১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত ও পাকিস্তান৷ কিন্তু এখনও দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে রয়েছে রয়ে গেছে সীমানা বিরোধ ও পারস্পরিক অবিশ্বাস৷ এখনও শুকায়নি ৭০ বছর আগের দেশভাগের ক্ষত৷
বিজ্ঞাপন
সে ছিল সহিংস এক দেশভাগ৷ ১০ লাখের মতো মানুষ মারা গিয়েছিল তাতে, আরো কয়েক লাখ মানুষ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল নিজের জন্মস্থান৷ নানা মত ও সংস্কৃতির ভারত উপমহাদেশকে ভাগ করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে৷ ধর্মের ভিত্তিতে, অবিশ্বাস ও অনৈক্যের যুক্তি দিয়ে জোর করে সৃষ্টি করা হয়েছিল একটি দেশ – পাকিস্তান৷
এই জন্ম যন্ত্রণা, দাঙ্গা এবং শারীরিক ও মানসিক কষ্ট কখনও লাঘব হয়নি৷ ৭০ তম স্বাধীনতাদিবস উদযাপন করছে ভারত ও পাকিস্তান, কিন্তু ঘা রয়ে গেছে ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্টের মধ্যরাতের মতোই দগদগে৷
স্বাধীনতার কয়েক মাসের মধ্যেই বোঝা গিয়েছিল, কোন দিকে এগোচ্ছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক৷ কাশ্মীর কার? এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায় দুই দেশ৷ হিন্দু মহারাজার অধীন থেকে ‘মুক্ত' করতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সহযোগীরা স্থানীয় যোদ্ধাদের পাঠান কাশ্মীরে৷ ফলশ্রুতিতে সৈন্য পাঠিয়ে কাশ্মীরের বেশিরভাগ দখলে নেয় ভারত, বাকিটা দখল করে পাকিস্তান৷ দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধ হয়েছে, এবং দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের প্রধান বাধা এই কাশ্মীর বিরোধ৷ ইসলামি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দিয়ে একসময়কার সেক্যুলার এবং জাতিগত বিরোধকে ধর্মীয় বিরোধে রূপ দিয়েছে পাকিস্তান৷
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷
ছবি: Picture alliance/AP Photo/D. Yasin
6 ছবি1 | 6
১৯৪৮ সাল থেকেই আফগানিস্তান নিয়েও দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে ভারত-পাকিস্তান৷ ব্রিটিশরাজ দেশটিতে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও প্রতিবেশীর দিকে নজর ছিল নব্য স্বাধীন দুই দেশেরই৷ দুই দেশই চাচ্ছিল অন্য দেশকে চাপে রাখতে আফগান সরকারকে প্রভাবিত করতে৷
পাকিস্তানের পশতুনরা জিন্নাহর কর্তৃত্বে বেশ নাখোশ ছিল, অন্যদিকে আফগানিস্তান ছিল পশতুন-শাসিত৷ এ কারণেই পাকিস্তানের ভয় ছিল, আফগানিস্তানে ভারতপন্থি সরকার এলে তা তার অস্তিত্বের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ আফগান দ্বন্দ্বের শুরু সেখান থেকেই৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান দখলের পর থেকে সে দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে৷
শুরুর বছরগুলিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রনীতি তাদের অভ্যন্তরীণ নীতিতেও প্রভাব ফেলেছে৷ আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা, ইতিহাস, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এমনকি মনোজগতেও অবিশ্বাস ধীরে ধীরে আসন গেঁড়ে বসে৷
আরেক দেশভাগ!
পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) বাঙালিরা যখন নিজেদের অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সোচ্চার হয়, পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ শুরুতেই তাদের ‘ভারতের দালাল' আখ্যা দেয়৷ মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল হলেও ভারতের সীমান্তে অবস্থান, ভারত অংশের বাংলার এবং বাঙালি হিন্দুদের সাথে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক পশ্চিম পাকিস্তানিদের মনে এই সন্দেহ আরো গভীর করে তোলে৷ পশ্চিমে রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ হলেও পূর্বে তেমনটা হয়নি৷ মজার ব্যাপার হলো, সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই বাংলাতেই৷ কিন্তু ভারতের সংখ্যালঘুদের আইনি ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের যে স্বপ্ন জিন্নাহ দেখেছিলেন, তার উত্তরসূরিরা হাঁটলেন ঠিক তাঁর উলটো পথে৷ পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ বাঙালিদের দাবি তো মানতে অস্বীকৃতি জানালেনই, বলপ্রয়োগ করে তাদের দমনও করতে চাইলেন৷ ফলশ্রুতিতে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় স্বাধীনতাযুদ্ধ, ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ৷
২৪ বছরের মধ্যে এ ছিল দ্বিতীয় দেশভাগ৷ আবারও রক্তক্ষয়ী এক দেশভাগ, যাতে নিহত হয় লাখ লাখ বাঙালি৷ ধর্ষণ করা হয় হাজার হাজার নারীকে, হত্যা করা হয় বুদ্ধিজীবীদের, পুড়িয়ে দেয়া হয় ঘরবাড়ি৷ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য কখনই ক্ষমা চায়নি ইসলামাবাদ, বরং আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে পাকিস্তান ভাঙার জন্য দায়ী করা হয় ভারতকেই৷
এই দ্বিতীয় দেশভাগও ছিল পারস্পরিক ভীতির ফল৷ জিন্নাহ এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতারা ১৯৪৭ সালে যে ‘শত্রু' তত্ত্বের অবতারণা করেছিলেন, ১৯৭১ সাল তারই ফল৷
দেশভাগের স্মৃতিভ্রংশ
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সমস্যাগুলোর মূল নিহিত ১৯৪৭ সালের দেশভাগে৷উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্বের যে কোনো গবেষণাতেই মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ অ্যামেরিকা বা আফ্রিকাসহ বিশ্বের অন্য অঞ্চলেো একই ধরনের সমস্যার কথা উঠে আসবে৷ ভারতে দেশভাগ ও এর প্রভাব নিয়ে এখনও আলোচনা হয়৷ কিন্তু পাকিস্তানে এ নিয়ে নিস্তব্ধ নীরবতা, যদিও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শাসনকাঠামোর উন্নয়নে দেশভাগের আলোচনা এক অপরিহার্য অংশ৷
ব্রিটিশ-সমর্থিত ভূমির মালিকেরা স্বাধীনতার পরপরই রাষ্ট্রের সম্পদ ও প্রশাসনের দখল নিয়ে নেয়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে৷ তথাকথিত ‘দ্বিজাতি তত্ত্বের' ভিত্তিতে গড়ে ওঠা দেশে এখনও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলছে৷ পাকিস্তানজুড়ে কেন ইসলামি জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে এবং কেনই বা বিদেশ নীতি ও নিরাপত্তা নীতির ভিত্তি হিসেবে ইসলামকেই বেছে নিল, বুঝতে হলে জরুরি দেশভাগের আলোচনা৷ যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিন্দুত্ববাদের পুনর্জাগরণের কথা বলছেন, তখন এই আলোচনা আরো জরুরি হয়ে পড়েছে৷
জাতীয়তাবাদের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতার ৭০ বছর উদযাপন করছে৷ কিন্তু দুই দেশের জনগণের জন্য উদযাপনের উপলক্ষ্য তেমন কিছু নেই৷ দুই দেশই যখন নিজেদের পারমাণবিক শক্তি সামরিক ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রদর্শনে ব্যস্ত, দুই দেশের জনগণের এখনও অনেক মৌলক চাহিদাই পূরণ হয় না৷ তারপরও দুই দেশের যুদ্ধবাজি চলছেই, ভারত ভাগ নিয়ে জনগণকে জানানো হচ্ছে ভুল ইতিহাস৷
স্বাধীনতার ৭০ বছর নয়, বরং একে বলা উচিত শত্রুতার ৭০ বছর৷ দেশভাগের ইতিহাস পালটানো যাবে না, কিন্তু ঘৃণার এই দেয়ালটা ভাঙা যাবে৷ চলুন, অন্তত এই দেয়ালটা ভাঙি৷
শামিল শামস/এডিকে
ভারত ও পাকিস্তানের ‘রাজনীতি’র দাম দিচ্ছেন কাশ্মীরিরা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে সংঘাত কোনোকালেই বন্ধ হয়নি; অপরদিকে কাশ্মীরে গত তিন দশক ধরে একটি সশস্ত্র গণ-অভ্যুত্থান চলেছে৷ ইসলামাবাদ এবং নতুন দিল্লির আচরণে বহু কাশ্মীরি বিরূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
ব্যাপক সামরিক অভিযান
ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি নতুন অভিযান শুরু করেছে৷ অভিযান চলেছে শোপিয়ান জেলার ২০টি গ্রামকে ঘিরে৷ নতুন দিল্লির অভিযোগ, ইসলামাবাদের মদতে জঙ্গিরা পাকিস্তানি-ভারতীয় ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ পার হয়ে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/C. Anand
সৈন্যদের ‘হত্যা করে অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে’
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাতে ভারতীয় সৈন্যদের হত্যার বদলা নেবার হুমকি দিয়েছে ভারত৷ পাকিস্তান ঐ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সৈন্য ও অধিনায়কদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিক – এই দাবি করেছেন ভারতের বিদেশ সচিব সুব্রহ্মণিয়ম জয়শঙ্কর৷
ছবি: H. Naqash/AFP/Getty Images
সুদীর্ঘ সংঘাত
১৯৮৯ সাল থেকে মুসলিম বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে৷ এই এলাকায় যে এক কোটি বিশ লাখ মানুষের বাস, তাদের ৭০ শতাংশ মুসলিম৷ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়া যাবৎ ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরকে নিয়ে তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে৷ উভয় দেশই সম্পূর্ণ কাশ্মীর তাদের বলে দাবি করে৷
হিংসার আগুন
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি গত বছরের জুলাই মাস থেকেই সঙ্গীণ, যখন বুরহান ওয়ানি নামের এক তরুণ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা নিহত হন৷ তখন থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সৈন্যদের মধ্যে সঙ্ঘর্ষে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/D. Ismail
উরি আক্রমণ
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইসলামি জঙ্গিদের আক্রমণে অন্তত ১৭ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত ও আরো ৩০ জন আহত হন৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, এই বিদ্রোহীরা পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে ঢোকে এবং প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে, অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিরা পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর সদস্য৷
ছবি: UNI
সামরিক সমাধান সম্ভব নয়
ভারতের সুশীল সমাজের একাংশ মনে করে, নতুন দিল্লি কাশ্মীরে উত্তেজনার জন্য শুধু ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মোদী সরকারের কাছে কাশ্মীরে নিয়োজিত সেনা কমিয়ে জনগণকে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
মানবাধিকার লঙ্ঘণ
কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যদের গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘণ করার ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করেছে৷ একটি ভিডিওতে এক কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি জিপে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – দৃশ্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/
তুরস্কের মধ্যস্থতার প্রস্তাব
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর নতুন দিল্লি সফরের আগে কাশ্মীর সংঘাতে একটি ‘বহুপাক্ষিক সমাধানের’ প্রস্তাব দেন৷ ভারত তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে যে, কাশ্মীর সংক্রান্ত বিরোধ একমাত্র নতুন দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
সেনামুক্ত কাশ্মীর
স্বাধীন কাশ্মীরের প্রবক্তারা চান যে, ভারত ও পাকিস্তান সরে দাঁড়াক ও কাশ্মীরের জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ দিক৷ ‘ভারত ও পাকিস্তানের তাদের অংশ থেকে সৈন্যাপসারণের সময়সূচি ঘোষণা করার এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গণভোট অনুষ্ঠানের সময় এসেছে,’ পাকিস্তানি কাশ্মীরে এ কথা বলেছেন জম্মু-কাশ্মীর মুক্তিফ্রন্টের প্রধান তৌকির গিলানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা কম
অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মতে, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ কাশ্মীরে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে শক্ত হাতে মোকাবিলা করার ভারতীয় নীতি অংশত সফল হলেও, একদিন-না-একদিন নতুন দিল্লিকে কাশ্মীর সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বার করতে হবে বলে তারা মনে করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
10 ছবি1 | 10
শামিল শামস এর মতামতটি সম্পর্কে কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷