যুক্তরাষ্ট্রের এক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সব আনন্দ মাটি হতে চলেছিল এক পুলিশের কারণে৷ মহানন্দে খেলা দেখছিল ওরা৷ হঠাৎ পুলিশ দেখে সবাই ভাবছিল বোধহয় এক বন্ধু গ্রেপ্তার হতে চলেছে৷ পরে সেই পুলিশকে নিয়েই আনন্দে মেতে ওঠে তারা৷
বিজ্ঞাপন
উইসকনসিন হাইস্কুলের নাম এখন বিশ্বের অনেক দেশের অনেক মানুষই জানেন৷ অথচ এক সপ্তাহ আগেও স্কুলটির সুখ্যাতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ ছিল৷ সবাই জানতেন, এই স্কুলে লেখাপড়ার মান, পরীক্ষার ফলাফল ভালো৷ তবে এখন সবাই জানেন, এই স্কুলে হাজির হয়েছিলেন এমন এক পুলিশ, দুষ্টের দমনই শুধু নয়, শিষ্টের মনে আনন্দ ছড়াতেও যার জুড়ি মেলা ভার৷
শিক্ষার্থীরা সেদিন গ্যালারিতে বসে ফুটবল উপভোগে মশগুল৷ হঠাৎ সেই পুলিশের আবির্ভাব৷ বলা নেই, কওয়া নেই এসেই তিনি এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারে উদ্যত৷ প্রথমে ভয় এবং অস্বস্তি, তারপর মৃদু ক্ষোভও ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতে৷ কিন্তু তা শুধু কয়েক মুহূর্তের জন্য৷ বিশালদেহী সিকিউরিটি অফিসার জ্যাক ট্যাশনার পরক্ষণেই চিয়ারলিডারের মতো নানা ভঙ্গিতে নাচ শুরু করতেই বদলে যায় বাতাবরণ৷ সামনে জ্যাক আর পেছনে গ্যালারি ভর্তি শিক্ষার্থী – সবাই এক তালে, একই ভঙ্গিতে দুলছে, নাচছে, সবার প্রাণখোলা হাসিতে গ্যালারি যেন কাঁপছে তখন৷
পুরো ঘটনাটি দেখা যাবে গত ১৬ সেপ্টেম্বর অ্যাপলটন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ফেসবুক পেজে আপলোড করা ভিডিওতে৷ মাত্র ১০ দিনে ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৩০ লক্ষেরও বেশিবার!
পরে জ্যাক ট্যাশনার জানিয়েছেন, হঠাৎ এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করতে যাওয়ার ব্যাপারটি ছিল পুরো সাজানো নাটক৷ যাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিলেন, তাকে তো বটেই, এমনকি স্কুল কর্তৃপক্ষকেও আগেই জানিয়েছিলেন বিষয়টি৷ সাজানো নাটকের মঞ্চায়ন এতটাই সফল হয়েছিল যে, পরে ফক্স নিউজকে জ্যাক ট্যাশনার বলেছেন, ‘‘যখন দেখলাম, আমি যা করছি, ওরা (শিক্ষার্থী) অবিকল ঠিক তা-ই করছে, মনে হচ্ছিল, অনন্তকাল ওই কাজই করে যাই৷ কিন্তু এক সময় আমার পা আর সায় দিচ্ছিল না৷''
এসিবি/ডিজি
দেশে দেশে, ক্লাসে ক্লাসে
স্কুলের ক্লাসরুম বলতে সব কিছু বোঝায়৷ এক কথায়, ছাত্রছাত্রীরা যেখানে বসে পড়াশুনো করে, শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের দেখাশুনো করেন, সেটাই হলো ক্লাসরুম৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
আফগানিস্তান: প্রগতি
মহাজেরা আর্মানি উত্তর আফগানিস্তানের জালালবাদের কাছে একটি মেয়েদের ক্লাসের শিক্ষিকা৷ ২০০১ সালে তালেবান জঙ্গিরা বিতাড়িত হওয়ার আগে এই অঞ্চলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়াই বারণ ছিল৷ আজ মেয়েদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিয়মিতভাবে স্কুলে যায়৷
ছবি: Reuters/Parwiz
জাপান: ডিসিপ্লিন
টোকিও-র তাকিনাগাওয়া প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়ারা দুপুরে খেতে বসেছে৷ জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বসেরাদের মধ্যে গণ্য৷ পিসা-র জরিপে জাপান নিয়মিতভাবে প্রথম দশটি দেশের মধ্যে পড়ে৷ অবশ্য বলা হয় যে, স্কুলে ভালো করার জন্য ছেলে-মেয়েদের ওপর বড় বেশি চাপ দেওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
ব্রাজিল: ভাসন্ত স্কুল
মানাউস-এর ‘দ্বিতীয় সাও জোসে’ স্কুলটি বস্তুত নদীবক্ষে৷ তা-ও আবার যে কোনো নদী নয়: খোদ অ্যামাজোন! অবশ্য ব্রাজিলেও সরকারি স্কুলগুলোর বিশেষ সুনাম নেই৷ ওদিকে বেসরকারি স্কুলগুলোর মান ভালো হলেও, তাদের ফি বেশি৷
ছবি: Reuters/B. Kelly
যুক্তরাষ্ট্র: সমৃদ্ধির দেশে অসাম্য
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে৷ অথচ এখানকার শিক্ষাব্যবস্থায় ধনি-দরিদ্রের ফারাক আছে, বলে অভিযোগ৷ শ্বেতাঙ্গ ছেলে-মেয়েরা কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা ল্যাটিন অ্যামেরিকান ছেলে-মেয়েদের চেয়ে ভালো ফলাফল করে থাকে৷ চিকাগোর এই প্রাইমারি স্কুলটিতে অবশ্য এখনও ফলাফল নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই৷
ছবি: Reuters/J. Young
ভিয়েতনাম: অন্ধকারে দেহ আলো
আলো নেই, বই নেই, তা সত্ত্বেও ভিয়েতনামে এই তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা পড়া করে চলেছে৷ মনে রাখতে হবে: বিশ্বব্যাপী পিসা জরিপে কিন্তু ভিয়েতনাম জার্মানির চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে৷
ছবি: Reuters/Kham
ব্রিটেন: পরিপাটি
ইংল্যান্ডে স্কুলের ইউনিফর্ম চালু হয়েছে বহু যুগ আগে৷ মিডলসেক্স-এর ‘হ্যারো’ স্কুলে হ্যাট পর্যন্ত পরতে হয়৷ মজার কথা, সুদীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটিতে কিন্তু ইউনিফর্ম সংক্রান্ত কোনো লিখিত নিয়মাবলী নেই৷
ছবি: Reuters/S. Plunkett
পাকিস্তান: পথে বসে
অথবা পার্কে বসে পড়াশোনা৷ লক্ষণীয় যে, মেয়েরা আর ছেলেরা একসঙ্গে বসেই পড়াশোনা করছে, পাকিস্তানের সর্বত্র যেটা সম্ভব নয়৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
মরক্কো: বেগুনি রঙের ক্লাসরুম
রাবাত-এর উদাইয়া প্রাইমারি স্কুলের ক্লাসরুমটি সুন্দর করে রং করা৷ মুশকিল এই যে, গোড়ায় ৯২ শতাংশ ছেলে-মেয়ে স্কুলে গেলেও, পনেরোয় পা দেবার আগেই তাদের অর্ধেক স্কুল ছেড়ে দেয়৷ ১৫ বছরের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ লিখতে-পড়তে জানে না৷
ছবি: Reuters/Y. Boudlal
কেনিয়া: বস্তির স্কুল
কেনিয়ায় ২০০৩ সাল থেকে প্রাইমারি স্কুলে যেতে ফি লাগে না৷ তবে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বিশেষ বাড়ানো হয়নি৷ ক্লাসে ছাত্রসংখ্যা বেশি৷ নাইরোবির দক্ষিণে কিবেরা বস্তি এলাকার এই স্কুলটিতে বেঞ্চের চেয়ে পড়ুয়া বেশি৷
ছবি: Reuters/N. Khamis
মালয়েশিয়া: সুখি ছাত্রছাত্রী
পিসা জরিপে মালয়েশিয়ার ছাত্রছাত্রীরা বলেছে, তারা সুখি৷ নুরুল ইমান মাদ্রাসার পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য৷
ছবি: Reuters/O. Harris
ইউক্রেন: নানা ভাষা
ইউক্রেনে ছেলে-মেয়েরা ক্লাস ওয়ান থেকেই যে কোনো একটা বিদেশি ভাষা শিখতে শুরু করে৷ কিয়েভ-এর এই লাইসিয়াম বা হাই স্কুলটিতে পঞ্চম শ্রেণি থেকে একটি দ্বিতীয় বিদেশি ভাষা শিখতে হয়৷ ছাত্রছাত্রীদের অনেকে ইউক্রেনীয় ও রুশ ভাষা ছাড়া ইংরেজি, ফরাসি অথবা জার্মান বলতে পারে৷
ছবি: Reuters/G. Garanich
চিলি: পড়ার কি কোনো শেষ আছে?
সান্তিয়াগোর ‘লাউরা ভিকুনা’ সান্ধ্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বয়স হয়েছে বটে, তবুও তারা এককালে যে স্কুলের পড়া শেষ করতে পারেননি – সম্ভবত আর্থিক সামর্থ্য ছিল না বলে – আজ সেটাই সমাপ্ত করতে বদ্ধপরিকর৷