এটাও নিশ্চিত হবে যে, এয়ার বার্লিন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোউইংস ও অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইনস-এর কাছ থেকে যে বিমানগুলি ধার নিয়েছিল, এয়ার বার্লিন সেগুলি পূর্বাপর ব্যবহার করতে পারবে৷
বিপুল লোকসান
গত দু'বছরে এয়ার বার্লিন মোট ১২০ কোটি ইউরো লোকসান দেখিয়েছে৷ ২০০৮ সাল যাবৎ মাত্র দু'টি কোয়ার্টার, অর্থাৎ তিন মাসের কর্মকাল ছাড়া এয়ার বার্লিন কখনো লাভের মুখ দেখেনি এবং বহু বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ শেয়ারহোল্ডার ইতিহাদের তরফ থেকে নগদ বিনিয়োগের উপর নির্ভর থেকেছে৷
বাজেট ক্যারিয়ারটি যে এই অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করেনি, এমন নয়৷ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এয়ার বার্লিন একটি বড় আকারের কাঠামো বদল পরিকল্পনা কার্যকরি করে: সেসময় এয়ার বার্লিনের ৩৮টি বিমান – বিমানকর্মী সহ – লুফৎহানসাকে ভাড়া দেওয়া হয়; এছাড়া এয়ার বার্লিনের প্রায় ১,২০০ কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়, যা কিনা সংস্থাটির মোট কর্মীসংখ্যার প্রায় এক-সপ্তমাংশ৷
রিস্ট্রাকচারিং-এর ঠিক মাঝামাঝি এয়ার বার্লিন এক পর্যায় উড়াল বাতিল অথবা বিলম্বের পাল্লায় পড়ে, যার ফলে যাত্রীদের অভিযোগ ও অসন্তুষ্টির সীমা থাকে না ও যাত্রীসংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যায়৷ এ বছরের প্রথম সাত মাসে মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার যাত্রী এয়ার বার্লিন ব্যবহার করেছেন, যা কিনা ২০১৬ সালে প্রথম সাত মাসের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম৷ ২০১৭ সালের জুলাইয়ে এয়ার বার্লিনের যাত্রীসংখ্যা ছিল ২০১৬ সালের জুলাইয়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ কম৷
এখন জার্মানির মুখ্য বিমান পরিবহণ সংস্থা লুফৎহানসা দৃশ্যত এয়ার বার্লিনকে বাঁচাতে চলেছে৷ মঙ্গলবার লুফৎহানসা জানায় যে, তারা ‘‘ইতিমধ্যেই এয়ার বার্লিন গোষ্ঠীর একাংশের নিয়ন্ত্রণ নেবার ব্যাপারে এয়ার বার্লিনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে ও অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করার সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছে৷''
বাংলাদেশে যেসব এয়ারলাইন্স সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে
বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ হাজার যাত্রী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়েন৷ প্রায় একই সংখ্যক যাত্রী দেশে প্রবেশ করেন৷ বাংলাদেশ বিমান-এর দেয়া বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/K. Doherty
বাংলাদেশ বিমান
বাংলাদেশে মোট যাত্রীর ২০ থেকে ২১ ভাগ পরিবহন করে বাংলাদেশ বিমান৷ ফলে প্রতিদিন ৩ হাজারের মতো যাত্রী বাংলাদেশ বিমানের মাধ্যমে অন্য দেশে যায়৷ প্রতিদিন ৬ থেকে ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করে বাংলাদেশ বিমান৷ ১৬টি রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চলাচল করে৷ এর মধ্যে লন্ডনসহ কয়েকটি রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট যায়৷ অন্য রুটগুলোতে সপ্তাহে অন্তত দু’টি ফ্লাইট চলাচল করে৷
ছবি: picture alliance/Asian News Network
এমিরেটস এয়ারলাইন্স
বাংলাদেশ বিমানের পরই এমিরেটস এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে৷ সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করে তারা৷ প্রতিদিন এ সব ফ্লাইট ১২শ’ থেকে সাড়ে ১২শ’ যাত্রী পরিবহন করে৷
ছবি: C. Furlong/Getty Images
সৌদিয়া
এমিরেটস-এর পরেই রয়েছে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স৷ তারা সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ প্রতিদিন আটশ’ থেকে সাড়ে আটশ’ যাত্রী পরিবহন করে এসব ফ্লাইট৷
ছবি: Reuters/S. Perez
কাতার এয়ারলাইন্স
চতুর্থ অবস্থানে আছে কাতার এয়ারলাইন্স৷ এরা সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ প্রতিদিন প্রায় আটশ’ যাত্রী পরিবহন করে এই এয়ারলাইন্স৷
ছবি: AP
ইতিহাদ এয়ারওয়েজ
ঢাকা থেকে ইতিহাদ প্রতিদিন একটা করে ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ প্রতিদিন তারা প্রায় পাঁচশ’ যাত্রী পরিবহন করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Jebreili
জেট এয়ারওয়েজ
জেট এয়াররওয়েজ প্রতিদিন তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ তবে তাদের ফ্লাইটগুলো ছোট হওয়ায় যাত্রী পরিবহন হয় প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশ’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jet-Airways
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বড়৷ তবে তারাও প্রতিদিন ঢাকা থেকে প্রায় পাঁচশ’ যাত্রী পরিবহন করে৷