কলম্বিয়ার স্বর্ণখনি
১১ মার্চ ২০১২কলম্বিয়ার উত্তরপূর্ব অঞ্চলের ছোট্ট শহর ‘নেচি'৷ আর সে শহরেই বয়ে গেছে ‘নেচি' নামের নদী৷ ‘নেচি'বাসীরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই নদীর তীরেই খুঁজেছে নিজেদের সৌভাগ্যের চাবি৷
‘নেচি' নদীর চার ধারে, মাঠে মাঠে লুকিয়ে আছে সোনা৷ মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে সেই স্বর্ণই এতো দিন তুলে এনেছে মানুষ৷ আর তা বিক্রি করেই দারিদ্রপীড়িত বাসিন্দারা মিটিয়েছে নিজেদের অন্ন-বস্ত্রের চাহিদা৷ কিন্তু মাটি খুঁড়ে সোনা খুঁজে পাওয়ার এই অধিকারটুকুও এবার হারাতে বসেছে তারা৷
সোনার খনিগুলোকে গত কয়েক বছর ধরে বড় বড় কোম্পানির কাছে ইজারা দিয়ে দিচ্ছে কলম্বিয়া সরকার৷ ২০০২ থেকে ২০১০ সালের মধ্যেই কমপক্ষে সাত হাজার পাঁচ'শটি খনির মালিকানা হাত বদল হয়েছে৷ হাত বদল হওয়া এই জমির পরিমাণ প্রায় এক কোটি একর৷ ফলে যুগের পর যুগ ধরে যে জমিটিকে একজন নিজের বলে জানতো, সেটিতে আজ তার কোনো অধিকার নেই৷ সে জমিতে তাকেই আজ ‘নিষিদ্ধ' করেছে খনি কোন্পানি৷
আইনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ভোগ-দখল করলেও, যাদের জমির কোনো সরকার অনুমোদিত শিরোনাম ও লাইসেন্স নেই তারা ‘অবৈধ খননকারী' হিসেবে বিবেচিত হবে৷
ভূমির আইনি বৈধতা পেতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খনিগুলোর মালিকদেরকে সরকারি এজেন্সির কাছ থেকে বৈধ শিরোনাম নেবার জন্য গত বছর বলেছিলো সরকার৷ এরপর মোট ২০ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে৷ কিন্তু এখন আর এ ব্যাপারে সরকারের সাড়া নেই বলে অভিযোগ করছে স্থানীয়রা৷
বিশ্ব জুড়ে স্বর্ণের দাম বেড়েছে৷ কলম্বিয়ার স্বর্ণক্ষেত্রগুলোতে তাই নজর পড়েছে সবার৷ আরো বেশি টাকা পাওয়ার আশায় দেশি-বিদেশি কোম্পানির কাছে ভূমি ইজারা দিচ্ছে সরকার৷
বড় কোম্পানির অর্থবল বেশি৷ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে ভূমি খনন করছে তারা৷ শুধু ভূমিই নয়, ‘নেচি' নদীর তলদেশেও স্বর্ণ খোঁজার প্রযুক্তি তাদের আছে৷ কিন্তু সাধারণ গ্রামবাসী - শাবল, কোদালের মতো দেশীয় যন্ত্রই যাদের ভরসা, তারা এবার হার মেনেছে৷
একদিকে নিজের জমি বেহাত হয়ে চলে গেছে কোম্পানির কাছে৷ অন্যদিকে সরকারের কঠিন নীতি৷ ফলে, নিজ ভূমিতেই আজ পরবাসী হয়েছেন বলে দুঃখ করেছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের খনিগুলোর খননকারীরা৷
‘নেচি' নদী যেখানে দিগন্তের সাথে মিশেছে, সেখানে আকাশ অদ্ভুত সুন্দর৷ সেখানে ভীষণ মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য৷ কিন্তু জমি হারিয়ে, যারা আজ কঠিন দারিদ্র্যের মুখে, তাদেরই কারো কারো প্রশ্ন, পেটে ক্ষুধা নিয়ে এই সৌন্দর্য দেখার সুযোগ তাদের কোথায়?
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ