করোনা রুখতে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল একটি ‘সংক্ষিপ্ত অভিন্ন লকডাউন' ব্যবস্থা চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র উলরিকে ডেমার৷ জার্মানির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ বেড়েই চলেছে বলে জানান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ডেমার বুধবার বলেন, ‘‘সংক্ষিপ্ত ও অভিন্ন লকডাউনের আহ্বান সঠিক৷ দেশব্যাপী একটি একক সিদ্ধান্তে আসা এখানে গুরুত্বপূর্ণ৷'' একেক রাজ্যে একেক নিয়ম ‘নিরাপত্তা ও গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে না' বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
জার্মানিতে এখন করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে লকডাউন চলছে৷ তবে এক্ষেত্রে ১৬টি রাজ্য নিজেদের মতো করে লকডাউনের নিয়মকানুন ঠিক করছে৷ তবুও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না৷ খুব দ্রুতগতিতে আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন ডাক্তাররা৷
সংক্রামক রোগ সংস্থা রবার্ট কখ ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ২০ হাজার ৪০৭ জন সংক্রমিত হয়েছেন৷ মারা গেছেন ৩০৬ জন৷ এ নিয়ে জার্মানিতে ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৮৫২ জন সংক্রমিত হলেন৷ মারা গেছেন ৭৭ হাজার ৭০৭ জন৷
বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন চলার কথা৷ এরপর কী করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে আগামী সোমবার আবারও বৈঠকে বসবেন ম্যার্কেল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা৷ তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই বৈঠকের সময় এগিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেট৷ তিনি সম্প্রতি ম্যার্কেলের দল সিডিইউর প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন৷
জার্মানিতে যে কারণে করোনায় মৃত্যু ৫০ হাজার ছাড়ালো
করোনার প্রথম ঢেউ সফলভাবে মোকাবেলা করে প্রশংসায় ভেসেছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনায় মৃত্যু ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে৷ ছবিঘরে দেখুন বিস্তারিত...
ছবি: Martin Meissner/AP Photo/picture alliance
প্রথম করোনা রোগী
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহানে ধরা পড়ার পর খুব দ্রুতই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস৷ এক মাস পর, অর্থাৎ, ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে৷
ছবি: Jens Schlueter/Getty Images
নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ
করোনার প্রথম ঢেউয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশ, যেমন স্পেন, ইটালি এবং ফ্রান্স যখন কড়া লকডাউন দেয়, তখনও এ বিষয়ে কিছুটা ‘উদার’ ছিল জার্মানি৷ তবে দেশের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্স ও পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি বেশ সফলভাবে সামাল দেয় দেশটি৷
ছবি: Axel Schmidt/AFP
চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ
জনগণের চলাফেরায় তখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল৷ সুপারশপ ছাড়া ‘কম প্রয়োজনীয়’ প্রায় সব দোকানপাট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷
ছবি: Andreas Gora/imago images
করোনা পরীক্ষা
করোনার প্রথম ঢেউ সামলাতে জার্মান সরকারের যে ব্যবস্থ্যাগুলো আলোচনায় আসে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, করোনা পরীক্ষা ও চিহ্নিতকরণে দ্রুত পদক্ষেপ৷ এছাড়া দেশি-বিদেশি সবার জন্যই বিমানবন্দরেগুলোতে বাধ্যতামূলক টেস্টিং-এর ব্যবস্থা করা হয়, এমনকি অনেক জায়গায় রেজিস্টার বই রাখা হয় যাতে পরিদর্শকদের ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে রাখা যায়৷
ছবি: Antonio Calanni/AP Photo/picture alliance
সুফল মিললো যতটা
এসব পদক্ষেপের ফলে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের হার অনেক কম ছিল৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা
শীতের শুরুতে জার্মানিতে বাড়তে থাকে সংক্রমণের হার৷ সংক্রমণ ঠেকাতে নানামূখী পদক্ষেপ ঘোষণা করে সরকার৷ সম্প্রতি কড়া লকডাউন আগামী ১৪ পর্যন্ত বহাল রাখার সিদ্ধান্তও এসেছে৷
ছবি: dpa/Sputnik/picture alliance
মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ালো
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রেকর্ডসংখক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷ মৃতের সংখ্যা দিনে এক হাজার ছাড়িয়েছে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার পর্যন্ত জার্মানিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে৷
ছবি: Ina Fassbender/AFP/Getty Images
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু যে রাজ্যে
স্ট্যাটিস্টা ডটকমের তথ্য বলছে, জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি লোক মারা গেছেন৷ গত সোমবার পর্যন্ত রাজ্যটিতে নয় হাজার একশ ২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷
ছবি: Ina Fassebnder/AFP/Getty Images
বেশি আক্রান্ত যেখানে
সংক্রমণের দিক থেকেও নর্থ রাইন ওয়েস্টাফালিয়া রাজ্য সবার উপরে৷ স্ট্যাটিস্টা বলছে, এ রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ৫১ হাজার আটশ’ ৯৮ জন৷ উল্লেখ্য, জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মধ্যে নর্থ রাইন ওয়েস্টাফালিয়া সবচেয়ে জনবহুল৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Y. Tang
সবচেয়ে কম যেখানে
করোনায় সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছে ব্রেমেন রাজ্য৷ গত সোমবার পর্যন্ত এ রাজ্যে মাত্র ২৩২ জন মারা গেছেন, আর আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার নয়শ’ ৪৩ জন৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
কেন বাড়ছে?
প্রথম ঢেউ মোকাবেলায় সফল জার্মানিতে এখন সংক্রমণ বেশি বাড়ার জন্য অনেকেই সরকারের উদারনীতিকে দায়ী করছেন৷ তাছাড়া সব রাজ্যে করোনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়াসহ নানা কারণে দেশের ভিতরে সমালোচনার মুখে পড়ে ম্যার্কেল সরকার৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
কঠোর পদক্ষেপ
তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় এরইমধ্যে কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে সরকার৷ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷ বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ রাখা, পার্টি বা জনসমাবেশ আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা এবং সর্বশেষ জনসাধারণকে পাবলিক প্লেসে এফএফপি২ মাস্ক পড়ার কথাও বলা হয়েছে৷
ছবি: John MacDougall/AP Photo/picture alliance
12 ছবি1 | 12
এদিকে, জার্মানিতে টিকাদান কর্মসূচির ধীরগতি সমালোচিত হচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে জার্মানিকে তাদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে৷ টিকা কিনতে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা এবং তারপর সব সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে বিতরণের দায়িত্ব ইইউর৷
অনলাইন প্রকাশনা সংস্থা ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা' বলছে, এখন পর্যন্ত ইইউর মাত্র ১২.৮ শতাংশ নাগরিক অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৩১ শতাংশ, আর যুক্তরাজ্যের ৪৬ শতাংশ মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন৷
আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে ৭০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ইইউ৷ বর্তমানে ধীরগতি থাকলেও শিগগিরই বেশি পরিমাণ টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ঐ লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা৷ এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির টিকা উৎপাদনেও গতি আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷