1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশপ্রেম কমে গেছে: বুলু

৭ জুলাই ২০১১

এ এম জি কবির বুলু একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা৷ একাত্তরে বরিশাল অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি৷ এখনও কানে ঠিকভাবে শুনতে পাননা৷

http://en.wikipedia.org/wiki/File:BDP.jpg A Selection of Pamphlets on Bangladesh's Independence Movement. In the fast breaking events of 1971-1972, in which a movement for independence exploded in what was then West Pakistan, the Pakistan authorities attempted to suppress the movement by military force. When India moved in to settle the issue, the Library's New Delhi Field Office was able to get pamphlets from all parties putting forward their positions. As is true for collections of pamphlets on many other subjects that would not each merit individual cataloging, these items have been preserved and cataloged as a collection so that future scholars may study the events and propaganda battle. (Southern Asian Pamphlet Collection, Asian Division)
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযোদ্ধারাছবি: Public domain

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বুলুর সঙ্গে দেখা করতে আসে তাঁর কয়েকজন বন্ধু৷ বুলু তখন বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্র৷ বিএনসিসি করতেন তিনি৷ তাই একটি এলমজি ছিল তাঁর কাছে৷ বুলুর বন্ধুরাই তাকে জানিয়েছিলেন, ঢাকায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে পাকিস্তানি বাহিনী৷ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে৷ পরের দিন থেকে বুলুরা শুরু করে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ৷ লক্ষ্য বরিশালকে শত্রুমুক্ত রাখা৷

যুদ্ধ যাত্রা

এভাবেই এলো ১৮ এপ্রিল৷ পাকিস্তানি বাহিনী বরিশালে জোর হামলা শুরু করলো৷ বুলুরা প্রতিরোধ গড়ে তুললেন৷ কিন্তু সেই প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টেকেনি৷ বুলু ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান৷ তার পরিবার তাকে প্রথমে যুদ্ধে যেতে দিতে চায়নি৷ কিন্তু মাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মাকে বলেছিলাম, প্রতিটি মা যদি সন্তানকে আটকে রাখে তাহলে যুদ্ধ করবে কারা?''

স্বাধীনতার পরে বাঙালি চরিত্রের অবক্ষয় দেখে আমি হতাশ হয়েছি: বুলুছবি: bdnews24

রণক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণ

বুলু ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাননি৷ বরং বরিশালের আশেপাশের অঞ্চলেই যুদ্ধ করেছেন৷ রণক্ষেত্রেই নিয়েছেন প্রশিক্ষণ৷ ঝালকাঠি এলাকায় এক যুদ্ধে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনাকেও হত্যা করে তাঁর দল৷ তিনি বলেন, ‘‘ঝালকাঠির পাশে বাউকাঠি নামক স্থানে আমরা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করি৷ সেখানে আমাদের নজরে পাঁচ-সাতজন মারা গেছে৷''

বর্বর নির্যাতন

সেই যুদ্ধে জয় পেলেও জুলাই মাসে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন বুলু৷ সঙ্গে ছিল আরো দুই সহযোদ্ধা৷ তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায় হানাদার বাহিনী৷ নির্যাতনের তীব্রতায় বুলু'র এক সঙ্গী প্রাণ হারায়৷ তবে প্রাণে বেঁচে যান বুলু৷ তিনি বলেন, ‘‘পাক হানাদাররা আটকের পর প্রথমে আমার মুখে কয়েকটি ঘুষি মারলো, পেটে মারলো৷ মারার পরে গৌরনদী কলেজের একটি রুমে নিয়ে আমাদের পায়ের তলায় পেটালো৷ ওরা বারবার আমাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য জানতে চেয়েছিল৷ আমরা বলিনি৷ তখন তারা আমার সমস্ত পিঠে এবং পায়ে বেয়োনেট দিয়ে আঘাত করে৷ জোড়া থাপ্পর দিয়ে আমার কান ফাটিয়ে ফেলে৷''

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একটা অংশছবি: Centre for Human Rights, Development and Human Security

হতাশ বুলু

পাক বাহিনীর নির্যাতনের পর তিন মাস জেল খাটেন বুলু৷ মুক্তি পান অক্টোবর মাসে৷ তখন তিনি প্রচণ্ড আহত, তবুও ফিরে যান যুদ্ধের ময়দানে৷ স্বাধীন বেশে বরিশালে ফেরেন ৮ ডিসেম্বর৷ মুক্তিযুদ্ধের পর টানা তিন বছর চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি৷ বর্বর নির্যাতনে তাঁর দৃষ্টিশক্তি অনেক কমে গিয়েছিল৷ হারিয়েছিলেন শ্রবণ শক্তি৷ চিকিৎসার পর খানিকটা সুস্থ হয়ে কিছুদিন চাকরি করেছেন৷ বর্তমানে বুলুর বয়স ৬৭ বছর৷ তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পরে বাঙালি চরিত্রের অবক্ষয় দেখে আমি হতাশ হয়েছি৷ যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে না৷ মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে, স্বার্থপরতা বেড়েছে৷ দেশপ্রেম কমে গেছে৷''

বুলু একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা৷ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারের কাছ থেকে সুযোগসুবিধাও পাচ্ছেন তিনি৷ বুলু চান, বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক, অপরাধীর বিচার হোক৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ