1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলায় কীসের বাধা বিধবাদের?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৬ অক্টোবর ২০২১

যৌনকর্মী এবং রূপান্তরকামীরা আদায় করে নিয়েছেন দুর্গাপুজো করার অধিকার৷ তবে পুরো অধিকারটুকু এখনো পাননি বিধবা নারীরা৷

Indien Hinduismus l Durga PujaFestival in Kalkutta l Witwe wird Ritual verwehrt
ছবি: Payel Samanta/DW

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী তথা সাংস্কৃতিক পীঠস্থানে উচ্চবিত্তদের এক আবাসিক এলাকার পুজোয় স্বামীহারা এক প্রবীণ নারীকে ষষ্ঠীর দিন দেবী  দুর্গাকে বরণ করতে দেওয়া হয়নি৷

জানা গেছে, আবাসনের পুজোর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সেই বিধবা নারী৷ তবে তাকে বাধা দেওয়ায় স্থানীয়দের অনেকেই এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷  

সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘যে পুজোয় বা উৎসবে সবার সামিল হবার অধিকার নেই, সেই উৎসব খুব সেকুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) বা কমিউনিটি কেন্দ্রিক, সেসব বলা বন্ধ হোক৷’’

‘স্বামীহারা নারীদেরই দৃঢ় হতে হবে’

This browser does not support the audio element.

সতীদাহ রদ থেকে বিধবা বিবাহের সাক্ষী এই বাঙালি সমাজে এ ধরনের ঘটনা তাই উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে৷

তবে এ চিত্র সর্বত্র একরকম নয়৷ যেমন, বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মদিন উপলক্ষে বিধবা বিবাহের আয়োজন করেছিলেন মেদিনীপুর শহরের ‘মিদনাপুর ডট ইন' সংস্থা৷  ইতিমধ্যে তারা তিনজন অসহায় বিধবার বিয়ে দিয়েছেন বলেও জানা গেছে৷

কলকাতায় বিধবা নারীকে দেবীবরণ করতে না দেওয়ার এমন ঘটনা শুনে মিদনাপুর ডট ইন-এর অরিন্দম ভৌমিক বলেন, ‘‘এটা ভাবা যায় না৷ গত বছর থেকে এই এলাকার তিনটি পুজোমণ্ডপ বিধবাদের সবার আগে দেবীবরণ করার সুযোগ দিচ্ছে৷ এমনভাবেই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷ তাহলে যাঁরা কুসংস্কারগ্রস্ত, তারাও বুঝতে পারবেন৷’’

তবে অনেক বিধবাই আবার এমন অনুষ্ঠান থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে চান৷ স্যার ড্রিংক ওয়াটার বেথুন ও পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের তৈরি ঐতিহাসিক বেথুন কলেজের বাংলার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপিকা সুমিতা মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন নিজের অভিজ্ঞতা৷ গত আগস্টে স্বামীর প্রয়াণের পর তিনি নিজেকেও এসব অনুষ্ঠান থেকে সরিয়ে নিয়েছেন বলেই জানালেন৷ এ বছর সিঁদুর খেলায় তিনি যাননি৷

কেন যাননি এমন প্রশ্নের জবাবে এ অধ্যাপিকা বলেন, ‘‘এখনো সমাজ ততটা এগিয়ে যায়নি৷ ধর্মীয় আচারকে আমরা যুক্তি দিয়ে পালটাতে পারব না৷ এখনও সেই সময় আসেনি৷’’

‘ধর্মীয় আচারকে আমরা যুক্তি দিয়ে পালটাতে পারব না’

This browser does not support the audio element.

তবে অধিকারকর্মীরা মনে করেন, এমন পরিস্থিতি পালটাতে গেলে বিধবা নারীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে৷ নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষের মতে, যন্ত্রণা ও সামাজিক উপেক্ষার ছবিটা পালটাতে গেলে আগে স্বামীহারা নারীদেরই দৃঢ় হতে হবে৷

তিনি বলেন, ‘‘দেবীবরণের থেকেও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ যে, একজন বিধবা নিজের বাড়িতে সমতার অধিকার পেলেন কিনা? পরিবারে যখন পুত্র বা কন্যার বিয়ে হবে, তিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখবেন না তো? দেবীবরণের মতোই পরিবারে নিজেকে অপয়া না ভাবাটা গুরুত্বপূর্ণ৷’’

অধ্যাপিকা সুমিতা বলেন, ‘‘যিনি স্বামী হারিয়েছেন, তাঁর যেমন হারানোর যন্ত্রণা, তেমনি সধবাদের স্বামীর অহঙ্কার থাকে৷ এটাই সামাজিক গঠন, পুরুষতন্ত্রের সংস্কার৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একজন মেয়ের জীবনের রঙ কি কেবল একজন পুরুষই আনতে পারেন?

আর শাশ্বতীর বক্তব্য, ‘‘বৈধব্যের মধ্যে কোনো পয়া-অপয়ার ব্যাপার নেই৷ আমাদের বিবাহে বৈধব্য অমঙ্গলসূচক নয়, এই বোধ যখন দেবীবরণের প্রাঙ্গণ থেকে জীবনে প্রবেশ করবে, তখনই আমরা এসব থেকে মুক্তি পাব৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ