জার্মানিতে বয়স্ক বা প্রবীণদের জীবনযাত্রা বাংলাদেশের তুলনায় পুরোপুরি ভিন্ন৷ তাঁদের স্বাস্থ্য, হাঁটা-চলা, সাজগোজ দেখলে, কথাবার্তা শুনলে মনেই হয় না যে তাঁরা প্রবীণ৷
বিজ্ঞাপন
আর তা হবেইবা কেন৷ জার্মানিতে প্রবীণদের জন্য রয়েছে নানা সুযোগ-সুবিধা৷ মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তার স্বাস্থ্য, হোক সে তরুণ বা প্রবীণ৷ তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সুস্থ থাকা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে৷
সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যবিমা, যা কিনা জার্মানির শতকরা ৯০জন নাগরিকেরই রয়েছে৷ প্রবীণদের সুচিকিৎসার নিরাপত্তা থাকায় তাঁরা নিশ্চিন্ত৷ আর থাকা খাওয়ার কোনো সমস্যা তো তাঁদের নেই-ই৷ বয়স্ক যাঁদের পেনশন খুব কম, তাঁদের জন্য সরকারই এগিয়ে আসে ব্যয়ভার বহন করতে৷
প্রবীণদের জন্য সেরা ১০টি দেশ
‘গ্লোবাল এজ ওয়াচ ইনডেক্স’ ২০১৫ সালে ৯৬টি দেশে জরিপ চালিয়ে প্রবীণদের স্বাস্থ্য সেবা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সামাজিক যোগাযোগ এসবের ভিত্তিতে ১০টি দেশকে সেরা হিসেবে বেছে নিয়েছে৷
ছবি: Colourbox/Kzenon
সুইজারল্যান্ড
ষাটোধর্ব ব্যক্তিদের জন্য সেরা দেশ সুইজারল্যান্ড৷ এই দেশে প্রবীণদের জন্য সেরা স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে, এছাড়া তাদের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভালো৷ তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের শতভাগ পেনশন সুবিধার পরও সেদেশে ১৬ দশমিক ১ ভাগ বয়স্ক মানুষ দরিদ্র৷
ছবি: picture-alliance/Keystone/U. Flueeler
নরওয়ে
প্রবীণদের ক্ষেত্রে সব বিষয়েই নরওয়ে ব়্যাংকিংয়ে শীর্ষে৷ দেশটিতে ৭১ দশমিক ১ ভাগ প্রবীণের কর্মসংস্থান রয়েছে৷ প্রবীণদের মধ্যে দরিদ্র ১ দশমিক ৮ ভাগ এবং সেদেশেও ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের শতভাগ পেনশন সুবিধা রয়েছে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
সুইডেন
সুইডেনে ষাটোর্ধ্বদের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্ত থাকার হার অনেক বেশি৷ সেখানে প্রবীণরা নিজেদের নিরাপত্তা, নাগরিক স্বাধীনতা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট৷
ছবি: picture-alliance/chromorange/Media for Medical
জার্মানি
ব়্যাংকিংয়ে জার্মানির অবস্থান চতুর্থ৷ শিক্ষা ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত থাকার ক্ষেত্রে এখানকার প্রবীণদের হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ৷ এই দেশটিও প্রবীণদের নাগরিক স্বাধীনতা, জীবন নিয়ে প্রত্যাশা এবং স্বাস্থ্যসেবার দিক দিয়ে প্রত্যাশা প্রায় শতাভাগ পূরণ করে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যানাডা
দেশটিতে প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা বেশ ভালো৷ ক্যানাডা প্রবীণদের স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রত্যাশা মিটিয়ে থাকে৷ এছাড়া এই দেশের বয়স্কদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রয়েছে৷ ৯৭ দশমিক ৭ ভাগ পেনশনের সুবিধা রয়েছে৷ বৃদ্ধ অবস্থায় দরিদ্রের সংখ্যা শতকরা ৬ দশমিক ৮ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/A.Lynett
নেদারল্যান্ডস
ব়্যাংকিংয়ে নেদারল্যান্ডসের অবস্থান ষষ্ঠ৷ বয়স্কদের মধ্যে দারিদ্রের হার ৩ ভাগ৷ ৬৫ বছরের বেশি বয়সে পেনশনের নিশ্চয়তা শতভাগ৷ এছাড়া নাগরিক স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে প্রবীণদের সন্তুষ্টি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ডে প্রবীণদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১ দশমিক ৬ ভাগ৷ ৬০ বছরের বেশি বয়সি মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগ, নিরাপত্তা, গণপরিবহন এবং নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে এখানকার প্রবীণদের সন্তুষ্টি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
জাপান
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রবীণের বাস জাপানে৷ দেশটির এক তৃতীয়াংশ মানুষ প্রবীণ, অর্থাৎ তাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি৷ স্বাস্থ্যসেবায় দেশটি তালিকায় শীর্ষে রয়েছে৷ এখানকার ৬০ বছরের প্রবীণরা আশা করেন তাঁরা আরও ২৬ বছর বাঁচবেন এবং এর মধ্যে ২০ বছরই তাঁরা সুস্থ-সবল থাকবেন৷ এছাড়া নিজেদের নিরাপত্তা, নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছে প্রবীণদের মধ্যে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Kyodo News
যুক্তরাষ্ট্র
ব়্যাংকিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র আছে ৯ নম্বর অবস্থানে৷ শিক্ষাক্ষেত্রে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে এটির অবস্থান শীর্ষে৷ এছাড়া এখানকার প্রবীণদের নিরাপত্তা, সামাজিক যোগাযোগ, স্বাস্থ্য সেবা এবং জীবনমান নিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছে৷ তবে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে দরিদ্র শতকরা ১৮ ভাগ৷
ছবি: ddp/David Hecker
যুক্তরাজ্য
সামাজিক যোগাযোগ, নাগরিক স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং গণপরিবহন নিয়ে এখানকার প্রবীণদের মধ্যে সন্তুষ্টি রয়েছে৷ এছাড়া এখানকার ৬৫ বছরের বেশি বয়সিরা শতভাগ পেনশন সুবিধা পান৷ তবে বয়স্কদের মধ্যে ৯ দশমিক ৩ ভাগ দরিদ্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Eisenhuth
10 ছবি1 | 10
জার্মানির মোট জনসংখ্যা ৮কোটি ২০ লাখের মধ্যে এক কোটি ৭০ লাখ অর্থাৎ ২০ ভাগ প্রবীণ৷ জার্মানিতে প্রবীণ তাঁদেরই ধরা হয়, যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি৷
চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি ও সচেতনতার বৃদ্ধির কারণে জার্মানিতে মানুষের গড় আয়ু দিন দিন বাড়ায় প্রবীণদের সংখ্যাও বাড়ছে৷ বর্তমানে গড় আয়ু নারীর ক্ষেত্রে ৮২ আর পুরষদের ক্ষেত্রে ৭৮ বছর৷ তাঁরা কেমন আছেন ? এক কথায় বলতে গেলে বলতে হবে অনেক দেশের তুলনায় খুবই ভালো৷
জার্মানির বিত্তবানদের অনেকেই কিন্তু বৃদ্ধ বয়সেও নিজের বাড়িতে থাকতে পছন্দ করেন৷ তাঁদের কেউ কেউ দেখাশোনার জন্য ঘন্টা হিসেবে সেবিকা বা নার্স রাখেন৷ আবার কেউ কেউ দিনরাত থাকার জন্যও পোল্যান্ডের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সদের রাখেন৷ পোল্যান্ড থেকে চুক্তিতে আসা নার্স আসেন আবার চুক্তি শেষে দেশে ফিরে যান৷
আসলে জার্মানিতে প্রতিটি নাগরিকের মোটামুটিভাবে আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকার কারণেই তাঁরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে এতটা ‘ফিট' থাকতে পারেন৷
আর নানা ধরনের বৃদ্ধাশ্রম তো রয়েছে, যে যার সামর্থ ও সুবিধা মতো সেগুলো বেছে নিতে পারেন৷ সেখানে থাকা-খাওয়া, সেবা, যত্ন ও চিকিসার পাশাপাশি নানা ধরণের বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকে৷
জার্মানিতে ৬৫তম জন্মদিনের পরেই সবাই সিনিয়র নাগরিক হিসেবে কিছু বাড়তি সুবিধা পান৷ বাস, ট্রাম, ট্রেন, মিউজিয়াম, কনসার্ট বা খেলা দেখার টিকিটের মতো অনেক ক্ষেত্রে প্রবীণদের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়৷ তাই প্রায়ই প্রবীণদের দল বেঁধে এসব উপভোগ করতে যেতে দেখা যায়৷ সে দৃশ্য দেখে ভীষণ ভালো লাগে আমার৷ আমাদের দেশে এরকম দৃশ্যের কথা তো ভাবাই যায়না!
জার্মানির কোলন শহরে প্রবীণদের জীবনযাত্রা
জার্মানিতে অন্যান্য দেশের মতো বাড়ছে প্রবীণদের সংখ্যা৷তাঁরা কেন দীর্ঘজীবী হন, তাদের জীবনযাত্রা, তাঁদের জীবনের সফলতা আসার নানা গল্প জানিয়েছেন কোলনে একটি অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী ইতিবাচক চিন্তার কয়েকজন প্রবীণ৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
স্বাস্থ্য সচেতন ও ইতিবাচক চিন্তার মানুষ
প্রতিদিনের নাস্তায় অবশ্যই থাকে তাজা ফলের রস, রুটি, কফি ইত্যাদি৷ জো প্রতিদিন বাজারে যায়, লক্ষ্য তাজা ফল, সালাদ কেনা ছাড়াও বাড়ির বাইরে বের হওয়া এবং আশেপাশের লোকজনের খোঁজখবর রাখা৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
রিটা এবং জো
আসল নাম মার্গারিটা৷ তবে আদর করে সবাই তাঁকে ডাকে রিটা নামে৷ আর তাঁর স্বামী ইউসেফকে ডাকে জো৷ এই দম্পতি অবসর জীবনেও থাকেন হাসিখুশি আর নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত৷ তরুণ বয়সে ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়াতে বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছেন৷ কোলন শহরের নামি দামি এলাকায় বহু বছর ছিল তাঁদের গহনার দোকান৷ আজকের এই অবস্থানে আসতে দু’জনে মিলে প্রচুর খেটেছেন৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
হ্যাপি আওয়ার
জো এর বয়স ৮০৷ নিজ হাতে তৈরি করা বাড়ির সামনের সাজানো বাগানে গরমকালে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বসেন৷ আর অপেক্ষায় থাকেন তাদেরই মতো আরো কয়েকজনের জন্য৷ এঁরা মনে করেন, শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শুধু ভালো খাবার আর নিয়মিত চেকআপই যথেষ্ট নয়, চাই ভালো বন্ধুবান্ধব আর হাসিতামাশা৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
মিলে মিশে থাকা
এই এলাকার প্রায় ৫০টি বাংলো বাড়ির কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোর মালিক কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়েছেন৷ অর্থাৎ তাদের বয়স ৬৫’র ওপর৷ এঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নিয়মিত এই আড্ডায় যোগ দেন, করেন খানিকটা মদ্যপান৷ এই অবসরপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকোশলী ও চাকরিজীবীদের আলোচনার বিষয় পারিবারিক সুখ-দুঃখ থেকে বিশ্বের চলমান রাজনীতি পর্যন্ত৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
রিটার দিন শুরু
দেখে বোঝার কোনো উপায়ই নেই যে তাঁর বয়স ৭৫৷ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে তাঁর দিনের শুরু৷ সবসময়ই ফিটফাট থাকেন৷ কি করে সম্ভব জানতে চাইলে বলেন, পুরনো অভ্যাস৷ একসময় তিনি নিজেদের ব্যবসা, দুটো সন্তান মানুষ করা এবং সংসারের সমস্ত কাজসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিতেন৷ এই দম্পতির মতে জীবনে ‘ডিসিপ্লিন’ খুব বড় ব্যাপার৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
সকালের নাস্তা
প্রতিদিনের নাস্তায় অবশ্যই থাকে তাজা ফলের রস, রুটি, কফি ইত্যাদি৷ জো প্রতিদিন বাজারে যায়, লক্ষ্য তাজা ফল, সালাদ কেনা ছাড়াও বাড়ির বাইরে বের হওয়া এবং আশেপাশের লোকজনের খোঁজখবর রাখা৷ কোন প্রতিবেশীর কি দরকার, কে ছুটিতে গেছে বা কোনো নতুন প্রতিবেশী এসেছে কিনা সব খবরই থাকে জো’র কাছে – যার দিনের অনেকটা সময় কাটে বাগান করে৷ আর হ্যাঁ, সপ্তাহে দু’দিন নিয়ম করে স্ত্রীর জন্য ফুল কিনতে ভুল হয়না তাঁর৷
ছবি: Fotolia/kab-vision
হাসিখুশি মারিয়ানা
পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষক৷ স্বামী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে৷ নিজের গাছের যত্ন ছাড়াও প্রতিবেশীদেরও প্রয়োজনে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ শীতকালে এই প্রবীণ গ্রুপের ‘হ্যাপি আওয়ার’ আড্ডা বন্ধ থাকে বলে তখন বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া, কোনো থিয়েটার বা কনসার্টে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন মারিয়ানা৷ উদ্দেশ্য একসাথে আনন্দ করা৷ তাঁর মতে সুস্থ থাকতে চাইলে ভাবের আদান-প্রদান খুবই জরুরি৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
চাই মুক্ত বাতাস আর হাঁটাহাঁটি
শরীর ঠিক রাখতে হাঁটাহাঁটি আর ফুসফুস ঠিক রাখতে মুক্ত বাতাস সেবন করেন প্রবীণরা৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানদের আজকের এই অবস্থানে আসতে কত কষ্ট করতে হয়েছে তাঁরা তা খুব ভালোভাবেই জানেন৷ তাঁদের অনেকেরই তখন ঠিকমতো খাবার বা থাকার জায়গা ছিল না৷ অথচ এসব কথা এই প্রজন্মের জার্মানরা বুঝতে বা জানতে চায়না – একথা মাঝেমধ্যেই দুঃখ করে বলেন প্রবীণরা৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
বয়স কোনো বাধা নয়
এঁদের বয়স ৬৫ থেকে ৮৩ পর্যন্ত৷ সবাই নিজে গাড়ি চালান এবং পছন্দ করেন চালাতে৷ প্রায় সবাই কম্পিউটার চালাতে অভ্যস্ত৷ ছেলে-মেয়ে বা নাতি-নাতনির সাথে ইমেল বা ফেসবুকেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন৷ তাঁরা বলেন, ‘সময়ের সাথে কিছুটা তাল মিলিয়ে চলা মানেই ব্রেনের সেলগুলোকে সজাগ রাখা৷’
ছবি: Fotolia/Rido
অসুখকে গুরুত্ব দিলেও মন খারাপ করেন না
বয়সের সাথে অসুখের সম্পর্ক নিবিড়, যা খুবই স্বাভাবিক৷ তাই বলে মন খারাপ নয়৷ অসুখের সময়ও এই প্রবীণ দল একে অন্যের দেখাশোনা করেন৷ ৭৮ বয়সি হান্সের ডায়াবেটিস খুব বেশি৷ কদিন আগে তিনি বাড়ির কাছেই তাঁর অত্যাধুনিক মডেলের ‘আউডি’ গাড়িটি অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে লাগিয়ে দিয়েছিলেন৷ তাই এখন মেয়ে বলে দিয়েছে যে, তাঁর ‘গাড়ি চালানো বন্ধ’ – এ কথাই সেদিন হান্স ছলছল চোখে প্রবীণ বন্ধুদের বলছিলেন৷
ছবি: DW / N.Baeva
গান বাজনা
হস্ট অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার৷ শখ অ্যাকোর্ডিয়ান বাজানো আর ছবি আঁকা৷ প্রতিবেশীদের জন্মদিন বা কোনো উপলক্ষ্য হলেই হাতে তুলে নেন অ্যাকোর্ডিয়ান আর তালে তালে নেচে ওঠেন অন্যরাও৷ মজার ব্যাপার হলো, জন্মদিনের দাওয়াত দেবার সময় এঁরা বলে দেন, ‘‘কোনো উপহার নয়, আনন্দ ফুর্তি করার জন্য ‘মন’ নিয়ে এসো৷’’
ছবি: Nurunnahar Sattar
আনন্দ আর ধরেনা
এরকম হালকা আনন্দই বেচে থাকার প্রেরণা যোগায়
ছবি: Nurunnahar Sattar
পোশাককর্মীদের নিয়ে চিন্তা
বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সব খবরই তাঁরা রাখেন৷ সম্প্রতি বাংলাদেশের পোশাক কারখানা রানা প্লাজা ধসে যাওয়ার খবরে তারা খুবই বিচলিত৷ পোশাক কর্মীদের বেতন অবশ্যই বাড়ানো উচিত বলে তাঁরা মনে করেন৷ তাঁদের মতে পোশাক প্রতি ১ ইউরো বেশি দেওয়া জার্মানদের পক্ষে মোটেই কঠিন নয়৷ তাই তাঁরা এর আশু সমাধান কামনা করছেন৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
তরুণদের প্রতি পরামর্শ
তরুণ বয়সই কাজ করার উপযুক্ত সময়, তাই নিজের বুদ্ধি আর শক্তিকে কাজে লাগাও৷ নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলো এবং ইতিবাচক চিন্তা করো৷ ছোট বড় সবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখো, প্রয়োজনে সাহায্য করো৷ জীবনে সমস্যা আসবেই, মোকাবেলা করো৷ সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগাও, সাফল্য আসবেই আসবে৷ তরুণ বয়সে খাটলেই কেবল প্রবীণ বয়সে ভালো থাকা সম্ভব৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
14 ছবি1 | 14
যাঁদের হাঁটতে কষ্ট হয়, তাঁদের জন্য বেড়ানো তেমন কোনো সমস্যাই নয়৷ হুইল চেয়ারে বসেও ৮০ বছরের একজন প্রবীণ দিব্যি ঘোরাফেরা করে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন৷ বাস, ট্রামেও কিন্তু নির্ধারণ করা থাকে দেশের বয়স্ক নাগরিকদের জন্য আলাদা সিট বা জায়গা৷
ছুটির দিন বা রোববারগুলোতে জার্মানির ভালো রেস্তোরাঁ বা কফিশপগুলোতে থাকে ফিটফাট আর সাজগোজ করা প্রবীণ নারী-পুরুষদের ভিড়৷ বয়স বেড়েছে বলে কি আর সাধ-আহ্লাদ থাকতে নেই!
বয়স্ক জার্মানরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে কতটা ফিট তার একটি ছোট্ট উদাহরণ দেয়া যেতে পারে ৷ গত বছর করা এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, জার্মানিতে ৮০ বছরের ওপরে যাঁদের বয়স, তাঁদের মধ্যে শতকরা ৩০ জন নিজে গাড়ি ড্রাইভ করেন৷ ২০০৫ সালে হিসেবটা ছিল শতকরা ১৯ ভাগের মতো৷
অন্যদিকে তরুণদের মধ্যে গাড়ি চালানোর প্রবণতা কমছে৷ বিশেষ করে ৪০ বছরের কম যাঁদের বয়স, তাঁরা গাড়ির পরিবর্তে অনেকে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করছেন৷
আসলে অনেক জার্মান প্রবীণের সাথে আমার সখ্য গড়ে ওঠে সেই তরুণী বয়সেই,মানে জার্মানিতে আসার পর থেকেই৷ এরই মধ্যে তিন তিনটি যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে৷ নিজের আপনজনদের দেশে ফেলে আসার কারণেই কিনা জানিনা, ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকার সময়ে আমাদের বাড়িওয়ালা আর বাড়িওয়ালীর সাথে আমার কেন যেন বেশ বন্ধুত্ব হয়ে যেতো৷ প্রবীণ মালিকদের কাছ থেকে সে সময় খুবই স্নেহ, ভালোবাসা পেয়েছি৷ সেসময় কিন্তু নিজেকে কখনো বিদেশি বলে মনে হয়নি৷ যা-ই হোক আমি তাঁদের সাথে মেশার ফলে তাঁদের ভাষা, তাঁদের সংস্কৃতিকে জানা অনেক সহজ হয়েছে আমার জন্য৷
কোলনে বসবাসরত আমাদের বেশ কয়েকজন ইতিবাচক চিন্তার জার্মান প্রতিবেশী প্রবীণদের জীবনযাত্রা, তাঁদের জীবনে সফলতা, দীর্ঘজীবী হওয়ার গোপণ রহস্যের নানা তথ্য নিয়ে একটি ছবির প্রতিবেদন তৈরি করেছিলাম কিছুদিন আগে৷ সেটা আমার এই লেখার সাথে যুক্ত করলাম৷
লেখাটি এখানে শেষ করলে হয়তো সুন্দর হতো৷ কিন্তু জার্মানির প্রবীণদের জীবনযাত্রার পুরো চেহারাটা তো এমন নয়! সাম্প্রতিক আরেক সমীক্ষা জানাচ্ছে, জার্মানিতে প্রবীণদের মধ্যে দারিদ্রের ঝুঁকি বাড়ছে দিনদিন৷ পেনশন সিস্টেমের পরিবর্তন না করলে আগামী ২০৩৬ সালের মধ্যে এই ঝুঁকি বেড়ে গিয়ে শতকরা ১৬ থেকে ২০ জন প্রবীণ হুমকির মুখে পড়তে পারেন৷
তাছাড়া এমন অনেক প্রবীণ আছেন, তাঁদের বলতে গেলে কোনো আপনজন নেই৷ বৃদ্ধাশ্রমেও তাঁদের কেউ দেখতে আসেনা বা খোঁজ নেয়না৷ এমনকি ‘বড়দিনেও সন্তানের জন্য অপেক্ষা করে করে চোখের পানি ফেলেন তাঁরা৷ ব্যস্ততার এই যুগে তাঁদের যে মা-বাবার জন্যও সময় নেই !
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷